আঞ্চলিক সহযোগিতা-দক্ষিণ এশিয়া যেভাবে বদলে যেতে পারে by ইমতিয়াজ আহমেদ
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ধাঁচে অর্থনৈতিক উদ্যোগের কথা ভাবছে। সার্ক গঠনের প্রথম পর্যায়ে সেটা ছিল না_ সে সময়ে কেবল কিছু কারিগরি সহযোগিতা প্রাধান্য পেয়েছে। ১৯৮০-এর দশকে সার্ক দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ছিল তাদের মোট বাণিজ্যের ৩.২ শতাংশ, ২০০৯ সালেও তা খুব একটা বেশি নয়_ ৫.৮
শতাংশ। সম্ভাবনার চেয়ে অনেক পিছিয়ে, সেটা নিয়ে দ্বিমত করা চলে না। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এটা যথেষ্ট নয়
অভিন্ন দক্ষিণ এশিয়া_ এ ধারণা একই সঙ্গে প্রাচীন এবং নতুন। সম্রাট অশোকের আমলেই (খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী) আমরা এ ধারণা পাই। তার সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল বিশাল অঞ্চলজুড়ে এবং তার দর্শন উৎকীর্ণ করা ছিল পাথরে। কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহতার পর অশোক রাজ্য জয়ের মাধ্যম হিসেবে যুদ্ধ প্রত্যাখ্যান এবং অহিংস বা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ধারণা গ্রহণ করেন। প্রকৃতপক্ষে মৌর্য সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় নীতিতেই এর প্রতিফলন দেখা যায়। তিনি দিগ্গি্বজয়ের 'সেকেলে' নীতি থেকে সরে আসেন। ১৯৫৫ সালে ভারত সফরে এসেছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি প্রধান নিকিতা ত্রুক্রশ্চেভ এবং প্রধানমন্ত্রী বুলগানিন। ৩০ নভেম্বর কলকাতায় এক জনসমাবেশে নেহরু বলেন, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ভারতবর্ষে নতুন কোনো ধারণা নয়। আমাদের জীবনে, চিন্তাধারায় ও সংস্কৃতিতে তা মিশে আছে। প্রায় ২ হাজার ২০০ বছর আগে ভারতের এক মহান সন্তান অশোক এ সংক্রান্ত ধারণা পাথরে উৎকীর্ণ করে গেছেন এবং এখনও তা টিকে আছে। তিনি বলে গেছেন, আমাদের অবশ্যই অন্যের মতের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। যিনি নিজের মতের প্রশংসা করেন এবং অন্যের বিশ্বাসে আঘাত করেন, তিনি প্রকৃতপক্ষে নিজের বিশ্বাসেরই ক্ষতি করেন। এটাই হচ্ছে সহিষ্ণুতা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সহযোগিতার শিক্ষা। প্রাচীন আমলে ধর্ম ও দর্শনের কথা বেশি বলা হতো, এখন বলছি অর্থনীতি ও সামাজিক ব্যবস্থা নিয়ে। কিন্তু আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি একই রয়ে গেছে।
দক্ষিণ এশিয়া_ এ ধারণার উত্তরাধিকার বহন করছে।
তবে অশোক সম্পর্কে সম্পূর্ণ বিপরীত মতও রয়েছে, যা কম কৌতূহলোদ্দীপক নয়। যদিও তিন যুগের মতো শাসনদণ্ড পরিচালনা করেছেন। তাকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দৃশ্যপটের বাইরে রেখে দেওয়ার চেষ্টা হয়। ব্রাহ্মণ্যবাদী ইতিহাসে অশোকের গুরুত্ব নেই। পুরাণের গ্রন্থকরা তার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাননি। এর বড় কারণ তিনি ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। কিন্তু ইতিহাস তো কেবল অতীত নয়, অতীতের অনুসন্ধানও। এ ইতিহাসের অধ্যায় বন্ধ রাখার ঘটনা অনেক। সরকারি ভাষ্যে এটাই করা হয়ে থাকে। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের সময়ের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বলি হয়েছেন যে লাখ লাখ নারী-পুরুষ-শিশু, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময়কালের গণহত্যা, দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব রাষ্ট্রে অনেক মানুষকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা_ যেমন আফগানিস্তানে বিদেশি দখলদারিত্বের আমলে, শ্রীলংকায় তামিল বিদ্রোহ দমন অভিযানে, ভারতের কাশ্মীরে, পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে, এসব ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছেই। ইতিহাসকে কালো কালিতে ঢেকে দেওয়াও তাই দক্ষিণ এশিয়ায় অবিচ্ছেদ্য অংশ।
চাণক্য (কৌটিল্য) দক্ষিণ এশিয়ারই একজন। তার অর্থশাস্ত্র (বৈষয়িক লাভের বিজ্ঞান) বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। কুটিলা থেকেই কৌটিল্য এসেছে। তবে সংস্কৃত থেকে কিছুটা ভুল অনুবাদের কারণে বৈদেশিক সম্পর্কের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে কূটনীতি। বলা হয়ে থাকে কৌটিল্য অনৈতিক পন্থা অনুসরণ করেই মৌর্য সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটিয়েছেন। বলা হয়, তিনি 'শত্রুর শত্রু আমাদের বন্ধু' মতের অনুসারী ছিলেন। আধুনিক ভারতের প্রতিবেশীদের সঙ্গে অবন্ধুসুলভ সম্পর্ককে এ নীতির ধারাবাহিকতা বলে কেউ কেউ অভিহিত করেন। প্রতিবেশী পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে তাদের বৈরী সম্পর্ক; কিন্তু ওই দুই দেশের প্রতিবেশীর সঙ্গে (রাশিয়া ও আফগানিস্তান) সম্পর্ক বন্ধুত্বের। এ জটিল-আঁকাবাঁকা পথের অনুসারী অনেক রয়েছে। এমনকি খেলার মাঠেও এর প্রতিফলন দেখা যায়। ভারত যখন তার সাবেক ঔপনিবেশিক শাসক ইংল্যান্ডের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে তখন পাকিস্তানের সমর্থন আপনাআপনি চলে যায় ইংল্যান্ডের পক্ষে। আবার ইংল্যান্ড-পাকিস্তান খেলা হলে ভারতীয়রা অতি উৎসাহে পক্ষ নেয় সাবেক ঔপনিবেশিক শাসকদের। বাংলাদেশ ঢাকায় সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ফাইনাল খেলে নিজের শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। এখন ধরে নিতে পারি যে, ইংল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের খেলা হলে ভারত ও পাকিস্তানের উগ্র সমর্থকরা ইংল্যান্ডের পক্ষেই থাকবে। বিশ্বে এমন অঞ্চল কোথায় মিলবে! ইনক্লুসিভ ইয়েট এক্সক্লুসিভ!
মোগল সাম্রাজ্য বিস্তৃত হয়েছিল এ ভূখণ্ডেই। তারা পাঁচশ' বছর শাসন করেছে। কিন্তু সে ইতিহাসও চাপা দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। কারও কারও কাছে কেবল সম্রাট শাহজাহানের আগ্রার তাজমহলের মধ্যেই এ সময়কাল সীমিত। কিন্তু তারপরও কিছু বিষয় রয়েছে, যার আবেদন উপেক্ষা করা চলে না। যেমন আমরা বলতে পারি বিরিয়ানির কথা। চাল, মাংস, ডিম, আলু এমনকি এক বা দুই ধরনের ফলের ব্যবহারে এ সুস্বাদু খাদ্য তৈরি হয়। এ জন্য চাই উপযুক্ত পাচক। দক্ষিণ এশিয়ার সর্বত্র এ খাদ্য নানা নামে চালু রয়েছে_ হায়দরাবাদী বিরিয়ানি, কাচ্চি বিরিয়ানি, লক্ষেষ্টৗ বিরিয়ানি, ফকরুদ্দিন বিরিয়ানি, হাজি বিরিয়ানি। সম্রাট আকবরের আমলে এ খাদ্য ভারতবর্ষে আসে বলে ধারণা রয়েছে।
সম্রাট আকবরের দীন-ই-এলাহি দর্শনে কিন্তু আমরা এ ধরনের মিশ্রণের প্রতিফলন দেখতে পাই। তার তারিখ-ই-ইলাহি পঞ্জিকাতেও রয়েছে একই প্রতিফলন। প্রকৃতপক্ষে বিরিয়ানি দক্ষিণ এশিয়ার ধারণার অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়ন এবং অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র একই সঙ্গে রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতি, ইতিহাস, নিরাপত্তা, পরিবেশ এমনকি সংস্কৃতি ব্যবহার করবে। একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ দিয়ে বলা যায়_ ২০১০ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত ৫০ দফা ইশতেহারে যেমন ১৯৭৪ সালের সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন, বিদ্যুৎ সরবরাহ, ট্রানজিট, টিপাইমুখ বাঁধের প্রতিক্রিয়া ও পরিবেশ স্থান পেয়েছে, তেমনি রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেড়শ'তম জন্মবার্ষিকী যৌথভাবে উদযাপনের প্রসঙ্গ। কিন্তু এটাও মনে রাখা দরকার যে, বিরিয়ানি তৈরির সময় একটি অপরিহার্য উপকরণের অভাব বিরিয়ানিকে বিস্বাদে পরিণত করতে পারে। যেমন অনেকেই বলে থাকেন, মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় মমতা ব্যানার্জির অনুপস্থিতি হাসিনা-মনমোহন বিরিয়ানি বিস্বাদ করে দিয়েছিল। আবার দক্ষিণ এশিয়ায় এটাও লক্ষণীয় যে, বিরিয়ানি দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই অনেক সময় আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্ক স্থবির হয়ে পড়ে।
চতুর্থ যে বিষয়টি বলব সেটা হচ্ছে গান্ধীর আদর্শ। তিনি বিভিন্ন চিন্তা সমন্বিত করেছেন এবং সহিষ্ণুতার পথে চলেছেন। সবার জন্য মঙ্গল হয়, এমন লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি পরস্পর বৈপরীত্যপূর্ণ শক্তির সমাবেশ ঘটাতে দ্বিধা করেননি। তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল কেবল অহিংস পন্থা অনুসরণের মাধ্যমেই ভারতের জাতীয় কংগ্রেস স্বরাজ ও রামরাজ্যের লক্ষ্য হাসিল করতে পারে।
তার এ নীতি অনেকের পছন্দ হয়নি, বিশেষ করে উগ্র হিন্দুদের। একবার গুজরাটের এক অনুষ্ঠানে তাকে এ যুগের রামরাজ্য সম্পর্কে ধারণা প্রদানের অনুরোধ করা হয়েছিল। উত্তরে তিনি হজরত আবু বকর (রা.) ও হজরত ওমরের (রা.) সময়ের কথা বলেন। দীপেশ চক্রবর্তী যথার্থভাবেই গান্ধীকে মাস্টার অ্যাট সিভিলিটি ইন অপজিশন হিসেবে অভিহিত করেন। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারতবর্ষে ভারতের জাতীয় পতাকা তোলা হয়। কিন্তু তিনি তার আশ্রমে এটা করায় অস্বীকৃতি জানান। ভ্রাতৃঘাতী হানাহানির প্রতিবাদেই তার এ অবস্থান ছিল। এখন আমরা বলতে পারি, গান্ধীর নানা মত ও পথের সমন্বয়ই দক্ষিণ এশিয়া ধারণার ভিত্তি।
সবশেষে বলব_ ঔপনিবেশিকতা কিংবা পাশ্চাত্যের কথা। এ বড় নিষ্ঠুর সময়। সাদা মানুষদের বোঝা এখনও বহন করতে হচ্ছে। বাংলা ভূখণ্ডে রক্ত ঝরেছে ১৯০ বছর। ভারতবর্ষের বেশিরভাগ স্থানে ৯০ বছর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৬ সালে লিখেছিলেন :(আক্ষরিক নয়) ব্রিটিশ শাসনের আগেও বিদেশিরা শাসন করেছে। দুয়ের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে হ্যান্ডলুম ও পাওয়ার লুমের মধ্যে পার্থক্য। হ্যান্ডলুমে তৈরি পণ্যে মানুষের হাতের আঙুলের জাদুর ছোঁয়া থাকে। জীবনের ছন্দের সঙ্গে তার মিল থাকে। কিন্তু পাওয়ার নিষ্প্রাণ, নিখুঁত এবং একঘেয়ে...।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ধাঁচে অর্থনৈতিক উদ্যোগের কথা ভাবছে। সার্ক গঠনের প্রথম পর্যায়ে সেটা ছিল না_ সে সময়ে কেবল কিছু কারিগরি সহযোগিতা প্রাধান্য পেয়েছে। ১৯৮০-এর দশকে সার্ক দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ছিল তাদের মোট বাণিজ্যের ৩.২ শতাংশ, ২০০৯ সালেও তা খুব একটা বেশি নয়_ ৫.৮ শতাংশ। সম্ভাবনার চেয়ে অনেক পিছিয়ে, সেটা নিয়ে দ্বিমত করা চলে না। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এটা যথেষ্ট নয়। সার্ক সনদও যুগোপযোগী নয়। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠার সময় সিদ্ধান্ত হয়েছিল_ সব সিদ্ধান্ত হতে হবে সর্বসম্মত। ফোরামে দ্বিপক্ষীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার বিষয়েও তারা একমত ছিলেন। শুরুর দিকে পারস্পরিক আস্থা গড়ে ওঠার পর্যায়ে এ ধরনের ধারার যুক্তি থাকতে পারে। কিন্তু কবে তা তুলে নেওয়া হবে, সেটা বলা নেই। এ জন্য ২৭ বছরও কি যথেষ্ট নয়? এখন বিশ্বায়নের যুগে এ ধারা কি অপ্রাসঙ্গিক নয়?
মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ সংস্থার যথাযথ অগ্রগতি না হওয়ার জন্য ভারত ও পাকিস্তানের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করেছিলেন। এ দুটি দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভালো নয় এবং তার প্রভাব পড়ছে সার্কেও। এ থেকে স্পষ্ট যে একটি ছাড়া অপরটি চলে না। সার্ক নেতাদের এ বিষয়টির প্রতি মনোযোগ দিতেই হবে।
ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ প্রায়শই 'চিন্ডিয়া' (চীন ও ইন্ডিয়া থেকে) ব্যবহার করেন। দুটি দেশের লোকসংখ্যা প্রায় ২৫০ কোটি। তারা হাত মেলালে বিশ্ব্বের ওপর অভাবনীয় প্রভাব পড়বে। ইতিহাস আমাদের এ তথ্যও জানায় যে, অষ্টাদশ শতাব্দীতে চীন ও ভারত ছিল বিশ্বের এক ও দুই নম্বর অর্থনৈতিক শক্তি। এখন আমরা পুনরুত্থান দেখছি। তারা নিজেদের বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে পারলে এ ক্ষমতা আরও বিকশিত হবে এবং তার সুফল ছড়িয়ে পড়বে বাইরেও।
এ জন্য চীনকে সার্কের পূর্ণ সদস্যপদ প্রদানের কথা বলা হচ্ছে। বর্তমানে চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ ২৭টি দেশ সার্কের পর্যবেক্ষকের মর্যাদা ভোগ করছে। এটাও মনে রাখা দরকার যে, চীন হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশের এক নম্বর বাণিজ্য অংশীদার এবং ভারতেরও। আমরা বলতে পারি চীন হচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে একটি দক্ষিণ এশীয় দেশ এবং তারা পূর্ণ সদস্যপদ পেলে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে সার্ক শক্তিশালী হবে এবং বর্তমান সীমাবদ্ধতাও কাটিয়ে উঠতে পারবে।
সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। মনোজগতে অনেক পরিবর্তন চাই। আমরা যদি এ অঞ্চলের পরিবর্তন ঘটাতে আন্তরিক হই_ যার লক্ষ্য হবে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিগত সমৃদ্ধি অর্জন, তাহলে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল হিসেবে বদলে যাবেই। এখন প্রয়োজন কেবল ব্যক্তি ও সামষ্টিক উদ্যোগ।
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ : অধ্যাপক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
অভিন্ন দক্ষিণ এশিয়া_ এ ধারণা একই সঙ্গে প্রাচীন এবং নতুন। সম্রাট অশোকের আমলেই (খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী) আমরা এ ধারণা পাই। তার সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল বিশাল অঞ্চলজুড়ে এবং তার দর্শন উৎকীর্ণ করা ছিল পাথরে। কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহতার পর অশোক রাজ্য জয়ের মাধ্যম হিসেবে যুদ্ধ প্রত্যাখ্যান এবং অহিংস বা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ধারণা গ্রহণ করেন। প্রকৃতপক্ষে মৌর্য সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় নীতিতেই এর প্রতিফলন দেখা যায়। তিনি দিগ্গি্বজয়ের 'সেকেলে' নীতি থেকে সরে আসেন। ১৯৫৫ সালে ভারত সফরে এসেছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি প্রধান নিকিতা ত্রুক্রশ্চেভ এবং প্রধানমন্ত্রী বুলগানিন। ৩০ নভেম্বর কলকাতায় এক জনসমাবেশে নেহরু বলেন, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ভারতবর্ষে নতুন কোনো ধারণা নয়। আমাদের জীবনে, চিন্তাধারায় ও সংস্কৃতিতে তা মিশে আছে। প্রায় ২ হাজার ২০০ বছর আগে ভারতের এক মহান সন্তান অশোক এ সংক্রান্ত ধারণা পাথরে উৎকীর্ণ করে গেছেন এবং এখনও তা টিকে আছে। তিনি বলে গেছেন, আমাদের অবশ্যই অন্যের মতের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। যিনি নিজের মতের প্রশংসা করেন এবং অন্যের বিশ্বাসে আঘাত করেন, তিনি প্রকৃতপক্ষে নিজের বিশ্বাসেরই ক্ষতি করেন। এটাই হচ্ছে সহিষ্ণুতা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সহযোগিতার শিক্ষা। প্রাচীন আমলে ধর্ম ও দর্শনের কথা বেশি বলা হতো, এখন বলছি অর্থনীতি ও সামাজিক ব্যবস্থা নিয়ে। কিন্তু আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি একই রয়ে গেছে।
দক্ষিণ এশিয়া_ এ ধারণার উত্তরাধিকার বহন করছে।
তবে অশোক সম্পর্কে সম্পূর্ণ বিপরীত মতও রয়েছে, যা কম কৌতূহলোদ্দীপক নয়। যদিও তিন যুগের মতো শাসনদণ্ড পরিচালনা করেছেন। তাকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দৃশ্যপটের বাইরে রেখে দেওয়ার চেষ্টা হয়। ব্রাহ্মণ্যবাদী ইতিহাসে অশোকের গুরুত্ব নেই। পুরাণের গ্রন্থকরা তার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাননি। এর বড় কারণ তিনি ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। কিন্তু ইতিহাস তো কেবল অতীত নয়, অতীতের অনুসন্ধানও। এ ইতিহাসের অধ্যায় বন্ধ রাখার ঘটনা অনেক। সরকারি ভাষ্যে এটাই করা হয়ে থাকে। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের সময়ের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বলি হয়েছেন যে লাখ লাখ নারী-পুরুষ-শিশু, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময়কালের গণহত্যা, দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব রাষ্ট্রে অনেক মানুষকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা_ যেমন আফগানিস্তানে বিদেশি দখলদারিত্বের আমলে, শ্রীলংকায় তামিল বিদ্রোহ দমন অভিযানে, ভারতের কাশ্মীরে, পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে, এসব ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছেই। ইতিহাসকে কালো কালিতে ঢেকে দেওয়াও তাই দক্ষিণ এশিয়ায় অবিচ্ছেদ্য অংশ।
চাণক্য (কৌটিল্য) দক্ষিণ এশিয়ারই একজন। তার অর্থশাস্ত্র (বৈষয়িক লাভের বিজ্ঞান) বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। কুটিলা থেকেই কৌটিল্য এসেছে। তবে সংস্কৃত থেকে কিছুটা ভুল অনুবাদের কারণে বৈদেশিক সম্পর্কের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে কূটনীতি। বলা হয়ে থাকে কৌটিল্য অনৈতিক পন্থা অনুসরণ করেই মৌর্য সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটিয়েছেন। বলা হয়, তিনি 'শত্রুর শত্রু আমাদের বন্ধু' মতের অনুসারী ছিলেন। আধুনিক ভারতের প্রতিবেশীদের সঙ্গে অবন্ধুসুলভ সম্পর্ককে এ নীতির ধারাবাহিকতা বলে কেউ কেউ অভিহিত করেন। প্রতিবেশী পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে তাদের বৈরী সম্পর্ক; কিন্তু ওই দুই দেশের প্রতিবেশীর সঙ্গে (রাশিয়া ও আফগানিস্তান) সম্পর্ক বন্ধুত্বের। এ জটিল-আঁকাবাঁকা পথের অনুসারী অনেক রয়েছে। এমনকি খেলার মাঠেও এর প্রতিফলন দেখা যায়। ভারত যখন তার সাবেক ঔপনিবেশিক শাসক ইংল্যান্ডের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে তখন পাকিস্তানের সমর্থন আপনাআপনি চলে যায় ইংল্যান্ডের পক্ষে। আবার ইংল্যান্ড-পাকিস্তান খেলা হলে ভারতীয়রা অতি উৎসাহে পক্ষ নেয় সাবেক ঔপনিবেশিক শাসকদের। বাংলাদেশ ঢাকায় সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ফাইনাল খেলে নিজের শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। এখন ধরে নিতে পারি যে, ইংল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের খেলা হলে ভারত ও পাকিস্তানের উগ্র সমর্থকরা ইংল্যান্ডের পক্ষেই থাকবে। বিশ্বে এমন অঞ্চল কোথায় মিলবে! ইনক্লুসিভ ইয়েট এক্সক্লুসিভ!
মোগল সাম্রাজ্য বিস্তৃত হয়েছিল এ ভূখণ্ডেই। তারা পাঁচশ' বছর শাসন করেছে। কিন্তু সে ইতিহাসও চাপা দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। কারও কারও কাছে কেবল সম্রাট শাহজাহানের আগ্রার তাজমহলের মধ্যেই এ সময়কাল সীমিত। কিন্তু তারপরও কিছু বিষয় রয়েছে, যার আবেদন উপেক্ষা করা চলে না। যেমন আমরা বলতে পারি বিরিয়ানির কথা। চাল, মাংস, ডিম, আলু এমনকি এক বা দুই ধরনের ফলের ব্যবহারে এ সুস্বাদু খাদ্য তৈরি হয়। এ জন্য চাই উপযুক্ত পাচক। দক্ষিণ এশিয়ার সর্বত্র এ খাদ্য নানা নামে চালু রয়েছে_ হায়দরাবাদী বিরিয়ানি, কাচ্চি বিরিয়ানি, লক্ষেষ্টৗ বিরিয়ানি, ফকরুদ্দিন বিরিয়ানি, হাজি বিরিয়ানি। সম্রাট আকবরের আমলে এ খাদ্য ভারতবর্ষে আসে বলে ধারণা রয়েছে।
সম্রাট আকবরের দীন-ই-এলাহি দর্শনে কিন্তু আমরা এ ধরনের মিশ্রণের প্রতিফলন দেখতে পাই। তার তারিখ-ই-ইলাহি পঞ্জিকাতেও রয়েছে একই প্রতিফলন। প্রকৃতপক্ষে বিরিয়ানি দক্ষিণ এশিয়ার ধারণার অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়ন এবং অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র একই সঙ্গে রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতি, ইতিহাস, নিরাপত্তা, পরিবেশ এমনকি সংস্কৃতি ব্যবহার করবে। একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ দিয়ে বলা যায়_ ২০১০ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত ৫০ দফা ইশতেহারে যেমন ১৯৭৪ সালের সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন, বিদ্যুৎ সরবরাহ, ট্রানজিট, টিপাইমুখ বাঁধের প্রতিক্রিয়া ও পরিবেশ স্থান পেয়েছে, তেমনি রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেড়শ'তম জন্মবার্ষিকী যৌথভাবে উদযাপনের প্রসঙ্গ। কিন্তু এটাও মনে রাখা দরকার যে, বিরিয়ানি তৈরির সময় একটি অপরিহার্য উপকরণের অভাব বিরিয়ানিকে বিস্বাদে পরিণত করতে পারে। যেমন অনেকেই বলে থাকেন, মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় মমতা ব্যানার্জির অনুপস্থিতি হাসিনা-মনমোহন বিরিয়ানি বিস্বাদ করে দিয়েছিল। আবার দক্ষিণ এশিয়ায় এটাও লক্ষণীয় যে, বিরিয়ানি দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই অনেক সময় আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্ক স্থবির হয়ে পড়ে।
চতুর্থ যে বিষয়টি বলব সেটা হচ্ছে গান্ধীর আদর্শ। তিনি বিভিন্ন চিন্তা সমন্বিত করেছেন এবং সহিষ্ণুতার পথে চলেছেন। সবার জন্য মঙ্গল হয়, এমন লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি পরস্পর বৈপরীত্যপূর্ণ শক্তির সমাবেশ ঘটাতে দ্বিধা করেননি। তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল কেবল অহিংস পন্থা অনুসরণের মাধ্যমেই ভারতের জাতীয় কংগ্রেস স্বরাজ ও রামরাজ্যের লক্ষ্য হাসিল করতে পারে।
তার এ নীতি অনেকের পছন্দ হয়নি, বিশেষ করে উগ্র হিন্দুদের। একবার গুজরাটের এক অনুষ্ঠানে তাকে এ যুগের রামরাজ্য সম্পর্কে ধারণা প্রদানের অনুরোধ করা হয়েছিল। উত্তরে তিনি হজরত আবু বকর (রা.) ও হজরত ওমরের (রা.) সময়ের কথা বলেন। দীপেশ চক্রবর্তী যথার্থভাবেই গান্ধীকে মাস্টার অ্যাট সিভিলিটি ইন অপজিশন হিসেবে অভিহিত করেন। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারতবর্ষে ভারতের জাতীয় পতাকা তোলা হয়। কিন্তু তিনি তার আশ্রমে এটা করায় অস্বীকৃতি জানান। ভ্রাতৃঘাতী হানাহানির প্রতিবাদেই তার এ অবস্থান ছিল। এখন আমরা বলতে পারি, গান্ধীর নানা মত ও পথের সমন্বয়ই দক্ষিণ এশিয়া ধারণার ভিত্তি।
সবশেষে বলব_ ঔপনিবেশিকতা কিংবা পাশ্চাত্যের কথা। এ বড় নিষ্ঠুর সময়। সাদা মানুষদের বোঝা এখনও বহন করতে হচ্ছে। বাংলা ভূখণ্ডে রক্ত ঝরেছে ১৯০ বছর। ভারতবর্ষের বেশিরভাগ স্থানে ৯০ বছর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৬ সালে লিখেছিলেন :(আক্ষরিক নয়) ব্রিটিশ শাসনের আগেও বিদেশিরা শাসন করেছে। দুয়ের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে হ্যান্ডলুম ও পাওয়ার লুমের মধ্যে পার্থক্য। হ্যান্ডলুমে তৈরি পণ্যে মানুষের হাতের আঙুলের জাদুর ছোঁয়া থাকে। জীবনের ছন্দের সঙ্গে তার মিল থাকে। কিন্তু পাওয়ার নিষ্প্রাণ, নিখুঁত এবং একঘেয়ে...।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ধাঁচে অর্থনৈতিক উদ্যোগের কথা ভাবছে। সার্ক গঠনের প্রথম পর্যায়ে সেটা ছিল না_ সে সময়ে কেবল কিছু কারিগরি সহযোগিতা প্রাধান্য পেয়েছে। ১৯৮০-এর দশকে সার্ক দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ছিল তাদের মোট বাণিজ্যের ৩.২ শতাংশ, ২০০৯ সালেও তা খুব একটা বেশি নয়_ ৫.৮ শতাংশ। সম্ভাবনার চেয়ে অনেক পিছিয়ে, সেটা নিয়ে দ্বিমত করা চলে না। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এটা যথেষ্ট নয়। সার্ক সনদও যুগোপযোগী নয়। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠার সময় সিদ্ধান্ত হয়েছিল_ সব সিদ্ধান্ত হতে হবে সর্বসম্মত। ফোরামে দ্বিপক্ষীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার বিষয়েও তারা একমত ছিলেন। শুরুর দিকে পারস্পরিক আস্থা গড়ে ওঠার পর্যায়ে এ ধরনের ধারার যুক্তি থাকতে পারে। কিন্তু কবে তা তুলে নেওয়া হবে, সেটা বলা নেই। এ জন্য ২৭ বছরও কি যথেষ্ট নয়? এখন বিশ্বায়নের যুগে এ ধারা কি অপ্রাসঙ্গিক নয়?
মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ সংস্থার যথাযথ অগ্রগতি না হওয়ার জন্য ভারত ও পাকিস্তানের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করেছিলেন। এ দুটি দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভালো নয় এবং তার প্রভাব পড়ছে সার্কেও। এ থেকে স্পষ্ট যে একটি ছাড়া অপরটি চলে না। সার্ক নেতাদের এ বিষয়টির প্রতি মনোযোগ দিতেই হবে।
ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ প্রায়শই 'চিন্ডিয়া' (চীন ও ইন্ডিয়া থেকে) ব্যবহার করেন। দুটি দেশের লোকসংখ্যা প্রায় ২৫০ কোটি। তারা হাত মেলালে বিশ্ব্বের ওপর অভাবনীয় প্রভাব পড়বে। ইতিহাস আমাদের এ তথ্যও জানায় যে, অষ্টাদশ শতাব্দীতে চীন ও ভারত ছিল বিশ্বের এক ও দুই নম্বর অর্থনৈতিক শক্তি। এখন আমরা পুনরুত্থান দেখছি। তারা নিজেদের বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে পারলে এ ক্ষমতা আরও বিকশিত হবে এবং তার সুফল ছড়িয়ে পড়বে বাইরেও।
এ জন্য চীনকে সার্কের পূর্ণ সদস্যপদ প্রদানের কথা বলা হচ্ছে। বর্তমানে চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ ২৭টি দেশ সার্কের পর্যবেক্ষকের মর্যাদা ভোগ করছে। এটাও মনে রাখা দরকার যে, চীন হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশের এক নম্বর বাণিজ্য অংশীদার এবং ভারতেরও। আমরা বলতে পারি চীন হচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে একটি দক্ষিণ এশীয় দেশ এবং তারা পূর্ণ সদস্যপদ পেলে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে সার্ক শক্তিশালী হবে এবং বর্তমান সীমাবদ্ধতাও কাটিয়ে উঠতে পারবে।
সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। মনোজগতে অনেক পরিবর্তন চাই। আমরা যদি এ অঞ্চলের পরিবর্তন ঘটাতে আন্তরিক হই_ যার লক্ষ্য হবে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিগত সমৃদ্ধি অর্জন, তাহলে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল হিসেবে বদলে যাবেই। এখন প্রয়োজন কেবল ব্যক্তি ও সামষ্টিক উদ্যোগ।
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ : অধ্যাপক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments