অসহনীয় যানজট-ঘরমুখো যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে ব্যবস্থা নিন

এবারও বাংলাদেশের দুটি বড় ধর্মীয় সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎসব- পবিত্র ঈদুল আজহা ও শারদীয় দুর্গাপূজা প্রায় একই সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে এবং আগামী বুধবার শেষ হবে। আর ঈদুল আজহা পালিত হবে শনিবার।


ফলে প্রিয়জনের সাথে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য গত সপ্তাহ থেকে ঘরমুখো মানুষের যে যাত্রা শুরু হয়েছে, তা আগামী শুক্রবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। ফলে গত ঈদুল ফিতরের সময়ের চেয়ে এবার ঘরমুখো মানুষের ভিড় স্বাভাবিকভাবেই বেশি। তাই এবার যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বাড়তি প্রস্তুতিও থাকা উচিত ছিল। পূজার শুরুতে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে চলছে ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই শুরু এ যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাত-পা গুটিয়ে বাসের মধ্যেই বসে থাকতে হয়েছে যাত্রীদের। এ সপ্তাহে ঈদুল আজহায় ঘরমুখো মানুষ যাত্রা শুরু করলে এ যানজট অসহনীয় হয়ে উঠবে।
একই রকম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সড়কপথে দক্ষিণাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী যাত্রীদেরও। মাওয়া ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটেও রয়েছে অসহনীয় যানজট। পারাপারের অপেক্ষায় শত শত যানবাহন। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘাটে পৌঁছেও শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক গাড়ি ফেরিতে উঠতে পারেনি। তার পরও 'সিরিয়াল' পেতে ঘুষ দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেক যাত্রীকে বাসের টিকিট ফেলে লঞ্চ বা ছোট নৌযানে নদী পার হয়ে ট্রাকে করে গন্তব্যে রওনা হতে দেখা গেছে। প্রতিবছরই উৎসবের সময় ঘরমুখো মানুষের একই ভোগান্তি আমরা আর কত দেখব?
উৎসব-আনন্দে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার এই চিত্র কেবল বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের সব দেশেই এক ও অভিন্ন। কিন্তু অন্য কোনো দেশে এমন অসহনীয় যানজট বা অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কথা শোনা যায়নি। বাংলাদেশে এ চিত্র সাংবৎসরিক। তার পরও বিগত কয়েক বছরই পথে পথে মানুষের বিড়ম্বনার প্রায় একই চিত্র আমরা দেখে আসছি কেন? যেমন ভাঙা রাস্তা, যানজটে আটকে থাকা ও নিরাপত্তাহীনতা, একই ভোগান্তির চিত্র। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, মিরসরাইয়ে রাস্তা সংস্কারের কারণেই ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সংস্কারের কাজটি কি আরো আগে করা যেত না? অন্য ঘাটটি নদীতে বিলীন হওয়ায় মাওয়ায় এখন একটিমাত্র ফেরিঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার চলছে। আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে নদীভাঙনের হাত থেকে ঘাটটি রক্ষা করা কি যেত না? বহুল আলোচিত সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী রাস্তাটি। অন্তত ঈদের দিনদশেক আগেই কি এটি চলাচলের উপযুক্ত করা যেত না? তাতে মানুষের, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমত। কথায় বলে, বেণী পুড়ে হাতে না লাগলে নাকি আমাদের সম্বিৎ ফেরে না। এখানেও অবস্থাটা সে রকমই।
দিন দিন মানুষ বাড়ছে। মানুষের অর্থনৈতিক প্রয়োজন বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই যানবাহনের সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চলাচলও বেড়েছে। কিন্তু কোনো সরকারই সেই বাস্তবতা মোটেও আমলে নেয়নি। এ কারণেই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা আজ এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। এখনই যদি এই সমস্যাকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করার জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে আমরা আরো বেশি বিপর্যয়ের মুখোমুখি হব। অর্থনীতির অগ্রগতিও থেমে যাবে। আর এজন্য কেবল মেগাপ্রকল্প নিয়ে বসে থাকলেই হবে না, যান চলাচল ও যানজট নিরসনে এলাকাভিত্তিক ছোট ও মাঝারি আকারের সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকেও যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। কেবল ঈদ বা পূজার সময় নয়, মানুষের দুর্ভোগ ও প্রয়োজনের কথাটাই সবার আগে সারা বছর ভাবতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.