বদলে যাও বদলে দাও মিছিল-দেশ কারও নিজের সম্পত্তি নয় by মির্জা শাহনেওয়াজ লতিফ

বদলে দাও বদলে যাও মিছিল’-এ দেশের বিভিন্ন জরুরি সমস্যা ও নির্বাচিত চারটি ইস্যু নিয়ে অব্যাহত আলোচনা হচ্ছে। আজ দেশের তরুণদের সংকট ও জাগরণ বিষয়ে বদলে যাও বদলে দাও মিছিল ব্লগের নিয়মিত লেখক মির্জা শাহনেওয়াজ লতিফ-এর লেখাটি ছাপা হলো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘দেশ মানুষের সৃষ্টি। দেশ মৃন্ময় নয়, সে চিন্ময়। মানুষ যদি প্রকাশমান হয়, তবেই দেশ প্রকাশিত।’ একদম মনের কথা তিনি বলেছেন। আমরা নতুনেরা যে রকম করে ভাবব, যে রকম কাজ করব, দেশ সেটাই বহির্বিশ্বে আমাদের পরিচয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে। তাই আমরা স্বপ্ন দেখতেই পারি, এক দিন প্রকৃত জাগরণ উঠবেই। তরুণ আর নবপ্রাণের মানুষেরা জেগে উঠবে। তাদের কর্মে-পরিচয়ে গোটা বিশ্বে বাংলাদেশ ছড়িয়ে পড়বে। সাম্প্রতিক অনেক সফল মানুষের মধ্যে আমাদের এটা বুঝতে বাকি নেই, বিদেশে আমাদের তরুণেরা অনেক মৌলিক কাজ করছে। ইন্টারনেট-ভিত্তিক অনেক জায়গায় তাদের বিশ্বনেতা বলা হচ্ছে। আমরা যদি মূল্যায়ন করি, আমাদের দেশে যেসব মেধাবী তরুণ আছে, তাদের জন্য এখন কয়টি রাস্তা খোলা আছে? সরকারি চাকরি (বিসিএস), কয়েকটি বেসরকারি ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির চাকরি, ব্যাংকের চাকরি, বিদেশে পড়তে গিয়ে আশ্রয় খোঁজা—অন্যথায় বেকার থাকা! এই তো চিত্র।
তরুণদের আরও সুযোগ দিতে হবে। তাদের নিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজকে আরও গভীরভাবে ভাবতে হবে। কারণ, যুবকেরা যা ভাবতে পারে, বয়স্করা তা পারেন না; সত্যিই পারেন না। দেশে আউটসোর্সিং করে এখন অনেকে ভালো করছে। গার্মেন্টস সেক্টর বিকাশে এখনো আমরা ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারলাম না। মরিশাস পর্যটন ব্যবসায় ভালো, তাই দুনিয়ার ভালো হোটেল ম্যানেজমেন্টের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেখানেই। আমার দেশে কেন বারবার যেখানে-সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে? এগুলো কোন কোন রাজনৈতিক সরকারের অনৈতিক হূৎপুষ্ট, এটাও আমরা জানি। পৃথিবীতে কয়টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেগুলো ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিং অর্জন করতে পেরেছে? সরকার নিজেই যদি শিক্ষা-ব্যবসায় নামে, তাহলে তো কিছুই বলার থাকে না। নব্বইয়ের পর একটি সরকারের কাছ থেকেও আন্তর্জাতিক মানের কয়েকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কথা কেন ভাবা হলো না? এর রহস্য কী? কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তিতে দেশের ছেলেমেয়েরা অনেক এগিয়েছে; কিন্তু দেশের সরকারি ওয়েবসাইটগুলো দেখলে খুব কষ্ট হয়। আমাদের সরকারব্যবস্থাই এমন—নতুনদের গ্রহণ করতে চায় না। রাজনীতিতে সেই পুরোনো পরিবারগুলোই জেঁকে বসেছে। তরুণদের, নতুনদের দ্বার রুদ্ধ। রাজার ছেলেই রাজা হবে আর প্রজাদের লুটে খাবে—জমিদারি আমলের মতো।
শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের একটি কথা মনে পড়ে গেল, ‘বন্ধুরা—এ দেশ হিন্দুর নয়, এ দেশ মুসলমানেরও নয়, এ দেশকে যে নিজের ভাববে, এ দেশ তার। এ দেশের কল্যাণ দেখে যার মন আনন্দে ভরে উঠবে, এ দেশ তার। আর তার এবং তাদের এ দেশ এবং যারা এ দেশের সাধারণ মানুষের স্বাধীনতার জন্য সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছে ও ভবিষ্যতে দেবে।’ আওয়ামী লীগ গত নির্বাচনে একটি বিষয়ে অঙ্গীকার করেছিল, তারা সরকার গঠন করলে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সম্পদের হিসাব দেবেন। আমরা তরুণ প্রজন্ম চাই, এরপর কোনো সরকার যেন এ রকম ভয়াবহ মিথ্যাচার করে ক্ষমতায় আসতে না পারে। সবাই সোচ্চার হোন। পত্রিকা অফিসগুলোতে ফোন করুন, ই-মেইল করুন, চিঠিপত্র বিভাগে লিখুন। ওয়েবসাইটগুলোতে এসব ওয়াদার তথ্য জানিয়ে দিন।
অনেকে এটুকু পড়েই হয়তো আমাকে বিএনপির একজন খাসা সমর্থক মনে করছেন। আসলে এবার আওয়ামী লীগ অসত্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। আমরা যদি মুখ না খুলি, এর পরেরবার বিএনপি একইভাবে আসবে? স্টপ জেনোসাইড, স্টপ করাপশন, স্টপ্ট দ্য লায়ার্স! তরুণ বন্ধুরা, যদি আমাদের দেশের টাকার হিসাব না নিই, তবে তারা ইচ্ছেমতো মিথ্যা আশ্বাস দিতে ভয় পাবে না। আওয়ামী লীগ এখন তাদের অনেক অঙ্গীকার অস্বীকার করছে। এ জন্য আমাদের তরুণদের আরও সচেতন হতে হবে। এরপর কেউ মিথ্যা বললে তাদের যেন বুক কাঁপে। আর কেউ যেন সকিনা বিবিকে ঠকাতে না পারে। ‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?’ জেগে না ওঠার আর কোনো বিকল্প নেই।
তরুণ বন্ধুরা, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ২০০৮ পড়ুন http://198.104.176.144/ autoalbd/ images/stories/election2008/al_manifesto_2008.pdf। অগ্রাধিকারের বিষয় হিসেবে এখানে ২ নম্বর অনুচ্ছেদসহ আরও কয়েক জায়গায় এ কথা উল্লেখ রয়েছে। তাদের নেতা-নেত্রীরাও সে সময় বিভিন্ন জনসভায় দৃঢ়চিত্তে এই ওয়াদা করেছিলেন।
কারও কাছে এসব প্রতিশ্রুতির ভিডিও লিংক বা অন্য কোনো লিংক থাকলে দয়া করে শেয়ার করবেন। আমার পরিচিত অনেক আওয়ামী লীগের সাংসদ এই তিন বছরে অগাধ সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। এমন অনেকেই আমার আত্মীয় ও কাছের মানুষ হওয়ায় আমার চোখে হয়তো ব্যাপারটা বেশি পড়েছে। আমরা আর এই গরিব জনসাধারণের জাতীয় সম্পদ লুটপাটের দৃশ্য দেখতে চাই না। আপনার ভোটে তারা আজ মহাক্ষমতাবান। মনে রাখবেন, ভয়ের দিন ফুরাল বলে। তারেক জিয়া, জয়নাল হাজারী, শামীম ওসমান, বাবরেরা কেউ আজ আর অসীম ক্ষমতা নিয়ে যা ইচ্ছা করতে পারে না। সত্যের ক্ষমতায় বিশ্বাস রাখতে হবে। তরুণদের কোনোভাবেই নিরাশ হলে চলবে না। কণ্ঠ তুমি উঁচুতে তোলো নবীন। হিসাব চাও। কোথা থেকে এত সম্পত্তি এল এই সংসদ সদস্যদের কাছে। হিসাব চাই।
অসহায়ের মতো চিল্লাব। আমার চিল্লানিতে কোনো ত্রাতা যদি এগিয়ে আসে, সেই ভরসায়। আসুন, সবাই এক হই। সম্পত্তির হিসাব চান। আমি আমার নির্বাচনী এলাকার সাংসদের নির্বাচনের সময় ঘোষিত সম্পদ ও বর্তমানের সম্পদের হিসাব চাইব। হাইকোর্টে রিট পিটিশন করব। কেউ সাহায্য করলে আরও সহজ হতো ব্যাপারটা। কেউ সাহায্য না করলেও খুব সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। কারণ, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে’ নীতি উত্তম। ১৬ কোটি মানুষ পাহারাদার হয়ে গেলে চোরেরা পালাবে কোথায়? ঘিরে ধরব চারপাশে। আপনারা যাঁরা বিভিন্ন দুর্নীতির খবর জানেন, তাঁরা প্রমাণসহ লিখুন। আমাদের টাকা নিয়ে যাবে কই? ‘জাগো বাহে কুনঠে সবায়...’
মির্জা শাহনেওয়াজ লতিফ
msl_leo2004@yahoo.com
যোগ দিন ফেসবুক পেজে : www.facebook.com/bjbdmichil

No comments

Powered by Blogger.