সরকারের নিয়ন্ত্রক ভূমিকা কোথায়?-এলপি গ্যাস নিয়ে ভোগান্তি

চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকলে যা হয়, এলপি গ্যাসের ক্ষেত্রে তা-ই হচ্ছে। সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এদিকে কোনো নজর আছে বলে মনে হচ্ছে না। বলা যায়, এলপি গ্যাসের সরবরাহ ও কেনাবেচায় একধরনের নিয়ন্ত্রণহীন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আর যথারীতি এর চাপ ও ভোগান্তি—সবটাই পোহাতে হচ্ছে গ্রাহককে।


দেশের প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি থাকায় দুই বছর ধরে সব ধরনের গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। ফলে আবাসিক ও বাণিজ্যিক—দুই ক্ষেত্রেই তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজির চাহিদা বেড়ে চলেছে। বর্তমানে চাহিদা দাঁড়িয়েছে বছরে প্রায় চার লাখ টনের বেশি; কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সরবরাহ হয় মাত্র এক লাখ ১০ হাজার টনের মতো। এই গ্যাসের ৮০ শতাংশের মতো বেসরকারি কোম্পানিগুলো জোগান দেয় আমদানির মাধ্যমে। এখানে যৌক্তিক দাম নির্ধারণের কোনো ব্যাপার নেই।
অন্যদিকে, সরকারি খাতে উৎপাদিত এলপিজি নিয়ে চলছে নানা দুর্নীতি ও অনিয়ম। প্রাকৃতিক গ্যাসের ঘাটতির কারণে যখন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়, তখনই এটা জানা ছিল যে এলপিজির চাহিদা বাড়বে এবং সরকারের উচিত ছিল সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। সরকারি বা বেসরকারি—যে পর্যায়েই হোক, আমদানি বাড়ানোর সব ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত ও অবস্থান গ্রহণ জরুরি ছিল। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নিশ্চিতভাবেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
সরকারি পর্যায়ে মংলা ও চট্টগ্রামে দুটি এলপিজি প্ল্যান্ট করার কথা থাকলেও সে ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি নেই। বেসরকারি পর্যায়ে প্ল্যান্ট নির্মাণের ক্ষেত্রেও সরকার কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে পারছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে এলপি গ্যাস সহজলভ্য করার জন্য দ্রুত নানা উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি বাড়ানোর ক্ষেত্রেও সরকারকে ভূমিকা পালন করতে হবে। আমদানি করা এলপিজির দাম যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করে, তাই নিয়মিত যৌক্তিকভাবে দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে এখানে দাম বাড়বে, কিন্তু কমলে কমবে না—এ ধরনের পরিস্থিতি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সরকারকে যেমন দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, তেমনি নির্ধারিত দামে যাতে এলপিজি বিক্রি হয় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে বর্তমানে বাসাবাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে যে দামে গ্যাস দেওয়া হয়, তার সঙ্গে এলপিজি ব্যবহারকারীদের বৈষম্য রয়েছে, যা দূর করার উদ্যোগও নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.