পদ্মা সেতু নির্মাণ-নতুন সম্ভাবনা, প্রত্যাশা স্বচ্ছতার
দেশের সর্ববৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতু নির্মাণের জট খুলতে পারে, এমন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সমঝোতা স্মারক সই হবে। ঢাকা ও কুয়ালালামপুর থেকে এ বিষয়ে পৃথক যে ঘোষণা এসেছে তাতে জানানো হয়, মালয়েশিয়া এ জন্য ৬৬০ কোটি রিঙ্গিত (প্রায় ২২০ কোটি মার্কিন ডলার) প্রদান করবে, যা বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুত অর্থের চেয়ে একশ' কোটি ডলার বেশি।
ঋণের সুদহার এবং পরিশোধের সময়সীমা কী হবে সেটা দু'পক্ষ আলোচনা করে স্থির করবে। মালয়েশিয়া, ভারত ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত বলেছেন, এ কাজ সম্পাদনের জন্য মালয়েশিয়ার কয়েকটি কোম্পানি একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করবে। এদের সঙ্গে মালয়েশিয়া সরকারও থাকবে এবং প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি নজিব রাজাক স্বয়ং এ প্রকল্পের কাজ তদারক করবেন। বিশেষ দূতের ভাষ্য অনুযায়ী, পূর্ব এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশটি বিশ্বের কাছে অবকাঠামো নির্মাণে তাদের সক্ষমতা তুলে ধরার জন্য পদ্মা সেতু প্রকল্পকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছে। তারা এ চ্যালেঞ্জে জয়ী হোক, বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের এটাই একান্ত কামনা। স্বচ্ছতা ও দুর্নীতির ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের মতবিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিশ্রুত ১২০ কোটি ডলার ঋণ স্থগিত করায় বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ এবং বিশেষভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের অধিবাসীদের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলতি মেয়াদের মধ্যেই রাজধানীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার কমিয়ে দেওয়া সেতুটির ওপর দিয়ে মোটর ও রেলগাড়ি চলবে। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ সঠিক, নাকি বাংলাদেশ সরকারের_ সেটা নিয়ে তাদের উদ্বেগ যতটা তার চেয়ে ঢের বেশি মাথাব্যথা সেতুর নির্মাণ কাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়ায়। মালয়েশিয়া সরকার এগিয়ে আসায় অনেকেই নতুন করে আশান্বিত হবে। আমরা আশা করব, যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। এ জন্য দেশ-বিদেশের উপযুক্ত পরামর্শকদের সহায়তা নেওয়া হবে, এটা কাঙ্ক্ষিত। গোটা কাজে অবশ্যই স্বচ্ছতা থাকা চাই। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, দ্রুত অর্থ তুলে নেওয়া এবং সর্বোচ্চ লাভ যে কোনো বিনিয়োগকারীরই লক্ষ্য থাকে। কিন্তু কী শর্তে এই জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থ নেওয়া হবে সেটা জানার অধিকার জনগণের রয়েছে। ঋণ কিংবা বিনিয়োগ যে সূত্রেই অর্থ আসুক সেটা পরিশোধ করা হবে দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। তাদের কাছে কোনো কিছু গোপন করা চলবে না। মালয়েশিয়ার সঙ্গে পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়ে সমঝোতা হলে বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার বিষয়টিও সরকারকে মনে রাখতে হবে। এটা ঠিক যে, বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো সংস্থার ঋণের সুদের হার কম থাকে এবং পরিশোধের মেয়াদ হয় দীর্ঘমেয়াদি, কিন্তু নানা শর্তের বেড়াজালে তারা সরকারকে বেঁধে ফেলে। একই সঙ্গে এটাও বলা দরকার যে, অবকাঠামো ছাড়াও শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়নে এ ধরনের ঋণের কার্যকারিতা রয়েছে। পদ্মা সেতুর বিষয়ে মালয়েশিয়ার সঙ্গে চুক্তি হলে বিশ্বব্যাংক শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা প্রদান কমিয়ে দেয় কি-না সে প্রশ্ন অনেকেই করবেন। বাংলাদেশ সরকারের এ পদক্ষেপকে তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ হিসেবেও গণ্য করা হতে পারে। অন্য দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর কেউ কেউ তাদের পথ অনুসরণ করবে কি-না, সেটাও বিবেচনায় রাখা দরকার।
No comments