ভূমিকম্পে হঠাৎ দুলুনি, আতঙ্ক, পানিতে কম্পন

ভরদুপুরে হঠাৎ দুলুনিতে গতকাল বুধবার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকায়। বেলা দুইটা ৪৩ মিনিটের এ ভূমিকম্পের রেশ না কাটতেই বিকেল চারটা ৪৮ মিনিটে আবারও ভূকম্পন অনুভূত হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানেও অনুভূত হয় এই ভূকম্পন। ভূমিকম্পের পর বেশির ভাগ এলাকায় জলাশয়, নদী ও সাগরে পানির কম্পন সৃষ্টি হয়।


জেলে ও উপকূলীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ভূমিকম্পের সময় রাজধানীর মতিঝিল, আগারগাঁও, কারওয়ান বাজার, লালমাটিয়া, ধানমন্ডিসহ অনেক এলাকায় মানুষ বাসা ও কর্মস্থল থেকে রাস্তায় নেমে আসে। তবে ভূমিকম্পে ভবন বা জানমালের ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
আবহাওয়া বিভাগ সূত্র জানায়, ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায়। ৮ দশমিক ৭ মাত্রার প্রবল এ ভূমিকম্পের পর ইন্দোনেশিয়াসহ ভারত মহাসাগরের তীরবর্তী বেশির ভাগ দেশের উপকূলে সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায়ও এ সতর্কতা দেওয়া হয়। অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল বন্ধের নির্দেশও দেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। তবে সন্ধ্যা সাতটার দিকে ওই সতর্কতা তুলে নেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ দপ্তর—ইউএসজিএসের তথ্যানুযায়ী, সুমাত্রার স্থানীয় সময় বিকেল তিনটা ৩৮ মিনিটে এ ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল বান্দা আচেহ থেকে ৪৩৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে উত্তর সুমাত্রার পশ্চিম উপকূলে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আবহাওয়া অধিদপ্তরের কার্যালয় থেকে ভূমিকম্প কেন্দ্রের দূরত্ব ছিল দুই হাজার ৪২৬ কিলোমিটার।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় এই ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৩ দশমিক ৮ থেকে ৪। ভূমিকম্পের কেন্দ্র বাংলাদেশ থেকে প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরে হওয়ায় উঁচু ভবনগুলোতে বেশি পরিমাণে দুলুনি অনুভূত হয়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহম্মদ আনসারী প্রথম আলোকে বলেন, এ ভূমিকম্পের কেন্দ্র যদি বাংলাদেশ থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে হতো, তাহলে হয়তো রাজধানীর অনেক ভবনই ভেঙে পড়ত। গত কয়েক মাসে দেশে ও বিদেশে হওয়া বেশ কয়েকটি ভূমিকম্প সামনে একটি বড় ভূমিকম্প হওয়ার পূর্বাভাস দিচ্ছে। তাই এখন থেকেই আমাদের সাবধান হতে হবে।
দেশজুড়ে ভূকম্পন, পানিতে কম্পন: পটুয়াখালীর উপকূলসহ বিভিন্ন উপজেলায় ভূকম্পনের সময় পানিতেও কম্পনের সৃষ্টি হয়। নদ-নদী ও খাল-পুকুরের পানি উপচে ওঠে এবং কুয়াকাটা সৈকতে বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ে। এতে মানুষের মধ্যে দেখা দেয় আতঙ্ক।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূকম্পনযন্ত্র ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রভাষক মো. মনিবুর রহমান জানান, উপকূলীয় এলাকায় বেলা দুইটা ৪৩ মিনিটে ভূমিকম্প হয়। বিকেল চারটা ৪৮ মিনিটেও ভূমিকম্প হয়। এ ছাড়া বেলা দুইটা ৫৫ মিনিটে পানিতে কম্পন শুরু হয়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে।
রাঙ্গাবালী উপজেলার উপকূলীয় এলাকা চরমোন্তাজ ও বড়বাইশদিয়ার মৌডুবির বাসিন্দারা জানান, বঙ্গোপসাগর ও সাগর মোহনাসংলগ্ন নদীগুলোর পানি অস্বাভাবিকভাবে উথলে উঠলে জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। তাঁরা ট্রলার নিয়ে উপকূলের দিকে আসতে থাকেন।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তজুলপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম জানান, ভূমিকম্প শুরু হলে পুকুর, খাল ও জলাশয়গুলোতে ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়।
খুলনা আবহাওয়া দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ বলেন, খুলনায় বেলা দুইটা ৪৫ মিনিটে ১০ সেকেন্ড এবং ১৫ মিনিট পর আরও পাঁচ সেকেন্ড মৃদু ভূকম্পন অনুভূত হয়।
লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় মৃদু ভূকম্পন হয়। রামগতির পূর্ব আলেকজান্ডারের বাসিন্দা মো. কাজী দিদার জানান, ভূমিকম্পের সময় পুকুরের পানি অন্তত এক ফুট উচ্চতায় ওঠে এবং তা প্রায় ২০-২৫ মিনিট স্থায়ী হয়।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ঘোপখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রিপন কুমার জানান, ভূমিকম্পের সময় তাঁর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে বিদ্যালয় থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে।
গোপালগঞ্জ শহরের মিয়া পাড়ার মোহসিন উদ্দিন সিকদার জানান, ভূমিকম্পে এলাকার পুকুর, খাল ও বিলের পানি ফুলে ওঠে।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন ঢাকার বাইরে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিরা।)

No comments

Powered by Blogger.