মন্ত্রীর বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করা হোক by ইলিয়াস কাঞ্চন
জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কিত যে মন্তব্য করেছেন, তা অত্যন্ত অনভিপ্রেত ও চরম আপত্তিজনক। এ বক্তব্যের জন্য নিন্দা জ্ঞাপনের পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানাই। দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার যখন ক্রমেই উচ্চ মাত্রা স্পর্শ করছে, তখন তাঁর এ ধরনের বক্তব্য কিংবা মন্তব্য রীতিমতো আত্মঘাতী। তিনি বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে প্রতিবাদ জানানোর কিছু নেই।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার যখন উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে, তখন মন্ত্রীর দায়িত্বজ্ঞানহীন এমন মন্তব্য বেপরোয়া চালক ও স্বেচ্ছাচারী পরিবহন মালিকদের আরো উসকে দিল। আমি মিডিয়ার মাধ্যমে স্পিকারের কাছে আবেদন রাখছি, মন্ত্রীর এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করা হোক। আমাদের সংগঠন ও শাখা সংগঠনগুলো তাঁর এ বক্তব্যের প্রতিবাদে নিন্দাজ্ঞাপন করে রাস্তায় দাঁড়াবে। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং যেখানে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে, যানজট নিরসনে এবং সড়ক-মহাসড়ককে দুর্ঘটনামুক্ত করতে শুরু থেকেই দিকনির্দেশনামূলক কথা বলে আসছেন, সেখানে দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা কেমন করে এমন সব মন্তব্য করেন, তা ভাবতেও পারি না। অপঘাতে মৃত্যু কিংবা অস্বাভাবিক মৃত্যুর দায়ভার দায়িত্বশীলরা এড়াতে পারেন না। দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ সড়কের জন্য আমরা আন্দোলন করে আসছি। মন্ত্রীর বিস্ময়কর এই মন্তব্য আমাদের আন্দোলন ও সংগত দাবিকেই শুধু পিষ্ট করেনি, ভবিষ্যৎকেও অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমি মিডিয়ার মাধ্যমে দেশের সচেতন প্রত্যেক মানুষের কাছে এ আহ্বানও রাখছি, এখন এ ব্যাপারে সম্মিলিত প্রতিবাদ করার সময় উপস্থিত। সচেতন সবার রাস্তায় দাঁড়ানো দরকার। কারো কারো স্বেচ্ছাচারিতায় এভাবে একের পর এক জীবনপ্রদীপ নিভে যেতে পারে না। অব্যাহত সড়ক দুর্ঘটনায় জানমালের যে অপরিসীম ক্ষতি ঘটে চলেছে, তাতে গোটা জাতি গভীর চিন্তিত ও শঙ্কিত। সবারই একটি জিজ্ঞাসা_সড়ক দুর্ঘটনার কারণে আমরা আর কত মানুষ হারাব? নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) ১৮ বছর ধরে সড়ক নিরাপদ করার আন্দোলনে ব্যাপৃত রয়েছে। স্বার্থান্বেষী মহলের চাপের মুখে সরকার যেন সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে বিচলিত কিংবা পিছপা না হয়, সেই বিবেচনায় ব্যাপক জনমত তৈরির মাধ্যমে সরকারের হাত শক্তিশালী করাটাকে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) নিজের দায়িত্ব বলে মনে করে। আর সেই দায়িত্ববোধের তাগিদেই আমরা আমাদের সব কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছি এবং ক্রমান্বয়ে তা আরো জোরদার করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে যখন শুভবোধসম্পন্ন মানুষ গভীর উদ্বিগ্ন, শঙ্কিত এবং প্রতিবাদমুখর, তখন সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর জাতীয় সংসদে এমন বক্তব্য প্রদান আমাদের শুধু হতবাকই করেনি, ক্ষুব্ধও করেছে। প্রশ্ন জাগে, জীবনের মূল্য কি এতই কম? জীবনের মূল্য কোনো কিছু দিয়ে নির্ধারণ করা যায় না, এটা মনে রাখা দরকার। আমি এর আগে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রেখে বিদায়ী যোগাযোগমন্ত্রীর কাছে একটি লিখিত আবেদন করেছিলাম। সেখানে বিদ্যমান আইনের সংস্কার করে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার বিষয়টি পুনর্বার স্থান পায়। এ নিয়ে ইতিমধ্যে কথাবার্তা হয়েছে বিস্তর, আন্দোলনও চলমান; কিন্তু দায়িত্বশীল কারো কারো দায়িত্বহীন মন্তব্য কিংবা কর্মকাণ্ড অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুমিছিল থামাতে পারছে না। ভবিষ্যতে মর্মন্তুদ সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত অর্থাৎ জান-মালের ক্ষয়ক্ষতির জন্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দায়ী থাকবেন। কোনোভাবেই তাঁর বক্তব্য মেনে নেওয়া যায় না। আমরা নিরাপদ সড়ক চাই এবং এ লক্ষ্যে যা যা করণীয় তা অনতিবিলম্বে করতে হবে। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা আর নয়। এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুমিছিল বন্ধকল্পে সচেতন সবাইকে এখনই রুখে দাঁড়াতে হবে। সময় বয়ে গেছে অনেক। আর সময় নষ্ট নয়। জীবন বাঁচাতে, জীবন সাজাতে আমরা সব রকম অনভিপ্রেত বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের নিন্দা জ্ঞাপনের পাশাপাশি আসুন যার যার দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হই।
লেখক : চেয়ারম্যান, নিরাপদ সড়ক
চাই ও চিত্রনায়ক
লেখক : চেয়ারম্যান, নিরাপদ সড়ক
চাই ও চিত্রনায়ক
No comments