হামিদুল্লাহ খানের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন দাফন আজ

স্টাফ রিপোর্টার: মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার উইং কমান্ডার (অব.) হামিদুল্লাহ খান বীরপ্রতীকের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল সকালে নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জানাজার আগে তিনি এই শ্রদ্ধা জানান। বেলা ১১.২৪ মিনিটে নয়াপল্টন যান খালেদা জিয়া। তিনি দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে হামিদুল্লাহ খানের কফিনে দলের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে   পৃষ্ঠা ২০ কলাম ১
শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তিনি মরহুম হামিদুল্লাহ খানের জন্য দোয়া করেন। এরপর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, ছাত্রদল, ওলামা দল, ডক্টরস এসোসিয়েশন (ড্যাব), জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাসসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। ১১টা ২৮ মিনিটে খালেদা জিয়া চলে যাওয়ার পর হামিদুল্লাহ খানের তৃতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তবে জানাজার আগেই চারদিক থেকে ঘিরে রাখে পুলিশ। ফলে পুলিশবেষ্টিত অবস্থায় মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শুরুর আগে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী হামিদুল্লাহ খান স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। জাতি তার অবদানের কথা সারা জীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। তার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার, ব্রিগেডিয়ার (অব.) আসম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানসহ বিএনপি অঙ্গ দলের হাজারো নেতাকর্মী জানাজায় অংশ নেন। এলডিপি’র চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম সহ বিএনপি’র নেতাকর্মীরা মরহুমের কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর আগে সকাল সোয়া ১০টায় হামিদুল্লাহর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড জামে মসজিদে। নয়াপল্টন থেকে দুপুর ১২টায় হামিদুল্লাহ খানের কফিন নেয়া হয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়। সেখানে জাতীয় সংসদের মসজিদের ইমামের পরিচালনায় এ সময় চতুর্থ জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালু, যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লাহ বুলু, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকসহ বিএনপি দলীয় এমপি ও নেতাকর্মীরা জানাজায় অংশ নেন। এরপর পুলিশের একটি চৌকস দল এ মহান মুক্তিযোদ্ধার প্রতি গার্ড অব অনার দেন। এ সময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ঢাকার জেলা প্রশাসক। স্পিকার আবদুল হামিদ ও বিরোধীদলীয় নেতার পক্ষে চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক মরহুমের কফিনে আলাদাভাবে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তবে সংসদ নেতা বা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানাতে কেউ আসেন নি সেখানে। এ সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার এডভোকেট আবদুল হামিদ জানাজায় অংশগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের বলেন, হামিদুল্লাহ দেশের মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। সেই সময় সেক্টর কমান্ডার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, মানুষ মারা গেলে সবার উচিত কে কোন দল করেছে সেটি না ভেবে দেশের জন্য কি অবদান রেখেছে সেই হিসেবে সম্মান জানানো। প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট সহ সেক্টর কমান্ডারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ না করা প্রসঙ্গে স্পিকার বলেন, এটা যোগাযোগ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে হতে পারে। তারা যদি জানতেন তাহলে শোক প্রকাশ করতেন ও জানাজায় অংশ নিতেন। প্রধানমন্ত্রী শোক প্রকাশ কেন করেন নি সে ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান। বিএনপি নেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম বলেন, দলমত অনুসারে, ভেদাভেদ না রেখে তারা শোক প্রকাশ করবেন এটাই আশা করেছিলাম। কিন্তু তাদের কেউই শোক প্রকাশ করেননি। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর ফোরামের নামে একাধিক ফোরাম করা হয়েছে। যাদের মধ্যে বিভিন্ন দলাদলি প্রকট আকার ধারণ করেছে। এদিকে হামিদুল্লাহ খানের স্ত্রী রাবেয়া সুলতানা জাহান জানাজা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, দেশের স্বাধীনতায় তার অবদান রয়েছে। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবে এটা আশা করেছিলাম। অথচ শ্রদ্ধা জানাতে তারা কার্পণ্য করলো। এটা আশা করিনি। হামিদুল্লাহ খানের মৃত্যুতে প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর শোকবাণী না দেয়ার ঘটনায়ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি। তবে গতকাল বিকালে এক শোকবার্তায় হামিদুল্লাহ খানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে হামিদুল্লাহ খানের অবদানের কথা জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে। এদিকে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে লাশ তার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের মেদিনী মণ্ডল গ্রামের কালিরখিলে নিয়ে যাওয়া হয়। মরদেহ এম্বুলেন্সে করে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে বিএনপি নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ এই বিএনপি নেতার প্রতি শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানায়। কালিরখিল মাঠে সেখানে বাদ আসর নামাজের পর পঞ্চম জানাজা শেষে লাশ ঢাকায় এনে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। তার ছোট ছেলে মুরাদ হামিদ খান জাপান থেকে রাতে আসার পর আজ সকাল ১০টায় বনানী কবরস্থানে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.