মালয়েশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই-স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে এক ধাপ অগ্রগতি
বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থাকে সহজতর করার প্রয়োজনে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন সময়ের দাবি। বর্তমান সরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকসহ কয়েকটি দাতা সংস্থার কাছ থেকে বাংলাদেশের আর্থিক সহযোগিতাপ্রাপ্তির কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে
প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তাদের উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগের কারণে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে বিকল্প অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া দৃশ্যপটে এসেছে নতুন করে। এই উদ্যোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নতুন একটি ধাপ হিসেবে গণ্য। গত মঙ্গলবার কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশের যোগাযোগমন্ত্রী এবং সে দেশের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রতিনিধি দুই দেশের পক্ষে সমঝোতা চুক্তিতে সই করেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন সহায়তা কার্যক্রমে এটি হবে বড় একটি মাইলফলক। পাশাপাশি দেশ দুটির মধ্যেও সেতুবন্ধ আরো দৃঢ় করতে সহায়ক হবে এই উদ্যোগ। মালয়েশিয়ার সঙ্গে এই চুক্তি হওয়ার মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকের ওপর প্রায় একক নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে সহায়ক হবে। এ নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা হলেও এত বড় শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়নি। মালয়েশিয়ার সঙ্গে এমন সময় এই চুক্তি সম্পন্ন হলো, যে মুহূর্তে বিশ্বব্যাংক চিরাচরিত নিয়মে ক্ষমতা প্রয়োগ করছিল; যা বাংলাদেশের জন্য অপমানজনকও বটে। সমঝোতা চুক্তিটি দেশ দুটি অত্যন্ত গুরুত্বসহ বিবেচনা করছে। তার প্রমাণ পাওয়া যায় চুক্তি সম্পাদনকালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি এবং সেখান থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করা। চুক্তি অনুযায়ী সেতু নির্মাণের পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়নেও সহযোগিতা প্রদান করবে মালয়েশিয়া। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ এবং প্রযুক্তিবিনিময়ের মাধ্যমে উন্নয়ন সহায়তা করবে তারা। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতু বাস্তবায়নে মালয়েশিয়ার আগ্রহ প্রকাশ এবং এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার পরও মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের এত বড় কাজটি সম্পন্ন করার পথে বাধা আসতে পারে। আর সেই বাধাটি হয়তো বাংলাদেশের দ্বারাও হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশের উন্নয়নের বড় প্রতিবন্ধক এখানকার দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন ও বিভিন্ন মহল। বিশ্বব্যাংক যে অভিযোগ উত্থাপন করেছে, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বাংলাদেশের দুর্নীতির দুর্নামকে অস্বীকার করা যায় না। সুতরাং পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের জন্য শেষ পর্যন্ত যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা যেন ভেস্তে না যায়। আমরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
No comments