মর্মান্তিক

স্টাফ রিপোর্টার: বাবা দেশের বাইরে থাকার কারণে চার বছর ধরে তার সঙ্গে দেখা নেই আট বছরের শিশু সুরাইয়া ইসলাম ইরার। মাঝেমধ্যে মোবাইল ফোনে বাবার সঙ্গে কথা হয়। জানুয়ারির মাঝামাঝিতে বাবার দেশে ফেরার কথা। বাবা দেশে ফিরলে তার সঙ্গে কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবে ঠিক করে রেখেছিল ইরা। সর্বশেষ বুধবার রাতে ইরা মোবাইল ফোনে বাবাকে বলেছিল, আব্বু দেশে আসার সময় একটি কম্বল নিয়ে এসো। কিন্তু কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমানো হলো না ইরার। তার আগেই সে চিরতরে ঘুমিয়ে পড়লো। শনিবার ভোরে রাজধানীর হাজারীবাগে দেয়াল চাপা পড়ে ইরার মৃত্যু হয়েছে। শিশুটির মৃতদেহ জড়িয়ে তার মা গতকাল বিলাপ করছিলেন। সংজ্ঞা হারাচ্ছিলেন বারবার। তার কান্নায় হাজারীবাগের জিগাতলার মনেশ্বর রোডের ১০০/১ বাসা ও তার আশপাশের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। জানা গেছে, ইরার বাবা জুয়েল আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে তিউনিশিয়ায় থাকেন। তার মা মিলন আহমেদ হাজারীবাগের মনেশ্বর রোডের ১০০/১ বাসার দোতলায় ইরাসহ অন্য দুই মেয়ে মিরা ও আঁখিকে নিয়ে টিনশেড রুমে বসবাস করেন। বাসাটির নিচতলা ইটের দেয়ালের হলেও তার ওপরে টিনশেডের আলাদা করে কয়েকটি রুম বানিয়ে ভাড়া দেয়া হয়েছে। পাশে খালি জায়গার ছোট্ট স্থানে আলাদা ওয়াল তৈরি করে পানির ট্যাঙ্কি বানানো হয়েছে। তার পাশের রুমে শুক্রবার রাতে তার মা ছোট মেয়ে ইরাকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। অন্য দুই মেয়ে পাশের খাটে ঘুমিয়ে ছিল। ভোরের দিকে হঠাৎ পানির ট্যাঙ্কির দেয়াল ধসে পড়ে ইরা ও তার মায়ের ওপর। ঘটনাস্থলেই ইরা মারা যায়। আহত হন তার মা। খবর পেয়ে হাজারীবাগ থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। নিহত ইরার গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর এলাকায়। ইরা হাজারীবাগের একটি প্রাইমারি স্কুলে লেখাপড়া করত। হাজারীবাগ থানার ওসি (অপারেশন) রফিকুল ইসলাম জানান, বাড়িটিতে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আরও কয়েকটি পরিবার বসবাস করছে। বাড়িটি বিল্ডিং কোড মেনেও তৈরি করা হয়নি। এ ঘটনায় বাড়ির মালিক শহীদুলের নামে নিহতের পরিবার বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছে। ঘটনার পর থেকে বাড়ির মালিক পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.