পবিত্র কোরআনের আলো-মরিয়মের পুত্র মাসীহকে যারা আল্লাহর পুত্র বলে তারা শিরক করে

৭১. ওয়া হাছিবূ আল্লা তাকূনা ফিতনাতুন ফাআ'মূ ওয়া ছাম্মূ ছুম্মা তা-বাল্লাহু আ'লাইহিম ছুম্মা আ'মূ ওয়া ছাম্মূ কাছীরুম্ মিনহুম; ওয়াল্লাহু বাছীরুম্ বিমা ইয়া'মালূন। ৭২. লাক্বাদ কাফারাল্লাযীনা ক্বা-লূ ইন্নাল্লাহা হুয়াল মাছীহুব্নু মারইয়াম; ওয়া ক্বা-লাল মাছীহু ইয়া বানী ইছরা-ঈলা'বুদুল্লা-হা রাব্বী ওয়া রাব্বাকুম; ইন্নাহূ মাইঁয়ুশরিক বিল্লা-হি ফাক্বাদ হার্রামাল্লা-হু আ'লাইহিল জান্নাতা ওয়া মা'ওয়া-হুন না-রু, ওয়া মা লিয্যা-লিমীনা মিন্ আনসা-র।


৭৩. লাক্বাদ কাফারাল্লাযীনা ক্বা-লূ ইন্নাল্লা-হা ছা-লিছু ছালা-ছাতিন, ওয়া মা মিন ইলা-হিন ইল্লা ইলাহুন ওয়া-হিদুন; ওয়া ইন লাম ইয়ানতাহূ আ'ম্মা ইয়াক্বূলূনা লাইয়ামাচ্ছান্নাল্লাযীনা কাফারূ মিনহুম আ'যা-বুন আলীম।
[সুরা : আল মায়েদা, আয়াত : ৭১-৭৩]
অনুবাদ
৭১. তারা (বনি ইসরাইলরা) ধরে নিয়েছিল, এসব কারণে তাদের কোনো শাস্তি হবে না। তাই তারা অন্ধ ও বধির হয়ে থাকল। এর পরও আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি ক্ষমাশীল হলেন। এরপর তাদের অনেকেই আবারও অন্ধ ও বধির হয়ে গেল। আল্লাহ তায়ালা সবই দেখেন তারা যা কিছু করে।
৭২. নিশ্চয়ই তারা কাফির হয়ে গেছে, যারা বলেছে মরিয়মের পুত্র মাসীহই হচ্ছেন আল্লাহ। অথচ মাসীহ বলেছেন, হে বনি ইসরাইল, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করো, যিনি আমারও প্রভু, তোমাদেরও প্রভু। অবশ্যই যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরিক করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। আর তার স্থায়ী ঠিকানা হবে জাহান্নাম। অত্যাচারীদের জন্য সেদিন কোনো সাহায্যকারীই থাকবে না।
৭৩. তারাও কুফরি করেছে, যারা বলেছে তিনজনের মধ্যে তৃতীয় হচ্ছেন আল্লাহ। অথচ এক আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তারা যদি এখনো তাদের এসব কথাবার্তা থেকে ফিরে না আসে, তবে তাদের মধ্যে যারা কুফরি করেছে তাদের কঠিন শাস্তির মধ্যে পড়তে হবে।
ব্যাখ্যা
৭১ নম্বর আয়াতে অন্ধ ও বধির হওয়ার ব্যাপারে যা বলা হয়েছে, তা প্রকৃত অন্ধ ও বধির নয়। তাদের মনের ভেতরে অন্ধত্ব ও বধিরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল_এটাই বোঝানো হয়েছে। আগের আয়াতের মতোই এই আয়াতগুলোর প্রসঙ্গও বনি ইসরাইল। বনি ইসরাইলকে আল্লাহ তায়ালা অনেক সৌভাগ্য দান করেছিলেন। কিন্তু এই জাতির অনেকেই অবাধ্যতা ও গোস্তাকিই দেখিয়েছে বেশি। তারা আল্লাহর নির্দেশ পালনের পথে না গিয়ে অন্ধ ও বধির হয়ে থাকতেই পছন্দ করেছে বেশি। বনি ইসরাইলের কাছ থেকে আল্লাহ তায়ালা ওয়াদা নিয়েছিলেন যে তারা আল্লাহ প্রেরিত সব নবীর প্রতি ইমান আনবে এবং তাদের আনুগত্য করবে। কিন্তু তারা পদে পদেই তা অমান্য করেছে। এদের এহেন অবাধ্যতার পরিপ্রেক্ষিতেই একবার বোখতে-নাছার নামক এক অত্যাচারী বাদশাহ তাদের ওপর চড়াও হয়েছিল। সে বনি ইসরাইল জাতিকে নানাভাবে অপমান, অত্যাচার ও লাঞ্ছনার মধ্যে ফেলেছিল। বোখতে-নাছারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তারা আল্লাহ তায়ালার কাছে কান্নাকাটি করে তওবা করেছিল। আল্লাহ দয়াপরবশ হয়ে তাদের তওবা কবুল করেছিলেন এবং তাদের অত্যাচারী বাদশাহর অত্যাচার থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। এরপর আবার তারা নবী হজরত ইয়াহ্ইয়াকে হত্যা করেছিল এবং হজরত ঈসাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। এভাবে তারা আবার আল্লাহর হুকুম-আহকামের ব্যাপারে অন্ধ ও বধির হয়ে গিয়েছিল। আয়াতটিতে ইতিহাসের এসব ঘটনার প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
৭২ ও ৭৩ নম্বর আয়াতে খ্রিস্টান সম্প্রদায় কিভাবে শিরক ও কুফরির দিকে গেছে, তার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। তারা বলতে শুরু করে মাসীহ বা ঈসা হচ্ছেন আল্লাহ। আবার কেউ কেউ বলতে থাকে মাসীহ হচ্ছেন আল্লাহর পুত্র। অথচ মাসীহ বলে গেছেন, হে বনি ইসরাইল, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করো, যিনি আমার এবং তোমাদের প্রভু। তারা কেউ কেউ তিন আল্লাহর তত্ত্বও বের করেছিল, যেখানে আল্লাহকে বলা হতো তিন নম্বর আল্লাহ। এভাবেই ইহুদি ও খ্রিস্টানরা আল্লাহর ধারণাকে বিকৃত করে শিরক ও কুফরির দিকে গেছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.