মেঘনায় আতঙ্ক-জলদস্যু নয়, মাছের অভয়ারণ্য হোক
মেঘনা নদীর লক্ষ্মীপুর অঞ্চলে জলদস্যুর উৎপাত কী পর্যায়ে পেঁৗছেছে_ গত এক মাসে সেখানে ডাকাতির ঘটনার সংখ্যা তার একটি সূচক। বুধবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, এ সময়ের মধ্যে কেবল কমলনগর ও রামগতি উপজেলার আওতাধীন এলাকাতেই কমপক্ষে ৩৫টি ট্রলার জলদস্যুর কবলে পড়েছে।
প্রায় প্রকাশ্যেই সশস্ত্র ডাকাত দল যেভাবে মাছসহ সর্বস্ব লুটের পাশাপাশি জেলেদের অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবি করছে, তাতে ওই এলাকায় আইনের শাসন বলবৎ থাকার ব্যাপারে সন্দেহ ওঠা অস্বাভাবিক নয়। আমরা জানি, প্রাচীন জীবিকা নিয়ে ইলিশ আহরণকারী জেলেরা সাম্প্রতিককালে এমনিতেই নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এরপর দস্যুবাহিনীর উপদ্রব বোঝার ওপর শাকের আঁটিই বিবেচিত হবে। জাতীয় মাছটির উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বছরের নির্দিষ্ট সময় জাটকাসহ সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করায় জেলেদের আয় এমনিতেই সীমিত; তার সঙ্গে যদি নিরাপত্তার অভাব যুক্ত হয়, তারা যাবে কোথায়? সমকালের প্রতিবেদনেই জানা যাচ্ছে, আগস্টের মাঝামাঝি ইলিশ মৌসুমের শুরুতে কুখ্যাত 'নিজাম বাহিনী' পরপর চার রাতে ১৭টি ট্রলারে ডাকাতি করেছে। গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ আহরণ ক্ষেত্রে এমন নিরাপত্তাহীনতা কীভাবে মেনে নেওয়া যায়? মনে রাখতে হবে, দস্যুবৃত্তির ঘটনাগুলো সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্যও হতাশাজনক। উপকূলীয় অঞ্চল ও বৃহৎ নদীপথগুলোতে ডাকাতের উপদ্রব কী কারণে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, প্রশাসনের কাছে তার ব্যাখ্যা চাওয়া যেতে পারে। ইলিশ অঞ্চলে তৎপর বিভিন্ন দস্যু বাহিনী নিজস্ব 'কর আদায়' ব্যবস্থাও প্রতিষ্ঠা করেছে বলে বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন দেখা গেছে। আমাদের প্রশ্ন, ওই অঞ্চলে কি আলাদা প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? এভাবে জেলেদের জিম্মিদশা আর কতদিন মেনে নেওয়া হবে? মুক্তিপণ দিলেই যেখানে অপহৃত জেলে বা জাল-নৌকার হদিস মেলে, সেখানে এর হোতাদের আটক করা কঠিন হতে পারে না। আমরা চাই, জলদস্যুদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান চালানো হোক। এক্ষেত্রে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বকেও এগিয়ে আসতে হবে। অভিযোগ রয়েছে, এদের বেশিরভাগই প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় উদয়স্ত পরিশ্রমী জেলেদের ঘাম ঝরানো উপার্জনে ভাগ বসায়। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের স্বার্থেই এই নৈরাজ্য আর চলতে দেওয়া যায় না। আমরা চাই, মেঘনা নদী মাছের অভয়ারণ্য হোক, জলদস্যুর নয়।
No comments