চরাচর-ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনচিত্র by বনরূপা
অভিযোগটি পুরনো যে এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে একটি প্রভাবশালী মহল বছরের পর বছর পাহাড়িদের ভিটেমাটি থেকে উৎখাতে লিপ্ত। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে এ বিষয়ে ব্যাপক তথ্য প্রকাশিত হয়। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবন চিত্র নানা বৈষম্যে পিষ্ট।
পাহাড়িদের মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ আমাদের দেশে এখনো তৈরি হয়নি। শুধু রাজশাহীতে সাঁওতালদের নিজস্ব ভাষায় লেখাপড়া করার জন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। পাহাড়ি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর নারীরা চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত। পার্বত্য জেলাগুলোতে শত শত পাহাড়ি নারী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সন্তান জন্ম দেন। নূ্যনতম স্বাস্থ্যসেবা থেকেও তাঁরা বঞ্চিত। স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার।
একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা অর্জনের চার দশক পরও একটি জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে রাষ্ট্রশক্তি কিংবা সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধই থেকে গেলো। ক্ষুদ্র একটি জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা পূরণে সরকার যেখানে ব্যর্থ, সেখানে তাদের জন্য বছরের একটি দিন সাড়ম্বরে পালনের যুক্তি কোথায়? প্রতিবছর ৯ আগস্ট 'বিশ্বআদিবাসী দিবস' হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এই একটি দিন পালন করে একটি জনগোষ্ঠীর যাপিত জীবনের কতটা পরিবর্তন বা উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে? যেখানে হাজারও সমস্যা নিত্য তাদের পিষে মারছে, অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে তারা বঞ্চিত, সেখানে আলাদাভাবে বছরের একটি দিন উদ্যাপনের সুফল কতটা এসেছে? পার্বত্য জেলাগুলোতে জমি ও বন ঘিরে যে সমস্যার জট তৈরি হয়েছে, তা থেকে মুক্তির জন্য সরকারের যদি চেষ্টা না থাকে, তাহলে পাহাড়িরা বাস্তুভিটা হারিয়ে কাঙালের মতো জীবনযাপন করতে বাধ্য হবে। যে দেশে ২৫ লাখ পাহাড়ি শিশুর শিক্ষা গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই সে দেশে 'সবার জন্য শিক্ষা' কতটুকু সফল হবে, তাও প্রশ্নসাপেক্ষ। দেশের চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে_'স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যেকোনো ব্যক্তির মৌলিক অধিকার' এবং প্রদান করা সরকারের একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা।
কিন্তু পাহাড়ি কিংবা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের মধ্যে ১০ শতাংশেরও কম মানুষ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগ পায়। সরকার পাহাড়িদের সংস্কৃতি, ভাষা, ঐতিহ্য ও অধিকার রক্ষায়ও কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা গ্রহণ করেনি, যদিও সরকার এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে চলেছে। ভূমি রক্ষার নামে পাহাড়ি নাগরিকদের তাদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে_এই অভিযোগও পুরনো। সিলেটের ইকো পার্ক, টাঙ্গাইলের মধুপুরে দেয়াল নির্মাণ, পার্বত্য চট্টগ্রামে সংরক্ষিত বনাঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারের অদূরদর্শি পরিকল্পনা ও স্ববিরোধী নীতির কারণে হারাতে হচ্ছে পাহাড়িদের ভিটেমাটি ও ভূমি। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সমস্যা ছাড়াও বাংলাদেশের পাহাড়বাসীদের আরেকটি সমস্যা হলো, কোনো কোনো স্বার্থান্বেষী বলবান তাদের জমি বলপূর্বক জবরদখল করছে। পাহাড়িদের জমিজমা সম্প্রদায়ের নিজস্ব সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু ব্রিটিশ শাসনামলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমতলের মানুষ পাহাড়িদের সম্পত্তি ব্যক্তি মালিকানায় দলিল করে নেয়-এ অভিযোগের সত্যাসত্য নির্ণয় করে সমাধান করা জরুরি। তাদের সম্পত্তির মালিকানা আইনগতভাবে বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। একই রাষ্ট্রে বসবাসকারী একেক গোষ্ঠীর মানুষ একেক রকম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে, কেউ কেউ ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করবে, তা হতে পারে না। সমতাভিত্তিক সমাজ আধুনিক বিশ্বসভ্যতার অন্যতম শর্ত। আমরা যেন সে শর্ত ভুলে না যাই।
বনরূপা
একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা অর্জনের চার দশক পরও একটি জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে রাষ্ট্রশক্তি কিংবা সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধই থেকে গেলো। ক্ষুদ্র একটি জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা পূরণে সরকার যেখানে ব্যর্থ, সেখানে তাদের জন্য বছরের একটি দিন সাড়ম্বরে পালনের যুক্তি কোথায়? প্রতিবছর ৯ আগস্ট 'বিশ্বআদিবাসী দিবস' হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এই একটি দিন পালন করে একটি জনগোষ্ঠীর যাপিত জীবনের কতটা পরিবর্তন বা উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে? যেখানে হাজারও সমস্যা নিত্য তাদের পিষে মারছে, অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে তারা বঞ্চিত, সেখানে আলাদাভাবে বছরের একটি দিন উদ্যাপনের সুফল কতটা এসেছে? পার্বত্য জেলাগুলোতে জমি ও বন ঘিরে যে সমস্যার জট তৈরি হয়েছে, তা থেকে মুক্তির জন্য সরকারের যদি চেষ্টা না থাকে, তাহলে পাহাড়িরা বাস্তুভিটা হারিয়ে কাঙালের মতো জীবনযাপন করতে বাধ্য হবে। যে দেশে ২৫ লাখ পাহাড়ি শিশুর শিক্ষা গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই সে দেশে 'সবার জন্য শিক্ষা' কতটুকু সফল হবে, তাও প্রশ্নসাপেক্ষ। দেশের চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে_'স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যেকোনো ব্যক্তির মৌলিক অধিকার' এবং প্রদান করা সরকারের একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা।
কিন্তু পাহাড়ি কিংবা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের মধ্যে ১০ শতাংশেরও কম মানুষ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগ পায়। সরকার পাহাড়িদের সংস্কৃতি, ভাষা, ঐতিহ্য ও অধিকার রক্ষায়ও কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা গ্রহণ করেনি, যদিও সরকার এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে চলেছে। ভূমি রক্ষার নামে পাহাড়ি নাগরিকদের তাদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে_এই অভিযোগও পুরনো। সিলেটের ইকো পার্ক, টাঙ্গাইলের মধুপুরে দেয়াল নির্মাণ, পার্বত্য চট্টগ্রামে সংরক্ষিত বনাঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারের অদূরদর্শি পরিকল্পনা ও স্ববিরোধী নীতির কারণে হারাতে হচ্ছে পাহাড়িদের ভিটেমাটি ও ভূমি। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সমস্যা ছাড়াও বাংলাদেশের পাহাড়বাসীদের আরেকটি সমস্যা হলো, কোনো কোনো স্বার্থান্বেষী বলবান তাদের জমি বলপূর্বক জবরদখল করছে। পাহাড়িদের জমিজমা সম্প্রদায়ের নিজস্ব সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু ব্রিটিশ শাসনামলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমতলের মানুষ পাহাড়িদের সম্পত্তি ব্যক্তি মালিকানায় দলিল করে নেয়-এ অভিযোগের সত্যাসত্য নির্ণয় করে সমাধান করা জরুরি। তাদের সম্পত্তির মালিকানা আইনগতভাবে বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। একই রাষ্ট্রে বসবাসকারী একেক গোষ্ঠীর মানুষ একেক রকম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে, কেউ কেউ ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করবে, তা হতে পারে না। সমতাভিত্তিক সমাজ আধুনিক বিশ্বসভ্যতার অন্যতম শর্ত। আমরা যেন সে শর্ত ভুলে না যাই।
বনরূপা
No comments