পাঠক মন্তব্য-কালো বিড়ালের পদত্যাগ দাবি

রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছিলেন, তিনি রেলের ‘কালো বিড়াল’ খুঁঁজে বের করবেন। টাকাসহ তাঁর এপিএসের গাড়ি আটকের খবরে অনেক পাঠক এখন রেলমন্ত্রীকেই সেই কালো বিড়াল বলে মন্তব্য করেছেন


‘আচ্ছা, আপনি নিজেই তাহলে সেই কালো বিড়াল? ন্যূনতম লজ্জা থাকলে পদত্যাগ করুন।’ ‘রেলমন্ত্রীর অবিলম্বে পদত্যাগ চাই। সভ্য সমাজে, সভ্য দেশে এটাই রীতি।’
প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে এই মন্তব্য দুটি করেছেন আলী হাসান ও আবদুল হালিম মিয়া। কেবল এ দুজনই নন, শত শত পাঠক গতকাল এ ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। টাকাসহ মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আটকের ঘটনার জন্য তাঁরা সবাই মন্ত্রীকেই দুষেছেন। ‘রেলমন্ত্রীর এপিএসের গাড়ি হঠাৎ পিলখানায়’ শিরোনামে গতকাল প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। রাত পৌনে নয়টা পর্যন্ত সংবাদটিতে মন্তব্য পড়েছে ৭৮০টি। প্রায় সবাই এ ঘটনার জন্য মন্ত্রীকেই দায়ী করেছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগ পাঠক মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন। পাঠকদের আরেক অংশ সুরঞ্জিতকেই ‘রেলের কালো বিড়াল’ বলে মন্তব্য করেছেন। অনেকে উদ্বিগ্ন গাড়িচালক আজম খানের নিরাপত্তা নিয়েও।
‘কালো বিড়াল’: রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছিলেন, তিনি রেলের কালো বিড়াল খুঁঁজে বের করবেন। গতকাল অনেক পাঠক এই কালো বিড়াল নিয়েই মন্তব্য করেছেন।
এ কে এম বদরুদোজ্জা লিখেছেন, ‘বিড়ালের লেজ কাটা গেছে। বিড়ালের যদি লজ্জাশরম থাকে, তবে সে আর শুঁটকি খাবে না।’
এন ইসলাম নামের এক পাঠক লিখেছেন, ‘এই হলো কালো বিড়াল। সব জলের মতো পরিষ্কার।’ রুবেল আহমেদ মন্তব্য করেছেন, ‘শুঁটকির হাটে বিড়াল চৌকিদার হলে যা হয় আর কি।’ মাহবুবুর রহমান বলেছেন, ‘রেলের কালো বিড়াল ধরতে গিয়ে থলের বিড়াল বের হয়ে গেছে!’
রহমতউল্লাহ সরকার বলেছেন, ‘অবশেষে বের হলো আমাদের রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিতের কালো বিড়াল!’ বাবুল লিখেছেন, ‘আবোলতাবোল বুঝিয়ে কোনো লাভ হবে না, সব জলের মতো পরিষ্কার। দেখা যাক সরকার কী ব্যবস্থা নেয়।’
রফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘সরষের মধ্যে ভূত আর এই ঘটনার মধ্যে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছি না।’ জামান লিখেছেন, ‘যতই চেষ্টা করুন না কেন, থলের বিড়াল তিনি আর ঢাকতে পারবেন না। ওটা আজ বের হয়েছে, কাল না হয় পরশু ওটা মুখও খুলবে।’
মোহাম্মদ রহমান বলেছেন, ‘কালো বিড়াল এত কাছে তবু ধরা যায় না!’ জারিস তালুকদার বলেন, ‘শুঁটকির বাজারে বিড়াল চৌকিদার!’ মাহফুজা বুলবুল লিখেছেন, ‘এই আমাদের রেলমন্ত্রী! তাঁর কোর্তার নিচেই কালো বিড়াল! তিনি দেশ তোলপাড় করে কালো বিড়াল খুঁজছেন!’
ফেরদৌস ইপন লিখেছেন, ‘একেই যেন বলে, চোরের দশ দিন আর গৃহস্থের এক দিন।’ মোহন খান লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের কালো বিড়াল এখন মন্ত্রী সুরঞ্জিতের গাড়িতে!!!! আশা করি প্রধানমন্ত্রী এই টাকার ব্যাপারে তাঁর মূল্যবান বাণী দেবেন।’
কুলসুম আল নজরুল বলেন, ‘কালো বিড়াল গাড়িতে। বাংলাদেশের প্রথম রেলমন্ত্রীর বাড়িতে বস্তায় ভরে গাড়িতে করে টাকা নেবার পথে এপিএসসহ রেল কর্মকতারা আটক।’
তোফাজ্জল ইসলাম লিখেছেন, ‘শুঁটকির হাটে বিড়াল চৌকিদার। বঙ্গবন্ধু ঠিকই বলেছেন, “সবাই পায় সোনার খনি, আর আমি পেয়েছি চোরের খনি।”’
সুরঞ্জিতের পদত্যাগ দাবি: পাঠকেরা মনে করেন, এ ঘটনার সঙ্গে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের যোগসাজশ আছে। তাই অনেক পাঠকই সরাসরি রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন।
মোহাম্মদ মুকুল লিখেছেন, ‘মন্ত্রীজী, আর লেকচারবাজির দরকার নেই। পদত্যাগ করুন।’ আবদুল মালেক লিখেছেন, ‘সাধারণ মানুষকে চাকরি দেওয়ার নামে কমিশন-বাণিজ্য। আর এ কমিশন মন্ত্রী সুরঞ্জিতের জন্য!!! দাদা, তোমার লজ্জা থাকা উচিত। অবিলম্বে পদত্যাগ করুন।’
এম আলাম অভি লিখেছেন, ‘রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই। শুধু রেলমন্ত্রীর কমিটি না, সরকার ও দুদক থেকে কমিটি হওয়া চাই।’ সওগাত হোসেন লিখেছেন, ‘সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।’ চৌধুরী লিখেছেন, ‘আপনার বিন্দুমাত্র লজ্জাবোধ থাকে তো, আজই পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগকে তথা পুরো জাতিকে এই লজ্জা থেকে বাঁচান।’
মাহবুব আলম লিখেছেন, ‘সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত অনেক লম্বা লম্বা কথা বলেন। উনি মনে করেন, উনিই সবচেয়ে চালাক আর সবাই বোকা। তাঁর মিথ্যাচারই প্রমাণ করে, উনি কত বড় চোর এবং দুর্নীতিবাজ...।’
হতাশা: সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মতো সাংসদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠবে এমন আশা করেননি অনেক পাঠক। তাঁরা তাঁদের হতাশাও প্রকাশ করেছেন।
মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ‘সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, তাহলে আপনার নীতিকথাগুলোও লোক দেখানো ছিল!’ আশফাকুল আরফিন লিখেছেন, ‘খুব আশাহত হলাম, আমি আসলেই ভাবতাম, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত একজন সৎ রাজনীতিবিদ।’
স্বাগত লিখেছেন, ‘শেষে কিনা দাদাও! আশা করি অচিরেই দাদা একটি ব্যাংকের মালিক হয়ে যাবেন।’ আশরাফুল আলম লিখেছেন, ‘সব মন্ত্রী এক রকম। শুধু মুখে বড় বড় কথা বলা। আসলে সব ভেজাল...।’ পঙ্কজ নাথ লিখেছেন, ‘সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এখন রসিয়ে রসিয়ে ক্যারিকেচার করে কী গল্প বলেন, তা-ই দেখার বিষয়।’ ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী লিখেছেন, ‘আমরাই খারাপ। আবারও এই চোরদেরকেই ভোট দেব।’
নিয়োগ-বাণিজ্যের টাকা: এপিএস ফারুক দাবি করেছেন, গাড়িতে থাকা ৩০ লাখ টাকা তাঁর ব্যক্তিগত। তবে পাঠকেরা মনে করেন, এটি নিয়োগ-বাণিজ্যের টাকা। মন্ত্রীকে ঘুষ দিতেই এই টাকা নেওয়া হচ্ছিল।
শামীম আহসান লিখেছেন, ‘৭০ লাখ টাকা নিয়ে রাত ১১টায় লোকজন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বাসায় যায়। ঘটনা পানির মতো পরিষ্কার। রেলওয়েতে বর্তমানে ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের সাত হাজার পদে নিয়োগ চলছে। সুতরাং এ টাকা কার, কিসের জন্য, তা দেশবাসীকে আর বলে বোঝাতে হবে না।’
মাহতাব হোসাইন বলেন, ‘যে যায় লঙ্কায়, সে-ই হয় হনুমান!’ পারভেজ বলেছেন, ‘নিয়োগ-বাণিজ্যের টাকা লেনদেন।’ হাসান আল মাহমুদ লিখেছেন, ‘ভালোই চলছে টাকার পাহাড় গড়ার খেলা।’
মুনতাসির লিখেছেন, ‘এত বড় একটা নিয়োগ হচ্ছে, নিয়োগ-বাণিজ্যের টাকা কতজনেই তো খাচ্ছে!! মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের ভাগটা কেন যাবে না?’ হাসান রাজু লিখেছেন, ‘নাম না জানা একচোখা সমাজের অন্ধ স্বভাবের মানুষ ছাড়া সবাই বুঝতে পারছে কী ঘটেছে।’ মোহাম্মদ নবী লিখেছেন, ‘সরকার কি দয়া করে সুরঞ্জিতের নামে নতুন ব্যাংক বরাদ্দ দেবেন?’
আসিফ ইকবাল লিখেছেন, ‘এ রকম কুখ্যাত মন্ত্রী ও মন্ত্রীর এপিএস সরকারে থাকলে দেশের বারোটা না বেজে পারেই না। চোরের মুখে ধর্মের কথা।’ ইশতিয়াক বলেছেন, ‘ঘটনার কলাকুশলীরা সবাই হাতের নাগালে। একেকজন একের কথা বলছেন। তবে আমার যা মেলানোর, মিলিয়ে নিয়েছি।’ কামরুজ্জামান লিখেছেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী, বুদ্ধিমান বিবেকবান মানুষ সহজেই বুঝতে পারে কী ঘটছে।’
মন্ত্রীর বাসায় যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন: রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) ইউসুফ আলী মৃধা ও এপিএস ফারুক বলেছেন, তাঁরা রাত ১১টার দিকে রেলের একটি বিষয় নিয়ে পরামর্শ করতে যাচ্ছিলেন। তবে সবাই এই দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
মামুন আহমেদ লিখেছেন, ‘আমরা সবই বুঝি, সব বুঝি।’ মাহমুদ লিখেছেন, ‘৭০ লাখ টাকা নিয়ে এত রাতে মন্ত্রীর বাসায় যাওয়ার কারণ বুঝতে কি বিজ্ঞানী হওয়া লাগবে?’ নাজমুল হুদা লিখেছেন, ‘পুরোটাই যেন বায়োস্কোপ। বাংলা সিনেমার মতো জনগণ এখনই বলে দিতে পারে, এর ফলাফল কী হবে।’ মামুন আহমেদ লিখেছেন, ‘গভীর রাতে মন্ত্রীর বাসায় মিটিং? আমরা সবই বুঝি।’
নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘এপিএস ও রেল কর্মকর্তা আটকের পর থেকে রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে বেশ বিমর্ষ ও মলিন দেখা যায়। সংবাদ সম্মেলনেও তার স্বভাবসুলভ অঙ্গ ও মুখভঙ্গি দেখা যায়নি। কথার ফাঁকে ফাঁকে হাসি দেওয়ার চেষ্টা করলেও তা স্বল্প সময়ের মধ্যে মিলিয়ে যেতে দেখা গেছে।’
বিচারের দাবি: এপিএসের গাড়িতে এত টাকা থাকা এবং এই ঘটনার সঙ্গে মন্ত্রীর সংশ্লিষ্টতা খুঁজে দেখার দাবি জানিয়েছে অনেক পাঠক। সাকী রহমতউল্লাহ লিখেছেন, ‘দুদকের চেয়ারম্যান মহোদয়, আপনি তো বিরোধী দলের ওপর আপনার যত ক্ষমতা আছে তা প্রয়োগ করছেন, এবার কি জনগণের ট্যাক্সের টাকায় নেওয়া বেতন-ভাতার প্রতি সম্মান দেখিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন?’
সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে নাজিম আহমেদ লিখেছেন, ‘বড় চোরের সহকারী চোরেরা ধরা পড়েছে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবার যা-ই বলেন না কেন, তিনি ধরা খেয়ে গেছেন। পুলিশদের উচিত হবে মন্ত্রীসহ সবাইকে ধরে বিচারের মাধ্যমে ওদের মুখোশ খুলে দেওয়া।’
চালকের নিরাপত্তা দাবি: অনেক পাঠকই এপিএস ওমর ফারুকের গাড়িচালক আজম খানের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। জুবায়ের নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘বোঝাই যাচ্ছে, এখানে একমাত্র গাড়িচালক সত্য কথা বলছেন। কেউ ছিনতাই করার জন্য পিলখানায় ঢোকে? হাস্যকর। বেচারা ড্রাইভারের জন্য মায়া, তাঁকে এই আমলারা এখন শেষ করে দেবেন।’
জাওয়াদ মন্তব্য করেছেন, ‘কোনো বিচার হবে না জানি। যত দোষ ওই ড্রাইভারের। ওকে রিমান্ডে নিয়ে বাপ-দাদাসহ সব পূর্বপূরুষের নাম ভুলিয়ে দিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করা হবে যে, সেই টাকা ছিনতাই করতেই গাড়ি বিজিবির সদর দপ্তরে ঢুকিয়ে দিয়েছিল।’
মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন লিখেছেন, ‘অবিলম্বে গাড়িচালক আজমের মুক্তি দাবি করছি এবং তাঁকে সরাসরি টেলিভিশনের মাধ্যমে তাঁর বক্তব্য প্রচার করার জোর দাবি জানাচ্ছি। বাকি তিনজনকে আইনি হেফাজতে নেওয়া হোক।’
নাসির উদ্দিন লিখেছেন, ‘গাড়িচালক আজমের জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও আমরা চিন্তিত। সত্য ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তাঁর কণ্ঠকে চিরতরে বন্ধ করে দেওয়ারও ষড়যন্ত্র হতে পারে।’
বাহার উদ্দিন ভুঁইয়া লিখেছেন, ‘আমি চিন্তা করছি বেচারা ড্রাইভারের জন্য। কারণ, তাঁকে তো তদন্তের নামে রিমান্ডে নিয়ে মেরে ফেলা হবে, যেন সত্য কোনো দিন প্রকাশ না পায়। সুতরাং তাঁকে কীভাবে বাঁচানো যায়, সবাই তা নিয়ে চিন্তা করেন।’

No comments

Powered by Blogger.