মন্ত্রীর এপিএস আটক নাটক-টাকার উৎস ও গন্তব্য জানতে হবে

রেলমন্ত্রীর এপিএস আটক নিয়ে মধ্যরাতের নাটকের পর রহস্য এখনও রহস্যই রয়ে গেছে। প্রায় মধ্যরাতে রেলমন্ত্রীর এপিএসের গাড়ি পিলখানার গেটে আটক। এপিএস ছাড়াও গাড়িতে থাকা রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিপুল পরিমাণ টাকা রহস্যের জন্ম দিয়েছে।


রেলমন্ত্রীর এপিএস, রেলওয়ের পূর্ব জোনের জেনারেল ম্যানেজারও কথা বলেছেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। গাড়িচালকের বক্তব্যও জানা গেছে। মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে দিনভর আলোচনা হয়েছে। গল্পের ডালপালা ছড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রীও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি পনেরো দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিয়ে দিনভর আলোচনা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক নয়। এ ঘটনার সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত রয়েছে। একদিকে যেমন শোনা গেছে নিয়োগবাণিজ্যের কথা, তেমনি এই টাকা ঘুষ দেওয়ার জন্য বহন করা হচ্ছিল- এমন কথাও শোনা গেছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিয়োগবাণিজ্য কিংবা ঘুষ লেনদেনের ব্যাপারটি একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। রাজনৈতিক সরকারের আমলে সরকারি দলের ছত্রছায়ায় থাকা একশ্রেণীর অসাধু ব্যক্তি নানা বাণিজ্যে নিজেদের পকেট ভারী করার কাজটি করে থাকেন। এর দায় শেষ পর্যন্ত সরকারের ওপর এসে বর্তায়। অভিযোগ উঠেছে, মন্ত্রীর এপিএসের গাড়ি থেকে যে টাকা উদ্ধার করা হয়েছে, তা ঘুষের টাকা। চট্টগ্রাম থেকে রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার এই ঘুষের টাকা নিয়ে ঢাকা এসেছিলেন। চট্টগ্রামে রেলওয়ের চাকরি দেওয়ার নামে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ঘুষবাণিজ্যের কথা শোনা গেছে। রেলওয়ের জিএম নিয়োগ চূড়ান্ত করতেই ঢাকা এসেছিলেন বলে খবরে প্রকাশ। মন্ত্রীর এপিএস সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এ টাকা তাঁর। মন্ত্রী বলেছেন, এপিএস নির্দিষ্ট একটি সময়ের পর কোথায় কী করে, এটা জানা তাঁর দায় নয়। কিন্তু তিনি কি এ কথা বলে তাঁর দায় এড়িয়ে যেতে পারেন? ঘটনা যেভাবে সংবাদমাধ্যমে এসেছে, তাতে এটা মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক যে অবৈধ টাকার ভাগাভাগি নিয়েই এমন একটি ঘটনা ঘটে গেছে। কতগুলো সমীকরণ একসঙ্গে মিলে যাওয়ায় এমনটি মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। একদিকে চট্টগ্রামে রেলওয়ের বেশ কিছু পদে নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়া। গাড়িতে মন্ত্রীর এপিএসের সঙ্গে রেলওয়ের জিএম ও নিরাপত্তা কর্মকর্তার উপস্থিতি ইত্যাদি নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। গাড়ির ড্রাইভার বলেছেন, সব টাকাই অবৈধ। অন্যদিকে টাকার মালিকানার দাবিদার রেলমন্ত্রীর এপিএস ওমর ফারুক। মন্ত্রীর এপিএসের ভাষ্য অনুযায়ী, তাঁর এক নিকটাত্মীয় লন্ডন থেকে টাকা পাঠিয়েছেন। সেই টাকা নিয়ে তিনি যাচ্ছিলেন। তিনি টাকা নিয়ে কোথায় যাচ্ছিলেন সেটা বের করাও জরুরি।
বলার অপেক্ষা রাখে না, রেলমন্ত্রীর এপিএসের আটক হওয়া ও টাকা উদ্ধারের ঘটনা মহাজোট সরকারকে বড় একটা প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেলওয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ রেলওয়েতে ইতিবাচক কিছু পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল। কিন্তু তাঁর এপিএসের গাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের ঘটনা মন্ত্রীকেও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এসব প্রশ্নের জবাব জানা জরুরি। টাকার রহস্যও উন্মোচিত হতে হবে। হতেই পারে, এই টাকা মন্ত্রীর এপিএসের। কিন্তু এই টাকার উৎস কী- সেটা জানার অধিকার দেশের মানুষের আছে। সে ক্ষেত্রে গাড়িচালকের ভূমিকা নিয়ে যে কথা বলা হচ্ছে, সেটাও ফেলে দেওয়ার নয়। গাড়িচালক ব্ল্যাকমেইল করতে চাইলে কেন এই পথটি বেছে নেবেন- সে প্রশ্নটাও তো বড় হয়ে দেখা দিতে পারে।
মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর নানা বাণিজ্যের কথা শোনা গেছে। টাকা উদ্ধারের ঘটনা নিয়োগবাণিজ্যের অন্ধকার দিকটি নতুন করে সামনে নিয়ে এলো। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তদন্তের আগেই মন্ত্রী নিজের ভাষ্য দিয়েছেন। মন্ত্রীর বক্তব্য যেন তদন্তকে প্রভাবিত না করে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, এই রহস্য যেন রহস্যই থেকে না যায়। টাকার উৎস সবার কাছে পরিষ্কার হওয়া দরকার।

No comments

Powered by Blogger.