অকুতোভয় মহিমা by সাযযাদ কাদির
দুঃখের বিষয়, দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের জীবন আজ আবর্তিত হচ্ছে কারাগার ও কাঠগড়ায়। সুখের বিষয়, নিজের মর্যাদা ও মহিমাকে সমুন্নত রেখে তিনি মোকাবিলা করে চলেছেন সব কিছু।
ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও কঠোর হতে পারে- সে আশঙ্কায় বিচলিত নন তিনি। সম্ভাব্য সকল পরিণামকে বরণ করার এমন অকুতোভয় প্রস্তুতি তার চারিত্র্যকে দিয়েছে এক অনন্য মহিমা। আরও সুখের বিষয়, মাহমুদুর রহমান আশ্রয় নিয়েছেন আইনের কাছে। আইনের পথেই তিনি চালিয়ে যেতে চান তার লড়াই। তবে সরকার ও সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণে থাকে অসংখ্য রকম কলকাঠি।
সে সব কলকাঠি যখন যেভাবে খুশি নাড়াচাড়ার সুযোগও থাকে তাদের। আমাদের উদ্বেগ এখানেই। কারণ, ক্ষমতা ও সুযোগের অপব্যবহার এ দেশে নতুন কিছু নয়। আমরা আগেও দেখেছি এ অপব্যবহার, কিন্তু আর দেখতে চাই না। তবে প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় মাহমুদুর রহমানের খবর পড়ি আর ব্যথিত হই। বিপন্ন বোধ করি। আগেও সেই কবে থেকে পড়ছি এ সব খবর, জানি না কবে থেকে আর পড়তে হবে না সে ভাবে। আগেও মামলার পর মামলা তারপর পথে-ঘাটে হামলা, শেষে গ্রেপ্তার হয়েছেন মাহমুদুর রহমান। তখন আমার দেশ-এর প্রকাশনা বন্ধ হয়েছে, প্রেসে তালা ঝুলেছে একই সঙ্গে। সুখের বিষয়, আইন এক ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখে সমুন্নত করে তুলেছিল ন্যায়ের স্বার্থকে। ফলে আমার দেশ ও প্রেস মুক্ত হয়েছিল মহামান্য আদালতের নির্দেশে। আশা করি, এবারও সে ভাবে মুক্ত হয়ে আসবেন মাহমুদুর রহমান-ও। এ আশা আমার মতো আরও অনেকের- আমার দেশ-এর পরিস্থিতি যাদের জীবন ও জীবিকাকে অনিশ্চিত করে তুলেছে কেবল তাদের নয়, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার- সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানের মর্যাদায় বিশ্বাসী সকলের।
সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও সক্রিয় হয়ে আছি গত ৫০ বছর ধরে। এই এতগুলো বছরে সংবাদপত্র ও সাংবাদিক দলন দেখেছি অনেক। দেখেছি সংবাদপত্র কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, দেখেছি সাংবাদিকদের লাঞ্ছনা ও কারা-নির্যাতনের নৃশংসতা। গঞ্জনার শিকার হয়েছি আমিও। এ সব ঘটনা বিশেষ সময়ের না, বিশেষ আমলেরও না। কিন্তু আমরা, সাংবাদিকেরা, এক থেকেছি সব সময়। সোচ্চার হয়েছি এক সঙ্গে। কথা বলেছি এক কণ্ঠে। যথোচিত প্রতিবাদ করেছি, ভূমিকা নিয়েছি।
সুখের বিষয়, আমার দেশ পরিস্থিতিতে সাংবাদিক সমাজ সব সময়ই আওয়াজ তুলেছেন অভিন্ন কণ্ঠে। দল-মতের ভিন্নতা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি এ ক্ষেত্রে। তবে লক্ষ্য করেছি মাহমুদুর রহমানের সম্পর্কে ভিন্ন বক্তব্য রেখেছেন কেউ-কেউ -রাখতেই পারেন, কারণ, কেউ-ও - তিনি-ও, নন সমালোচনার ঊর্ধ্বে। কিন্তু যে মুহূর্তে মাহমুদুর রহমান এক বিরূপ পরিস্থিতির শিকার, কোনও জবাব দিতে অপারগ, তখন এ ধরনের তিক্ত বক্তব্য কেন? তবে কি মাহমুদুর রহমান নগ্ন হয়ে পড়েছেন হিংস্র নেকড়ে পালের সামনে? আশা করছি, সাংবাদিক সমাজ সমান সোচ্চার থাকবেন তার ব্যাপারে। বিশেষ করে সম্পাদক মহোদয়েরা রাখবেন বিশেষ ভূমিকা। তাদের কাছে সংগত কারণেই সকলের প্রত্যাশা বেশি।
সমাজে নানা মতের নানা চিন্তার মানুষ থাকবেন। সকলের সব কথায় একমত হবেন না কেউ। এটাই সমাজের সৌন্দর্য। যদি নিজের মত অন্যের ওপর চাপিয়ে দিতে চাই, যদি অন্যের মত প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করি- তাহলে আর সেই সৌন্দর্য থাকে না। আমরা যে গণতন্ত্রের কথা বলি, গণতান্ত্রিক সমাজের কথা বলি- তার মূল বিষয় ওই সৌন্দর্য।
গণতন্ত্রের কথা কিন্তু আমরা জোরেশোরেই বলি, কিন্তু যা চর্চা করে চলেছি তা অত্যন্ত অনুদার এক গণতন্ত্র। এতে নানা ফুলের একটি মালার সৌন্দর্য বা সুবাস কিছুই পাই না আমরা। সহিষ্ণুতার বদলে পরমতপীড়নই বড় প্রত্যক্ষ হয়ে ওঠে বহু ক্ষেত্রে।
মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথের নৈবেদ্য কাব্যগ্রন্থের অনেক দৃপ্ত উচ্চারণ।
নিজের স্বল্প শক্তি ও সীমিত সামর্থ্য সম্পর্কে কবি সচেতন। কিন্তু মঙ্গলবোধ, শ্রেয়োচেতনা, কল্যাণ কামনা, মানবপ্রেম, সত্যনিষ্ঠা ও আশা তার অল্প নয়। তিনি বলেন, ‘শক্তি মোর অতি অল্প, হে দীন বৎসল/আশা মোর অল্প নহে।’ তাই বীর্যবন্ত হয়ে ওঠার বাসনা প্রকাশ করেন কবি। দর্পিত অন্যায় ও ঔদ্ধত বলের চরণে নতজানু না হওয়ার অকম্পিত ঘোষণাও করেন তিনি- ‘বীর্য দেহো ক্ষুদ্র জনে/না করিতে হীন জ্ঞান, বলের চরণে/না লুটিতে।’
সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও সক্রিয় হয়ে আছি গত ৫০ বছর ধরে। এই এতগুলো বছরে সংবাদপত্র ও সাংবাদিক দলন দেখেছি অনেক। দেখেছি সংবাদপত্র কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, দেখেছি সাংবাদিকদের লাঞ্ছনা ও কারা-নির্যাতনের নৃশংসতা। গঞ্জনার শিকার হয়েছি আমিও। এ সব ঘটনা বিশেষ সময়ের না, বিশেষ আমলেরও না। কিন্তু আমরা, সাংবাদিকেরা, এক থেকেছি সব সময়। সোচ্চার হয়েছি এক সঙ্গে। কথা বলেছি এক কণ্ঠে। যথোচিত প্রতিবাদ করেছি, ভূমিকা নিয়েছি।
সুখের বিষয়, আমার দেশ পরিস্থিতিতে সাংবাদিক সমাজ সব সময়ই আওয়াজ তুলেছেন অভিন্ন কণ্ঠে। দল-মতের ভিন্নতা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি এ ক্ষেত্রে। তবে লক্ষ্য করেছি মাহমুদুর রহমানের সম্পর্কে ভিন্ন বক্তব্য রেখেছেন কেউ-কেউ -রাখতেই পারেন, কারণ, কেউ-ও - তিনি-ও, নন সমালোচনার ঊর্ধ্বে। কিন্তু যে মুহূর্তে মাহমুদুর রহমান এক বিরূপ পরিস্থিতির শিকার, কোনও জবাব দিতে অপারগ, তখন এ ধরনের তিক্ত বক্তব্য কেন? তবে কি মাহমুদুর রহমান নগ্ন হয়ে পড়েছেন হিংস্র নেকড়ে পালের সামনে? আশা করছি, সাংবাদিক সমাজ সমান সোচ্চার থাকবেন তার ব্যাপারে। বিশেষ করে সম্পাদক মহোদয়েরা রাখবেন বিশেষ ভূমিকা। তাদের কাছে সংগত কারণেই সকলের প্রত্যাশা বেশি।
সমাজে নানা মতের নানা চিন্তার মানুষ থাকবেন। সকলের সব কথায় একমত হবেন না কেউ। এটাই সমাজের সৌন্দর্য। যদি নিজের মত অন্যের ওপর চাপিয়ে দিতে চাই, যদি অন্যের মত প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করি- তাহলে আর সেই সৌন্দর্য থাকে না। আমরা যে গণতন্ত্রের কথা বলি, গণতান্ত্রিক সমাজের কথা বলি- তার মূল বিষয় ওই সৌন্দর্য।
গণতন্ত্রের কথা কিন্তু আমরা জোরেশোরেই বলি, কিন্তু যা চর্চা করে চলেছি তা অত্যন্ত অনুদার এক গণতন্ত্র। এতে নানা ফুলের একটি মালার সৌন্দর্য বা সুবাস কিছুই পাই না আমরা। সহিষ্ণুতার বদলে পরমতপীড়নই বড় প্রত্যক্ষ হয়ে ওঠে বহু ক্ষেত্রে।
মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথের নৈবেদ্য কাব্যগ্রন্থের অনেক দৃপ্ত উচ্চারণ।
নিজের স্বল্প শক্তি ও সীমিত সামর্থ্য সম্পর্কে কবি সচেতন। কিন্তু মঙ্গলবোধ, শ্রেয়োচেতনা, কল্যাণ কামনা, মানবপ্রেম, সত্যনিষ্ঠা ও আশা তার অল্প নয়। তিনি বলেন, ‘শক্তি মোর অতি অল্প, হে দীন বৎসল/আশা মোর অল্প নহে।’ তাই বীর্যবন্ত হয়ে ওঠার বাসনা প্রকাশ করেন কবি। দর্পিত অন্যায় ও ঔদ্ধত বলের চরণে নতজানু না হওয়ার অকম্পিত ঘোষণাও করেন তিনি- ‘বীর্য দেহো ক্ষুদ্র জনে/না করিতে হীন জ্ঞান, বলের চরণে/না লুটিতে।’
No comments