তথ্যপ্রযুক্তি-একই নিলামে থ্রি জি এবং ফোর জি লাইসেন্স নয় by জাকারিয়া স্বপন
সরকার আসলে ভবিষ্যতের একটি লাইসেন্সকে বর্তমান সময়ে বিক্রি করে দিতে চাইছে। এতে একটি ক্ষতিকর দিক রয়েছে। এ লাইসেন্স যদি আজ থেকে ৪-৫ বছর পর নিলামে তোলা হয়, তখন দেশ যে পরিমাণ টাকা পেত, সেই পরিমাণ টাকা কি দেশ এখন পাবে? দেশ আসলে আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) একটি অদ্ভুত দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছে। তারা মোবাইল ফোনের থ্রি জি এবং ফোর জি সেবা প্রদানের লাইসেন্স এক সঙ্গে এক নিলামে একই কোম্পানিগুলোকে এক মূল্যে দুটি লাইসেন্স দেওয়ার খসড়া নীতিমালা টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। সে খসড়াটি দেখার সুযোগ আমার হয়েছে এবং সেখানে অনেক কিছু নিয়েই কথা বলার সুযোগ রয়েছে। সেগুলো নিয়ে পরবর্তী সময়ে কথা হবে। তার আগে গোড়ায় গলদটি ঠিক করা প্রয়োজন। বিষয়টি একটু খুলে বলা যাক, কারণ অনেক পাঠকের কাছেই হয়তো বিষয়গুলো ততটা পরিষ্কার নাও থাকতে পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশে যে মোবাইল প্রযুক্তি রয়েছে তার নাম হলো টু জি। পনেরো বছর আগে এরা বাংলাদেশে অপারেশন শুরু করেছিল। গত নভেম্বরে তাদের সেই লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে এবং প্রতিটি কোম্পানি তাদের পুনঃনবায়ন ফি জমা দিয়ে রাখলেও বিটিআরসি তাদের লাইসেন্স দিতে পারেনি। লেনদেনের টানাটানিতে বিষয়টি এখন আদালতে রয়েছে। অন্যদিকে পাঁচটি মোবাইল ফোন কোম্পানি বাংলাদেশে বিনা লাইসেন্সে পাঁচ মাস ধরে দিব্যি অপারেট করে যাচ্ছে (এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি!)।
টু জি প্রযুক্তির পরের ধাপ হলো থ্রি জি এবং তারপর ফোর জি। এ মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো যখন টু জি লাইসেন্স নবায়নের জন্য অপেক্ষা করছে, তখন বিটিআরসি মাঠে নেমেছে পরবর্তী প্রজন্মের লাইসেন্স থ্রি জি এবং ফোর জি নিয়ে। থ্রি জি এবং ফোর জি দুটি আলাদা প্রকৃতির লাইসেন্স এবং এর থেকে সরকারি আয়ের মাপকাঠিও ভিন্ন। এরা আপাদমস্তক দুটি ভিন্ন লাইসেন্স। এ দুটি লাইসেন্স যদি আলাদা আলাদা নিলামে দেওয়া হতো, আলাদা আবেদন করা হতো_ তাহলে হয়তো বিপত্তি ঘটতো না। কারণ যারা থ্রি জি নেবে, তারা সবাই যে ফোর-জি নেবে তেমন কোনো কথা নেই। আর যারা টু জি করবে, তাদের সবাইকে যে একই সঙ্গে থ্রি জি এবং ফোর জি নিতে হবে_ তারও কোনো কথা নেই। পৃথিবীতে অনেক মোবাইল ফোন কোম্পানি আছে, তারা টু জি থাকতে চায়। আর নতুন বিনিয়োগে যেতে চায় না। আবার কেউ আছে, ফোর জি করবে, থ্রি জি আর করবে না।
পাশাপাশি আরেকটি বিষয় বুঝতে হবে। ফোর জি প্রযুক্তি এখনও সারা পৃথিবীতে স্ট্যান্ডার্ড হয়নি এবং এর নেটওয়ার্ক ও মোবাইল ফোনের দামও আকাশছোঁয়া। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ার মতো ধনী কিছু দেশে এটা নিয়ে মাত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এটা হয়তো এখুনি অ্যাফোর্ড করতে পারবে না। যেখানে আমরা এখনও থ্রি জির স্বাদ পেলাম না, সেখানে কেন এখনি ফোর জি লাইসেন্স?
কোনো একটি দুষ্টু লোকের মাথা থেকে এই কুবুদ্ধিটা এসেছে। তারা আসলে একই নিলামে দুটি লাইসেন্স দিয়ে টাকাটা এখুনি ঘরে তুলে নিতে চাইছে। কারণ ফোর জি লাইসেন্স এখন দিয়ে দিলে, ফাইভ জি আসার এখনও অনেক দেরি। আগামী দশ বছর অন্তত এই লাইসেন্স নিয়ে কেউ কথা বলবে না। এটা খুবই খারাপ একটি চিন্তা। এটা টেলিকমের স্বাভাবিক গতিশীলতাকে নষ্ট করবে। বিটিআরসি আরও বেশি বিতর্কে এবং যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।
সরকারের যদি অগ্রিম টাকার প্রয়োজন হয়, তাহলে সে লাইসেন্স দুটি ভিন্ন সময়ে নিলাম ডাকতে পারে। একই কোম্পানিকে জোর করে থ্রি জি এবং ফোর জি লাইসেন্স দিতে হবে কেন? দুটি ভিন্ন লাইসেন্স দেওয়া হলে, যে যার প্রয়োজনমতো লাইসেন্স নেবে। পৃথিবীর আর কোনো দেশে এভাবে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমার জানায় কমতি থাকতে পারে। যদি কেউ কোথাও কোনো উদাহরণ পান, তাহলে দয়া করে আমাদের আপডেট করতে পারেন।
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার আসলে ভবিষ্যতের একটি লাইসেন্সকে বর্তমান সময়ে বিক্রি করে দিতে চাইছে। এতে একটি ক্ষতিকর দিক রয়েছে। এ লাইসেন্স যদি আজ থেকে ৪-৫ বছর পর নিলামে তোলা হয়, তখন দেশ যে পরিমাণ টাকা পেত, সেই পরিমাণ টাকা কি দেশ এখন পাবে? দেশ আসলে আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তার চেয়েও বড় ঝুঁকির মুখে পড়বে অপারেটররা। তাদের দুটি লাইসেন্সের টাকা এক সঙ্গে দিতে হবে। কিন্তু সাধারণ প্রক্রিয়ায় একটি লাইসেন্সের নির্দিষ্ট সময় পরে আরেকটি লাইসেন্স দেওয়া হলে সেটা সবার জন্যই মঙ্গল হতো। পৃথিবীটা এভাবেই চলছে। আমাদের নিজস্ব কিছু এজেন্ডা আছে বলে আমরা সে নিয়মগুলো মানতে চাইছি না।
বিষয়টি নিয়ে কেউ যদি আদালতের শরণাপন্ন হন, তাহলে তখন অবশ্য পুরো লাইসেন্সিং প্রক্রিয়াই বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আম-ছালা দুটিই যাবে। তাই বিটিআরসির উচিত হবে_ ক. থ্রি জি ও ফোর জি লাইসেন্স আলাদা আলাদা করে অফার করা
এবং খ. সরকার যদি আগাম লাইসেন্স বিক্রি করে টাকা তুলতে চায় (সরকার এ খাত থেকে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা তুলতে চায়), তাহলেও যেন একই সময়ের ভেতর দুটি ভিন্ন নিলাম করা হয়। সে ক্ষেত্রে যাদের থ্রি জি প্রয়োজন তারা থ্রি জি নেবে, যাদের ফোর জি প্রয়োজন তারা ফোর জি নিক, আর যাদের দুটিই প্রয়োজন তারা দুটির জন্যই আলাদাভাবে আবেদন করুক।
এক নিলামে দুই লাইসেন্স_ কোনো অবস্থাতেই নয়। ভবিষ্যতে বিটিআরসির এমন গোঁয়ার্তুমি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যে কেউ আদালতের শরণাপন্ন হবে না_ কে জানে! ভারতে তো অনেক কিছু হয়ে গেল এই লাইসেন্স ঘাপলা নিয়ে। আবার বিগত সরকারের আমলে ওয়ারিদকে (এয়ারটেল) বাংলাদেশে আনার জন্য যে নাটক করা হয়েছিল, কই এত কিছু করে কি তাকে রক্ষা করা গেল? ওটার বর্তমান মালিক তো এয়ারটেল_ তাই না? তাই এমন অতি চালাকি না করাই ভালো। এগুলো করে শেষ রক্ষাটা হয় না।
জাকারিয়া স্বপন :তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও
কলাম লেখক
zs@priyo.com
বর্তমানে বাংলাদেশে যে মোবাইল প্রযুক্তি রয়েছে তার নাম হলো টু জি। পনেরো বছর আগে এরা বাংলাদেশে অপারেশন শুরু করেছিল। গত নভেম্বরে তাদের সেই লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে এবং প্রতিটি কোম্পানি তাদের পুনঃনবায়ন ফি জমা দিয়ে রাখলেও বিটিআরসি তাদের লাইসেন্স দিতে পারেনি। লেনদেনের টানাটানিতে বিষয়টি এখন আদালতে রয়েছে। অন্যদিকে পাঁচটি মোবাইল ফোন কোম্পানি বাংলাদেশে বিনা লাইসেন্সে পাঁচ মাস ধরে দিব্যি অপারেট করে যাচ্ছে (এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি!)।
টু জি প্রযুক্তির পরের ধাপ হলো থ্রি জি এবং তারপর ফোর জি। এ মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো যখন টু জি লাইসেন্স নবায়নের জন্য অপেক্ষা করছে, তখন বিটিআরসি মাঠে নেমেছে পরবর্তী প্রজন্মের লাইসেন্স থ্রি জি এবং ফোর জি নিয়ে। থ্রি জি এবং ফোর জি দুটি আলাদা প্রকৃতির লাইসেন্স এবং এর থেকে সরকারি আয়ের মাপকাঠিও ভিন্ন। এরা আপাদমস্তক দুটি ভিন্ন লাইসেন্স। এ দুটি লাইসেন্স যদি আলাদা আলাদা নিলামে দেওয়া হতো, আলাদা আবেদন করা হতো_ তাহলে হয়তো বিপত্তি ঘটতো না। কারণ যারা থ্রি জি নেবে, তারা সবাই যে ফোর-জি নেবে তেমন কোনো কথা নেই। আর যারা টু জি করবে, তাদের সবাইকে যে একই সঙ্গে থ্রি জি এবং ফোর জি নিতে হবে_ তারও কোনো কথা নেই। পৃথিবীতে অনেক মোবাইল ফোন কোম্পানি আছে, তারা টু জি থাকতে চায়। আর নতুন বিনিয়োগে যেতে চায় না। আবার কেউ আছে, ফোর জি করবে, থ্রি জি আর করবে না।
পাশাপাশি আরেকটি বিষয় বুঝতে হবে। ফোর জি প্রযুক্তি এখনও সারা পৃথিবীতে স্ট্যান্ডার্ড হয়নি এবং এর নেটওয়ার্ক ও মোবাইল ফোনের দামও আকাশছোঁয়া। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ার মতো ধনী কিছু দেশে এটা নিয়ে মাত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এটা হয়তো এখুনি অ্যাফোর্ড করতে পারবে না। যেখানে আমরা এখনও থ্রি জির স্বাদ পেলাম না, সেখানে কেন এখনি ফোর জি লাইসেন্স?
কোনো একটি দুষ্টু লোকের মাথা থেকে এই কুবুদ্ধিটা এসেছে। তারা আসলে একই নিলামে দুটি লাইসেন্স দিয়ে টাকাটা এখুনি ঘরে তুলে নিতে চাইছে। কারণ ফোর জি লাইসেন্স এখন দিয়ে দিলে, ফাইভ জি আসার এখনও অনেক দেরি। আগামী দশ বছর অন্তত এই লাইসেন্স নিয়ে কেউ কথা বলবে না। এটা খুবই খারাপ একটি চিন্তা। এটা টেলিকমের স্বাভাবিক গতিশীলতাকে নষ্ট করবে। বিটিআরসি আরও বেশি বিতর্কে এবং যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।
সরকারের যদি অগ্রিম টাকার প্রয়োজন হয়, তাহলে সে লাইসেন্স দুটি ভিন্ন সময়ে নিলাম ডাকতে পারে। একই কোম্পানিকে জোর করে থ্রি জি এবং ফোর জি লাইসেন্স দিতে হবে কেন? দুটি ভিন্ন লাইসেন্স দেওয়া হলে, যে যার প্রয়োজনমতো লাইসেন্স নেবে। পৃথিবীর আর কোনো দেশে এভাবে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমার জানায় কমতি থাকতে পারে। যদি কেউ কোথাও কোনো উদাহরণ পান, তাহলে দয়া করে আমাদের আপডেট করতে পারেন।
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার আসলে ভবিষ্যতের একটি লাইসেন্সকে বর্তমান সময়ে বিক্রি করে দিতে চাইছে। এতে একটি ক্ষতিকর দিক রয়েছে। এ লাইসেন্স যদি আজ থেকে ৪-৫ বছর পর নিলামে তোলা হয়, তখন দেশ যে পরিমাণ টাকা পেত, সেই পরিমাণ টাকা কি দেশ এখন পাবে? দেশ আসলে আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তার চেয়েও বড় ঝুঁকির মুখে পড়বে অপারেটররা। তাদের দুটি লাইসেন্সের টাকা এক সঙ্গে দিতে হবে। কিন্তু সাধারণ প্রক্রিয়ায় একটি লাইসেন্সের নির্দিষ্ট সময় পরে আরেকটি লাইসেন্স দেওয়া হলে সেটা সবার জন্যই মঙ্গল হতো। পৃথিবীটা এভাবেই চলছে। আমাদের নিজস্ব কিছু এজেন্ডা আছে বলে আমরা সে নিয়মগুলো মানতে চাইছি না।
বিষয়টি নিয়ে কেউ যদি আদালতের শরণাপন্ন হন, তাহলে তখন অবশ্য পুরো লাইসেন্সিং প্রক্রিয়াই বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আম-ছালা দুটিই যাবে। তাই বিটিআরসির উচিত হবে_ ক. থ্রি জি ও ফোর জি লাইসেন্স আলাদা আলাদা করে অফার করা
এবং খ. সরকার যদি আগাম লাইসেন্স বিক্রি করে টাকা তুলতে চায় (সরকার এ খাত থেকে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা তুলতে চায়), তাহলেও যেন একই সময়ের ভেতর দুটি ভিন্ন নিলাম করা হয়। সে ক্ষেত্রে যাদের থ্রি জি প্রয়োজন তারা থ্রি জি নেবে, যাদের ফোর জি প্রয়োজন তারা ফোর জি নিক, আর যাদের দুটিই প্রয়োজন তারা দুটির জন্যই আলাদাভাবে আবেদন করুক।
এক নিলামে দুই লাইসেন্স_ কোনো অবস্থাতেই নয়। ভবিষ্যতে বিটিআরসির এমন গোঁয়ার্তুমি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যে কেউ আদালতের শরণাপন্ন হবে না_ কে জানে! ভারতে তো অনেক কিছু হয়ে গেল এই লাইসেন্স ঘাপলা নিয়ে। আবার বিগত সরকারের আমলে ওয়ারিদকে (এয়ারটেল) বাংলাদেশে আনার জন্য যে নাটক করা হয়েছিল, কই এত কিছু করে কি তাকে রক্ষা করা গেল? ওটার বর্তমান মালিক তো এয়ারটেল_ তাই না? তাই এমন অতি চালাকি না করাই ভালো। এগুলো করে শেষ রক্ষাটা হয় না।
জাকারিয়া স্বপন :তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও
কলাম লেখক
zs@priyo.com
No comments