দুর্নীতিবান্ধব এই সংশোধনী প্রত্যাহার করা হোক-সংসদে দুদকের সংশোধিত বিল

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনের সংশোধনী প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর খুব স্বাভাবিক কারণেই এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। কারণ সংশোধনী প্রস্তাব প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদকের ক্ষমতাকে যেমন খর্ব করবে, তেমনি প্রতিষ্ঠানটিও অকার্যকর হয়ে পড়বে।


প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্য যে দুর্নীতি দমন, এই সংশোধনীর ফলে তা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। সংশোধনীর এই প্রস্তাব গত সোমবার বিল আকারে সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে। বিলটি পরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করার জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিকে দুই সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। দুদককে একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার এই সংশোধনী যাতে জাতীয় সংসদে পাস না হয়, সে ব্যাপারে আমরা সংসদীয় স্থায়ী কমিটিসহ সব সংসদ সদস্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
মন্ত্রিপরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাবিত সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর সবচেয়ে আপত্তিকর দিক হচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার আগে সরকারের অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি। প্রথমত, এই সংশোধনী প্রস্তাব বৈষম্যমূলক। দ্বিতীয়ত, এতে প্রতিষ্ঠানটি তার স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতা হারাবে। সরকারের অনুমতির ওপর নির্ভরশীল থেকে দুদকের পক্ষে স্বাধীনভাবে দুর্নীতি দমনে ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে না। দুদক চেয়ারম্যান বলেছেন, সংশোধনী প্রস্তাব দুদকের ধারণার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় এবং বর্তমান আইনে সংশোধনী আনা হলে কমিশন অকার্যকর হয়ে পড়বে।
দুর্নীতির সঙ্গে ক্ষমতার চর্চার সম্পর্ক রয়েছে। যারা ক্ষমতার চর্চা করেন ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন, তাঁদেরই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। রাষ্ট্রের যেকোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে দুদক দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করতে পারবে, আর যাদের দুর্নীতি করার আশঙ্কা বেশি, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে সরকারের অনুমতি লাগবে—এই নীতি সুস্পষ্টভাবেই দুর্নীতিবান্ধব হিসেবে বিবেচিত হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা সরকারের এই দুর্নীতিবান্ধব অবস্থান কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সরকার দুদক আইনের সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছে একতরফাভাবে। এ ধরনের একটি সংশোধনী আনার আগে এ নিয়ে দুদকের সঙ্গে যেমন পরামর্শ করেনি, তেমনি এই আপত্তিকর প্রস্তাবটি নিয়ে কোনো জনমত যাচাইয়ের উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতিতে উৎসাহিত করতে বা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রক্ষা করতেই যেন অনেকটা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সরকার এ কাজটি করছে। দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের শুরুতেই লেখা আছে, ‘এই কমিশন একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন হইবে।’ যদি সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে মামলা করতে হয়, তবে এই প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে তার ‘স্বাধীন’ চরিত্র বজায় রাখবে, সে প্রশ্ন তুলেছেন কমিশনের চেয়ারম্যান।
সংসদে উপস্থাপিত হওয়ার পর এখন দুদক আইনের সংশোধনী প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব পড়েছে সংসদীয় কমিটির ওপর। প্রস্তাবিত এই সংশোধনী যে দুদকের ধারণার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ, এতে যে প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতি দমনে কোনো ভূমিকা পালন করতে পারবে না, তা নিশ্চয়ই সংসদীয় কমিটির বিজ্ঞ সদস্যরা উপলব্ধি করবেন। আমরা আশা করব, সংসদীয় কমিটি সংশোধনী প্রস্তাব বাতিলের সুপারিশ করে শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে।

No comments

Powered by Blogger.