মুক্তিযোদ্ধার বাঁচার লড়াই-দেশমাতৃকার জন্য যাঁরা যুদ্ধে নেমেছিলেন তাঁদের অনেকেই আজ লড়ছেন দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য। তাঁদের জীবনচিত্র নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন-দিনমজুরি করেন দেবেন্দ্র
৫৮ বছর বয়সেও প্রতিদিন ভোরে কাস্তে কিংবা কোদাল নিয়ে কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়তে হয় মুক্তিযোদ্ধা দেবেন্দ্রনাথ রায়কে। যাওয়ার আগে কোনো দিন জোটে রাতে রেখে দেওয়া পানতা ভাত আবার কোনো দিন না খেয়েই বেরোতে হয় তাঁকে।
এভাবে খেয়ে না খেয়ে দিনমজুরি করেই সংসার চলছে এই মুক্তিযোদ্ধার। দুই মেয়ে সুমিত্রা রানী ও জয়ন্তী রানীর বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে বিকাশ রায় এবার জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। অভাবের সংসার চালাতে গিয়ে পরের বাড়িতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে ভেঙে পড়েছে দেবেন্দ্রনাথ রায়ের স্বাস্থ্য।
জমি বলতে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৮ শতক ভিটেমাটি। সেখানে ভাঙাচোরা টিনের ছাপড়াঘর। দেবেন্দ্রনাথের স্ত্রী শংকরী রানী স্বামীর মুখের দিকে একবার তাকিয়ে মলিন শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে বললেন, 'না খ্যায়ে দিন য্যাবে তাও কারো কাছে সাহায্য চ্যাবে না, আবার হাতও প্যাতবে না। ম্যায়া দুট্যাক বিয়া দিছি কোনভাবে। বিয়্যাত কিছুই দিতে প্যারিনি। ছোলট্যাক ট্যানেহিঁচড়ে কোনভাবে পড়াওছি। তাও হামার মনোত শ্যান্তি হামার স্বামী মুক্তিযোদ্ধা।'
নওগাঁ সদর উপজেলার কীর্ত্তিপুর ইউনিয়নের কোঁচগাড়ি গ্রামে বাড়ি দেবেন্দ্রনাথের। বর্তমানে তিনি ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার। স্বাধীনতাযুদ্ধের শুরুতেই তাঁদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল রাজাকার ও পাক হানাদার বাহিনী। দেবেন্দ্রনাথ তখন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। যদিও একটু বেশি বয়সেই লেখাপড়া শুরু করেছিলেন তিনি। এরপর ভারতের পাগলীগঞ্জে মা-বাবা ও ভাই-বোনদের রেখে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন ৭ নম্বর সেক্টরের অধীন। ট্রেনিং নেন পতিরাম, শিলিগুড়ি, দার্জিলিং ও জলপাইগুড়িতে। ১৯৭১ সালের মে মাসে গ্রুপ কমান্ডার আব্বাস আলীর নেতৃত্বে দেশে প্রবেশ করেন তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা দেবেন্দ্রনাথ রায় কালের কণ্ঠকে জানান, নওগাঁর কোলা, ভাণ্ডারপুর, হাপানিয়া, রানীনগর, মহাদেবপুর, কীর্ত্তিপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করেছেন তিনি। যুদ্ধজীবনের অনেক ঘটনাই স্মৃতি হয়ে আছে। একবার কোঁচগাড়ি আখ ক্রয়কেন্দ্রের কাছে তাঁদের পেতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে পাক হানাদারদের একটি জিপ বিধ্বস্ত হয়। এতে পাকবাহিনীর তিন সদস্য প্রাণ হারায়। বেঁচে যাওয়া এক হানাদার সদস্যের ছোড়া গুলি দেবেন্দ্রনাথের মাথায় লাগে। এতে তাঁর মাথার পেছনের একাংশের হাড় ফেটে যায়। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। আজও মাথায় সেই আঘাতের চিহ্ন বহন করে চলেছেন। তিনি জনান, ওই মাইন বিস্ফোরণে হানাদার সদস্যের ডান হাত উড়ে গিয়েছিল। বাম হাত দিয়েই সে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ছিল স্টেনগান দিয়ে।
দেবেন্দ্রনাথ জানান, দেশ স্বাধীন হলে আবারো স্কুলে ভর্তি হন তিনি। এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকা জোগাড় করতে না পারায় বাধ্য হয়ে লেখাপড়ার ইতি টানতে হয় তাঁকে। এরই মধ্যে বাবা-মা দুজনেই মারা যান। এরপর শুরু করেন দিনমজুরের কাজ। বিয়ের পর সংসারে আসে দুই মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়ে দুটিকে কোনোভাবে বিয়ে দিয়েছেন। দিনমজুরি করে দুবেলা দুমুঠো অন্নের ব্যবস্থা করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁকে। এর পরও তাঁর স্বপ্ন- ছেলেকে শিক্ষিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার। তিনি জানেন না অভাবের সংসারে তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হবে কি না। পাওয়ার মধ্যে পেয়ে থাকেন মাসে দুই হাজার টাকা ভাতা।
এই মুক্তিযোদ্ধা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, 'দেশ স্বাধীন হয়েছে ঠিকই; কিন্তু সেই সোনার দেশ পাইনি।'
দেবেন্দ্রনাথ রায়ের সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রশীদ জানান, অত্যন্ত সাহসী ছিলেন দেবেন। যুদ্ধের সময় তাঁর মাথায় বুলেট লেগেছিল। ডাক্তারের চিকিৎসায় তিনি অল্পদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে আবারো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
কীর্ত্তিপুরের বাসিন্দা বাবুল আখতার হিলি ও সুলতানুল আলম মিলন জানান, দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা দেবেন্দ্রনাথ খুবই কষ্টে সংসার চালাচ্ছেন। তাঁদের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে যা পান তা দিয়ে কোনোভাবে সংসার চালান তিনি। তবে কারো কাছে কোনো দিন সাহায্য চাইতে তাঁকে দেখেননি তাঁরা।
নওগাঁ জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার হারুন অর রশীদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মুক্তিযোদ্ধা দেবেন্দ্রনাথ রায়কে পুনর্বাসন করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমরা এ দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারি না।'
জমি বলতে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৮ শতক ভিটেমাটি। সেখানে ভাঙাচোরা টিনের ছাপড়াঘর। দেবেন্দ্রনাথের স্ত্রী শংকরী রানী স্বামীর মুখের দিকে একবার তাকিয়ে মলিন শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে বললেন, 'না খ্যায়ে দিন য্যাবে তাও কারো কাছে সাহায্য চ্যাবে না, আবার হাতও প্যাতবে না। ম্যায়া দুট্যাক বিয়া দিছি কোনভাবে। বিয়্যাত কিছুই দিতে প্যারিনি। ছোলট্যাক ট্যানেহিঁচড়ে কোনভাবে পড়াওছি। তাও হামার মনোত শ্যান্তি হামার স্বামী মুক্তিযোদ্ধা।'
নওগাঁ সদর উপজেলার কীর্ত্তিপুর ইউনিয়নের কোঁচগাড়ি গ্রামে বাড়ি দেবেন্দ্রনাথের। বর্তমানে তিনি ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার। স্বাধীনতাযুদ্ধের শুরুতেই তাঁদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল রাজাকার ও পাক হানাদার বাহিনী। দেবেন্দ্রনাথ তখন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। যদিও একটু বেশি বয়সেই লেখাপড়া শুরু করেছিলেন তিনি। এরপর ভারতের পাগলীগঞ্জে মা-বাবা ও ভাই-বোনদের রেখে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন ৭ নম্বর সেক্টরের অধীন। ট্রেনিং নেন পতিরাম, শিলিগুড়ি, দার্জিলিং ও জলপাইগুড়িতে। ১৯৭১ সালের মে মাসে গ্রুপ কমান্ডার আব্বাস আলীর নেতৃত্বে দেশে প্রবেশ করেন তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা দেবেন্দ্রনাথ রায় কালের কণ্ঠকে জানান, নওগাঁর কোলা, ভাণ্ডারপুর, হাপানিয়া, রানীনগর, মহাদেবপুর, কীর্ত্তিপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করেছেন তিনি। যুদ্ধজীবনের অনেক ঘটনাই স্মৃতি হয়ে আছে। একবার কোঁচগাড়ি আখ ক্রয়কেন্দ্রের কাছে তাঁদের পেতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে পাক হানাদারদের একটি জিপ বিধ্বস্ত হয়। এতে পাকবাহিনীর তিন সদস্য প্রাণ হারায়। বেঁচে যাওয়া এক হানাদার সদস্যের ছোড়া গুলি দেবেন্দ্রনাথের মাথায় লাগে। এতে তাঁর মাথার পেছনের একাংশের হাড় ফেটে যায়। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। আজও মাথায় সেই আঘাতের চিহ্ন বহন করে চলেছেন। তিনি জনান, ওই মাইন বিস্ফোরণে হানাদার সদস্যের ডান হাত উড়ে গিয়েছিল। বাম হাত দিয়েই সে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ছিল স্টেনগান দিয়ে।
দেবেন্দ্রনাথ জানান, দেশ স্বাধীন হলে আবারো স্কুলে ভর্তি হন তিনি। এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকা জোগাড় করতে না পারায় বাধ্য হয়ে লেখাপড়ার ইতি টানতে হয় তাঁকে। এরই মধ্যে বাবা-মা দুজনেই মারা যান। এরপর শুরু করেন দিনমজুরের কাজ। বিয়ের পর সংসারে আসে দুই মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়ে দুটিকে কোনোভাবে বিয়ে দিয়েছেন। দিনমজুরি করে দুবেলা দুমুঠো অন্নের ব্যবস্থা করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁকে। এর পরও তাঁর স্বপ্ন- ছেলেকে শিক্ষিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার। তিনি জানেন না অভাবের সংসারে তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হবে কি না। পাওয়ার মধ্যে পেয়ে থাকেন মাসে দুই হাজার টাকা ভাতা।
এই মুক্তিযোদ্ধা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, 'দেশ স্বাধীন হয়েছে ঠিকই; কিন্তু সেই সোনার দেশ পাইনি।'
দেবেন্দ্রনাথ রায়ের সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রশীদ জানান, অত্যন্ত সাহসী ছিলেন দেবেন। যুদ্ধের সময় তাঁর মাথায় বুলেট লেগেছিল। ডাক্তারের চিকিৎসায় তিনি অল্পদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে আবারো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
কীর্ত্তিপুরের বাসিন্দা বাবুল আখতার হিলি ও সুলতানুল আলম মিলন জানান, দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা দেবেন্দ্রনাথ খুবই কষ্টে সংসার চালাচ্ছেন। তাঁদের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে যা পান তা দিয়ে কোনোভাবে সংসার চালান তিনি। তবে কারো কাছে কোনো দিন সাহায্য চাইতে তাঁকে দেখেননি তাঁরা।
নওগাঁ জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার হারুন অর রশীদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মুক্তিযোদ্ধা দেবেন্দ্রনাথ রায়কে পুনর্বাসন করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমরা এ দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারি না।'
No comments