নতুন পরিচালক নিয়োগ-আস্থায় আসুক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক
রাষ্ট্রায়ত্ত সাত ব্যাংকে ৩১ জন নতুন পরিচালক নিয়োগ করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপন থেকে দেখা যায়, সাবেক ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি কয়েকজন রাজনীতিবিদও নতুন পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন।
সময়ই বলবে তারা কেমন পারফর্ম করবেন। তবে যে প্রেক্ষাপটে তারা এ দায়িত্বলাভ করেছেন সেটা বিবেচনায় রাখলে বুঝতে পারবেন কণ্টকাকীর্ণ পথ তাদের সামনে। বহুল আলোচিত সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি প্রকাশ হয়ে পড়ায় সর্বমহলেই প্রশ্ন_ পরিচালনা পর্ষদ কোনোভাবেই এ গুরুতর অনিয়মের দায়িত্ব এড়াতে পারে না। শুধু হলমার্ক কেলেঙ্কারি নয়, সোনালী ব্যাংকে আরও অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে। জনতা-অগ্রণী-রূপালী ব্যাংকেও বেশ কিছু অনিয়ম চিহ্নিত। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকা কোনো কোনো পরিচালক সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে কিছু প্রতিষ্ঠানকে নিয়ম-বহির্ভূত সুবিধা প্রদান করেছেন এবং এ প্রক্রিয়ায় নিজেরাও লাভবান হয়েছেন, এমন অভিযোগ উঠেছে। পূর্ববর্তী সরকারের আমলে যেসব অনিয়ম হয়েছে তা দূর করার কার্যকর চেষ্টাও এ সময়ে দেখা যায়নি। এভাবে ব্যাংকের যেমন আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, তেমনি এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পদও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায়নি। বিধিবিধান উপেক্ষা করে দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনা কর্মকাণ্ডে নাক গলানোর অভিযোগও কম নেই। যে ৩১ জন পরিচালক হিসেবে নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন তারা এ ধারাতেই চলতে থাকবেন, নাকি ব্যাংকগুলোর প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনায় মনোযোগী হবেন সেটাই প্রশ্ন। তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতি অর্থনৈতিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গই শুধু নয়, সাধারণ মানুষ এবং সংবাদমাধ্যমের সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকবেই। ব্যাংকের নিয়োগে রাজনৈতিক পরিচয় দূষণীয়, এমন কথা ঠিক নয়। কিন্তু ব্যাংকিং খাতের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ধারণা নেই এমন ব্যক্তিদের এ পদে নিয়ে আসা অযৌক্তিক। সরকারের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার থাকতে পারে এবং এ জন্য ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও স্বীকৃত। এ কাজে দক্ষ ও যোগ্য লোকদের নিয়োগ দিতে দ্বিধা করা উচিত নয়। আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। তাদের সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন এমন লোক অনেক। পরিচালক পদে নিয়োগে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া যেত। কিন্তু বাস্তবে সেটা হয়নি। আর এ কারণেই নতুন পরিচালকদের জন্য চ্যালেঞ্জটা অনেক বড়। ব্যাংকগুলোকে অর্থনৈতিক বিবেচনা থেকে পরিচালনা এবং খেলাপি ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত করায় তারা কতটা সফলতা দেখাবেন, তা সময়ে স্পষ্ট হবে। খেলাপি ঋণের জন্য ঋণগ্রহীতা ও ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন নেতাদের যেমন দায় রয়েছে, তেমনি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপও ভূমিকা রেখেছে। ঋণ পুনঃতফসিল করা এবং সুদ মওকুফ সুবিধা পাওয়ার জন্য অনেক গ্রহীতা অনিয়মের পথে চলেছেন এবং তার সুবিধা পরিচালকমণ্ডলীর সদস্যরাও পেয়েছেন এমন অভিযোগকে অমূলক বলে উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই। নতুন পরিচালকমণ্ডলীর সদস্যরা এ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন এবং অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্ত দায়িত্ব পালন করবেন, এটাই প্রত্যাশা। তাদের মনে রাখতে হবে, প্রাইভেট ব্যাংকগুলো নিজেদের দক্ষতা-যোগ্যতা-উদ্ভাবনে সরকারি ব্যাংকগুলোকে পেছনে ঠেলে দিচ্ছে এবং এ বাধা অতিক্রম মোটেই সহজ নয়।
No comments