বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি- ৬৫০ কোটি টাকার বাণিজ্য by শিশির মোড়ল
ভর্তি ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা নিচ্ছে দেশের বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলো। ফি নির্ধারিত না থাকায় কলেজগুলো ইচ্ছামতো টাকা আদায় করছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কারণে ফি নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।
কাল রোববার থেকে ভর্তি শুরু হচ্ছে, চলবে আগামী ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। বেসরকারি কলেজগুলো ১২ ডিসেম্বর থেকে ভর্তির আবেদনপত্র দেওয়া শুরু করে। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ২০ ডিসেম্বর। এর আগে সরকারি কলেজে ভর্তি শেষ হয়।
বেসরকারি কলেজগুলোতে ভর্তি ফি সরকারি কলেজগুলোর চেয়ে গড়ে ১২৫ গুণ বেশি। ঢাকা মেডিকেল কলেজে এ বছর ভর্তির সময় নেওয়া হচ্ছে ১০ হাজার টাকা। বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি ফি সবচেয়ে কম গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজে, আট লাখ ২৫ হাজার টাকা। সবচেয়ে বেশি আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজে, ১৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। অধিকাংশ কলেজ নিচ্ছে ১৩ লাখ টাকা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হকের পরিবারের সদস্যরা রাজধানীর একটি কলেজের মালিকপক্ষ। প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর মেয়ে একটি মেডিকেল কলেজের আংশিক মালিক। গ্রিন লাইফ হাসপাতালের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ। দেশের ৫০ জন শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসক এই প্রতিষ্ঠানের মালিক। দুজন জাতীয় অধ্যাপক দুটি পৃথক কলেজের উচ্চ পদে রয়েছেন। আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) একাধিক নেতা বেশ কয়েকটি কলেজের সঙ্গে জড়িত। সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেছেন, এই প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কারণে ভর্তি ফি নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক বলেন, ভর্তি ফির সীমা নির্ধারণের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু বেসরকারি উদ্যোক্তারা এতে সাড়া দেননি। তবে সরকারের চেষ্টা আছে একটি সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার। ভবিষ্যতে সেটা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি আবু সফি আহমেদ আমিন বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অভিন্ন, মেডিকেল শিক্ষা। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ব্যবসা। ট্রাস্ট, সমাজসেবা, মানবতাবাদী প্রতিষ্ঠানের নামে তারা এই ব্যবসা করছে। এরা মূল ব্যবসা করে ভর্তির সময়।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ২২টি। এতে আসনসংখ্যা তিন হাজার ৩৮৯টি। বেসরকারি কলেজের সংখ্যা ৫২, আসনসংখ্যা পাঁচ হাজার ১২৫। ২০ ডিসেম্বর আরও একটি নতুন মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর আসনসংখ্যা ৫০। চলতি শিক্ষাবর্ষে নতুন এই মেডিকেল কলেজে ভর্তি করানো হবে। এখন বেসরকারি পর্যায়ে আসনসংখ্যা পাঁচ হাজার ১৭৫।
সরকারি কলেজে ভর্তিতে ১০ হাজার টাকার বেশি নেওয়া হচ্ছে না। সেই হিসাবে তিন হাজার ৩৮৯টি আসনে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে মোট তিন কোটি ৩৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। আর ভর্তি ফি গড়ে সাড়ে ১২ লাখ টাকা হিসাবে বেসরকারি কলেজগুলো নিচ্ছে কমপক্ষে ৬৪৬ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
সরকারি বনাম বেসরকারি: সরকারি প্রতিষ্ঠানে সব শিক্ষার্থীর মোট ভর্তি খরচের চেয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বেশি অর্থ নিচ্ছে। হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ১৩ লাখ টাকা। এর আসনসংখ্যা ১২০। দরিদ্রদের জন্য নির্ধারিত পাঁচটি আসন বাদ দিলে শিক্ষার্থীরা ভর্তি বাবদ দেবেন ১৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। কলেজের অধ্যক্ষ মো. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, উন্নয়ন খাতে ভর্তির সময় এই টাকা নেওয়া হচ্ছে।
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেডিকেল স্টাডিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধীনে আছে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ ডেন্টাল কলেজ ও উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ। দরিদ্র কোটা বাদ দিয়ে হিসাব করে দেখা গেছে, এই তিনটি প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩১ কোটি টাকার বেশি নিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ভর্তির সময় নেওয়া টাকা দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হবে।
বারডেমের আওতাধীন ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজে আসনসংখ্যা ১১০। ভর্তি ফি ১৫ লাখ টাকা। ভর্তি খাত থেকে এই কলেজের আয় হচ্ছে ১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। অন্য সব কলেজের মতো এই প্রতিষ্ঠানও উন্নয়নের কথা বলে টাকা নিচ্ছে।
এই যুক্তির বিরোধিতা করেছেন আবু সফি আহমেদ আমিন। তিনি বলেন, ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালায়’ অবকাঠামোগত শর্তের কথা বলা আছে। সেই শর্ত মেনে কলেজ স্থাপন করতে হয়। শর্ত পূরণ হলেই মন্ত্রণালয় কলেজের অনুমোদন দেয়। এ কারণেই উন্নয়নের কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এত টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই।
কোন খাতে কত ব্যয়: ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২৫ টাকা। এক বছরের বেতন ২০০ টাকা। জামানত ৫০ টাকা। ছাত্র সংসদের প্রারম্ভিক ও বাৎসরিক ফি ৩০০ টাকা করে। সবচেয়ে বেশি কলেজ পরীক্ষার ফি, পাঁচ হাজার টাকা। এরপর কারিকুলাম ফি এক হাজার টাকা। বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএমডিসি নিবন্ধন ফি যথাক্রমে ৩০০ ও ২০০ টাকা। নম্বরপত্র যাচাই ফি ২০০ টাকা, ধর্মবিষয়ক ফি ৫০০ টাকা, গ্রন্থাগার কার্ড ফি ৩০০ টাকা, পরিচয়পত্র ফি ২২৫ টাকা, কমনরুম ফি ৫০০ টাকা, ছাত্রকল্যাণ ফি ৫০০ টাকা এবং বিবিধ ফি ৪০০ টাকা। ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে সব মিলে ১০ হাজার টাকা।
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ যে হিসাব দিয়েছে তাতে দেখা যায়, ভর্তি ফি দুই লাখ ৪৫ হাজার ও কোর্স ফি ১২ লাখ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএমডিসি নিবন্ধন, নম্বরপত্র যাচাই, ল্যাবরেটরি ফি, ইন কোর্স মূল্যায়ন ফি, শিক্ষার্থী কার্যক্রম ফি ও বিবিধ মিলে আরও এক লাখ ৫০ হাজার টাকা।
সরকারি কলেজগুলোর তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় জানে। কিন্তু বেসরকারি কোন কলেজ কত নিচ্ছে, কোন খাতে নিচ্ছে তা সরকার জানে না। প্রতিষ্ঠানগুলো তা জানায়ও না। মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন ও চিকিৎসা শিক্ষা) আকতারী মমতাজ প্রথম আলোকে বলেন, কলেজগুলো ভর্তি বাবদ কে কত নিচ্ছে তা মন্ত্রণালয়কে জানায় না।
ইচ্ছামতো ফি নিতে বাধা নেই: বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি ফি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, জোট সরকারের আমলে বিএনপি নেতাদের কারণে ফি নির্ধারণ করা যায়নি। এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের কারণে যাচ্ছে না।
আকতারী মমতাজ বলেন, বছর দুই আগে ভর্তি ফি আট লাখ টাকার মধ্যে রাখার একটি উদ্যোগ নিয়েছিল মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেই উদ্যোগে কেউ সাড়া দেয়নি।
এ বছর ভর্তি ফি বা বেতনের বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। কাগজপত্রে দেখা যায়, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে বেসরকারি কলেজে ভর্তি নিয়ে ৪ ডিসেম্বর সভা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাতে ভর্তির যোগ্যতা, মুক্তিযোদ্ধা ও দরিদ্র কোটা, বিদেশি শিক্ষার্থী এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ভর্তি ফি নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।
বেসরকারি কলেজগুলোতে ভর্তি ফি সরকারি কলেজগুলোর চেয়ে গড়ে ১২৫ গুণ বেশি। ঢাকা মেডিকেল কলেজে এ বছর ভর্তির সময় নেওয়া হচ্ছে ১০ হাজার টাকা। বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি ফি সবচেয়ে কম গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজে, আট লাখ ২৫ হাজার টাকা। সবচেয়ে বেশি আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজে, ১৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। অধিকাংশ কলেজ নিচ্ছে ১৩ লাখ টাকা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হকের পরিবারের সদস্যরা রাজধানীর একটি কলেজের মালিকপক্ষ। প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর মেয়ে একটি মেডিকেল কলেজের আংশিক মালিক। গ্রিন লাইফ হাসপাতালের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ। দেশের ৫০ জন শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসক এই প্রতিষ্ঠানের মালিক। দুজন জাতীয় অধ্যাপক দুটি পৃথক কলেজের উচ্চ পদে রয়েছেন। আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) একাধিক নেতা বেশ কয়েকটি কলেজের সঙ্গে জড়িত। সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেছেন, এই প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কারণে ভর্তি ফি নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক বলেন, ভর্তি ফির সীমা নির্ধারণের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু বেসরকারি উদ্যোক্তারা এতে সাড়া দেননি। তবে সরকারের চেষ্টা আছে একটি সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার। ভবিষ্যতে সেটা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি আবু সফি আহমেদ আমিন বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অভিন্ন, মেডিকেল শিক্ষা। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ব্যবসা। ট্রাস্ট, সমাজসেবা, মানবতাবাদী প্রতিষ্ঠানের নামে তারা এই ব্যবসা করছে। এরা মূল ব্যবসা করে ভর্তির সময়।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ২২টি। এতে আসনসংখ্যা তিন হাজার ৩৮৯টি। বেসরকারি কলেজের সংখ্যা ৫২, আসনসংখ্যা পাঁচ হাজার ১২৫। ২০ ডিসেম্বর আরও একটি নতুন মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর আসনসংখ্যা ৫০। চলতি শিক্ষাবর্ষে নতুন এই মেডিকেল কলেজে ভর্তি করানো হবে। এখন বেসরকারি পর্যায়ে আসনসংখ্যা পাঁচ হাজার ১৭৫।
সরকারি কলেজে ভর্তিতে ১০ হাজার টাকার বেশি নেওয়া হচ্ছে না। সেই হিসাবে তিন হাজার ৩৮৯টি আসনে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে মোট তিন কোটি ৩৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। আর ভর্তি ফি গড়ে সাড়ে ১২ লাখ টাকা হিসাবে বেসরকারি কলেজগুলো নিচ্ছে কমপক্ষে ৬৪৬ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
সরকারি বনাম বেসরকারি: সরকারি প্রতিষ্ঠানে সব শিক্ষার্থীর মোট ভর্তি খরচের চেয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বেশি অর্থ নিচ্ছে। হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ১৩ লাখ টাকা। এর আসনসংখ্যা ১২০। দরিদ্রদের জন্য নির্ধারিত পাঁচটি আসন বাদ দিলে শিক্ষার্থীরা ভর্তি বাবদ দেবেন ১৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। কলেজের অধ্যক্ষ মো. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, উন্নয়ন খাতে ভর্তির সময় এই টাকা নেওয়া হচ্ছে।
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেডিকেল স্টাডিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধীনে আছে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ ডেন্টাল কলেজ ও উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ। দরিদ্র কোটা বাদ দিয়ে হিসাব করে দেখা গেছে, এই তিনটি প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩১ কোটি টাকার বেশি নিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ভর্তির সময় নেওয়া টাকা দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হবে।
বারডেমের আওতাধীন ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজে আসনসংখ্যা ১১০। ভর্তি ফি ১৫ লাখ টাকা। ভর্তি খাত থেকে এই কলেজের আয় হচ্ছে ১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। অন্য সব কলেজের মতো এই প্রতিষ্ঠানও উন্নয়নের কথা বলে টাকা নিচ্ছে।
এই যুক্তির বিরোধিতা করেছেন আবু সফি আহমেদ আমিন। তিনি বলেন, ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালায়’ অবকাঠামোগত শর্তের কথা বলা আছে। সেই শর্ত মেনে কলেজ স্থাপন করতে হয়। শর্ত পূরণ হলেই মন্ত্রণালয় কলেজের অনুমোদন দেয়। এ কারণেই উন্নয়নের কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এত টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই।
কোন খাতে কত ব্যয়: ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২৫ টাকা। এক বছরের বেতন ২০০ টাকা। জামানত ৫০ টাকা। ছাত্র সংসদের প্রারম্ভিক ও বাৎসরিক ফি ৩০০ টাকা করে। সবচেয়ে বেশি কলেজ পরীক্ষার ফি, পাঁচ হাজার টাকা। এরপর কারিকুলাম ফি এক হাজার টাকা। বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএমডিসি নিবন্ধন ফি যথাক্রমে ৩০০ ও ২০০ টাকা। নম্বরপত্র যাচাই ফি ২০০ টাকা, ধর্মবিষয়ক ফি ৫০০ টাকা, গ্রন্থাগার কার্ড ফি ৩০০ টাকা, পরিচয়পত্র ফি ২২৫ টাকা, কমনরুম ফি ৫০০ টাকা, ছাত্রকল্যাণ ফি ৫০০ টাকা এবং বিবিধ ফি ৪০০ টাকা। ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে সব মিলে ১০ হাজার টাকা।
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ যে হিসাব দিয়েছে তাতে দেখা যায়, ভর্তি ফি দুই লাখ ৪৫ হাজার ও কোর্স ফি ১২ লাখ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএমডিসি নিবন্ধন, নম্বরপত্র যাচাই, ল্যাবরেটরি ফি, ইন কোর্স মূল্যায়ন ফি, শিক্ষার্থী কার্যক্রম ফি ও বিবিধ মিলে আরও এক লাখ ৫০ হাজার টাকা।
সরকারি কলেজগুলোর তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় জানে। কিন্তু বেসরকারি কোন কলেজ কত নিচ্ছে, কোন খাতে নিচ্ছে তা সরকার জানে না। প্রতিষ্ঠানগুলো তা জানায়ও না। মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন ও চিকিৎসা শিক্ষা) আকতারী মমতাজ প্রথম আলোকে বলেন, কলেজগুলো ভর্তি বাবদ কে কত নিচ্ছে তা মন্ত্রণালয়কে জানায় না।
ইচ্ছামতো ফি নিতে বাধা নেই: বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি ফি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, জোট সরকারের আমলে বিএনপি নেতাদের কারণে ফি নির্ধারণ করা যায়নি। এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের কারণে যাচ্ছে না।
আকতারী মমতাজ বলেন, বছর দুই আগে ভর্তি ফি আট লাখ টাকার মধ্যে রাখার একটি উদ্যোগ নিয়েছিল মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেই উদ্যোগে কেউ সাড়া দেয়নি।
এ বছর ভর্তি ফি বা বেতনের বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। কাগজপত্রে দেখা যায়, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে বেসরকারি কলেজে ভর্তি নিয়ে ৪ ডিসেম্বর সভা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাতে ভর্তির যোগ্যতা, মুক্তিযোদ্ধা ও দরিদ্র কোটা, বিদেশি শিক্ষার্থী এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ভর্তি ফি নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।
No comments