পুত্রের প্রত্যাশায় মেয়েশিশুর প্রতি বৈষম্য by অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম সরকার
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় ’পুত্রের প্রত্যাশায়’ নারীর প্রতি যেমন পারিবারিক সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলছে, ঠিক তেমনি পরিবার পর্যায়ে মেয়েশিশুদের ছেলে শিশুদের তুলনায় নগণ্য হিসেবে পরিগণিত করা হচ্ছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার ফলে মেয়েশিশুরা জীবনব্যাপী ধারাবাহিকভাবে নির্যাতন ও বৈষম্যের বেড়াজালে আটকা পড়ে আছে।
শিশুকালের গণ্ডিকে অতিক্রম করে সেসব মেয়েশিশুই ক্রমাগতভাবে পরিণত বয়সের দিকে ধাবিত হয়। একদিন সেসব মেয়েও অন্য কোনো মেয়ে সন্তানের ‘মা’ হলে নতুন করে নির্যাতনের মুখে পড়ে। পরিতাপের বিষয় হলো, নির্যাতনকারীরা আর কেউ নয় বরং স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির কাছের আত্মীয়-স্বজন। আমাদের দেশের মেয়েরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বামী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। এ যেন দুর্বিষহ স্থিতাবস্থা। দিন বদলের আজকের দিনেও মেয়েশিশুদের জীবনের পরিবর্তনের প্রত্যাশা যেন সুদূরপরাহত। কেননা আমরা জানি, স্বামীর ‘পুত্রের প্রত্যাশা’ মেটাতে না পারলে পারিবারিকভাবে সহিংসতার শিকার হন মেয়ে সন্তানের মায়েরা। অথচ বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত, সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে তা কখনোই মায়ের ওপর নির্ভর করে না বরং নির্ভর করে পিতার ওপর। সাম্প্রতিক সময়ের যে বিষয়টি আমাদের মনের অভ্যন্তরে বিশেষভাবে আলোড়ন সৃষ্টির মাধ্যমে কিছু মৌলিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, সে নির্মম ট্রাজেডিক্যাল ঘটনা আমার আজকের লেখার মূল বিষয়। ঘটনাটি হলো, গত ২১ ফেব্রুয়ারি ভৈরবের ট্রাজেডিক্যাল ঘটনা যা আমাদের লজ্জায় ফেলে দেয়। তৃতীয় বারের মতো মেয়ে সন্তান জন্ম দেয়ার কারণে প্রাণ দিতে হলো সাহেরাকে! কোনো সিভিলাইজড রাষ্ট্রে আজও এমন কিছু ঘটে, তা প্রায় অবিশ্বাস্য। ঘটনাটি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে প্রকাশিত হলে আমাদের মধ্যে একটা মৌলিক প্রশ্ন উচ্চারিত হতে থাকে, আর তা হলো, আমরা কি সত্যি সভ্য জগতের সুশীল সমাজের অংশ? আমাদের বিবেকের দরজা কি বন্ধ হয়ে গেছে?শুধু ভৈরবে নয়, নীলফামারী জেলার কুলসুম বেগমকে পরপর ৫ মেয়ে সন্তান জন্ম দেয়ার অপরাধে অমানবিক নির্যাতনের মাধ্যমে পঙ্গু করে দেয়া হয়। একই জেলার খোকশাবাড়ীতে বারবার পুত্রসন্তানের প্রত্যাশা করেও মেয়েশিশু জন্মগ্রহণ করায় মাত্র ১৫০ টাকায় বিক্রি করে দেয়া হয় মেয়েসন্তান সুমনাকে। ধারাবাহিকভাবে ৬টি মেয়েসন্তান জন্ম দেয়ার জন্য রোখসানাকে তার স্বামী তালাক প্রদান করে। অন্যদিকে পরপর ৪টি মেয়েসন্তান হলে সর্বশেষ মেয়েসন্তান ফেলানিকে আবর্জনার স্তূপে ফেলে দিয়ে আসে বাবা মজির আলী। যদিও সংবাদগুলো মর্মস্পর্শী, তবুও বিভিন্ন কারণে তা গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ শিরোনাম হতে পারেনি। ক্ষেত্রবিশেষে রাহেলার মতো দু-একজনকে নিয়ে শিরোনাম করে সংবাদ ছাপানো হলেও কয়েক দিন পর প্রতিবাদের ভাষা দুর্বল হতে হতে ক্ষীণ হয়ে যায়। আবারও সে অপরিবর্তিত দুর্বিষহ স্থিতাবস্থা আমাদের ঊদ্বেগের মাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়। বিয়ের পর গত এক যুগে একে একে তিন মেয়েসন্তানের জন্ম দেন সাহেরা। কিন্তু স্বামী জয়নাল চাচ্ছিলেন ছেলে। এ কারণে প্রতিবারই সন্তান জন্ম দেয়ার পর সাহেরার ওপর নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে। শুধু মেয়েসন্তান জন্ম দেয়ার কারণে একবার স্ত্রীকে তালাকও দেন জয়নাল। নয় মাস আগে সাহেরা তৃতীয় সন্তান তাহমিনার জন্ম দেন। এসব বিষয় নিয়ে প্রায় প্রতিনিয়ত সহিংসতার শিকার হতেন সাহেরা। এ অবস্থায় ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের নোয়াকান্দি গ্রামে স্বামীর বাড়ির শোবার ঘরে সাহেরার মৃতদেহ পাওয়া যায়। সাহেরার পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী ও পুলিশের বক্তব্য—পরপর তিন মেয়েসন্তান জন্ম দেয়ার কারণেই স্বামীর হাতে সাহেরাকে প্রাণ দিতে হয়েছে।
যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম তা হলো সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে তা নির্ভর করে পুরুষের ওপর। বিষয়টি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় প্রমাণিত। অথচ আমাদের দেশে শুধু মেয়েসন্তান জন্ম দেয়ার কারণে হাজার হাজার নারীকে দিনের পর দিন নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে। কোনো কোনো নারীকে মুত্যুর সঙ্গে সংগ্রাম করে মৃত্যুকে কিংবা পঙ্গুত্বকে বরণ করে নিতে হয়েছে। আমাদের দেশে মেয়েশিশুদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও মায়েদেরকে ছেলেসন্তান জন্ম দিতে না পারার জন্য দায়বদ্ধ করা নতুন কোনো বিষয় নয়, বরং এজাতীয় অজ্ঞতা আবহমান বাংলার গ্রাম ও শহরে যুগ যুগ ধরে চলমান। ছেলে ও মেয়েশিশু উভয়ের জন্যই পরিবার হোক বৈষম্যমুক্ত আবাসস্থল। বাংলাদেশের শিশুদের মধ্যে মেয়েশিশুরা ব্যাপক বৈষম্যের শিকার এবং ঐতিহ্যগতভাবে তারা জীবনের সব ক্ষেত্রে অধিকারবঞ্চিত। মা-বাবাসহ পরিবারের অন্য সবারই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবার পর্যায়ে ছেলে এবং মেয়েশিশুর মধ্যে বৈষম্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পরিবার পর্যায়ে মেয়েশিশুর প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন এখনও এদেশে এমন ধরনের কাজ নয়, যা পত্রিকার পাতায় সংবাদ শিরোনাম হওয়ার দাবি রাখে। কেননা এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয় পরিবারের অভ্যন্তরে এবং নির্যাতিতরা ভয়ে ও লজ্জায় মুখ খোলে না। ফলে পারিবারিক বৈষম্য মেয়েশিশুর ন্যায্য অধিকার হরণ করলেও এটা জনমনে সেভাবে প্রভাব ফেলে না এবং মেয়েশিশুর প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন একটি পারিবারিক রীতির মতো হয়ে উঠেছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায়। আমরা ঐতিহ্যগতভাবে সব সময় এজাতীয় অন্যায় দেখে আসার ফলে এটা আমাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হলেও বিষয়টি নিয়ে নতুনভাবে ভাবার অবকাশ রয়েছে। জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি বৈষম্যের শিকার হচ্ছে এদেশের মেয়েশিশুরা। গণমাধ্যমগুলো কয়েকটি বিষয়ে যেমন—স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও শিক্ষা বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হলেও পরিবার পর্যায়ে ছেলে কিংবা মেয়েশিশুর প্রায় সব ক্ষেত্রে বৈষম্য কমাতে ব্যর্থ হয়েছে।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ মেয়েশিশুর ক্ষেত্রে পারিবারিক দৃষ্টিভঙ্গি স্বচ্ছ নয়। অধিকাংশ পরিবারই মেয়েশিশুর জন্মকে অবাঞ্ছিত মনে করে। ক্ষেত্রবিশেষে লক্ষ্য করা যায়, মায়েরাও সন্তান জন্মের ক্ষেত্রে ছেলেশিশুর প্রত্যাশা বেশি করে। পরিবারের অভ্যন্তরে ছেলে এবং মেয়েশিশুর মধ্যে বৈষম্যের জন্য পিতামাতা বহুলাংশে দায়বদ্ধ। বিশ্বের ৪০টি দেশের মধ্যে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাবা-মায়ের মধ্যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছেলেসন্তানের প্রতি।
মজার তথ্য হলো, ছেলেসন্তানের প্রত্যাশায় পরিবার পর্যায়ে বিশ্বের অন্য কোনো দেশে বাংলাদেশের মতো এমন তীব্র আকাঙ্ক্ষা দেখা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দফতরের মানবাধিকার চর্চা সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে পরিবার পর্যায়ে মেয়েদের স্থান গৌণ ও বেশিরভাগ মেয়েশিশু তুলনামূলকভাবে কম স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টি পায়, যার পরিণতিতে অসুস্থতা তাদের নিত্যসঙ্গী এবং মৃত্যুহার প্রত্যাশিত হারের চেয়েও বহুগুণে বেশি।’ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শুধু গর্ভজনিত কারণে এবং সন্তান প্রসবের মুহূর্তে প্রতিদিন প্রায় ৭২ জন কিশোরী মা ও মেয়েশিশুর মৃত্যু হয়। বিশেষত এদেশের মেয়েশিশু পরিবার পর্যায়ে যে বৈষম্যের শিকার সেটা তাদের সার্বিক জীবনকে প্রভাবিত করে থাকে। বৈষম্য বাংলাদেশের মেয়েশিশু ও ছেলেশিশুদের মধ্যে বিভাজনের দেয়াল সৃষ্টি করে দেয়। শুধু বৈষম্যের কারণে বছরে ৫০ লাখ নবজাতক শিশুর অকালমৃত্যু ঘটে সারা বিশ্বে। জীবনের প্রথম বছরগুলোতে বিশ্বের যে ৮০ লাখ শিশুর মৃত্যু হচ্ছে তার মধ্যে ৫০ লাখ হচ্ছে নবজাতক, যারা কিনা তাদের জীবনের প্রথম চার দিনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করে। নবজাতক মৃত্যুর শতকরা ৯৮ ভাগ হচ্ছে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এবং তাদের অধিকাংশই মেয়েশিশু যারা পরিবার পর্যায়ে ব্যাপক বৈষম্যের শিকার।
মেয়েশিশুর প্রতি বৈষম্য কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। আমাদের দেশে মেয়েশিশুদের প্রতি পরিবার পর্যায়ে জেন্ডার বৈষম্য কোনো একক কারণে সৃষ্টি হয়নি। বিশেষ করে বাংলাদেশের পরিবার পর্যায়ে ছেলে এবং মেয়েশিশুর মধ্যে বৈষম্যের কারণগুলো হলো সচেতনতার অভাব, কুসংস্কার, ভুল ধারণা, শিক্ষার অপ্রতুলতা, দারিদ্র্য, সামাজিক ও পারিবারিক অবস্থান। বাংলাদেশের পরিবার পর্যায়ে বিভিন্ন প্রথা মেয়েশিশুদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। একটা অদৃশ্য শেকলে বাঁধা মেয়েশিশুদের সব ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা ও স্বাধীনতা। পরিবার পর্যায়ে বৈষম্যমূলক ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং যথেচ্ছাচার সামাজিক অনুশাসনের নামে মেয়েশিশুর প্রতি বৈষম্যকে বাড়িয়ে তুলেছে। ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ফান্ড কর্তৃক প্রকাশিত দ্য স্টেট অব দ্য ওয়ার্ল্ড পপুলেশন ফান্ড-২০১০ এর প্রতিবেদন অনুসারে, বৈষম্য মেয়েশিশুকে ঘরে-বাইরে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। পারিবারিক বৈষম্যের মধ্য দিয়ে মেয়েশিশুরা সহিংসতার শিকার হয়। এছাড়াও বিশ্ব শিশু পরিস্থিতি-২০০৯ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদ্যালয়ের বাইরে থাকা ১০ কোটিরও বেশি ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ৬ কোটিই হচ্ছে মেয়ে। Lawn, Joy E. Simon Cousins and Jelka Zuporn তাদের ৪ Million Neonatal Deaths : When? Where? ডযু-এ লিখেছেন—‘অসাম্য সব সময় দুঃখজনক এবং কোনো কোনো সময় প্রাণনাশকও বটে। দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার বহু অঞ্চলে এখনও শিশু জন্মের আগে লিঙ্গ বাছাই এবং ভ্রূণনাশের প্রচলন রয়েছে। এসব ব্যবস্থা প্রমাণ করে, মেয়েশিশুর জীবনের মূল্য কত কম।’ সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় বৈষম্য রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায়, যেখানে ৫২ ভাগ ছেলে এবং মাত্র ৩৩ ভাগ মেয়ে বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় অর্থাত্ এক্ষেত্রে বৈষম্য ১৯ ভাগ এবং বিশ্ব শিশু পরিস্থিতি-২০০৭ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছেলে ও মেয়েশিশুর মধ্যে পরিবার পর্যায়ে বৈষম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ জাতীয় বৈষম্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে অপ্রতিরোধ্য থেকে যায়। জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফের জন্য প্যাম জিলকিন অ্যান্ড মাইরিয়াড এডিশনস কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ছেলে ও মেয়েশিশুর ভর্তির ক্ষেত্রে পরিবর্তন ১৯৮০ ও ১৯৯৬ সালে যথাক্রমে ৬১ ভাগ ও ৭২ ভাগ। ইউনিসেফ ও পরিবার জরিপ উপাত্ত ইউনিসেফ বিশ্ব শিশু পরিস্থিতি-২০০০ অনুযায়ী, মেয়েশিশুর ক্ষেত্রে ১০ ভাগের বেশি ছেলেশিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় যা পরিবার পর্যায়ে বৈষম্য ছাড়া অন্য কিছু নয়। বাংলাদেশে মেয়েশিশুদের বৈষম্যমুক্ত সুন্দর ভবিষ্যত্ বিনির্মাণে ও পারিবারিক সহিংসতা রোধে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট আইন নেই। মেয়েশিশুদের শৈশবকে নিরাপদ ও বিপদমুক্ত করা পরিবারের দায়িত্ব। শুধু বাংলাদেশ নয়, সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা যায়, ভারতে প্রতি বছর ৫ হাজারের বেশি নারীকে খুন হতে হয় শ্বশুর পক্ষের লোকজনের কাছে অভিন্ন কিছু খারাপ প্রথার কারণে। সবচেয়ে বেদনাদায়ক বিষয় হলো, খুব সামান্য সংখ্যক খুনির বিচার হয়, বাকিগুলো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। মেয়েদের প্রতি সহিংস আচরণ ও নির্যাতন আমাদের সমাজে যেন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ। সাম্প্রতিক সময়ে টঘউচ কর্তৃক প্রকাশিত Human Development Report-এর তথ্য অনুযায়ী, 'Around the world at least one in every three women has been beaten, coerced into sex or abused in some other way.'
মজার বিষয় হলো, নারীরা অপরিচিত জনের হামলাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায় না বরং ভয় পায় স্বামীসহ অন্য সব আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রেমিকের হাতে প্রতিদিনকার নৃশংসতাকে। আজকের বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে বিশেষ করে এশিয়ায় পারিবারিক নির্যাতনের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ‘পুত্রের জন্য প্রত্যাশা’।
বিশ্বের সব মা ও শিশুর স্বার্থে প্রত্যেকের সঙ্গে একমত হয়ে আমাদেরও সমস্বরে বলা উচিত—আমরা এমন এক বিশ্ব চাই যেখানে ছেলে ও মেয়েশিশুর মধ্যে সুস্থ-স্বাাভাবিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ধনী ও দরিদ্র পরিবারের শিশুদের মধ্যে সব ধরনের বৈষম্য হ্রাস পাবে। পাশাপাশি ছেলের প্রত্যাশায় মেয়েশিশুদের নগণ্য মনে না করে অভিন্ন ভাবা হবে। দিন বদলের এই দিনে আমরা ছেলেমেয়ে উভয় শিশুর জন্য উপযুক্ত একটা সুস্থ, নিরাপদ ও জেন্ডার বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্রের প্রত্যাশা করি। যেখানে শিশুরা মায়ের কোলে নিরাপদে বেড়ে ওঠার ন্যূনতম সুযোগ পাবে। পাশাপাশি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হবে এমন একটা সমাজ ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো, যেখানে আর কোনো রাহেলাকে মেয়েশিশু জন্মদানের অপরাধে মৃত্যুবরণ করতে হবে না।
লেখক : আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী
ই-মেইল : advsagar29@gmail.com
No comments