ইউরো জোনে রেকর্ডসংখ্যক বেকারত্ব
সাম্প্রতিক সময়ে সারাবিশ্ব জুড়ে অন্যতম আলোচিত বিষয় হচ্ছে ইউরোজোন পরিস্থিতি। পত্রিকার পাতা খুললেই ইউরোজোনের নেতৃবৃন্দের কর্মকা-, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন, অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদদের ভবিষ্যদ্বাণী ও সতর্কবার্তা, জনগণের বিক্ষোভসহ নানামুখী সংবাদ আমাদের চোখে পড়ে।
ইউরোজোনের অর্থনৈতিক করুণ পরিস্থিতি শুধু ইউরো অঞ্চলের মানুষের জন্যই দুর্ভোগের কারণ নয়, এর প্রভাব পড়ছে সমগ্র বিশ্বের সামগ্রিক অর্থনীতিতে। তাইতো সারা বিশ্বের হোমড়া-চোমড়াদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউরোজোন পরিস্থিতি। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সঙ্কটে সম্প্রতি ইউরোজোনে বেকারত্বের সংখ্যা রেকর্ড করে দাঁড়িয়েছে আঠারো দশমিক দুই মিলিয়নে। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে যে ইউরোজোন দুনিয়ায় নেতৃত্ব দিতে চেয়েছিল সেই জোট এখন বিশাল মন্দায় পড়েছে। ইউরোজোনের দেশগুলোতে ১ কোটি ৮২ লাখ মানুষের কোন কাজ নেই। ইউরোপীয় পরিসংখ্যান দফতর ইউরোস্ট্যাট এক প্রতিবেদনে বলছে, জোটের ১৭টি দেশে ১৯৯৫ সালের পর উচ্চ হারে বেকারত্বের বিষয়টি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এসব দেশে অভিন্ন মুদ্রা ইউরো চালু আছে এবং মন্দা থেকে বের হয়ে আসতে এক দেশ আরেক দেশকে পরামর্শ ছাড়াও অর্থ সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে ২৭ জাতির ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেকারত্ব বিবেচনা করলে এ হার আরও নাজুক অর্থাৎ আড়াই কোটি মানুষ ইইউতে স্রেফ বেকার। কর্মসংস্থানের এ নাজুক পরিস্থিতি গত বছরের আগস্ট মাসের সাথে তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে বেকার রয়েছে ইইউ এলাকায় দুই দশমিক ১৭০ মিলিয়ন এবং ইউরো এলাকায় তা দুই দশমিক ১৪৪ মিলিয়ন মানুষ। এর আগে কনসালট্যান্সি আরনসট এ্যান্ড ইয়ংয়ের জরিপে আশঙ্কা করা হয়েছিল ২০১৪ সালের আগেই ইউরোজোনে বেকারত্ব বেড়ে দাঁড়াবে ১৯ মিলিয়নে যা শ্রমিকের ১২ শতাংশ। ওই জরিপে শুধু গ্রীসে ২৭ ভাগ বেকারত্ব বাড়বে বলে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছিল। সংস্থাটি আরও বলছে, এ ধরনের কঠিন পরিবেশে বিভিন্ন কোম্পানি উৎপাদনশীলতা ও মুনাফা আরও বৃদ্ধি করে টিকে থাকার জন্য ব্যাপক শ্রমিক ছাঁটাই করে থাকে। এছাড়া ইউরোজোনে ঘাটতি ও মন্দা মোকাবেলায় বিভিন্ন কোম্পানি অব্যাহতভাবে লোকবল ছাঁটাই করছে। ইইউ সদস্য দেশগুলো গত পাঁচ বছর ধরে এ ধরনের মন্দা থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছে। প্রথমে গ্রীসে মন্দা ও ঘাটতি শুরু হবার পর তা আয়ারল্যান্ড, পর্তুগাল ও বড় অর্থনীতির দেশ স্পেনে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে এসব দেশে সামাজিক সংকট বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। আর ছাঁটাইয়ের শিকার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ছাত্র ও স্বল্প আয়ের শ্রমিকরা। এর ফলে ছাত্রদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ইউরোজোনের এই ভয়াবহ বেকারত্ব পরিস্থিতি সামগ্রিক পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে।
এআরএস পাটোয়ারী
এআরএস পাটোয়ারী
No comments