বিডিআর বিদ্রোহ মামলার বিচার শেষ-সদরের ৭২৩ জনের জেল বেকসুর খালাস ১০

বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় সদর ব্যাটালিয়নের ৭৩৩ জন আসামির মধ্যে ৭২৩ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে। এর মধ্যে ৬৪ জনকে সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে ১০ জনকে।


গতকাল শনিবার দেওয়া এ রায়ের মধ্য দিয়ে দুই বছর ১১ মাস আগে শুরু হওয়া বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) নিজস্ব আইনে দায়ের করা বিদ্রোহ মামলার পুরো বিচারকাজ শেষ হলো।
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। এর মধ্যে বিডিআর আইনে দায়ের বিদ্রোহ মামলার বিচার সমাপ্ত হলো। হত্যা-লুণ্ঠনের বিচার চলছে প্রচলিত আইনে মহানগর দায়রা জজ আদালতে। হত্যা মামলার আসামিদের সবাই বিদ্রোহ মামলারও আসামি।
গতকাল সকাল পৌনে ১০টার দিকে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। দুপুর পৌনে ২টা পর্যন্ত বিশেষ আদালত-৯-এর বিচারক প্যানেলের সভাপতি কর্নেল মো. এহিয়া আজম খান এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণা উপলক্ষে পিলখানায় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
রায় ঘোষণা শেষে মামলার প্রসিকিউটর লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ওবায়দুল হক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ২০১০ সালের ১১ জুলাই ৭৩৫ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। এর মধ্যে বিচার চলাকালে অসুস্থ হয়ে দুজনের মৃত্যু হওয়ার কারণে ৭৩৩ জনের রায় ঘোষণা করা হয়। তিনি আরো জনান, এই মামলায় প্রসিকিউশনের ১৩৯ ও ৭৭ জন সাফাই সাক্ষ্য প্রদান করেন।
প্রসিকিউটর বলেন, দরবার শেষে অফিসারদের গাড়িতে আনা-নেওয়ার দায়িত্ব, ১ থেকে ৫ নম্বর গেটে আরপির দায়িত্ব, অফিসার্স মেস, ডিজি ভবন, ডিজি স্কর্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার দায়িত্বে ছিল সদর রাইফেল ব্যাটালিয়ন। বিদ্রোহ শুরু হলে এ ব্যাটালিয়নের সৈনিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করে সক্রিয়ভাবে বিদ্রোহে অংশ নেয়।
আসামিদের মধ্যে ৬৪ জনকে সাত বছর, একজনকে ছয় বছর ছয় মাস, ২৫ জনকে ছয় বছর, পাঁচজনকে পাঁচ বছর ছয় মাস, ৮২ জনকে পাঁচ বছর, ৮৮ জনকে চার বছর ছয় মাস, ১৭৬ জনকে চার বছর, ৩৯ জনকে তিন বছর ছয় মাস, ৬৪ জনকে তিন বছর, ৯ জনকে দুই বছর ছয় মাস, একজনকে দুই বছর তিন মাস, ৫১ জনকে দুই বছর, আটজনকে এক বছর ছয় মাস, একজনকে এক বছর তিন মাস, ৫৩ জনকে এক বছর, ১৪ জনকে ৯ মাস, ২৩ জনকে ছয় মাস এবং ১৯ জনকে চার মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ১০ জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। দণ্ডিতদের প্রত্যেককে ১০০ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে।
বিজিবি সূত্র জানায়, বিদ্রোহের সময় সদর ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর মুশতাক মাহমুদ ও মেজর মোস্তাফা আসাদুজ্জামান নিহত হন।
সব ইউনিটের রায় শেষ : বিডিআর বিদ্রোহের পর সারা দেশের ৫৭টি ইউনিটের ছয় হাজার ৪৬ জন আসামির বিরুদ্ধে বিডিআর বিদ্রোহ মামলার বিচার চলে। এর মধ্যে ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর রাঙামাটির রাজনগরে ১২ রাইফেল ব্যাটালিয়নের আসামিদের বিরুদ্ধে প্রথম বিচার শুরু হয়। তবে প্রথম রায় ঘোষণা হয় ২০১০ সালের ৭ এপ্রিল পঞ্চগড়ে ২৫ রাইফেল ব্যাটালিয়নের আসামিদের বিরুদ্ধে। ঢাকার বাইরে সর্বশেষ রায় ঘোষণা হয় ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল দিনাজপুরে। পিলখানার ১১টি ইউনিটে আসামি ছিল চার হাজার ৯৪ জন। ১১টি ইউনিটেরই রায় ঘোষণা হয়েছে। ইউনিটগুলোর মধ্যে প্রথম ২০১১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রেকর্ড উইংয়ের ১১১ জন আসামির রায় ঘোষণা করা হয়। এতে প্রত্যেককেই বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ২০১১ সলের ১১ মে ঢাকা সেক্টর সদর দপ্তরের ৮৪ জন আসামির সবাইকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। একই বছর ৬ জুন রাইফেল সিকিউরিটি ইউনিটের (বর্তমানে বর্ডার গার্ড সিকিউরিটি ইউনিট) ১১৩ জন আসামির মধ্যে ১০৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়। চারজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। গত বছর ২৭ জুন বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় ২৪ বিজিবি (আগের বিডিআর) ব্যাটালিয়নের ৬৬৬ জন আসামির মধ্যে ১০৮ জনকে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বেকসুর খালাস দেওয়া হয় ৯ জনকে। ৫৪৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়। ২০১১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সিগন্যাল সেক্টরের ১৮৭ আসামির মধ্যে ১৮২ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়। বেকসুর খালাস পান পাঁচজন। ২০১২ সালের ৫ মে ৩৬ রাইফেল ব্যাটালিয়নের ৩১০ আসামির মধ্যে ৩০৯ জনকে শাস্তি দেওয়া হয়। বেকসুর খালাস পান একজন। চলতি বছরের ১৬ জুন রায় দেওয়া হয়েছে ১৩ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের ৬২১ আসামির। তাদের মধ্যে ৬১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। ১০ জন বেকসুর খালাস পেয়েছেন। গত ১৪ জুলাই বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) হাসপাতাল ইউনিটের ২৫৫ জন আসামির মধ্যে ২৫৩ জনের সাজা হয়েছে। খালাস পেয়েছেন দুজন। গত ১২ আগস্ট বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় সব পরিদপ্তর ও আরএসবি (রাইফেল স্পোর্টস বোর্ড) ইউনিটের ৩৩৬ জন আসামির মধ্যে ৩৭ জনকে সর্বোচ্চ সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে সাতজনকে। ২৯২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। গত ২৮ আগস্ট ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের ৬৭৩ জন আসামির রায় ঘোষণা করা হয়। এতে ৬৭৩ জন আসামির মধ্যে ১১৩ জনকে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে আটজনকে। ৫৫২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। গতকাল সদর ব্যাটালিয়নের রায় ঘোষণা করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.