লেজুড়বৃত্তিতে কাল কেটেছে জোটভুক্তদের
কাফি কামাল: লেজুড়বৃত্তিতেই বছর পার করেছে চারদলীয় জোটের শরিক দলগুলো। আন্দোলন এবং সাংগঠনিক কোন পথেই রাখতে পারেনি নিজস্বতার স্বাক্ষর। বছরের বিভিন্ন সময়ে জোটের দুইটি শরিক দল কিছুটা আন্দোলনমুখী হলেও এখন কোণঠাসা। প্রশাসনের কড়া আচরণ আর নজরদারিতে অবরুদ্ধ। আর আন্দোলনের সাংগঠনিক ভিত্তিই তৈরি করতে পারেনি অন্য দুই শরিক দল। ফলে শরিক দলগুলোর বছর কেটেছে বিএনপি’র কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে। তবে জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট, দলীয় ও জোটগত নানা ইস্যুতে গোলটেবিল বৈঠক আর মানববন্ধনে সক্রিয় ছিল তারা। বিশেষ করে ওইসব দলের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা বেশকিছু সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠন এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন। জোরালো আন্দোলনে ভূমিকা রাখা দূরে থাক উল্টো শরিক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত যুদ্ধাপরাধের দায় ঘাড়ে চেপেছে বিএনপি’র। সেটাই এখন বিএনপি’র রাজনীতিতে ফেলছে নেতিবাচক প্রভাব। তবে বছরের শেষপ্রান্তে এসে নতুন করে জোটের রাজনীতি চাঙ্গা করার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। সেই সঙ্গে আন্দোলনের বৃহত্তর জোট গড়তে প্রগতিশীল সমমনা দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকও করেছে দলটির নেতারা। এখন জোট সমপ্রসারণের প্রস্তুতি চলছে চারদলে।
জোটের প্রধান শরিক দল জামায়াত পুরো বছরটি পার করেছে কোণঠাসা, অবরুদ্ধ অবস্থায়। যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলের শীর্ষ ৫ নেতার গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে দলটি।
বছরের শুরুর দিকে উল্লেখযোগ্য কোন কর্মসূচিই পালন করতে পারেনি। এমনকি ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দূরত্বের কারণে বিএনপিকেও পাশে পায়নি দলটি। ফলে জাতীয় ইস্যু দূরে থাক দলীয় ইস্যুতেও তারা ছিল নিষ্প্রভ। একপর্যায়ে চোরাগোপ্তা বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে দলটি। নানা জাতীয় ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিএনপি’র সঙ্গেও ঝালিয়ে নেয় সম্পর্ক। তারপর বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে বিএনপির কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে দলটি। পরিস্থিতি দিনদিন কঠিন হতে থাকলে ১৯শে সেপ্টেম্বর রাজধানীতে প্রকাশ্য বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দেয় জামায়াত। সে কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিলে কাকরাইল মোড়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় জামায়াত কর্মীরা বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জামায়াত
নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গণগ্রেপ্তার অভিযান চালায় পুলিশ। ১৯ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয় ১৮৩ নেতাকর্মীকে। এ ঘটনায় পুরো ব্যাকফুটে চলে যায় দলটি। পরে দলের ভারপ্রাপ্ত আমীর এটিএম আজহারুল ইসলাম ও সিনিয়র নেতা অধ্যাপক তাসনিম আলমকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। বিষয়টি নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনা হলেও কোন আন্দোলনই করতে পারেনি দলটি। তবে বিএনপি’র রোড মার্চগুলোতে জামায়াতের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখ করার মতো। এছাড়া বিএনপির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে জামায়াতের দুই এমপিও সংসদ অধিবেশন বর্জন অব্যাহত রেখেছেন। জোটের আরেক দল ইসলামী ঐক্যজোট। বর্তমান সরকারের সময়ে ইসলামী ঐক্যজোটের কার্যক্রম ছিল অনেকটাই সংকুচিত। তবে বছরের শুরুতে নারীনীতি ইস্যুতে হঠাৎ করেই সক্রিয় হয়ে ওঠে দলটি। ওই ইস্যুতে ৪ঠা এপ্রিল হরতালসহ বিক্ষোভের ডাক দিলে তাকে সংহতি জানায় কিছু ইসলামী সংগঠন। বিক্ষোভের মাত্রা বাড়লে হঠাৎ
করেই ১০ই এপ্রিল রহস্যময়ভাবে অপহৃত হয় ইসলামী ঐক্যজোটের আমীর মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছেলে আবুল হাসনাত। অপহরণের জন্য মুফতি আমিনী প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করেন। এ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কড়া কিছু বক্তব্য বিনিময়ের একপর্যায়ে ১২ দিন পর রহস্যময়ভাবেই ফিরে আসেন অপহৃত হাসনাত। তারপর এক অর্থে গৃহবন্দি হয়ে পড়েন তিনি। এমনকি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগও ওঠে নানা মহল থেকে। তবে সংশোধিত সংবিধানকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলার ঘোষণা দিয়ে তিনি মুখোমুখি হন রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলার। প্রশাসন তাকে গ্রেপ্তার না করলেও দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অঘোষিত গৃহবন্দি। নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কারণে দেখিয়ে সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে তার গতিবিধি। তবে সংবিধান সংশোধন ইস্যুতে তার নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট বেশ কয়েকবার
জোরালোভাবে বিক্ষোভ করেছে। জোটের অন্য দুই শরিক দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) এবং খেলাফত মজলিস পুরো বছর জুড়ে কোন কর্মসূচিই দেয়নি। তবে তারা বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচিতে প্রকাশ করেছে সংহতি। অংশ নিয়েছেন দলটির নেতারা। এর মধ্যে বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ব্যক্তিগতভাবে ছিলেন উজ্জ্বল। সংসদে তার দেয়া একটি বক্তব্য দেশে-বিদেশে আলোচনার ঝড় তুলে। প্রশংসিত হয় রাজনৈতিক মহলে। বিভিন্ন টেলিভিশন টকশোগুলোতেও জোটের একমাত্র নেতা হিসেবে তাকেই দেখা গেছে বছরজুড়ে সক্রিয়। এছাড়া সমমনা দলগুলোর মধ্যে শফিউল আলম প্রধানের নেতৃত্বাধীন জাগপা, শেখ শওকত হোসেন নীলুর নেতৃত্বাধীন এনপিপি, গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন এনডিপি, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টিসহ অন্যরা হরতালগুলোতে নৈতিক সমর্থন দিলেও মাঠে ছিল না। তাদের কার্যক্রম সীমিত গোলটেবিল আলোচনা আর মানববন্ধনে। তবে বছরের শেষদিকে বিএনপির আন্দোলনে কিছুটা গতির সঞ্চার করে কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রমের নেতৃত্বাধীন এলডিপি। দলের নেতারা ইতিমধ্যে জোরালোভাবে আন্দোলনে শরিক হয়েছেন। তবে প্রধান শরিকদল জামায়াতের লেজেগোবরে অবস্থার কারণে রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানো চারদলীয় জোটের জন্য অনেকটাই কঠিন।
জোটের প্রধান শরিক দল জামায়াত পুরো বছরটি পার করেছে কোণঠাসা, অবরুদ্ধ অবস্থায়। যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলের শীর্ষ ৫ নেতার গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে দলটি।
বছরের শুরুর দিকে উল্লেখযোগ্য কোন কর্মসূচিই পালন করতে পারেনি। এমনকি ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দূরত্বের কারণে বিএনপিকেও পাশে পায়নি দলটি। ফলে জাতীয় ইস্যু দূরে থাক দলীয় ইস্যুতেও তারা ছিল নিষ্প্রভ। একপর্যায়ে চোরাগোপ্তা বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে দলটি। নানা জাতীয় ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিএনপি’র সঙ্গেও ঝালিয়ে নেয় সম্পর্ক। তারপর বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে বিএনপির কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে দলটি। পরিস্থিতি দিনদিন কঠিন হতে থাকলে ১৯শে সেপ্টেম্বর রাজধানীতে প্রকাশ্য বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দেয় জামায়াত। সে কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিলে কাকরাইল মোড়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় জামায়াত কর্মীরা বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জামায়াত
নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গণগ্রেপ্তার অভিযান চালায় পুলিশ। ১৯ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয় ১৮৩ নেতাকর্মীকে। এ ঘটনায় পুরো ব্যাকফুটে চলে যায় দলটি। পরে দলের ভারপ্রাপ্ত আমীর এটিএম আজহারুল ইসলাম ও সিনিয়র নেতা অধ্যাপক তাসনিম আলমকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। বিষয়টি নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনা হলেও কোন আন্দোলনই করতে পারেনি দলটি। তবে বিএনপি’র রোড মার্চগুলোতে জামায়াতের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখ করার মতো। এছাড়া বিএনপির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে জামায়াতের দুই এমপিও সংসদ অধিবেশন বর্জন অব্যাহত রেখেছেন। জোটের আরেক দল ইসলামী ঐক্যজোট। বর্তমান সরকারের সময়ে ইসলামী ঐক্যজোটের কার্যক্রম ছিল অনেকটাই সংকুচিত। তবে বছরের শুরুতে নারীনীতি ইস্যুতে হঠাৎ করেই সক্রিয় হয়ে ওঠে দলটি। ওই ইস্যুতে ৪ঠা এপ্রিল হরতালসহ বিক্ষোভের ডাক দিলে তাকে সংহতি জানায় কিছু ইসলামী সংগঠন। বিক্ষোভের মাত্রা বাড়লে হঠাৎ
করেই ১০ই এপ্রিল রহস্যময়ভাবে অপহৃত হয় ইসলামী ঐক্যজোটের আমীর মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছেলে আবুল হাসনাত। অপহরণের জন্য মুফতি আমিনী প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করেন। এ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কড়া কিছু বক্তব্য বিনিময়ের একপর্যায়ে ১২ দিন পর রহস্যময়ভাবেই ফিরে আসেন অপহৃত হাসনাত। তারপর এক অর্থে গৃহবন্দি হয়ে পড়েন তিনি। এমনকি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগও ওঠে নানা মহল থেকে। তবে সংশোধিত সংবিধানকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলার ঘোষণা দিয়ে তিনি মুখোমুখি হন রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলার। প্রশাসন তাকে গ্রেপ্তার না করলেও দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অঘোষিত গৃহবন্দি। নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কারণে দেখিয়ে সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে তার গতিবিধি। তবে সংবিধান সংশোধন ইস্যুতে তার নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট বেশ কয়েকবার
জোরালোভাবে বিক্ষোভ করেছে। জোটের অন্য দুই শরিক দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) এবং খেলাফত মজলিস পুরো বছর জুড়ে কোন কর্মসূচিই দেয়নি। তবে তারা বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচিতে প্রকাশ করেছে সংহতি। অংশ নিয়েছেন দলটির নেতারা। এর মধ্যে বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ব্যক্তিগতভাবে ছিলেন উজ্জ্বল। সংসদে তার দেয়া একটি বক্তব্য দেশে-বিদেশে আলোচনার ঝড় তুলে। প্রশংসিত হয় রাজনৈতিক মহলে। বিভিন্ন টেলিভিশন টকশোগুলোতেও জোটের একমাত্র নেতা হিসেবে তাকেই দেখা গেছে বছরজুড়ে সক্রিয়। এছাড়া সমমনা দলগুলোর মধ্যে শফিউল আলম প্রধানের নেতৃত্বাধীন জাগপা, শেখ শওকত হোসেন নীলুর নেতৃত্বাধীন এনপিপি, গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন এনডিপি, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টিসহ অন্যরা হরতালগুলোতে নৈতিক সমর্থন দিলেও মাঠে ছিল না। তাদের কার্যক্রম সীমিত গোলটেবিল আলোচনা আর মানববন্ধনে। তবে বছরের শেষদিকে বিএনপির আন্দোলনে কিছুটা গতির সঞ্চার করে কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রমের নেতৃত্বাধীন এলডিপি। দলের নেতারা ইতিমধ্যে জোরালোভাবে আন্দোলনে শরিক হয়েছেন। তবে প্রধান শরিকদল জামায়াতের লেজেগোবরে অবস্থার কারণে রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানো চারদলীয় জোটের জন্য অনেকটাই কঠিন।
No comments