নাফিসের সন্ত্রাসী তৎপরতা এবং এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা by প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাহবুব আলী
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজী মোহাম্মদ রেজাউল আহসান নাফিস সন্ত্রাসী তৎপরতায় অংশ নিতে গিয়ে সম্প্রতি গ্রেফতার হয়েছে। মাত্র দশ মাস আগে এ দেশ থেকে সে বিদেশে গেছে। তার এই তৎপরতা আসলে এদেশের ভাবমূর্তিকে ম্লান করেছে। যারা তার হয়ে বলেছেন, তারা এফবিআইয়ের ইনভেস্টিগেশন পদ্ধতির যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
আসলে এফবিআইয়ের পাতা ফাঁদে নাফিস কেন সহজে ধরা দিলেন? যদি নিজস্ব স্বকীয়তা এবং বিশ্বাস যুগোপযোগী না হয়, তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। তার এই তৎপরতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, বর্তমানে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরমত সহিষ্ণুতা বোধ তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং মানুষের মধ্যে লোভের জন্ম দিচ্ছে। নাফিসের যে পাঁচজন সহযোগীকে খোঁজা হচ্ছে, তার মধ্যে হাওয়ার্ড উইলী কার্টার-২-কে গ্রেফতার করা হয়েছে। হাওয়ার্ড উইলী কার্টার-২ শিশু পর্নোগ্রাফির অভিযোগে অভিযুক্ত। দুর্ভাগ্য যে, বাংলাদেশে বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থাকে আমরা যতখানি সম্ভব বাণিজ্যিক উপাদানে এবং যন্ত্র নির্ভরতায় ভরে দিচ্ছি। তাতে একজন ছাত্রছাত্রীর মানবিকতার বিকাশ ঘটছে না। অথচ তরুণ সমাজ এই দেশের আশা-ভরসা। তারা যখন বিপথগামী হয়, তখন মুক্তিযুদ্ধ চেতনায় আঘাত লাগে। নাফিস আমাদের এই শিক্ষা ব্যবস্থার অনুদরতার শিকার। স্বাধীনতা উত্তরকালে এদেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় যে আমূল পরিবর্তন এসেছিল, তা ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় মুক্তমনের মানুষ সৃষ্টির কোন ব্যবস্থা রাখেনি। বরং লোভাতুর পৃথিবীতে ল্যাং মেরে বড়লোক হওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত করছে। নাফিসের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত ট্র্যাক রেকর্ড পর্যালোচনা করে তাকে অনেকে সৎ চরিত্রের অধিকারী বলে অভিহিত করছেন। কিন্তু সর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে কি করা যায়? এ সমাজের, বর্তমান প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করছে নাফিস। জন্ম হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশে। ফলে পরাধীনতার গ্লানি বোঝার মতো ক্ষমতা তার নেই। জন্মের পর থেকেই দেখছে ইঁদুরদৌড় প্রতিযোগিতা। কে কাকে ফেলে উপরে উঠবে।’ আর তাই তো শর্টকাট বড়লোক হওয়ার প্রয়াস গড়ে উঠেছে সমাজের চতুর্দিকে। আগে মানুষ অনেক কষ্ট করে বড়লোক হতো। শিক্ষিত মানুষের মধ্যে মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটত। কিন্তু বর্তমানে টুটি চেপে ধরা হয়েছে। আজ দেখা যাচ্ছে মধ্যবয়সী যারা কিংবা প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছেছেন তাদের একটি বড় অংশ সুযোগ পেলেই পর সম্পদ লুণ্ঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। আবার অন্যের সম্পদ আত্মসাতের পরও কখনও বিচারের সম্মুখীন হচ্ছে না। তথাকথিত নৈতিকতার শিক্ষা বরং আরও অন্যায়কে প্রলুব্ধ করছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় অসাম্প্রদায়িকতার চেয়ে জোর করে বিত্তবান হওয়ার লোভ জাগিয়ে তুলেছে। ফলে সুকুমার প্রবৃত্তির বিকাশ ঘটছে না। সুন্দর পারিবারিক বন্ধনে থাকলেও কেমন করে আশপাশের লোকজন এবং জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা বড়লোক হচ্ছে দেখে নিজেও বড়লোক হওয়ার বাসনায় লিপ্ত হচ্ছে। আর এই বড়লোক হওয়ার ইচ্ছে তৈরি করছে এক ধরনের জিঘাংসার প্রবৃত্তি। এই বৃত্ত ভাঙ্গার কোন কলাকৌশল সামাজিকভাবে নেই। অথচ নাফিস হয়ে উঠতে পারত এ দেশের গুডউইল এ্যাম্বাসেডর।
নাফিসের সঙ্গে দেশে কোন জঙ্গীগোষ্ঠী জড়িত ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন। তাঁর এই উক্তি অত্যন্ত সাধুবাদযোগ্য। তবে বর্তমানে যে হারে নতুন প্রজন্ম, যারা এদেশকে দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত করবেন তাদের মর্মমূলে ঢুকে যাচ্ছে সীমাহীন লোভ। অনেকে এই লোভ কাটিয়ে উঠতে পারলেও অনেকে আবার পারছেন না। যাঁরা পারছেন না তাঁদের কেউ বিভিন্ন রাজনীতির মারপ্যাঁচে তাদের অঙ্গসংগঠনে জড়িয়ে পড়ছেন। তাই দেখা যায়, টেন্ডারবাজি, হরতাল প্রতিরোধ, হল দখলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ফ্রন্টকে সব সময়ে ব্যবহার করতে। পাশাপাশি এক শ্রেণীর শিক্ষক তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার মন্ত্র হিসেবে নিরীহ ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহার করে চলেছেন। বুয়েট-আইবিএ কিছু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন হুজি তৈরির কারখানা হচ্ছে। সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশই ছাত্রশিবির ও ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করছে। দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন সরকারী বিশ্ববিদ্যলয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা, হল দখল, চাঁদা আদায়, উপাচার্য অপসারণ আবার উপাচার্যকে আসীন রাখার খেলায় কোমলমতী ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। একজন শিক্ষক হিসেবে বিনীত প্রশ্ন থেকে যায় রাজনীতিতে পটিয়সী যে ক্ষুদ্র শিক্ষকগোষ্ঠী ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন আন্দোলনে ব্যবহার করে থাকেন, তাদের কাছে, নিজের সন্তান-সন্ততিকেও কি এভাবে লেলিয়ে দেবেন? আসলে নিজের সন্তান-সন্ততি হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের ভাবলে এ ধরনের অপতৎপরতা ঘটত না। আশার কথা যে, এখনও ৬০%-এর উপরে শিক্ষক সমাজ সরাসরি শিক্ষক রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছে না। নচেৎ এই দেশের যুব সমাজ ও আগামী প্রজন্মকে বিপথগামী করার দায়ে তাদের অধিকাংশই জড়িত হতেন এমনকি ভাবীকালে অভিযুক্ত হতে পারেন। আসলে আজ বড্ড প্রয়োজন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, প্রফেসর এনামুল হক, আবুল ফজলের মতো শিক্ষকবৃন্দের। নাফিস বিদেশে যেয়ে এক ধরনের ট্রমার মধ্যে পড়ে মানসিক বোধ হারিয়েছে বলে কেউ কেউ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আসলে নাফিস যে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে দৈনন্দিন চালচিত্র, সেখানে খুব তফাৎ নেই। সমস্যা হলো, আমাদের সমাজব্যবস্থা এবং শিক্ষাব্যবস্থা এক ধরনের লোভ ধরিয়ে দিচ্ছে। এই লোভের বহির্প্রকাশ মারাত্মক আকার ধারণ করছে। আগে কথা ছিল জ্ঞান অর্জন করার জন্য শিক্ষা। আর মানি সেন্ট্রিক এই সোসাইটিতে শিক্ষা হচ্ছে বড়লোক হওয়ার হাতিয়ার। পরিবার থেকে শৈশবে অধিকাংশ উচ্চবিত্ত এবং উচ্চ মধ্যবিত্তের সন্তানরা পাঠ নিচ্ছে যাতে কেবল ব্যক্তিকেন্দ্রিক মানসিকতা গড়ে ওঠে। আর এই পাঠ হচ্ছে সম্পূর্ণরূপে সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা এবং উদার শিক্ষাব্যবস্থার চেয়ে পৃথক। অনুদার শিক্ষাব্যবস্থায় ধ্বংসযজ্ঞে ছাত্রছাত্রীদের ধর্মের নামে বা দলীয় আনুগত্যে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বর্তমান সরকার সবার জন্য শিক্ষাব্যবস্থার যে নীতিমালা প্রণয়ন করেছিল তা অসাম্প্রদায়িক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো এই শিক্ষানীতির সুন্দর কথামালার যথার্থ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বরং শিক্ষাকেন্দ্রগুলো হয়ে উঠছে এক ধরনের কূপম-ূকতা এবং পর সম্পদগ্রাসকারীদের হাতিয়ার। আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে নোংরামিতে ভরিয়ে তুলছি। বরং আগামী দিনের উত্তরসূরিদের কাছে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হচ্ছি। ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গীরা বর্তমান তরুণ প্রজন্মের একাংশকে ব্রেন ওয়াশ করে চলেছে। এই অব্যবস্থা দূর করার কোন সঠিক নিয়মনীতি নেই। ফলে যে সুন্দর মনের মানুষ শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার কথা তার থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে বর্তমানের শিক্ষার্থীরা। একরাশ বইয়ের চাপে নানামুখী সমস্যার ভারে শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত। তাই তো পাস করে বেরুলেও অনেক তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিকে দেখা যায় কত দ্রুত চাকরি বদলিয়ে উপরে ওঠা যায়, বড়লোক হওয়া যায়। ঘুণেধরা সমাজব্যবস্থায় শিক্ষাব্যবস্থা হচ্ছেÑ মানুষকে যন্ত্রদানবে পরিণত করার হাতিয়ার। বোধহীন, মানবিকতাহীন শিক্ষাব্যবস্থার চক্র থেকে বেরিয়ে আশা দরকার। কিছু মাস্টার মাইন্ড ধর্মীয় চেতনাবহনকারী শিক্ষক ও সাম্প্রদায়িকতা এখন বহাল তবিয়তে উচ্চপদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের সহযোগিতায় আসীন হচ্ছেন। তাঁরা তাঁদের ভুল মতাদর্শ বিভিন্ন ছাত্রছাত্রীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। সরকার ও শিক্ষা বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন থাকবে উচ্চ শিক্ষাই কেবল নয়, প্রাথমিক থেকে সর্ব পর্যায়ে শিক্ষাকে অসাম্প্রদায়িক ও নৈতিকতাপূর্ণ করা হোক। যে সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা ছাত্রছাত্রীদের ভুলপথে পরিচালিত করে থাকে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। অসম্প্রদায়িক চেতনাবোধের সৃষ্টি হোক এবং লোভ-লালসাকে সীমিত করার প্রয়াস নেয়া হোক। নাফিসের মতো অন্যরা যেন সহজেই জীবনের প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়ে ভুলপথে পরিচালিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপদে যে কোন দলের সঙ্গে সম্পৃক্তদের নিয়োগ দেয়া বন্ধ করা উচিত।
লেখক : প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং কথাসাহিত্যিক। pipulbd@gmail.com
নাফিসের সঙ্গে দেশে কোন জঙ্গীগোষ্ঠী জড়িত ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন। তাঁর এই উক্তি অত্যন্ত সাধুবাদযোগ্য। তবে বর্তমানে যে হারে নতুন প্রজন্ম, যারা এদেশকে দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত করবেন তাদের মর্মমূলে ঢুকে যাচ্ছে সীমাহীন লোভ। অনেকে এই লোভ কাটিয়ে উঠতে পারলেও অনেকে আবার পারছেন না। যাঁরা পারছেন না তাঁদের কেউ বিভিন্ন রাজনীতির মারপ্যাঁচে তাদের অঙ্গসংগঠনে জড়িয়ে পড়ছেন। তাই দেখা যায়, টেন্ডারবাজি, হরতাল প্রতিরোধ, হল দখলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ফ্রন্টকে সব সময়ে ব্যবহার করতে। পাশাপাশি এক শ্রেণীর শিক্ষক তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার মন্ত্র হিসেবে নিরীহ ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহার করে চলেছেন। বুয়েট-আইবিএ কিছু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন হুজি তৈরির কারখানা হচ্ছে। সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশই ছাত্রশিবির ও ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করছে। দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন সরকারী বিশ্ববিদ্যলয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা, হল দখল, চাঁদা আদায়, উপাচার্য অপসারণ আবার উপাচার্যকে আসীন রাখার খেলায় কোমলমতী ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। একজন শিক্ষক হিসেবে বিনীত প্রশ্ন থেকে যায় রাজনীতিতে পটিয়সী যে ক্ষুদ্র শিক্ষকগোষ্ঠী ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন আন্দোলনে ব্যবহার করে থাকেন, তাদের কাছে, নিজের সন্তান-সন্ততিকেও কি এভাবে লেলিয়ে দেবেন? আসলে নিজের সন্তান-সন্ততি হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের ভাবলে এ ধরনের অপতৎপরতা ঘটত না। আশার কথা যে, এখনও ৬০%-এর উপরে শিক্ষক সমাজ সরাসরি শিক্ষক রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছে না। নচেৎ এই দেশের যুব সমাজ ও আগামী প্রজন্মকে বিপথগামী করার দায়ে তাদের অধিকাংশই জড়িত হতেন এমনকি ভাবীকালে অভিযুক্ত হতে পারেন। আসলে আজ বড্ড প্রয়োজন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, প্রফেসর এনামুল হক, আবুল ফজলের মতো শিক্ষকবৃন্দের। নাফিস বিদেশে যেয়ে এক ধরনের ট্রমার মধ্যে পড়ে মানসিক বোধ হারিয়েছে বলে কেউ কেউ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আসলে নাফিস যে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে দৈনন্দিন চালচিত্র, সেখানে খুব তফাৎ নেই। সমস্যা হলো, আমাদের সমাজব্যবস্থা এবং শিক্ষাব্যবস্থা এক ধরনের লোভ ধরিয়ে দিচ্ছে। এই লোভের বহির্প্রকাশ মারাত্মক আকার ধারণ করছে। আগে কথা ছিল জ্ঞান অর্জন করার জন্য শিক্ষা। আর মানি সেন্ট্রিক এই সোসাইটিতে শিক্ষা হচ্ছে বড়লোক হওয়ার হাতিয়ার। পরিবার থেকে শৈশবে অধিকাংশ উচ্চবিত্ত এবং উচ্চ মধ্যবিত্তের সন্তানরা পাঠ নিচ্ছে যাতে কেবল ব্যক্তিকেন্দ্রিক মানসিকতা গড়ে ওঠে। আর এই পাঠ হচ্ছে সম্পূর্ণরূপে সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা এবং উদার শিক্ষাব্যবস্থার চেয়ে পৃথক। অনুদার শিক্ষাব্যবস্থায় ধ্বংসযজ্ঞে ছাত্রছাত্রীদের ধর্মের নামে বা দলীয় আনুগত্যে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বর্তমান সরকার সবার জন্য শিক্ষাব্যবস্থার যে নীতিমালা প্রণয়ন করেছিল তা অসাম্প্রদায়িক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো এই শিক্ষানীতির সুন্দর কথামালার যথার্থ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বরং শিক্ষাকেন্দ্রগুলো হয়ে উঠছে এক ধরনের কূপম-ূকতা এবং পর সম্পদগ্রাসকারীদের হাতিয়ার। আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে নোংরামিতে ভরিয়ে তুলছি। বরং আগামী দিনের উত্তরসূরিদের কাছে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হচ্ছি। ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গীরা বর্তমান তরুণ প্রজন্মের একাংশকে ব্রেন ওয়াশ করে চলেছে। এই অব্যবস্থা দূর করার কোন সঠিক নিয়মনীতি নেই। ফলে যে সুন্দর মনের মানুষ শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার কথা তার থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে বর্তমানের শিক্ষার্থীরা। একরাশ বইয়ের চাপে নানামুখী সমস্যার ভারে শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত। তাই তো পাস করে বেরুলেও অনেক তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিকে দেখা যায় কত দ্রুত চাকরি বদলিয়ে উপরে ওঠা যায়, বড়লোক হওয়া যায়। ঘুণেধরা সমাজব্যবস্থায় শিক্ষাব্যবস্থা হচ্ছেÑ মানুষকে যন্ত্রদানবে পরিণত করার হাতিয়ার। বোধহীন, মানবিকতাহীন শিক্ষাব্যবস্থার চক্র থেকে বেরিয়ে আশা দরকার। কিছু মাস্টার মাইন্ড ধর্মীয় চেতনাবহনকারী শিক্ষক ও সাম্প্রদায়িকতা এখন বহাল তবিয়তে উচ্চপদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের সহযোগিতায় আসীন হচ্ছেন। তাঁরা তাঁদের ভুল মতাদর্শ বিভিন্ন ছাত্রছাত্রীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। সরকার ও শিক্ষা বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন থাকবে উচ্চ শিক্ষাই কেবল নয়, প্রাথমিক থেকে সর্ব পর্যায়ে শিক্ষাকে অসাম্প্রদায়িক ও নৈতিকতাপূর্ণ করা হোক। যে সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা ছাত্রছাত্রীদের ভুলপথে পরিচালিত করে থাকে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। অসম্প্রদায়িক চেতনাবোধের সৃষ্টি হোক এবং লোভ-লালসাকে সীমিত করার প্রয়াস নেয়া হোক। নাফিসের মতো অন্যরা যেন সহজেই জীবনের প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়ে ভুলপথে পরিচালিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপদে যে কোন দলের সঙ্গে সম্পৃক্তদের নিয়োগ দেয়া বন্ধ করা উচিত।
লেখক : প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং কথাসাহিত্যিক। pipulbd@gmail.com
No comments