রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষকের অব্যাহতি প্রসঙ্গে by ড. তুহিন ওয়াদুদ
বাংলাদেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডহকভিত্তিক নিয়োগের একটি বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। এই পদ্ধতিতে যেকোনো বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি শিক্ষক প্রয়োজন মর্মে প্রশাসনের কাছে আবেদন করলে উপাচার্য মহোদয় অ্যাডহকভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন। এই নিয়োগের মেয়াদ থাকে ছয় মাস। ছয় মাসের মধ্যে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করা না হলে আবার সেই অ্যাডহকের মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষককেই স্থায়ী করা হয়। অ্যাডহকে নিয়োগ পাওয়াদের চাকরিতে স্থায়ী করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তার পরও তাঁদের স্থায়ীকরণ একটি রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত ৫০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম তিন শিক্ষককে অ্যাডহক নিয়োগের মেয়াদ বৃদ্ধি না করে তাঁদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে প্রশাসন। যদি এমন হতো চাকরির পরীক্ষায় তাঁরা তুলনামূলক কম যোগ্য হওয়ার কারণে তাঁদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তাহলে এ বিষয় নিয়ে কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল না। একই সঙ্গে তিনজন শিক্ষক অযোগ্য হয়ে উঠেছেন তারই বা কি কারণ রয়েছে?
গত মার্চ মাসের শেষে নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগে একটি অস্থিরতার খবর আমরা জাতীয় দৈনিকগুলোতে লক্ষ করেছি। নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের সভাপতির কক্ষে তালা লাগিয়ে সেই বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাঁর পদত্যাগের জন্য আন্দোলন করেছিলেন। সেই আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের সভাপতি পদত্যাগ করেছিলেন। যখন শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিলে একটি আন্দোলন করছেন, তখন নিয়মিত খবরের কাগজ থেকে খোঁজখবর পাওয়ার চেষ্টা করতাম। ওই সময় নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের সভাপতির পদে ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন শিক্ষকের খবরে প্রথমে অবাক হয়েছিলাম। ওই বিভাগে সভাপতি হওয়ার মতো যদি একান্তই কোনো শিক্ষক না থাকেন তাহলে কলা অনুষদের যেকোনো বিভাগের একজন শিক্ষককে ওই বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া যেত। সেটা বরং ভালো হতো। এর আগে চারুকলা বিভাগের একজন শিক্ষক ওই বিভাগে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তা ছাড়া বিভাগটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও ছিলেন বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সফিকুন্নবী সামাদী। ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের সভাপতি জেনে তখন একবার মনে হয়েছিল সব সম্ভবের দেশ তো বাংলাদেশ! সুতরাং ব্যবস্থাপনা বিভাগ কেন বিশুদ্ধ গণিত বিভাগের একজন শিক্ষকও নাট্যকলা বিভাগের একজন সভাপতি হতে বাধা কোথায়?
২৭ জুলাই ২০১১ ইত্তেফাক এবং যুগান্তর পত্রিকা পড়ে আর একবার মনে হলো, সত্যি সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ। তা না হলে আন্দোলনের কারণে তিনজন শিক্ষককে কেন চাকরি হারাতে হবে? নাট্যকলা বিভাগের আন্দোলন যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে থাকে, কিংবা আন্দোলন যদি অন্যায় হয়ে থাকে তার জন্য শাস্তি পেতে হলে আন্দোলনকারী সব শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পাওয়ার কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিলে যখন একটি সংগঠিত আন্দোলন করে তখন আন্দোলন সারশূন্য মনে করার সুযোগ থাকে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন হলে একটি তদন্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। সেই মর্মে একটি তদন্ত কমিটিও কাজ করছে। আজ অবধি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি হয়নি। তদন্ত কমিটির কাজ চলাকালীন কাউকে অপরাধী বলার সুযোগ নেই। সুতরাং সেই আন্দোলনের নাম করে তাঁদের অ্যাডহকের মেয়াদ বৃদ্ধি না করাটা উপাচার্য মহোদয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে। দেশের যেকোনো উপাচার্যকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হলে তো তিনি একাই প্রশ্নবিদ্ধ হন না, তখন প্রশ্নবিদ্ধ হয় দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের ভেতরে যেকোনো কাজ অন্যায় হলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অধিকার স্বাধীন দেশের সব নাগরিকের রয়েছে। যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে যদি কোনো অনৈতিক কাজ হয়ে থাকে আর আমি যদি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ নাও হয়ে থাকি তবু তো তার প্রতিবাদ করার অধিকার আমার আছে। সেখানে বিভাগের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী যখন আন্দোলন করেছেন বিভাগের সভাপতির বিরুদ্ধে তখন যদি ওই তিনজন শিক্ষক আন্দোলনে না যেতেন তা হলে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা শিক্ষক তিনজন সম্পর্কে কী ধারণা করতেন তা আমাদের সবার বোধগম্য। অব্যাহতি পাওয়া তিনজন শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা সাপেক্ষে নিশ্চয় নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তাহলে ওই তিনজন শিক্ষককে অব্যাহতি দেওয়ার কারণে বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম কি ব্যাহত হবে না? তাঁদের বিরুদ্ধে আদর্শগত, চারিত্রিক কিংবা একাডেমিক কোনো অভিযোগ নেই। তার পরও কেন তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া? উপাচার্যের অনুগত না হলে তাঁকে চাকরিচ্যুত হতে হবে এমনটি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তবুদ্ধির চর্চা মুখ থুবড়ে পড়বে।
অ্যাডহকভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ থাকে এবং অ্যাডহক বাতিলেরও ক্ষমতা থাকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছরের ইতিহাসে অ্যাডহক নিয়োগের ক্ষমতা দেখিয়েছেন এবারের উপাচার্য মেয়াদ বৃদ্ধি না করে বাতিলের ক্ষমতা প্রদর্শন করে। সেই ক্ষমতার ব্যবহার ইতিবাচক না হয়ে নেতিবাচক হয়েছে। প্রত্যাশা করি উপাচার্য মহোদয় বিষয়টি নতুন করে বিবেচনা করবেন।
লেখক : শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
wadudtuhin@gmail.com
২৭ জুলাই ২০১১ ইত্তেফাক এবং যুগান্তর পত্রিকা পড়ে আর একবার মনে হলো, সত্যি সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ। তা না হলে আন্দোলনের কারণে তিনজন শিক্ষককে কেন চাকরি হারাতে হবে? নাট্যকলা বিভাগের আন্দোলন যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে থাকে, কিংবা আন্দোলন যদি অন্যায় হয়ে থাকে তার জন্য শাস্তি পেতে হলে আন্দোলনকারী সব শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পাওয়ার কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিলে যখন একটি সংগঠিত আন্দোলন করে তখন আন্দোলন সারশূন্য মনে করার সুযোগ থাকে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন হলে একটি তদন্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। সেই মর্মে একটি তদন্ত কমিটিও কাজ করছে। আজ অবধি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি হয়নি। তদন্ত কমিটির কাজ চলাকালীন কাউকে অপরাধী বলার সুযোগ নেই। সুতরাং সেই আন্দোলনের নাম করে তাঁদের অ্যাডহকের মেয়াদ বৃদ্ধি না করাটা উপাচার্য মহোদয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে। দেশের যেকোনো উপাচার্যকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হলে তো তিনি একাই প্রশ্নবিদ্ধ হন না, তখন প্রশ্নবিদ্ধ হয় দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের ভেতরে যেকোনো কাজ অন্যায় হলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অধিকার স্বাধীন দেশের সব নাগরিকের রয়েছে। যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে যদি কোনো অনৈতিক কাজ হয়ে থাকে আর আমি যদি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ নাও হয়ে থাকি তবু তো তার প্রতিবাদ করার অধিকার আমার আছে। সেখানে বিভাগের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী যখন আন্দোলন করেছেন বিভাগের সভাপতির বিরুদ্ধে তখন যদি ওই তিনজন শিক্ষক আন্দোলনে না যেতেন তা হলে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা শিক্ষক তিনজন সম্পর্কে কী ধারণা করতেন তা আমাদের সবার বোধগম্য। অব্যাহতি পাওয়া তিনজন শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা সাপেক্ষে নিশ্চয় নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তাহলে ওই তিনজন শিক্ষককে অব্যাহতি দেওয়ার কারণে বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম কি ব্যাহত হবে না? তাঁদের বিরুদ্ধে আদর্শগত, চারিত্রিক কিংবা একাডেমিক কোনো অভিযোগ নেই। তার পরও কেন তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া? উপাচার্যের অনুগত না হলে তাঁকে চাকরিচ্যুত হতে হবে এমনটি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তবুদ্ধির চর্চা মুখ থুবড়ে পড়বে।
অ্যাডহকভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ থাকে এবং অ্যাডহক বাতিলেরও ক্ষমতা থাকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছরের ইতিহাসে অ্যাডহক নিয়োগের ক্ষমতা দেখিয়েছেন এবারের উপাচার্য মেয়াদ বৃদ্ধি না করে বাতিলের ক্ষমতা প্রদর্শন করে। সেই ক্ষমতার ব্যবহার ইতিবাচক না হয়ে নেতিবাচক হয়েছে। প্রত্যাশা করি উপাচার্য মহোদয় বিষয়টি নতুন করে বিবেচনা করবেন।
লেখক : শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
wadudtuhin@gmail.com
No comments