মরা মুরগি বিক্রয়-দায়ীদের শাস্তি দিন
বাংলায় প্রবাদ আছে, 'সর্ব অঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেব কোথা?' শরীরের সর্বত্র যদি ব্যথা অনুভূত হয় তবে কোনো এক স্থানে ব্যথানাশক দিয়ে ব্যথা নিবারণের আশা নেই। খাদ্যপণ্যের বেলায় বাংলাদেশের বিশেষত ঢাকা শহরের ক্রেতাদের অবস্থা অনেকটা সর্ব অঙ্গে ছড়িয়ে পড়া বেদনার মতো।
একজন সচেতন ক্রেতা বাজারে গিয়ে যদি ভেজাল, রাসায়নিক মুক্ত, খাঁটি কোনো বস্তু কিনতে চান, তবে তাকে খালি থলে নিয়েই ঘরে ফিরতে হবে। মাছের বাজারে এখন পুকুর বা নদীর টাটকা মাছের দেখা মেলাই ভার। যা মেলে তা হয় চাষের স্বাদহীন অথবা আমদানিকৃত মাছ। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বাজারে আনতে এবং ক্রেতার অপেক্ষায় দিনের পর দিন সংরক্ষণ করতে এ মাছে যে ফরমালিনসহ কত রাসায়নিক মেশানো হয় তার ইয়ত্তা নেই। মাংসের বাজারে গরু বলে বিক্রি হচ্ছে মহিষ, খাসি বলে বিক্রি হচ্ছে ছাগল বা ভেড়া। সবজি বাজারে আনা হচ্ছে রঙ মিশিয়ে। পচন ঠেকাতে টমেটো, শাকসবজি সবকিছুতেই রাসায়নিক মিশিয়ে ক্রেতার সামনে তরতাজা করে উপস্থাপন করা হচ্ছে। মসলায় মেশানো হচ্ছে ইটের গুঁড়া থেকে শুরু করে নানা রঙ। বিদেশ থেকে আমদানি করা রঙিন ফলকে এ দেশে পথ্য হিসেবে ব্যবহার করার রেওয়াজ আছে। কিন্তু রাসায়নিক দিয়ে সংরক্ষণ করা এ ফল জনস্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর তা নিয়েই গবেষণা হওয়া দরকার। কিছু দিন আগেও লোকে বিদেশি ফল পরিহার করে দেশি ফল খাওয়ার পরামর্শ দিত। কিন্তু ক্রমে জানা গেল দেশি ফলগুলোও নিরাপদ নয়। কৃত্রিমভাবে পাকানো এবং সংরক্ষণের জন্য এগুলোতেও সমানে রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে। রঙিন করে তোলার জন্য রঙও মেশানো হচ্ছে। সয়াবিনে মেশানো হচ্ছে পামঅয়েল। বাচ্চাদের খাবারেও মিশছে নানা ভেজাল। সহজলভ্য পানিতেও মিশছে নানা ভেজাল। ক্রেতাদের দুর্ভাগ্য এমনই যে_ ভেজাল, রাসায়নিক মিশ্রিত, পৃষ্টিহীন অনেক খাবারও কেনার জন্য গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। দ্রব্যের গুণাগুণ পরের কথা, ন্যায্যমূল্য নিয়েও কথা নেই। যা দেওয়া হচ্ছে তা নিয়েই যেন ক্রেতারা সন্তুষ্ট থাকেন সেটাই যেন বাজারের চাওয়া। পৃথিবীর কোথাও এমন বাজার-নৈরাজ্য টিকে থাকতে পারে কি-না তা ভাবা যেতে পারে। এবার খবর মিলল, বাজারে প্রতিদিন কয়েক হাজার মরা মুরগি বিক্রি হচ্ছে। পরিবহনজনিত কারণে যে মুরগি মারা যায় তাও ধ্বংস করতে চাইছে না ব্যবসায়ীরা। মরা মুরগি বেছে-কেটে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর কিংবা হোটেলে দিয়ে আসা হচ্ছে। কম দামে কিনে সেগুলো বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। মুরগি সাধারণত জবাই করে খাওয়াই নিয়ম। কিন্তু সাধারণত জবাই করার পর প্রক্রিয়াজাত করে মুরগিটিকে রান্না করে ফেলা হয়। পরে খাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে মুরগির মাংস ফ্রিজে রাখা হয়। সেটি না করলে মরা মুরগির দেহে পচন লাগে, বিষাক্ত হয়ে মাংস খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে। ফলে মরা মুরগি জনস্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। এখন এ ক্ষতিকর মুরগি বাজারজাত করার খবরও মিলল। প্রশ্ন হলো, তাহলে আর বাকি রইল কী? এক ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের খতিয়ান দেখলেই বোঝা যাবে, ভেজাল থেকে কোন বস্তুটি বাদ পড়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতকে ধন্যবাদ দিতে হয়। কেননা তাদের অভিযানের দৌলতে ভেজালের খবর ক্রেতাদের কান পর্যন্ত পেঁৗছায়। বিস্ময়কর নানা ভেজালের খবর জানার পর পত্রপত্রিকায় কিছুটা শোরগোল হয়। তারপর আর কিছু নেই। নিরুপায় ক্রেতারা বাজারে গিয়ে যে লাউ সেই কদুই কিনে আনেন। এ অবস্থা কতদিন চলবে? ব্যবসায়ীদের নীতিবোধ কি কখনও ফিরবে? যদি স্বেচ্ছায় না ফেরে তবে সরকার কি কোনো ব্যবস্থা নেবে ফেরানোর জন্য?
No comments