সুন্দরবন-জীববৈচিত্র্যেই সমৃদ্ধ হোক, দস্যুতায় নয়
বিশ্বের বৃহত্তম প্রাকৃতিক গরানভূমি এবং আমাদের গর্ব সুন্দরবনকে ঘিরে দস্যুবৃত্তি কতটা বিস্তৃত হয়েছে, গত বছরের পরিসংখ্যান তার প্রমাণ। রোববার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যাচ্ছে, এক বছরেই সেখানে ২০ জন দস্যু
নিহত হয়েছে। নিজ নিজ বাহিনীর আধিপত্য বিস্তারে লড়াইয়ের পাশাপাশি তারা উপকূলরক্ষী ও র্যাবকেও নানা সময়ে চ্যালেঞ্জ করেছে। সব মিলিয়ে ১২ দফা বন্দুকযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছে সুন্দরবন। এ ধরনের অঘটন কেবল সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য হতাশাজনক নয়, স্পর্শকাতর এই বনাঞ্চলের পরিবেশ ও বাস্তুব্যবস্থাতেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। দস্যুরা বনজীবী ও মৎস্যজীবীদের স্বাভাবিক জীবিকার অধিকারও কেড়ে নিয়েছে। তারা অবৈধ কাঠ পাচারের সঙ্গেও জড়িত। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, সুন্দরবনের স্বাস্থ্য রক্ষায় যেখানে জীব-জন্তুর নিরুপদ্রব আবাস ও বিচরণ নিশ্চিত করা দরকার, সেখানে দস্যুরা অস্ত্রের ঝনঝনানি ও যথেচ্ছাচার চালিয়ে যাচ্ছে। সুন্দরবনের সুরক্ষা, নাগরিক অধিকার ও আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্নে তাদের আর ছাড় দেওয়ার অবকাশ নেই। সুন্দরবন ও সংলগ্ন উপকূলের কৌশলগত গুরুত্বও মনে রাখা জরুরি। দস্যুরা যেভাবে এক একটি অঞ্চল নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে, তা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য মর্যাদাহানিকর। আমরা আশা করি, আইনের হাতের কাছে দস্যুর দৌরাত্ম্য পরাজিত হবে। অস্বীকার করা যাবে না যে, বন বিভাগ ও উপকূলীয় রক্ষীসহ ওই অঞ্চলের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীগুলোর যান ও জনবল সংকট রয়েছে। তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে তা অস্বাভাবিকও নয়। কিন্তু তাই বলে 'বিশ্ব ঐতিহ্যস্থলটি' দস্যু দলের দয়ার ওপর নির্ভর করে টিকে থাকতে পারে না। তারা অনেক সময় স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় টিকে থাকে বলে শোনা যায়। ফলে দস্যুবিরোধী অভিযানে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা জরুরি। সবারই মনে রাখা জরুরি, দস্যুরা কারও স্থায়ী বন্ধু হতে পারে না। বরং সুন্দরবনই আমাদের অনাদিকাল থেকে সম্পদ বিলিয়ে আসছে, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসে প্রাকৃতিক দেয়াল হিসেবে কাজ করে আসছে। কতিপয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বেআইনি কর্মকাণ্ডের কাছে পরম মিত্রকে আমরা বলি দিতে পারি না।
No comments