টাকার থলে নিয়ে মন্ত্রীর বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা এপিএস বরখাস্ত-অভিযোগের তির সুরঞ্জিতের দিকে
৩০ লাখ কিংবা ৭০ লাখ—টাকার অঙ্ক যা-ই হোক, টাকার থলে নিয়ে রেলওয়ের কর্মকর্তারা মধ্যরাতে যে মন্ত্রীর বাসায় যাচ্ছিলেন, তা তো সবাই স্বীকার করেছেন। আপাতত মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিবের (এপিএস) চাকরি গেলেও অভিযোগের তির কিন্তু রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের দিকে।
এত টাকা নিয়ে মন্ত্রীর এপিএস ও রেলের কর্মকর্তা ধরা পড়লেন, তা-ও আবার পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরের গেটে। এ ঘটনায় সরকারও বিব্রত, হতভম্ব। সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকেরা এ বিষয়ে কথা বলছেন গণমাধ্যমের সঙ্গে, তবে প্রকাশ্যে নয়। তাঁরা বলছেন, একজন মন্ত্রীর কারণে সরকার ও দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন। কারও কারও মত, নৈতিকতার প্রশ্নে রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। তিনি এর দায় এড়াতে পারেন না। বিষয়টি আলোচনায় আসে কাল সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও।
ঘটনাটি সোমবার (৯ এপ্রিল) রাত ১১টার। রেলমন্ত্রীর এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইউসুফ আলী মৃধা আর রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট এনামুল হক রওনা হন ধানমন্ডির ৩ নম্বর থেকে। উদ্দেশ্য, রেলমন্ত্রীর বাড়ি। সঙ্গে টাকার থলে। হঠাৎ বিজিবির গেটে গাড়ি ঢুকিয়ে দিলেন চালক আজম খান। এরপর হইচই, নিরাপত্তাকর্মীদের তল্লাশি। গাড়ির ভেতরে মেলে টাকা। কেউ বলে ৩০ লাখ, কেউ বলে ৭০ লাখ, কেউ বলে আরও বেশি।
সোমবার রাতেই প্রথম নয়, রেলের বড়কর্তা ইউসুফ আলী মৃধা এর আগেও গিয়েছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বাসায়। এ কথা প্রথম আলোকে তিনি নিজেই বলেছেন।
এ বিষয়টি কাল ছিল মানুষের মুখে মুখে। সবার প্রশ্ন, এত টাকা নিয়ে মধ্যরাতে তাঁরা মন্ত্রীর বাসায় কেন যাচ্ছিলেন? এগুলো কার টাকা, কোত্থেকে এনেছেন? মানুষের জিজ্ঞাসা, এগুলো কি ঘুষের টাকা! প্রথম আলোর অনলাইনে এ ধরনের অনেক মন্তব্য করেছেন পাঠক।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন কিংবা সংসদীয় কমিটি এটা তদন্ত করুক।
ঘটনার পরদিন কাল বুধবার ফারুক তালুকদারকে মন্ত্রীর এপিএস পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। আর বড়কর্তা ইউসুফ আলী মৃধা গেলেন ছুটিতে। যে মাইক্রোবাসে করে টাকা নিয়ে তাঁরা মন্ত্রীর বাড়ি যাচ্ছিলেন, তার চালক আজম খানের কোনো হদিস নেই। ফারুক তালুকদার মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আজম খানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ লিখেছি। সেটি নিউমার্কেট থানায় লোক মারফত পাঠিয়েছি।’ তবে গত রাতে যোগাযোগ করা হলে নিউমার্কেট থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা শফিউল জানান, এ ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি। আজম নামে কাউকে থানায় হস্তান্তর করা হয়নি।
এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। অথচ থানায় কোনো মামলা বা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার খবর পাওয়া যায়নি। রেলওয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্যও দেয়নি। ইউসুফ আলীর বিষয়ে তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন রেল মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শশী কুমার সিংহ। অথচ ইউসুফ আলীও যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার। একই পদমর্যাদার ব্যক্তিকে দিয়ে তদন্ত করা কতটা যুক্তিযুক্ত, সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
জানতে চাইলে শশী কুমার সিংহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী ইউসুফ আলী মৃধাকে রোববার হাজির হতে নোটিশ দিয়েছি।’ তদন্ত এখন পর্যন্ত এটুকুই।
ফারুক তালুকদারের মধ্যরাতের কর্মকাণ্ডের তদন্তের ভার পড়েছে রেলমন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) আখতারুজ্জামানের ওপর। গত রাতে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘তদন্তের দায়িত্বের চিঠি পেয়েছি আজ (বুধবার)। কাল (বৃহস্পতিবার) নোটিশ দেব হাজির হতে।’ এপিএসকে সাময়িক বরখাস্তের কথা নিশ্চিত করেন তিনি।
রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই এপিএস ফারুক তালুকদার রেলের সব কর্মকর্তার ওপর খবরদারি শুরু করেন। বর্তমান মহাপরিচালক আবু তাহেরকে সরিয়ে ইউসুফ আলী মৃধাকে মহাপরিচালক করা হবে—এমন কথাও শোনা যাচ্ছিল রেলে। বর্তমান মহাপরিচালকের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০১৪ সালে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ইউসুফ আলী মৃধা রোববার রাতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে কমলাপুরে রেলওয়ের গেস্ট হাউসে ছিলেন। সোমবার সন্ধ্যায় সেখানে রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কয়েকজনের নেতার সঙ্গেও তাঁর বৈঠক হয়। এর পরই তিনি মন্ত্রীর বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা দেন।
সরকার বিব্রত: এই কেলেঙ্কারি নিয়ে দুই দিন ধরে সরকারের উচ্চপর্যায়ে তোলপাড় চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৎক্ষণাৎ বিষয়টি জেনেছেন। মন্ত্রীরা নিজেদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তাঁরা বিব্রত বোধ করেন। প্রকাশ্যে কিছু বলতে না চাইলেও এ ঘটনা নিয়ে তাঁরা বিরক্তি ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাঁরাও চান, যথাযথ তদন্ত হোক।
একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর মন্তব্য, এ ঘটনা সরকারকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। আরেকজন বলেন, ‘সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আমার রাজনৈতিক সহকর্মী। মন্ত্রিসভায়ও তিনি সহকর্মী। এটি এমনই একটি ঘটনা যে তাঁকে জিজ্ঞেসও করতে পারছি না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, একজনের ব্যক্তিগত দোষের দায়ভার দল ও সরকারের ওপর পড়ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর দলীয় ফোরামে বা ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি উত্থাপন করা হতে পারে বলে কেউ কেউ জানিয়েছেন।
নিয়োগ-প্রক্রিয়া: রেলের নিয়োগ-প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে ইউসুফ আলী মৃধা এক বছরের বেশি সময় ধরে পূর্বাঞ্চলের জিএমের পদ ধরে রাখেন। রেলের পুরকৌশল বিভাগের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ ব্যক্তি অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি-অবকাঠামো) হওয়ার রীতি। গত বছর জুন মাসে আবুল কাসেম এ পদ থেকে অবসরে যাওয়ার পর মৃধাই এডিজি-অবকাঠামো হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকতে মৃধা জিএমই থেকে যান।
এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে দরপত্র পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে কমিশন নেওয়ারও অভিযোগ আছে। রেলের বিভিন্ন পদে সাত হাজার ২৭৫ জনকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয় ২০০৮ সালে। সে লক্ষ্যে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় ৬৮টি ক্যাটাগরির সাত হাজার ১৪০ পদের। নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু হয় বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর। পদাধিকারবলে নিয়োগ কমিটির প্রধান হন পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের দুই জিএম। এ পর্যন্ত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এক হাজার ৭৭৬ জনকে।
নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে এক হাজার ১১ জনই রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের। ৩২৭ জন নিয়োগ দেওয়া হয় পশ্চিমাঞ্চলে। বাকি ৪৩৮ জন কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ৬৮টি ক্যাটাগরির এ নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় সহকারী স্টেশনমাস্টার থেকে শুরু করে সুইপারের পদও রয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছর পর রেলওয়েতে নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ নিয়ে ঘুষ-বাণিজ্য চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে, তা ইঙ্গিত দেয় যে উচ্চপর্যায়ে টাকা লেনদেন চলছে। নৈতিক অবস্থান থেকে মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি উঠতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত, যেটি মন্ত্রীর এখতিয়ারের বাইরে থাকবে। দুদক বা যে কেউ সেটি করতে পারে।’
ঘটনাটি সোমবার (৯ এপ্রিল) রাত ১১টার। রেলমন্ত্রীর এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইউসুফ আলী মৃধা আর রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট এনামুল হক রওনা হন ধানমন্ডির ৩ নম্বর থেকে। উদ্দেশ্য, রেলমন্ত্রীর বাড়ি। সঙ্গে টাকার থলে। হঠাৎ বিজিবির গেটে গাড়ি ঢুকিয়ে দিলেন চালক আজম খান। এরপর হইচই, নিরাপত্তাকর্মীদের তল্লাশি। গাড়ির ভেতরে মেলে টাকা। কেউ বলে ৩০ লাখ, কেউ বলে ৭০ লাখ, কেউ বলে আরও বেশি।
সোমবার রাতেই প্রথম নয়, রেলের বড়কর্তা ইউসুফ আলী মৃধা এর আগেও গিয়েছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বাসায়। এ কথা প্রথম আলোকে তিনি নিজেই বলেছেন।
এ বিষয়টি কাল ছিল মানুষের মুখে মুখে। সবার প্রশ্ন, এত টাকা নিয়ে মধ্যরাতে তাঁরা মন্ত্রীর বাসায় কেন যাচ্ছিলেন? এগুলো কার টাকা, কোত্থেকে এনেছেন? মানুষের জিজ্ঞাসা, এগুলো কি ঘুষের টাকা! প্রথম আলোর অনলাইনে এ ধরনের অনেক মন্তব্য করেছেন পাঠক।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন কিংবা সংসদীয় কমিটি এটা তদন্ত করুক।
ঘটনার পরদিন কাল বুধবার ফারুক তালুকদারকে মন্ত্রীর এপিএস পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। আর বড়কর্তা ইউসুফ আলী মৃধা গেলেন ছুটিতে। যে মাইক্রোবাসে করে টাকা নিয়ে তাঁরা মন্ত্রীর বাড়ি যাচ্ছিলেন, তার চালক আজম খানের কোনো হদিস নেই। ফারুক তালুকদার মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আজম খানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ লিখেছি। সেটি নিউমার্কেট থানায় লোক মারফত পাঠিয়েছি।’ তবে গত রাতে যোগাযোগ করা হলে নিউমার্কেট থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা শফিউল জানান, এ ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি। আজম নামে কাউকে থানায় হস্তান্তর করা হয়নি।
এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। অথচ থানায় কোনো মামলা বা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার খবর পাওয়া যায়নি। রেলওয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্যও দেয়নি। ইউসুফ আলীর বিষয়ে তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন রেল মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শশী কুমার সিংহ। অথচ ইউসুফ আলীও যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার। একই পদমর্যাদার ব্যক্তিকে দিয়ে তদন্ত করা কতটা যুক্তিযুক্ত, সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
জানতে চাইলে শশী কুমার সিংহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী ইউসুফ আলী মৃধাকে রোববার হাজির হতে নোটিশ দিয়েছি।’ তদন্ত এখন পর্যন্ত এটুকুই।
ফারুক তালুকদারের মধ্যরাতের কর্মকাণ্ডের তদন্তের ভার পড়েছে রেলমন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) আখতারুজ্জামানের ওপর। গত রাতে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘তদন্তের দায়িত্বের চিঠি পেয়েছি আজ (বুধবার)। কাল (বৃহস্পতিবার) নোটিশ দেব হাজির হতে।’ এপিএসকে সাময়িক বরখাস্তের কথা নিশ্চিত করেন তিনি।
রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই এপিএস ফারুক তালুকদার রেলের সব কর্মকর্তার ওপর খবরদারি শুরু করেন। বর্তমান মহাপরিচালক আবু তাহেরকে সরিয়ে ইউসুফ আলী মৃধাকে মহাপরিচালক করা হবে—এমন কথাও শোনা যাচ্ছিল রেলে। বর্তমান মহাপরিচালকের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০১৪ সালে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ইউসুফ আলী মৃধা রোববার রাতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে কমলাপুরে রেলওয়ের গেস্ট হাউসে ছিলেন। সোমবার সন্ধ্যায় সেখানে রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কয়েকজনের নেতার সঙ্গেও তাঁর বৈঠক হয়। এর পরই তিনি মন্ত্রীর বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা দেন।
সরকার বিব্রত: এই কেলেঙ্কারি নিয়ে দুই দিন ধরে সরকারের উচ্চপর্যায়ে তোলপাড় চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৎক্ষণাৎ বিষয়টি জেনেছেন। মন্ত্রীরা নিজেদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তাঁরা বিব্রত বোধ করেন। প্রকাশ্যে কিছু বলতে না চাইলেও এ ঘটনা নিয়ে তাঁরা বিরক্তি ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাঁরাও চান, যথাযথ তদন্ত হোক।
একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর মন্তব্য, এ ঘটনা সরকারকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। আরেকজন বলেন, ‘সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আমার রাজনৈতিক সহকর্মী। মন্ত্রিসভায়ও তিনি সহকর্মী। এটি এমনই একটি ঘটনা যে তাঁকে জিজ্ঞেসও করতে পারছি না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, একজনের ব্যক্তিগত দোষের দায়ভার দল ও সরকারের ওপর পড়ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর দলীয় ফোরামে বা ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি উত্থাপন করা হতে পারে বলে কেউ কেউ জানিয়েছেন।
নিয়োগ-প্রক্রিয়া: রেলের নিয়োগ-প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে ইউসুফ আলী মৃধা এক বছরের বেশি সময় ধরে পূর্বাঞ্চলের জিএমের পদ ধরে রাখেন। রেলের পুরকৌশল বিভাগের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ ব্যক্তি অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি-অবকাঠামো) হওয়ার রীতি। গত বছর জুন মাসে আবুল কাসেম এ পদ থেকে অবসরে যাওয়ার পর মৃধাই এডিজি-অবকাঠামো হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকতে মৃধা জিএমই থেকে যান।
এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে দরপত্র পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে কমিশন নেওয়ারও অভিযোগ আছে। রেলের বিভিন্ন পদে সাত হাজার ২৭৫ জনকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয় ২০০৮ সালে। সে লক্ষ্যে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় ৬৮টি ক্যাটাগরির সাত হাজার ১৪০ পদের। নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু হয় বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর। পদাধিকারবলে নিয়োগ কমিটির প্রধান হন পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের দুই জিএম। এ পর্যন্ত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এক হাজার ৭৭৬ জনকে।
নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে এক হাজার ১১ জনই রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের। ৩২৭ জন নিয়োগ দেওয়া হয় পশ্চিমাঞ্চলে। বাকি ৪৩৮ জন কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ৬৮টি ক্যাটাগরির এ নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় সহকারী স্টেশনমাস্টার থেকে শুরু করে সুইপারের পদও রয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছর পর রেলওয়েতে নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ নিয়ে ঘুষ-বাণিজ্য চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে, তা ইঙ্গিত দেয় যে উচ্চপর্যায়ে টাকা লেনদেন চলছে। নৈতিক অবস্থান থেকে মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি উঠতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত, যেটি মন্ত্রীর এখতিয়ারের বাইরে থাকবে। দুদক বা যে কেউ সেটি করতে পারে।’
No comments