পবিত্র কোরআনের আলো-বনি ইসরাইল তাদের মনের মতো ধর্মীয় বিধান না পেলেই অবাধ্য হয়েছে

৬৮. ক্বুল ইয়া-আহ্লাল কিতা-বি লাছতুম আ'লা শাইয়িন হাত্তা তুক্বীমুত্তাওরা-তা ওয়ালইনযীলা ওয়া মা উনযিলা ইলাইকুম্ মির্ রাবি্বকুম; ওয়া লাইয়াযীদান্না কাছীরাম্ মিনহুম্ মা উনযিলা ইলাইকা মির্ রাবি্বকা তুগ্ইয়ানান ওয়া কুফরান; ফালা তা'ছা আ'লাল ক্বাওমিল কাফিরীন।


৬৯. ইন্নাল্লাযীনা আ-মানূ ওয়াল্লাযীনা হা-দূ ওয়াস্সা-বিঊনা ওয়ান্নাসা-রা মান আ-মানা বিল্লাহি ওয়ালইয়াওমিল আখিরি ওয়া আ'মিলা সা-লিহান ফালা খাওফুন আ'লাইহিম ওয়া লা হুম ইয়াহ্যানূন।
৭০. লাক্বাদ আখায্না মীছাক্বা বানী ইছরা-ঈলা ওয়া আরছালনা ইলাইহিম রুসুলান, কুল্লামা জা-আহুম রাসুলুম্ বিমা লা তাহ্ওয়া আনফুছুহুম ফারীক্বান কায্যাবূ ওয়া ফারীক্বান ইয়াক্বতুলূন।
[সুরা : আল মায়েদা, আয়াত : ৬৮-৭০]
অনুবাদ
৬৮. (হে নবী!) আপনি তাদের বলুন, হে আহলে কিতাব, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাওরাত, ইনজিল এবং এ ছাড়া তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে যা নাজিল করা হয়েছে তাকে তোমাদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা কোনো কিছুর ওপর প্রতিষ্ঠিত নও। বরং তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে যা কিছু নাজিল করা হয়েছে তা হেদায়েতের বদলে তাদের অনেকেরই অহমিকা ও অবাধ্যতা বাড়িয়ে দিয়েছে। সুতরাং আপনি এই অবাধ্য সম্প্রদায়ের জন্য আফসোস করবেন না।
৬৯. নিশ্চয়ই যারা ইমান এনেছে এবং যারা ছিল ইহুদি, সাবেয়ি ও খ্রিস্টান_এদের যে কেউই এক আল্লাহ ও শেষবিচারের দিনের ওপর ইমান আনবে এবং সৎকর্ম করবে তাদের কোনো ভয় নেই, এদের কোনো দুশ্চিন্তার কারণ নেই।
৭০. আমি বনি ইসরাইলের কাছ থেকে আনুগত্যের অঙ্গীকার আদায় করেছিলাম এবং তাদের কাছে রাসুলদের প্রেরণ করেছিলাম। কিন্তু যখনই কোনো রাসুল তাদের কাছে এমন কিছু বিধান নিয়ে হাজির হয়েছে, যা তাদের মনমতো হয়নি, তখন তাদের কোনো কোনোজনকে মিথ্যাবাদী বলেছে এবং কোনো কোনোজনকে হত্যা করেছে।
ব্যাখ্যা
৬৮ নম্বর আয়াতে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের এই কথাটি পরিষ্কার করে বলার চেষ্টা করা হয়েছে যে তোমরা যতক্ষণ তাওরাত, ইনজিল এবং সর্বশেষ কিতাব বর্তমান কোরআনকে তোমাদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত না করবে, ততক্ষণ তোমরা আসলে কোনো কিছুতেই প্রতিষ্ঠিত নও। এখানে তাওরাত, ইনজিল ও কোরআনকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার কথা একসঙ্গে বলা হয়েছে। অর্থাৎ এগুলো সবই আল্লাহর কিতাব, এগুলোর মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। এ সব কিতাবই মানুষকে হেদায়েতের পথে পরিচালিত করার জন্য নাজিল করা হয়েছে। আসলে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা যে কোরআনকে অস্বীকার করছে এর মধ্য দিয়ে কিন্তু তারা তাওরাত বা ইনজিলকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত করছে না। তারা যেমন কোরআনকে অস্বীকার করছে, তেমনি তাওরাত ও ইনজিল থেকেও বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে কারো কারো বেলায় আরো দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা যা ঘটছে, তা হলো কোরআন তাদের যেখানে হেদায়েতের দিকে নিয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে উল্টো ফল হচ্ছে। অর্থাৎ কোরআন তাদের অবাধ্যতা ও অহমিকা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থায় আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.)কে পরামর্শ দিচ্ছেন, তিনি যেন অবাধ্যদের ব্যাপারে বিচলিত না হন, এদের দুর্ভাগ্যের জন্য যেন কোনো আফসোস না করেন।
৭০ নম্বর আয়াতে বনি ইসরাইলের অতীত ঘটনাবলির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বনি ইসরাইলকে অঙ্গীকারবদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু তারা সেসব অঙ্গীকারে অবিচল থাকেনি। তারা চাইত আল্লাহর রাসুলরা তাদের মনের মতো বিধিবিধান নিয়ে আসুন। তারা সত্য ও ন্যায় বোঝার চেষ্টা করত না। যখনই আল্লাহর রাসুলরা এমন সব বিধিবিধান নিয়ে এসেছেন, যা তাদের পছন্দ নয়, তখনই তারা হয়তো তাঁদের মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করেছে অথবা অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.