ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে-শ্রেণীকক্ষে স্কুলশিক্ষিকা খুন

আমরা এমন এক সমাজে বাস করছি, যেখানে জনজীবনের কোথাও নিরাপত্তা নেই—না ঘরে, না বাইরে, না বিদ্যালয়ে। আমাদের দেশে উপাসনালয়ের পর বিদ্যালয়কে ভাবা হয় সবচেয়ে পবিত্র স্থান। কিন্তু সেখানেই শত শত শিক্ষার্থীর সামনে একজন শিক্ষিকা খুন হলেন। ঘটনাটি ঘটেছে গত রোববার পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ভায়নাপাড়া


সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। মধ্যাহ্নবিরতিতে শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলছিল আর শিক্ষিকা শ্রেণীকক্ষে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সেই সুযোগে ঘাতক শ্রেণীকক্ষে ঢুকে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আরিফা খাতুনকে (২৮) কুপিয়ে খুন করে পালিয়ে যায়। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে রবিউল ইসলাম নামের এক ভ্যানচালককে গ্রেপ্তার করা হলেও মূল আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে।
প্রতিবেশী প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সকাল থেকেই এক যুবক ওই বিদ্যালয়ের চারপাশে ঘোরাঘুরি এবং আরিফার নাম ধরে গালাগালও করেছিল। তখন প্রত্যক্ষদর্শীদের কর্তব্য ছিল বিষয়টি প্রধান শিক্ষক বা অন্য প্রতিবেশীদের জানানো। সেই কাজটি তাঁরা করেননি কি অসচেতনতার কারণে? আরেক সূত্র বলেছে, ওই যুবকের সঙ্গে শিক্ষিকা আরিফার সম্পর্ক ছিল। কারও সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেই হত্যার অধিকার জন্মায় না। হত্যা জঘন্য অপরাধ। এ রকম দুর্বৃত্তের সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে আরিফা ঠিক কাজই করেছিলেন। ভ্যানচালকের সূত্র ধরে ঘাতককে পাকড়াও করা অসম্ভব নয়।
সরকারের নীতিনির্ধারকেরা যখন ‘আইনশৃঙ্খলা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো’ বলে ফলাও প্রচার করছেন, তখনই উপর্যুপরি হত্যাকাণ্ড ঘটে চলেছে। কয়েক দিন আগে জুরাইনে ভাড়াটে খুনিদের হাতে নিহত হন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ও তাঁর গাড়িচালক। সেই হত্যায় চারটি পিস্তল ব্যবহূত হয়েছে। অপরাধী পাকড়াওয়ের মতো অবৈধ অস্ত্র আটকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা লক্ষ করা যায় না।
শিক্ষিকা আরিফা বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন সন্তানতুল্য ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দান করতে। ঘাতকের হাতে প্রাণ দিতে নয়। আমরা তাঁর এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোক জানাই। সেই সঙ্গে তাঁর ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্য হবে অবিলম্বে ঘাতককে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোগর্দ করা। নেতা-নেত্রীদের আশ্বাসবাণী নয়, অপরাধীর শাস্তিই পারে রাষ্ট্র ও সমাজে অপরাধের মাত্রা কমিয়ে আনতে।

No comments

Powered by Blogger.