ঝাড়ফুঁক-অপচিকিৎসা বন্ধ করা যায় না?
ঝাড়ফুঁকে যদি রোগ সারত, তাহলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের কি উদ্ভব হতো? তাহলে তো মানুষ আদিম চিকিৎসা পদ্ধতি ঝাড়ফুঁক আর তাবিজ-কবজের ওপর ভরসা করেই যাপিত জীবনের যন্ত্রণার সঙ্গে সঙ্গে রোগকে সহজেই জয় করতে পারত। কিন্তু তা হয়নি আর হওয়ারও নয়।
সে জন্যই চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত রোগ নিরাময়ের জন্য নিত্যনতুন আবিষ্কারে মেতে থাকেন। কিন্তু আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে এখনও বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন এবং এখনও ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো পেঁৗছেনি, সেখানে কোথাও কোথাও অনেক সরলপ্রাণ মানুষকে ঝাড়ফুঁক, পানিপড়া, ওঝা-বৈদ্যের ওপর নির্ভর করতে দেখা যায়। এ ধরনের চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসার শিকার হয়ে কোনো কোনো রোগী মারা যান এবং অনেকেই স্থায়ী শারীরিক সমস্যার মধ্যে পড়েন। শনিবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত অপচিকিৎসার শিকার হয়ে এক নারীর মৃত্যুবরণ করার খবর তারই সাক্ষ্য দেয়। 'নেত্রকোনায় রোগ সারানোর নামে ঝাড়ফুঁক, নারীর মৃত্যু' শিরোনামে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনটিতে দেখা যায়, নেত্রকোনা সদর উপজেলার বায়ড়াউড়া গ্রামে রোগ সারানোর নামে স্থানীয় এক কবিরাজ জ্বর ও জন্ডিসে আক্রান্ত এক নারীকে ঝাড়ফুঁকের আশ্রয় নিয়ে ঝাড়ূপেটা করে জমদুয়ারে পেঁৗছে দেয়। শেষ পর্যন্ত ওই রোগিণীকে হাসপাতালের ডাক্তাররাও বাঁচাতে পারেননি। এভাবে কুসংস্কারের অন্ধ বিশ্বাসকে পুঁজি করে এক শ্রেণীর ধান্দাবাজ মানুষ সাধারণ মানুষকে অপচিকিৎসার শিকারে পরিণত করে। কবিরাজের অপচিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়ার খবর মাঝে মধ্যেই গণমাধ্যমের কল্যাণে নজরে আসে। দেশের সব স্বাস্থ্যকেন্দ্র যদি সাধারণ মানুষের সহজে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারত, তাহলে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা গ্রহণের প্রবণতা অনেকাংশে কমে আসত। তদুপরি চিকিৎসার নামে যারা সরলপ্রাণ মানুষকে প্রতারণা করে চলেছে, তাদের সম্পর্কে এবং তাদের রোগ নিরাময়ের নামে প্রতারণাকে প্রতিনিয়ত প্রচারমাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার প্রয়াস চালানো যেত, তাহলে অপচিকিৎসা হ্রাস পেত। যে কবিরাজের অপচিকিৎসায় নেত্রকোনা সদরের বায়ড়াউড়া গ্রামের হতভাগ্য নারী মারা গেলেন, সেই কবিরাজের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। না হলে সে আরও অনেকের প্রাণ সংহারের সুযোগ পাবে। অপচিকিৎসার বিরুদ্ধে প্রশাসনের প্রতিরোধমূলক কঠোর পদক্ষেপ কাম্য।
No comments