মেগালোম্যানিয়া! by এম আবদুল হাফিজ
আমার এক অতি প্রশংসিত ব্যক্তিত্ব বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিভিন্ন মহল থেকে বিতর্কিত হতে দেখে আমি দুঃখ পাই। ডক্টর আলমগীরকে অত্যন্ত কাছে থেকে দেখেছি এবং পরিবারগতভাবে তার সঙ্গে কিছু সুখস্মৃতিবিজড়িত হয়ে আছে। এক-এগারোর পর তিনি শুধু গ্রেফতারই নয়, নির্যাতিত হয়েছিলেন।
তিনি বিভিন্ন সময়ে অনেক দায়িত্বশীল পদে আসীন ছিলেন। এসবই তার মেধা ও যোগ্যতার বদৌলতে।
আশ্চর্য লাগে যে, তার মতো ব্যক্তিকে বিশ্বজিৎ এপিসোডে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু চিহ্নিত ছাত্রলীগ মাস্তানকে সুরক্ষা কেন দিতে হবে!
জামায়াত-শিবির বা বিএনপির হরতাল-অবরোধকে 'প্রতিহত' করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দলীয় ক্যাডারদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই নির্দেশটির মধ্যেই কিছুটা প্ররোচনা প্রচ্ছন্ন আছে। সেটাই হয়তো ছাত্রলীগ মাস্তানদের বাড়তি সাহস জুগিয়ে থাকবে। যখন ব্যাপারটা ঘটেই গেল, তারপর কেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ওই মাস্তানদের রক্ষার্থে বিভ্রান্তি সৃষ্টির আশ্রয় নিতে হলো, তা নিয়ে তার ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যেই নানা প্রশ্ন। এর আগেও তাজরীন অগি্নকাণ্ডেও তিনি 'নাশকতা'র আলামত দেখেছিলেন বলে তার দাবি থাকলেও নাশকতাটি কার, কেন এবং কীভাবে, সেসবের ব্যাখ্যা তিনি দেননি বা দিতে পারেননি।
ডক্টর আলমগীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরূপে দায়িত্ব নেওয়ার প্রাক্কালে তার পূর্বসূরির মাত্রাতিরিক্ত ভূয়সী প্রশংসা করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সবাইকে তাক লাগিয়ে বললেন যে, সাহারা খাতুন নাকি বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যারা অতিরিক্ত প্রতিভাবান বা বুদ্ধিবৃত্তিকজন_ তাদের কথাবার্তার পেছনে মানসিক ভারসাম্য নিয়ে অনেকে সংশয় প্রকাশ করেন, যদিও সেই নিন্দুকদের দলভুক্ত নই। আমি তার এমন অভিব্যক্তিকে তার কথনশৈলী বলেই মনে করি।
বিরোধী দলের ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত আক্রমণাত্মক। জামায়াত-শিবির এবং কিছু কিছু বিএনপির প্রতিও মানুষ বিরক্ত। বিশেষ করে হরতালে-অবরোধে এই সংগঠনগুলোর তাণ্ডব ও ভাংচুর অনেকেই পছন্দ করে না, যদিও তাদের উত্থাপিত কিছু ইস্যুর প্রতি জনসমর্থন আছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দলীয় ক্যাডারদের প্রতি বক্তব্য_ 'জামায়াত-শিবিরকে যেখানেই পাবেন, আক্রমণ করবেন'_ ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। আফটার অল, বাংলাদেশ তো এখনও একটি গণতান্ত্রিক দেশ, যাকে বেসামরিক কর্তৃপক্ষই চালাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে যেসব বেসামরিক বাহিনী আছে, তার যে কোনো সদস্যের, এমনকি একজন ফোরস্টার জেনারেলকে গ্রেফতার করার আইনি ক্ষমতা আছে। কিন্তু কদাচিৎ তার প্রয়োগ হয়। ডক্টর আলমগীরের মতো বিদ্বান ব্যক্তি অবশ্যই তার ও মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন। কিন্তু এর সঠিক প্রয়োগে তাকে দলের ঊধর্ে্ব উঠতে হবে। তার বদলে যদি তার মনস্তত্ত্বে খানিক মেগালোম্যানিয়ার অনুপ্রবেশ ঘটে, তাহলেই সর্বনাশ!
ডক্টর আলমগীরের সর্বশেষ কীর্তি, অতি গোপনে শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ বিশ্বাসকে মুক্তিদান। সারাদেশে এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কী উদ্দেশ্যে, কেন এই নাজুক সময়ে তার মুক্তি_ তা নিয়ে প্রশ্নের অন্ত নেই, সমানে ছড়াচ্ছে গুজব। ফলে উদ্বেগ, উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠা পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। বিকাশকে নিয়ে আলোচনা যখন তুঙ্গে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিদ্বর্িধায় বললেন, প্রচলিত আইন মেনেই বিকাশকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শুনেছি যে, বিকাশের ত্রাসের পরিধি বিশাল। তার সন্ত্রাসে পুরো জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সুতরাং তাকে নিয়ে তো আর দশটা সন্ত্রাসীর মতো ব্যবহারবিধি হতে পারে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিশ্চয়ই অবগত যে, দেশ এখন একাধিক মহল থেকে হুমকির শিকার, আমাদের পদ্মা সেতুর ভাগ্য অনিশ্চিতভাবে ঝুলে আছে, দেশময় রাজনৈতিক বিভেদ-বিদ্বেষ আমাদের ক্রমেই অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। গার্মেন্ট সেক্টরে একাধিক মহলের শ্যেনদৃষ্টি। এমন একটি ক্রান্তিকালে ক্ষমতার মেজাজ নিয়ে নয়, সমঝোতার মেজাজ নিয়ে আমাদের সাবধানী পায়ে এগোতে হবে।
পুলিশি হুঙ্কার নয়, রাইফেলের গুঁতোয় নয়, বুলেট তো নয়ই_ চাপাতি, রামদা বা এসব অস্ত্র বহনেও নিষেধাজ্ঞা জরুরি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এখনও অনেক সুযোগ আছে ভুল শোধরানোর। দলীয় ক্ষুদ্রতা যেন আপনাকে গ্রাস না করতে পারে। আপনার মর্যাদা দল ও কালের গণ্ডি পেরিয়ে অনেক ঊধর্ে্ব উঠতে পারে। আপনি কেন ক্ষুদ্রতার কাছে হার মানবেন। খলিল জিবরানের ক'টি পঙ্ক্তি দিয়ে শেষ করছি :
ণড়ঁ ঁহফবৎংঃধহফ ঁং হড়ঃ, নঁঃ বি ড়ভভবৎ ড়ঁৎ
ংুসঢ়ধঃযু ঃড় ুড়ঁ. ণড়ঁ ধৎব ৎধপরহম রিঃয ঃযব
পঁৎৎবহঃ ড়ভ ঃযব জরাবৎ ড়ভ ষরভব, ধহফ ুড়ঁ
উড় হড়ঃ ষড়ড়শ ঁঢ়ড়হ ঁং; নঁঃ বি ধৎব ংরঃঃরহম নু
ঃযব পড়ধংঃ, ধিঃপযরহম ুড়ঁ ধহফ যবধৎরহম ুড়ঁৎ
ঝঃৎধহমব ঠড়রপবং.
কযধষরষ এরনৎধহ
(রহ 'বি ধহফ ুড়ঁ')
ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম আবদুল হাফিজ :সাবেক মহাপরিচালক বিআইআইএসএস ও কলাম লেখক
আশ্চর্য লাগে যে, তার মতো ব্যক্তিকে বিশ্বজিৎ এপিসোডে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু চিহ্নিত ছাত্রলীগ মাস্তানকে সুরক্ষা কেন দিতে হবে!
জামায়াত-শিবির বা বিএনপির হরতাল-অবরোধকে 'প্রতিহত' করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দলীয় ক্যাডারদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই নির্দেশটির মধ্যেই কিছুটা প্ররোচনা প্রচ্ছন্ন আছে। সেটাই হয়তো ছাত্রলীগ মাস্তানদের বাড়তি সাহস জুগিয়ে থাকবে। যখন ব্যাপারটা ঘটেই গেল, তারপর কেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ওই মাস্তানদের রক্ষার্থে বিভ্রান্তি সৃষ্টির আশ্রয় নিতে হলো, তা নিয়ে তার ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যেই নানা প্রশ্ন। এর আগেও তাজরীন অগি্নকাণ্ডেও তিনি 'নাশকতা'র আলামত দেখেছিলেন বলে তার দাবি থাকলেও নাশকতাটি কার, কেন এবং কীভাবে, সেসবের ব্যাখ্যা তিনি দেননি বা দিতে পারেননি।
ডক্টর আলমগীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরূপে দায়িত্ব নেওয়ার প্রাক্কালে তার পূর্বসূরির মাত্রাতিরিক্ত ভূয়সী প্রশংসা করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সবাইকে তাক লাগিয়ে বললেন যে, সাহারা খাতুন নাকি বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যারা অতিরিক্ত প্রতিভাবান বা বুদ্ধিবৃত্তিকজন_ তাদের কথাবার্তার পেছনে মানসিক ভারসাম্য নিয়ে অনেকে সংশয় প্রকাশ করেন, যদিও সেই নিন্দুকদের দলভুক্ত নই। আমি তার এমন অভিব্যক্তিকে তার কথনশৈলী বলেই মনে করি।
বিরোধী দলের ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত আক্রমণাত্মক। জামায়াত-শিবির এবং কিছু কিছু বিএনপির প্রতিও মানুষ বিরক্ত। বিশেষ করে হরতালে-অবরোধে এই সংগঠনগুলোর তাণ্ডব ও ভাংচুর অনেকেই পছন্দ করে না, যদিও তাদের উত্থাপিত কিছু ইস্যুর প্রতি জনসমর্থন আছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দলীয় ক্যাডারদের প্রতি বক্তব্য_ 'জামায়াত-শিবিরকে যেখানেই পাবেন, আক্রমণ করবেন'_ ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। আফটার অল, বাংলাদেশ তো এখনও একটি গণতান্ত্রিক দেশ, যাকে বেসামরিক কর্তৃপক্ষই চালাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে যেসব বেসামরিক বাহিনী আছে, তার যে কোনো সদস্যের, এমনকি একজন ফোরস্টার জেনারেলকে গ্রেফতার করার আইনি ক্ষমতা আছে। কিন্তু কদাচিৎ তার প্রয়োগ হয়। ডক্টর আলমগীরের মতো বিদ্বান ব্যক্তি অবশ্যই তার ও মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন। কিন্তু এর সঠিক প্রয়োগে তাকে দলের ঊধর্ে্ব উঠতে হবে। তার বদলে যদি তার মনস্তত্ত্বে খানিক মেগালোম্যানিয়ার অনুপ্রবেশ ঘটে, তাহলেই সর্বনাশ!
ডক্টর আলমগীরের সর্বশেষ কীর্তি, অতি গোপনে শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ বিশ্বাসকে মুক্তিদান। সারাদেশে এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কী উদ্দেশ্যে, কেন এই নাজুক সময়ে তার মুক্তি_ তা নিয়ে প্রশ্নের অন্ত নেই, সমানে ছড়াচ্ছে গুজব। ফলে উদ্বেগ, উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠা পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। বিকাশকে নিয়ে আলোচনা যখন তুঙ্গে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিদ্বর্িধায় বললেন, প্রচলিত আইন মেনেই বিকাশকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শুনেছি যে, বিকাশের ত্রাসের পরিধি বিশাল। তার সন্ত্রাসে পুরো জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সুতরাং তাকে নিয়ে তো আর দশটা সন্ত্রাসীর মতো ব্যবহারবিধি হতে পারে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিশ্চয়ই অবগত যে, দেশ এখন একাধিক মহল থেকে হুমকির শিকার, আমাদের পদ্মা সেতুর ভাগ্য অনিশ্চিতভাবে ঝুলে আছে, দেশময় রাজনৈতিক বিভেদ-বিদ্বেষ আমাদের ক্রমেই অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। গার্মেন্ট সেক্টরে একাধিক মহলের শ্যেনদৃষ্টি। এমন একটি ক্রান্তিকালে ক্ষমতার মেজাজ নিয়ে নয়, সমঝোতার মেজাজ নিয়ে আমাদের সাবধানী পায়ে এগোতে হবে।
পুলিশি হুঙ্কার নয়, রাইফেলের গুঁতোয় নয়, বুলেট তো নয়ই_ চাপাতি, রামদা বা এসব অস্ত্র বহনেও নিষেধাজ্ঞা জরুরি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এখনও অনেক সুযোগ আছে ভুল শোধরানোর। দলীয় ক্ষুদ্রতা যেন আপনাকে গ্রাস না করতে পারে। আপনার মর্যাদা দল ও কালের গণ্ডি পেরিয়ে অনেক ঊধর্ে্ব উঠতে পারে। আপনি কেন ক্ষুদ্রতার কাছে হার মানবেন। খলিল জিবরানের ক'টি পঙ্ক্তি দিয়ে শেষ করছি :
ণড়ঁ ঁহফবৎংঃধহফ ঁং হড়ঃ, নঁঃ বি ড়ভভবৎ ড়ঁৎ
ংুসঢ়ধঃযু ঃড় ুড়ঁ. ণড়ঁ ধৎব ৎধপরহম রিঃয ঃযব
পঁৎৎবহঃ ড়ভ ঃযব জরাবৎ ড়ভ ষরভব, ধহফ ুড়ঁ
উড় হড়ঃ ষড়ড়শ ঁঢ়ড়হ ঁং; নঁঃ বি ধৎব ংরঃঃরহম নু
ঃযব পড়ধংঃ, ধিঃপযরহম ুড়ঁ ধহফ যবধৎরহম ুড়ঁৎ
ঝঃৎধহমব ঠড়রপবং.
কযধষরষ এরনৎধহ
(রহ 'বি ধহফ ুড়ঁ')
ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম আবদুল হাফিজ :সাবেক মহাপরিচালক বিআইআইএসএস ও কলাম লেখক
No comments