প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি

সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের অর্থসাহায্যপুষ্ট বাংলাদেশের ১৩টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে এবং এই ধীরগতির কারণে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাটি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।


যে ১৩টি প্রকল্প বাস্তবায়নে এই ধীরগতি তার মধ্যে রয়েছে ঢাকা পানি সরবরাহ এবং পনিষ্কাশন প্রকল্প, ইমার্জেন্সি সাইক্লোন সেন্টার পুনর্বাসন প্রকল্প, মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামো শক্তিশালীকরণ ও আর্থিক জবাবদিহিতা প্রকল্প, প্রতিবন্ধী ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শীর্ষক প্রকল্প, উচ্চশিক্ষা ও জাতীয় কৃষি প্রযুক্তি শীর্ষক প্রকল্প। উল্লিখিত ৬টি প্রকল্পের বাস্তবায়নের হার এতই নগণ্য যে, তা রীতিমতো হতাশাজনক। এসব প্রকল্পের মেয়াদ শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থছাড়সহ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি এখনও অর্জিত হয়নি।
১৭২ কোটি ডলারের ১৩টি প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতি, এর মধ্যে ৬টি প্রকল্প বাস্তবায়নে আশঙ্কাজনক ধীরগতি জাতির জন্য কোন শুভ সংবাদ নয়। মোটা দাগে বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর দেশটি সাহায্যের টাকা যদি যথাযথভাবে এবং যথাসময়ে ব্যয় করে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সমাপ্ত করতে না পারে, তাহলে তার চেয়ে পরিতাপের বিষয় আর কি হতে পারে! আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থাগুলোর মধ্যে বিশ্বব্যাংক সর্বনিম্ন সুদে ঋণ প্রদান করে থাকে। সেই ঋণের টাকা সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যয় হবে সেটাই প্রত্যাশা। এ ধরনের সহজশর্তের ঋণ উন্নয়নশীল দেশের জন্য এক ধরনের প্রণোদনা হিসেবেও বিবেচনা করা যায়। কিন্তু নানা জটিলতা ও আমলাতান্ত্রিক ঘোরপ্যাঁচে পড়ে সেই উন্নয়ন-সুযোগকে যদি আমরা অবহেলা করি বা যথাযথভাবে কাজে না লাগাই, তাহলে দাতাসংস্থাটি ক্রমশ সাহায্যদানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।
দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, যথাসময়ে অর্থছাড় না হওয়া, জনবল নিয়োগ ও ক্রয় প্রক্রিয়ায় জটিলতা এবং উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব বা ডিপিপি তৈরির ক্ষেত্রে ত্রুটি রয়েছে বলে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে সরকারকে জানানো হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধিরও সুপারিশ করেছে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস।
এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে : প্রকল্পগুলো গ্রহণের আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ডিপিপিতে কি সমস্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে দেননি? কিভাবে, কয়টি স্তরে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হবে, জনশক্তিসহ অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্ট কি কি লাগবে, ক্রয়পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয় কি প্রকল্প দলিলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়নি? ডিপিপি প্রকল্পের মূল কাঠামো। প্রকল্পের প্রাণ নিহিত থাকে ডিপিপির প্রথাবদ্ধ কাঠামোর মধ্যে। সেই প্রকল্প চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হলে এবং অর্থমঞ্জুরি পাওয়া গেলেও যদি নিজেদের সামর্থ্য এবং যথাযথ প্রস্তুতির অভাবে প্রকল্পগুলো মুখথুবড়ে পড়ে, তাহলে তার দায় সংশ্লিষ্ট বাস্তবায়নকারী সংস্থাসমূহের ওপরই বর্তায়। সরকারকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে ত্বরিত উদ্যোগ নিতে হবে। তাছাড়া প্রকল্পের শম্বুকগতির জন্য দায়ী ব্যক্তিবর্গকে সুদৃঢ় জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। তা না করলে এসব প্রকল্পের হতাশাজনক অবস্থা থেকে সৃষ্ট অসন্তুষ্টি অনাস্থার পর্যায়ে চলে যেতে পারে; যা সার্বিক উন্নয়ন প্রকল্পের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.