পথচলার তিন বছর-রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় by মু. আবদুল জলিল মিয়া
রংপুর একটি ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন জনপদ। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে রংপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা প্রতিধ্বনিত হয়েছে বহুবার। কিন্তু নানা সমীকরণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। ১৯৯৯ সালে সর্বপ্রথম তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা কারমাইকেল কলেজের তিনশ' একর থেকে পঁচাত্তর একর জমি রংপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পের নামে বরাদ্দ দিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।
প্রকল্প পরিচালকও নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ২০০২ সালে তৎকালীন সরকার প্রকল্পটি বাতিল করায় এই জনপদের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের সিঁড়ি অবরুদ্ধ হয়ে যায়। তবুও থেমে ছিল না এই অঞ্চলের মানুষের দাবি। গঠিত হয়েছিল রংপুর বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটি।
২০০৮ সালের ২১ জুলাই অধ্যাদেশের মাধ্যমে ৩০তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে 'রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়' প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন প্রফেসর ড. এম লুৎফর রহমান। তিনি ৬ মাস ২১ দিন সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। প্রাথমিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম রংপুর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ক্যাম্পাসে অব্যবহৃত কক্ষ সংস্কারপূর্বক মাত্র ১২ জন শিক্ষক এবং ৩০০ শিক্ষার্থী, ৩ কর্মকর্তা ও ৯ কর্মচারী নিয়ে ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা শুরু হয়।
বর্তমান মহান জাতীয় সংসদে ৮ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে ২৯ নং আইন গৃহীত হয় এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভের মাধ্যমে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে নারী জাগরণের অগ্রদূত মহীয়সী রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের নামে 'বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর' পূর্ণাঙ্গ ও স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। উত্তর জনপদের মানুষের মনে লাগল আনন্দের দোলা। রংপুরবাসী তথা এই জনপদের শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ জ্ঞানার্জন এখন রংপুরেই সম্ভব।
জাতীয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, আধুনিক জ্ঞানচর্চা ও পঠন-পাঠনের সুযোগ সৃষ্টি ও সম্প্রসারণ, অগ্রসরমান বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা ও সমতা অর্জনের উদ্দেশ্য সামনে রেখে এবং মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে মানবতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান ও ভবিষ্যতে নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষম মানবসম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়মিত পাঠক্রমের আধুনিকায়ন, শিক্ষার গুণগত মান রক্ষার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তথ্যের আদান-প্রদান, দ্রুত ও ফলপ্রসূ জ্ঞান সৃষ্টি, জ্ঞান আহরণ ও জ্ঞান বিতরণের জন্য সর্বাধুনিক কলাকৌশল ব্যবহার, উপযুক্ত পরিবেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাধীন চিন্তা-চেতনা এবং নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষমতা সৃষ্টি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও সমাজের মধ্যে অর্থপূর্ণ সংযোগ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বনে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সদা তৎপর। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্থানীয় জনগণের নিরলস ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গত ৮ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের উদ্বোধন ঘোষণার মাধ্যমে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের দ্বার উন্মোচন করেন।
এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকে দু'ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। একটি শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন এবং অপরটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন। শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। মাত্র ছয়টি বিভাগ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে মোট বিভাগের সংখ্যা বিশটি। বিভাগগুলোকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য চারটি অনুষদে অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। উল্লেখ্য, চতুর্থ ব্যাচে (২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় তিন হাজারে। শিক্ষার্থীর নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণের জন্য নিয়োজিত রয়েছেন অভিজ্ঞ শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছেন দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারী। সেমিস্টারভিত্তিক, সেশনজটমুক্ত পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সেমিনার, কর্মশালা, প্রশিক্ষণ, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সুস্থ ধারার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, খেলাধুলা ও সামাজিক কার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার সর্বদাই অত্যন্ত সচেতন ও সরব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রাণপুরুষ এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ও দেশবরেণ্য বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী প্রয়াত ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার স্মৃতিকে স্মরণীয় করার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ২০০৯ সালের ২৯ নং আইনের ২৭-এর ১ ধারা মোতাবেক বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সুপারিশক্রমে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট। স্থানীয়, জাতীয় তথা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষকদের গবেষণাকর্ম পরিচালনা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে এ গবেষণা কেন্দ্র পালন করবে অনন্যসাধারণ ভূমিকা। গবেষণা সহায়ক হিসেবে এখানে লাইব্রেরি ও ডকুমেন্টেশন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের আওতায় উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে 'ওসঢ়ৎড়াবসবহঃ ড়ভ ঞবধপযরহম-খবধৎহরহম রহ ঊপড়হড়সরপং' শিরোনামে একটি প্রকল্প অর্থনীতি বিভাগ পরিচালনা করছে। এ ছাড়া পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রিসার্চ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অ্যান্ড নলেজ ম্যানেজমেন্ট অন ক্লাইমেট চেঞ্জ শীর্ষক আর একটি গবেষণা প্রকল্প চালু আছে। ২০০৯ সাল থেকে প্রতি বছরের ৯ ডিসেম্বর রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যু দিবসে আয়োজন করা হয় রোকেয়া স্মারক বক্তৃতা। পাশাপাশি ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছর ৯ মে ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যু দিবসে ড. ওয়াজেদ স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে দুটি বড় বাস এবং একটি অ্যাম্বুলেন্স অনুদান হিসেবে বরাদ্দ দিয়েছেন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাত্র তিন বছরেই এখানে প্রায় ৩২টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সেবামূলক অঙ্গ সংগঠন গড়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে দেখা যাচ্ছে সাহিত্য বিষয়ক লিটল ম্যাগাজিন, মাসিক পত্রিকা ও বেশ কিছু অনিয়মিত সাহিত্য পত্রিকা। সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, সমৃদ্ধি, জ্ঞান সৃষ্টি ও জ্ঞান বিতরণ যেমন বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের মানুষের হারানো ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করবে, ঠিক তেমনি বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এটি অত্যন্ত নবীন। একটি স্বপ্ন সম্ভাবনাময় বিশ্ববিদ্যালয়_ স্বপ্ন বুনে বুনে এভাবেই ডানা মেলে দেবে উত্তরবঙ্গের আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক, জ্ঞান, মেধা, মননশীল ও বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার প্রাতিষ্ঠানিক এই বৃক্ষটি। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন আজ নেই। তার আদর্শ আমাদের সামনে রয়েছে। আমরা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর অধিকার সংরক্ষণ ও মর্যাদা রক্ষায় আন্তরিক হলেই রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের স্বপ্ন ও সংগ্রাম বাস্তব রূপ লাভ করবে।
প্রফেসর ড. মু. আবদুুল জলিল মিয়া : উপাচার্য বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
২০০৮ সালের ২১ জুলাই অধ্যাদেশের মাধ্যমে ৩০তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে 'রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়' প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন প্রফেসর ড. এম লুৎফর রহমান। তিনি ৬ মাস ২১ দিন সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। প্রাথমিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম রংপুর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ক্যাম্পাসে অব্যবহৃত কক্ষ সংস্কারপূর্বক মাত্র ১২ জন শিক্ষক এবং ৩০০ শিক্ষার্থী, ৩ কর্মকর্তা ও ৯ কর্মচারী নিয়ে ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা শুরু হয়।
বর্তমান মহান জাতীয় সংসদে ৮ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে ২৯ নং আইন গৃহীত হয় এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভের মাধ্যমে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে নারী জাগরণের অগ্রদূত মহীয়সী রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের নামে 'বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর' পূর্ণাঙ্গ ও স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। উত্তর জনপদের মানুষের মনে লাগল আনন্দের দোলা। রংপুরবাসী তথা এই জনপদের শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ জ্ঞানার্জন এখন রংপুরেই সম্ভব।
জাতীয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, আধুনিক জ্ঞানচর্চা ও পঠন-পাঠনের সুযোগ সৃষ্টি ও সম্প্রসারণ, অগ্রসরমান বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা ও সমতা অর্জনের উদ্দেশ্য সামনে রেখে এবং মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে মানবতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান ও ভবিষ্যতে নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষম মানবসম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়মিত পাঠক্রমের আধুনিকায়ন, শিক্ষার গুণগত মান রক্ষার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তথ্যের আদান-প্রদান, দ্রুত ও ফলপ্রসূ জ্ঞান সৃষ্টি, জ্ঞান আহরণ ও জ্ঞান বিতরণের জন্য সর্বাধুনিক কলাকৌশল ব্যবহার, উপযুক্ত পরিবেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাধীন চিন্তা-চেতনা এবং নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষমতা সৃষ্টি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও সমাজের মধ্যে অর্থপূর্ণ সংযোগ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বনে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সদা তৎপর। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্থানীয় জনগণের নিরলস ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গত ৮ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের উদ্বোধন ঘোষণার মাধ্যমে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের দ্বার উন্মোচন করেন।
এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকে দু'ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। একটি শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন এবং অপরটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন। শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। মাত্র ছয়টি বিভাগ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে মোট বিভাগের সংখ্যা বিশটি। বিভাগগুলোকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য চারটি অনুষদে অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। উল্লেখ্য, চতুর্থ ব্যাচে (২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় তিন হাজারে। শিক্ষার্থীর নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণের জন্য নিয়োজিত রয়েছেন অভিজ্ঞ শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছেন দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারী। সেমিস্টারভিত্তিক, সেশনজটমুক্ত পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সেমিনার, কর্মশালা, প্রশিক্ষণ, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সুস্থ ধারার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, খেলাধুলা ও সামাজিক কার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার সর্বদাই অত্যন্ত সচেতন ও সরব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রাণপুরুষ এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ও দেশবরেণ্য বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী প্রয়াত ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার স্মৃতিকে স্মরণীয় করার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ২০০৯ সালের ২৯ নং আইনের ২৭-এর ১ ধারা মোতাবেক বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সুপারিশক্রমে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট। স্থানীয়, জাতীয় তথা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষকদের গবেষণাকর্ম পরিচালনা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে এ গবেষণা কেন্দ্র পালন করবে অনন্যসাধারণ ভূমিকা। গবেষণা সহায়ক হিসেবে এখানে লাইব্রেরি ও ডকুমেন্টেশন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের আওতায় উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে 'ওসঢ়ৎড়াবসবহঃ ড়ভ ঞবধপযরহম-খবধৎহরহম রহ ঊপড়হড়সরপং' শিরোনামে একটি প্রকল্প অর্থনীতি বিভাগ পরিচালনা করছে। এ ছাড়া পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রিসার্চ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অ্যান্ড নলেজ ম্যানেজমেন্ট অন ক্লাইমেট চেঞ্জ শীর্ষক আর একটি গবেষণা প্রকল্প চালু আছে। ২০০৯ সাল থেকে প্রতি বছরের ৯ ডিসেম্বর রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যু দিবসে আয়োজন করা হয় রোকেয়া স্মারক বক্তৃতা। পাশাপাশি ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছর ৯ মে ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যু দিবসে ড. ওয়াজেদ স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে দুটি বড় বাস এবং একটি অ্যাম্বুলেন্স অনুদান হিসেবে বরাদ্দ দিয়েছেন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাত্র তিন বছরেই এখানে প্রায় ৩২টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সেবামূলক অঙ্গ সংগঠন গড়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে দেখা যাচ্ছে সাহিত্য বিষয়ক লিটল ম্যাগাজিন, মাসিক পত্রিকা ও বেশ কিছু অনিয়মিত সাহিত্য পত্রিকা। সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, সমৃদ্ধি, জ্ঞান সৃষ্টি ও জ্ঞান বিতরণ যেমন বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের মানুষের হারানো ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করবে, ঠিক তেমনি বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এটি অত্যন্ত নবীন। একটি স্বপ্ন সম্ভাবনাময় বিশ্ববিদ্যালয়_ স্বপ্ন বুনে বুনে এভাবেই ডানা মেলে দেবে উত্তরবঙ্গের আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক, জ্ঞান, মেধা, মননশীল ও বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার প্রাতিষ্ঠানিক এই বৃক্ষটি। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন আজ নেই। তার আদর্শ আমাদের সামনে রয়েছে। আমরা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর অধিকার সংরক্ষণ ও মর্যাদা রক্ষায় আন্তরিক হলেই রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের স্বপ্ন ও সংগ্রাম বাস্তব রূপ লাভ করবে।
প্রফেসর ড. মু. আবদুুল জলিল মিয়া : উপাচার্য বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
No comments