বেআক্কেলের স্বর্গচিন্তা-রাজনীতি by নুরুল ইসলাম বিএসসি

মূল আলোচনায় আসার আগে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করতে চাই। জাতীয় পার্টির কিছু সদস্য খালেদা জিয়ার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেছেন। পত্রিকায় ছবি দেখলাম, ছবিতে চট্টগ্রামের এক নেতা, যিনি নিজের ভোট নিজেই দিতে যান না, নিজের স্ত্রীকে, নিজের দলের মতাদর্শে ভেড়াতে পারেন না, তিনিও যোগদান করেছেন। তারা একসময় বিএনপি, পরে এরশাদের দলে, এরশাদকে ছেড়ে ভিন্ন জাতীয় পার্টিতে, সম্প্রতি আবার


বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। এলাকার মানুষ তাদের বেইমান হিসেবে চেনে ও জানে। তারা যেদিকে যায় ওই পথও এলাকার মানুষ মাড়ায় না। তারা সমাজের ভাইরাস, যেদিকে যায় সবাইকে আক্রান্ত করে।
এখন মূল আলোচনায় আসতে চাই। এরশাদ সাহেব তার দলীয় নেতা ও কর্মীদের এক সমাবেশে বলেছেন, জাতীয় পার্টি ফুটবল হতে চায় না, খেলোয়াড় হতে চায়। অর্থাৎ তিনি ও তার দল, আগামী নির্বাচনে জোটভুক্ত না হয়ে নিজেরাই নির্বাচন করতে চান। ভালো কথা এবং এটিই এরশাদ সাহেবের মনের কথা। উপায় থাকে না বলে অনেকে কুইনিন যেমন খান, তেমনি এরশাদ সাহেবের উপায় নেই বলে জোটের সঙ্গে আছেন, সুযোগ পেলেই মাথা নাড়বেন। পরদিন দেখি জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা হলে প্রসঙ্গটা আসতেই এরশাদ সাহেব বলেন, তিনি মহাজোটের সঙ্গে থাকবেন। রাজনীতি করতে গেলে অনেক কথা বলতে হয়, দলীয় নেতাকর্মীদের 'বুঝ' দিতেই তিনি এককভাবে নির্বাচনের কথা বলেছেন। বেআক্কেল আর কাকে বলে! জননেত্রী শেখ হাসিনা দু'বারের প্রধানমন্ত্রী। মানুষের রূপ ও চরিত্র তার নখদর্পণে। কার সামনে কী কথা বলছেন, হিসাব করে বলার প্রয়োজনীয়তা এরশাদ সাহেব উপলব্ধি করেননি। দু'দিনে দু'রকম কথা বলে এরশাদ সাহেব নিজের কর্মীদের কাছে হাল্কা হলেন, মহাজোটের শরিকদের বিশ্বাসও হারালেন। রাজনীতিতে কৌশল থাকবে, তাই বলে কূটকৌশল গ্রহণযোগ্য নয়। মরহুম জিয়া যেমন হ্যাঁ-না ভোট দিয়ে গণতন্ত্রকে পর্যুদস্ত করেছিলেন, এরশাদ সাহেবও নির্বাচনের নামে প্রহসন করে নির্বাচন কমিশন নামক প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিলেন। এরশাদ সাহেবের আমলে ভোট হয়েছিল সত্য, কিন্তু কেউ ভোট দিতে পেরেছিলেন এমন সাক্ষী পাওয়া যাবে না। জোর করে ভোট আদায়, কেন্দ্র দখল, রেজাল্টশিট বদলানোসহ এমন কোনো কূটকৌশল বাকি ছিল না, যা এরশাদ সাহেব গ্রহণ করেননি। চট্টগ্রামে আবদুইয়ার নাম এখনও কেউ ভুলে যায়নি। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে মাঠে নামলে বুলেটে নূর হোসেনকে আত্মাহুতি দিতে হয়েছিল। মানুষ বোকা নয়, গণতন্ত্র ধ্বংসকারীকে মানুষ একবার ছুড়ে ফেলে দিলে পুনরায় কোলে নেবে এমন আশা বোকামি। পরবর্তী সময়ে এরশাদ সাহেবের পথ ধরেই বিএনপি ক্ষমতায় টিকে থাকার কৌশল প্রয়োগ করে। ভুতুড়ে ভোটার, কেন্দ্র দখল থেকে শুরু করে সবকিছুই তারা এরশাদ সাহেবের কাছ থেকে রপ্ত করেছেন।
বর্তমানে এরশাদ সাহেব গণতন্ত্রের কথা বলেন। আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় যেতে চান। এরশাদ সাহেব ও তার দলের ধারণা, আওয়ামী লীগ জনবিচ্ছিন্ন হয়েছে, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে, জনসাধারণ/ভোটার তার দলকেই বেছে নেবে। রাজনীতি বড়ই কঠিন বিষয়। সাধারণ মানুষ কে, কী বলছেন, সবই পর্যবেক্ষণ করে এগোতে হয়। মাঠে একা একা নির্বাচনের ঘোষণা, পরবর্তী সময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা হলে কর্মীদেরও 'বুঝ' দেওয়ার এবং মহাজোটে থাকার ঘোষণা, পরস্পরবিরোধী কথাবার্তা কোনো সুফল বয়ে আনবে না, রাজনীতিতে দৃঢ়চেতা মানুষ চাই। দুর্বলচিত্তের মানুষকে মানুষ কখনও নেতা মানে না। এরশাদ সম্পর্কে যত কম কথা বলা যায় ততই মঙ্গল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোটেই এরশাদ সাহেব জিতে এসেছেন, কথাটি শুনতে কটু হলেও এটাই সত্য। একাকী নির্বাচন করে একবার চেষ্টা করলেই জানবেন কত ধানে কত চাল।
জনাব এরশাদ সাহেবকে আমরা সম্মান করি, ইজ্জত এ জন্যই করি, তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে আছেন। সংসদেও এরশাদ সাহেবের বিগত দিনের কর্মকাণ্ডে কেউ এখন প্রশ্ন করেন না। যেই মাত্র মহাজোট ত্যাগ করবেন, তখনই বোঝা যাবে ঘটনা কোন দিকে মোড় নেয়।

নুরুল ইসলাম বিএসসি : সংসদ সদস্য
 

No comments

Powered by Blogger.