এক টেবিলেও দ্বিমুখী তোফায়েল-মোশাররফ by ইসমাইল হোসেন
দু’জনই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ছাত্রজীবনে রাজনীতিও করেছেন একসঙ্গে। কালের পরিক্রমায় এখন তারা বিপরীতমুখী দু’টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা।
শুক্রবার নিজ বিদ্যাপীঠের এক বিভাগের অনুষ্ঠানে দু’জনই এক টেবিলে বসে ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন উপলব্ধি তুলে ধরে সমবেতদের হাততালি পেলেও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে একমত হতে পারেন নি তারা।
এ দু’জনের একজন হলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা তোফায়েল আহমেদ, অপরজন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ লিনায়তনে ‘বাংলাদেশের রাজনীতির গতিবিধি’ শীর্ষক এই রাউন্ড টেবিল আলোচনা আয়োজন করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (ডাপসা), অনুষ্ঠান চলে সন্ধ্যা অবধি।
শুরুতেই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী ড. মিজানুর রহমান শেলীর সঞ্চালনায় মুক্ত আলোচনায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাবেক ছাত্র তিতুমির কলেজের শিক্ষক ফাহমিদা হক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইমরান হোসেন, এম মোর্শেদ, কুদ্দুস খান বক্তব্য রাখেন। তারা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে সংঘাত এড়াতে দুই নেত্রীকে সংলাপে বসার আহ্বান জানান।
প্যানেল আলোচক সাংবাদিক এবিএম মুসা বলেন, “চরম সংঘাত ছাড়া সংলাপের নজির নাই। দেশ একটি সংঘাত, সংঘর্ষ, গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা এড়াতে একটা সংলাপ হতে হবে। তবে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে, মধ্যস্থতা করার লোক নেই। সাধারণ মানুষ যতোদিন সোচ্চার না হবে ততো দিন সংলাপ হবে না।”
এজন্য জনমত সৃষ্টির ওপর জোর দেন তিনি। তবে সংলাপেও যে সমস্যার সমাধান হবে, সে বিষয়েও সন্দেহও পোষণ করেন।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ডাকসুর ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না এক বছর পরে দেশের কি হবে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “সমগ্র জাতি মিলে দুই নেত্রীকে সংলাপে বসাতে হবে, অন্যথায় তাদের বর্জন করতে হবে।”
বিরোধী দলের নেতার মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা ও জামায়াতকে সঙ্গে রাখার সমালোচনা করেন তিনি।
বিএনপি নেতা ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, “দেশের মানুষ আগামী নির্বাচন নিয়ে উদ্বিগ্ন। ছিয়ানব্বই সালে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে যখন আন্দোলন করেছিল, তখন কেবল বিএনপির সংসদ সদস্যরাই সংসদে বিল পাশ করে।”
যে পথে তত্ত্বাবধায়ক এসেছে, সেই পথে সমস্যার সমাধান সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, “মহাজোটের সংসদ সদস্য দুই-তৃতীয়াংশ, তারা সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক বহাল করতে পারে।”
এজন্য আন্তরিকতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
ছিয়ানব্বইয়ে দু’টি দলের মধ্যে যে দুরত্ব ছিল তা বর্তমানে অনেক বেড়ে গেছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, “সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পারতেন হোস্ট হয়ে বিরোধী দলের নেতাকে অতিথি মনে করে কথা বলতে, কিন্তু তিনি তা করেন নি।”
‘তেল মারতে ভারতে গেছেন’-প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে মোশাররফ বলেন, “ভারত সরকারের আমন্ত্রণে তিনি গিয়েছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্য প্রধানমন্ত্রীর মুখে এমন কথা শুনতে হয়।”
যে অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে তা নির্দলীয় হতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “সংবিধানের সংশোধনী আনলে সংঘাত এড়ানো যাবে, অন্যথায় আগামী দিনে রাস্তায় নামিয়ে সরকারকে বাধ্য করা হবে।”
বিএনপি নেতার কথার জবাবে জিয়াউর রহমান ও এরশাদের প্রতি ইঙ্গিত করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, “বর্তমান রাজনীতির এই অবস্থার জন্য সামরিক শাসক দায়ী। তারা ১৫ বছর জগদ্দল পাথরের মতো বসেছিল। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চালু না করলে আজকের এই অবস্থা হতো না। যার নাগরিকত্ব ছিল না সেই জামায়াত নেতাকে নাগরিকক্ত দিয়ে দেশে আনার ফলে আজ পুলিশের ওপর হামলা করছে জামায়াত-শিবির।”
নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লা, সাকা চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী নয়- খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্য শুনতে খারাপ লাগে মন্তব্য করে তোফায়েল বলেন, “রাজনীতি যেভাবে ছিল এখন সেভাবে নেই।”
সেনাকুঞ্জে বিরোধী দলের নেতা প্রধানমন্ত্রীকে কুশল বিনিময়ের সুযোগ দেননি বলে দাবি করেন তোফায়েল। অনুষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতির সমালোচনাও করেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু নিয়ে বিরোধী দলের আন্দোলন প্রসঙ্গে তোফায়েল বলেন, “যে পরিস্থিতিতে আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক প্রবর্তন করা হয়েছিল গত চারটি নির্বাচনে তার অভিজ্ঞতা ভাল নয়।”
রংপুর, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনসহ কয়েকটি নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “দলীয় সরকারের অধীনেও অবাধ নির্বাচন হতে পারে।”
তিনি বলেন, “পৃথিবীর সব দেশে দলীয় সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করে থাকে।”
সুতরাং তত্ত্বাধায়কের দাবি না করে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করে কিভাবে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা হতে পারে বলে মত দেন তিনি।
অনুষ্ঠান শেষে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কয়েকজন অতিথি দুই নেতার বক্তব্য আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, “কিছুই তো বোঝা গেল না ওনাদের বক্তব্যে। তাহলে দেশ কোন দিকে যাবে?”
বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ লিনায়তনে ‘বাংলাদেশের রাজনীতির গতিবিধি’ শীর্ষক এই রাউন্ড টেবিল আলোচনা আয়োজন করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (ডাপসা), অনুষ্ঠান চলে সন্ধ্যা অবধি।
শুরুতেই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী ড. মিজানুর রহমান শেলীর সঞ্চালনায় মুক্ত আলোচনায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাবেক ছাত্র তিতুমির কলেজের শিক্ষক ফাহমিদা হক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইমরান হোসেন, এম মোর্শেদ, কুদ্দুস খান বক্তব্য রাখেন। তারা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে সংঘাত এড়াতে দুই নেত্রীকে সংলাপে বসার আহ্বান জানান।
প্যানেল আলোচক সাংবাদিক এবিএম মুসা বলেন, “চরম সংঘাত ছাড়া সংলাপের নজির নাই। দেশ একটি সংঘাত, সংঘর্ষ, গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা এড়াতে একটা সংলাপ হতে হবে। তবে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে, মধ্যস্থতা করার লোক নেই। সাধারণ মানুষ যতোদিন সোচ্চার না হবে ততো দিন সংলাপ হবে না।”
এজন্য জনমত সৃষ্টির ওপর জোর দেন তিনি। তবে সংলাপেও যে সমস্যার সমাধান হবে, সে বিষয়েও সন্দেহও পোষণ করেন।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ডাকসুর ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না এক বছর পরে দেশের কি হবে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “সমগ্র জাতি মিলে দুই নেত্রীকে সংলাপে বসাতে হবে, অন্যথায় তাদের বর্জন করতে হবে।”
বিরোধী দলের নেতার মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা ও জামায়াতকে সঙ্গে রাখার সমালোচনা করেন তিনি।
বিএনপি নেতা ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, “দেশের মানুষ আগামী নির্বাচন নিয়ে উদ্বিগ্ন। ছিয়ানব্বই সালে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে যখন আন্দোলন করেছিল, তখন কেবল বিএনপির সংসদ সদস্যরাই সংসদে বিল পাশ করে।”
যে পথে তত্ত্বাবধায়ক এসেছে, সেই পথে সমস্যার সমাধান সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, “মহাজোটের সংসদ সদস্য দুই-তৃতীয়াংশ, তারা সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক বহাল করতে পারে।”
এজন্য আন্তরিকতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
ছিয়ানব্বইয়ে দু’টি দলের মধ্যে যে দুরত্ব ছিল তা বর্তমানে অনেক বেড়ে গেছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, “সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পারতেন হোস্ট হয়ে বিরোধী দলের নেতাকে অতিথি মনে করে কথা বলতে, কিন্তু তিনি তা করেন নি।”
‘তেল মারতে ভারতে গেছেন’-প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে মোশাররফ বলেন, “ভারত সরকারের আমন্ত্রণে তিনি গিয়েছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্য প্রধানমন্ত্রীর মুখে এমন কথা শুনতে হয়।”
যে অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে তা নির্দলীয় হতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “সংবিধানের সংশোধনী আনলে সংঘাত এড়ানো যাবে, অন্যথায় আগামী দিনে রাস্তায় নামিয়ে সরকারকে বাধ্য করা হবে।”
বিএনপি নেতার কথার জবাবে জিয়াউর রহমান ও এরশাদের প্রতি ইঙ্গিত করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, “বর্তমান রাজনীতির এই অবস্থার জন্য সামরিক শাসক দায়ী। তারা ১৫ বছর জগদ্দল পাথরের মতো বসেছিল। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চালু না করলে আজকের এই অবস্থা হতো না। যার নাগরিকত্ব ছিল না সেই জামায়াত নেতাকে নাগরিকক্ত দিয়ে দেশে আনার ফলে আজ পুলিশের ওপর হামলা করছে জামায়াত-শিবির।”
নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লা, সাকা চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী নয়- খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্য শুনতে খারাপ লাগে মন্তব্য করে তোফায়েল বলেন, “রাজনীতি যেভাবে ছিল এখন সেভাবে নেই।”
সেনাকুঞ্জে বিরোধী দলের নেতা প্রধানমন্ত্রীকে কুশল বিনিময়ের সুযোগ দেননি বলে দাবি করেন তোফায়েল। অনুষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতির সমালোচনাও করেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু নিয়ে বিরোধী দলের আন্দোলন প্রসঙ্গে তোফায়েল বলেন, “যে পরিস্থিতিতে আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক প্রবর্তন করা হয়েছিল গত চারটি নির্বাচনে তার অভিজ্ঞতা ভাল নয়।”
রংপুর, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনসহ কয়েকটি নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “দলীয় সরকারের অধীনেও অবাধ নির্বাচন হতে পারে।”
তিনি বলেন, “পৃথিবীর সব দেশে দলীয় সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করে থাকে।”
সুতরাং তত্ত্বাধায়কের দাবি না করে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করে কিভাবে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা হতে পারে বলে মত দেন তিনি।
অনুষ্ঠান শেষে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কয়েকজন অতিথি দুই নেতার বক্তব্য আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, “কিছুই তো বোঝা গেল না ওনাদের বক্তব্যে। তাহলে দেশ কোন দিকে যাবে?”
No comments