আপনারাও মুক্তিযোদ্ধা...- বিদেশী বন্ধুদের মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা ও মৈত্রী সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী
স্বাধীনতার ৪১ বছর পর রক্তস্নাত লাল-সবুজের উজ্জ্বল-উচ্ছ্বাসে বর্ণিল আয়োজনে একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনে ভূমিকা রাখায় আরও ৬১ জন বিদেশী নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মান জানাল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় বিদেশী ‘যুদ্ধবন্ধু’দের সম্মান জানানোর তৃতীয় পর্বে শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশী বন্ধুদের হাতে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ তুলে দেন।
বিদেশী ‘যুদ্ধবন্ধু’দের সম্মান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী বন্ধুদের অবদানকে অমূল্য, উৎসাহব্যঞ্জক ও বিশাল বলে অভিহিত করে বলেন, ‘আপনাদের সীমাহীন অবদানের কথা আমাদের হৃদয়ে চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রকৃতপক্ষে আজকের এ অনুষ্ঠান সবার জন্য একটি ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় একটি ঘটনা।’
মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা প্রদানকারী বিদেশী বন্ধুদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলাদেশের আকাশ, বাতাস আর মাটি থাকবেÑ আপনাদের অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে চিরদিন স্মরণ করবে। বলতে গেলে আপনারাও এক ধরনের মুক্তিযোদ্ধা। আমরা আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ, চিরঋণী।’ স্বাধীনতার ৪১ বছর পরও বাংলাদেশ তার অকৃত্রিম বন্ধুদের ভোলেনি, এর জন্য যেন কৃতজ্ঞতার শেষ ছিল না সম্মাননা নিতে আসা ‘যুদ্ধবন্ধু’দের। বলেন, একাত্তরে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে পেরেছিলেন বলে তাঁরা নিজেরাই ধন্য, গর্বিতও। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় স্মৃতিচারণ করেছেন কেউ কেউ। স্বাধীনতার ৪১ বছর পররাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন বীরত্বপূর্ণ সম্মান দেখানোই সম্মাননা নিতে আসা বিদেশী অতিথিদের সবার কণ্ঠেই ছিল বাংলাদেশের জনগণের প্রতি বিনর্ম কৃতজ্ঞতা।
শনিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন দেশের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা ও মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও সম্মাননাপ্রাপ্ত বিদেশী বন্ধুরা তাঁদের এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. দীপু মনি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব) এবি তাজুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমাজকর্মী জোয়ান এ ডাইন সম্মাননাপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে বক্তৃতা করেন। শেষে সন্মাননাপ্রাপ্ত বিদেশী বন্ধুরা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন।
শনিবার বর্ণিল আয়োজনে তৃতীয় পর্বে এবার যে ৬১ জনকে সম্মাননা দেয়া হয়েছে তাঁদের মধ্যে ৪৯ জন ভারতীয়, একজন নেপালী, একজন ভিয়েতনামী, তিনজন ব্রিটিশ, দুজন আমেরিকান, দুজন সুইডিশ, দুজন অস্ট্রেলীয় এবং একজন ইতালীয়। এদের মধ্যে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আই কে গুজরাল ও নেপালের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী গিরিজা প্রসাদ কৈরালাকে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ দেয়া হয়। ভারতীয় হাইকমিশনার পংকজ স্মরণ আই কে গুজরালের পক্ষে এবং গিরিজা প্রসাদ কৈরালার পক্ষে তাঁর কন্যা সুজাতা কৈরালা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন।
বাকি ৫৯ জন পান ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা।’ এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন, এগুলো হচ্ছে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা এবং বিশ্ব শান্তি পরিষদ। এবার ১৮টি দেশ থেকে ১৫০ জনকে সম্মাননা গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ৬১ জন কিংবা তাদের প্রতিনিধিরা সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ নেন ভারতের সাবেক কূটনীতিক শশাঙ্ক এস ব্যানার্জী, দক্ষিণ ভিয়েতনামের ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের সাবেক নেতা নগুয়েন থি বিন, ভারতীয় সাংবাদিক দিলীপ চক্রবর্তী, হিরন্ময় কার্লেকার, পঙ্কজ সাহা ও মানস ঘোষ, ব্রিটিশ সাংবাদিক লরেন্স ক্লিফটন, ভারতীয় সমাজসেবক নারায়ণ দেশাই, অঞ্জলী লাহিড়ী ও আফজাল হোসেন, মার্কিন রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক জন এ ডাইন ও টমাস এ ডাইন, ভারতীয় চিত্রগ্রাহক ও সমাজসেবক আহম্মদ হোসেন, সুইডেনের রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকার কর্মী লার্স লেইসনবার্গ, ও সাংবাদিক টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ভেন স্ট্রমবার্গ, ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও অর্থনীতিবিদ ড. অশোক মিত্র, ভারতীয় নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন এমএনআর সামন্ত, ভারতীয় সাংবাদিক ও অধ্যাপক তরুণ স্যানাল, ভারতীয় শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, ভারতীয় সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহক রবীন সেনগুপ্ত, ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার সান্ত সিং ও অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অশোক তারা, ভারতীয় সাংস্কৃতিক কর্মী উপেন তরফদার এবং ব্রিটিশ সাংবাদিক ও লেখক মার্ক টালি। এরা সবাই নিজেরাই উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।
এ ছাড়া ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবেক উপমন্ত্রী প্রয়াত মনসুর আলী, অধ্যাপক ও সমাজকর্মী প্রয়াত গৌরী আইয়ুব, কবি প্রয়াত কাইফি আজমী, লেখক ও সাংবাদিক প্রয়াত দীপেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজনীতিবিদ প্রয়াত শিবনাথ ব্যানার্জী, সাংবাদিক প্রয়াত অনীল ভট্টাচার্য ও প্রয়াত ভূপেন দত্ত ভৌমিক, চিকিৎসক প্রয়াত শিশির কুমার বোস, কবি প্রয়াত নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, ত্রিপুরার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিএম নেতা প্রয়াত নৃপেন চক্রবর্তী, সাহিত্যিক, সমাজসেবক প্রয়াত মৈত্রেয়ী দেবী, অধ্যাপক ও সমাজসেবক বিধু ভূষণ দত্ত, ১৪ গার্ড রেজিমেন্টের শহীদ ল্যান্সনায়েক আলবার্ট এক্কা, সাংবাদিক সন্তোষ কুমার ঘোষ, শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক ড. ফুলরেণু গুহ, রাজ্যসভার সাবেক সদস্য প্রয়াত ভূপেশ গুপ্ত, গীতিকার গোবিন্দ হালদার, সমাজসেবক ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী প্রয়াত কল্পনা দত্ত যোশী, সমাজসেবক প্রয়াত মাওলানা আবদুল লতিফ, গীতিকার প্রয়াত গৌরী প্রসন্ন মজুমদার, সমাজসেবক প্রয়াত দিলীপ মুখার্জী, প্রয়াত অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার কৌলাস প্রসাদ পান্ডে, ভারতের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী প্রয়াত জগজীবন রাম, কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই) সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত চন্দ্র রাজেশ্বর রাও, ইতিহাসবিদ প্রয়াত অধ্যাপক নীহার রঞ্জন রায়, প্রয়াত ক্যাপ্টেন উইলিয়ামসন সাংমা, সাংস্কৃতিককর্মী প্রয়াত প্রণবেশ সেন, সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত ড. ত্রিগুনা সেন, চিত্রগ্রাহক প্রয়াত অমিয় তরফদার, যুক্তরাজ্যের রাজনীতিবিদ প্রয়াত ডোনাল্ড চেসওর্থ, অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসক প্রয়াত জিওফ্রে ডেভিস এবং ইতালির ধর্মযাজক ও সমাজসেবক ফাদার মারেনো রেগানের পক্ষে তাদের প্রতিনিধিরা সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে।
কাইফি আজমীর পক্ষে তাঁর মেয়ে ভারতের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও সমাজকর্মী শাবানা আজমী এবং চন্দ্র রাজেশ^র রাওয়ের পক্ষে সিপিআইয়ের নেতা অর্ধেন্দু ভূষণ বর্ধন (এবি বর্ধন) এবং জগজীবন রামের পক্ষে তাঁর নাতি আনসুল অভিজিৎ সম্মাননা স্মারক নেন। আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক অভীক সরকার এবং ওয়ার্ল্ড পিস কাউন্সিল ও রমেশ চন্দ্রের পক্ষেও তাঁদের প্রতিনিধিরা সম্মাননা নেন।
সম্মাননা প্রদানের এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ব্যাপক আয়োজন করা হয়। মূল ভবন থেকে মিলনায়তন পর্যন্ত লাল গালিচা ছিল। অতিথিরা এই লাল গালিচার ওপর দিয়ে হেঁটেই মিলনায়তনে ঢোকেন।
বিশাল মঞ্চের পেছনে বাংলাদেশের পতাকার ওপর জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়। সঙ্গে ছিল বিশাল একটি ডিজিটাল পর্দা। ওই পর্দায় পুরো অনুষ্ঠান চলাকালে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য সময়ের আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয়। মঞ্চের মাঝে ছিল রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর বসার স্থান। আর দুই পাশে বসেন সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং তাঁদের প্রতিনিধিরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রথমেই সম্মাননাপ্রাপ্ত সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করেন। এরপর বঙ্গবন্ধুর বজ্রকঠিন ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যা, ভারতের শরণার্থী শিবিরে বাংলাদেশীদের অবস্থা, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস এবং বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সব ঘটনা সংবলিত একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন এবং সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত প্রশংসাপত্র পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রীবর্গ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সেক্টর কমান্ডারবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, কূটনীতিক, বিচাপতি, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীসহ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম বিদেশী বন্ধু ও তাঁদের প্রতিনিধিদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং কুশলাদী জিজ্ঞেস করেন।
উল্লেখ্য, বিদেশী বন্ধুদের সম্মাননা জানানোর প্রথম পর্যায়ে গত বছর জুলাইয়ে ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে সর্বোচ্চ সম্মান ‘স্বাধীনতা সম্মাননা’ দেয়া হয়। ইন্দিরা গান্ধীর হয়ে তাঁর পুত্রবধূ ও ভারতের ক্ষমতাসীন জোটের চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী ওই সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন। দ্বিতীয় পর্বে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা ৮৩ জন বিদেশীকে গত মার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ দেয়া হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ মুক্তিমুদ্ধে সমর্থন ও সহায়তাদানকারী পাঁচ শতাধিক বিদেশী বন্ধুকে সম্মাননা প্রদান করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এ তালিকায় ৪০ পাকিস্তানীও রয়েছেন।
সম্মাননা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি যা বলেন
সম্মাননা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান দেশের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী বন্ধুদের অবদানকে অমূল্য, উৎসাহব্যঞ্জক ও বিশাল অভিহিত করে বলেন, ‘আজ আমি আপনাদের বিদেশী বন্ধুদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতা ভরে স্মরণ করছি। যারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সর্বান্তকরণে সাহায্য-সহযোগিতা করেছিলেন।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অসামান অবদানের জন্য বাংলাদেশ তাঁর বিদেশী বন্ধুদের প্রতি সত্যিই কৃতজ্ঞ। প্রকৃতপক্ষে আজকের এ অনুষ্ঠান সবার জন্য একটি ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় একটা ঘটনা। তিনি বলেন, আপনাদের সীমাহীন অবদানের কথা আমাদের হৃদয়ে চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে আপনারা আগামী দিনগুলোতেও বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় মূল্যবান সহায়তা ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে আরও বলেন, কালের পরিক্রমায় বাংলাদেশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহু উল্লেখযোগ্য সাফল্যে পেয়েছে। গণতন্ত্র, নারীর ক্ষমতায়ন, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন, নারী শিক্ষা বৃদ্ধি এবং শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন উল্লেখযোগ্য।
তিনি বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবকে সামনে রেখে বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে। তিনি দেশের ব্যাপক মানবসম্পদ ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যা বলেন
সম্মাননা অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব বিদেশী বন্ধুরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তাঁদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ এবং চিরঋণী। আজকের দিনটি মানবিক মূল্যবোধ ও মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার মর্মস্পর্শী আবেদনের গুরুত্ব তুলে ধরার; বন্ধুত্ব ও সৌহার্দের এবং সত্য ও ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামে অভূতপূর্ব বিজয় উদযাপনেরও দিন। দেরিতে হলেও সেই অবদানের স্বীকৃতি দিতে পেরে আজ আমরা নিজেদের ধন্য মনে করছি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া হচ্ছে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ। এর মাধ্যমে ইতিহাসের একটি অপ্রিয় অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটবে এবং জাতীয় সমঝোতার পথ উন্মুক্ত করবে, আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। জাতীয় সমঝোতার পথ উন্মুক্ত করবে।
বিদেশী যুদ্ধবন্ধু ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আজ থেকে ৪১ বছর আগে বাঙালী জাতি যখন গণহত্যার শিকার হয়েছিল, তখন আপনারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আপনাদের সেই সমর্থন প্রমাণ করেছিল যে আমাদের সংগ্রাম ছিল ন্যায্য। ন্যায়বিচার, মর্যাদা এবং সম্মান রক্ষার আর্তি আপনাদের কাছে পৌঁছেছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, গত ৪১ বছর আগে বাঙালী জাতি যখন মরণপণ মুক্তিযুদ্ধে লিপ্ত, সে সময় আপনারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, যাতে আমরা গণহত্যাকারী পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে মুখোমুখি দাঁড়ানোর শক্তি পাই। তিনি বলেন, আপনাদের সেই সমর্থন আমাদের সংগ্রামকে বহির্বিশ্বে একটি ভিন্নমাত্রার স্বীকৃতি এনে দেয়। আমাদের ন্যায্য দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আপনারা তা বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজরে এনেছিলেন। ফলে বহির্বিশ্ব আমাদের দুর্দশার কথা জানতে পারে। বুঝতে পারে আমাদের বেদনা।
বাঙালী জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া বিদেশী বন্ধুদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিদেশী মুক্তিযোদ্ধা বন্ধুরা বাংলাদেশের নিরীহ জনগণের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। আপনারা নিজ নিজ দেশের সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির ওপরও প্রভাব বিস্তার করতে সহায়তা করেন। আপনাদের নৈতিক, মানসিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, বৈষয়িক এবং সামরিক সাহায্য বাংলাদেশে আরও জীবনহানি এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অতীতের সেই নীতির প্রতি আমাদের অবিচল আস্থা পুনর্ব্যক্ত করছি। সমতা, গণতন্ত্র, সুষম উন্নয়ন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন হচ্ছে আমাদের আদর্শ এবং নীতি। তিনি বলেন, আমাদের সংবিধান প্রণয়নের সময়ও এসব আদর্শকে আমরা সমুন্নত রেখেছি। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসব আদর্শের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে তুলেছি। অতীতে অপরাধ করে শাস্তি না পাওয়ার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, আমরা তার অবসান ঘটিয়েছি। যে কোন অপকর্মের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছি।
সরকার নতুন করে সুষম উন্নয়নের জন্য আত্মনিয়োগ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সুষম উন্নয়ন সুনিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সমতা বিধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ। কিন্তু আমরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। চার দশক আগে ১৯৭১ সালে আমরা এ জন্যই মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার আগামী এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন পূরণে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
বিদেশী ‘যুদ্ধবন্ধু’দের সম্মান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী বন্ধুদের অবদানকে অমূল্য, উৎসাহব্যঞ্জক ও বিশাল বলে অভিহিত করে বলেন, ‘আপনাদের সীমাহীন অবদানের কথা আমাদের হৃদয়ে চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রকৃতপক্ষে আজকের এ অনুষ্ঠান সবার জন্য একটি ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় একটি ঘটনা।’
মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা প্রদানকারী বিদেশী বন্ধুদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলাদেশের আকাশ, বাতাস আর মাটি থাকবেÑ আপনাদের অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে চিরদিন স্মরণ করবে। বলতে গেলে আপনারাও এক ধরনের মুক্তিযোদ্ধা। আমরা আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ, চিরঋণী।’ স্বাধীনতার ৪১ বছর পরও বাংলাদেশ তার অকৃত্রিম বন্ধুদের ভোলেনি, এর জন্য যেন কৃতজ্ঞতার শেষ ছিল না সম্মাননা নিতে আসা ‘যুদ্ধবন্ধু’দের। বলেন, একাত্তরে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে পেরেছিলেন বলে তাঁরা নিজেরাই ধন্য, গর্বিতও। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় স্মৃতিচারণ করেছেন কেউ কেউ। স্বাধীনতার ৪১ বছর পররাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন বীরত্বপূর্ণ সম্মান দেখানোই সম্মাননা নিতে আসা বিদেশী অতিথিদের সবার কণ্ঠেই ছিল বাংলাদেশের জনগণের প্রতি বিনর্ম কৃতজ্ঞতা।
শনিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন দেশের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা ও মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও সম্মাননাপ্রাপ্ত বিদেশী বন্ধুরা তাঁদের এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. দীপু মনি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব) এবি তাজুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমাজকর্মী জোয়ান এ ডাইন সম্মাননাপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে বক্তৃতা করেন। শেষে সন্মাননাপ্রাপ্ত বিদেশী বন্ধুরা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন।
শনিবার বর্ণিল আয়োজনে তৃতীয় পর্বে এবার যে ৬১ জনকে সম্মাননা দেয়া হয়েছে তাঁদের মধ্যে ৪৯ জন ভারতীয়, একজন নেপালী, একজন ভিয়েতনামী, তিনজন ব্রিটিশ, দুজন আমেরিকান, দুজন সুইডিশ, দুজন অস্ট্রেলীয় এবং একজন ইতালীয়। এদের মধ্যে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আই কে গুজরাল ও নেপালের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী গিরিজা প্রসাদ কৈরালাকে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ দেয়া হয়। ভারতীয় হাইকমিশনার পংকজ স্মরণ আই কে গুজরালের পক্ষে এবং গিরিজা প্রসাদ কৈরালার পক্ষে তাঁর কন্যা সুজাতা কৈরালা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন।
বাকি ৫৯ জন পান ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা।’ এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন, এগুলো হচ্ছে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা এবং বিশ্ব শান্তি পরিষদ। এবার ১৮টি দেশ থেকে ১৫০ জনকে সম্মাননা গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ৬১ জন কিংবা তাদের প্রতিনিধিরা সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ নেন ভারতের সাবেক কূটনীতিক শশাঙ্ক এস ব্যানার্জী, দক্ষিণ ভিয়েতনামের ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের সাবেক নেতা নগুয়েন থি বিন, ভারতীয় সাংবাদিক দিলীপ চক্রবর্তী, হিরন্ময় কার্লেকার, পঙ্কজ সাহা ও মানস ঘোষ, ব্রিটিশ সাংবাদিক লরেন্স ক্লিফটন, ভারতীয় সমাজসেবক নারায়ণ দেশাই, অঞ্জলী লাহিড়ী ও আফজাল হোসেন, মার্কিন রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক জন এ ডাইন ও টমাস এ ডাইন, ভারতীয় চিত্রগ্রাহক ও সমাজসেবক আহম্মদ হোসেন, সুইডেনের রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকার কর্মী লার্স লেইসনবার্গ, ও সাংবাদিক টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ভেন স্ট্রমবার্গ, ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও অর্থনীতিবিদ ড. অশোক মিত্র, ভারতীয় নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন এমএনআর সামন্ত, ভারতীয় সাংবাদিক ও অধ্যাপক তরুণ স্যানাল, ভারতীয় শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, ভারতীয় সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহক রবীন সেনগুপ্ত, ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার সান্ত সিং ও অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অশোক তারা, ভারতীয় সাংস্কৃতিক কর্মী উপেন তরফদার এবং ব্রিটিশ সাংবাদিক ও লেখক মার্ক টালি। এরা সবাই নিজেরাই উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।
এ ছাড়া ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবেক উপমন্ত্রী প্রয়াত মনসুর আলী, অধ্যাপক ও সমাজকর্মী প্রয়াত গৌরী আইয়ুব, কবি প্রয়াত কাইফি আজমী, লেখক ও সাংবাদিক প্রয়াত দীপেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজনীতিবিদ প্রয়াত শিবনাথ ব্যানার্জী, সাংবাদিক প্রয়াত অনীল ভট্টাচার্য ও প্রয়াত ভূপেন দত্ত ভৌমিক, চিকিৎসক প্রয়াত শিশির কুমার বোস, কবি প্রয়াত নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, ত্রিপুরার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিএম নেতা প্রয়াত নৃপেন চক্রবর্তী, সাহিত্যিক, সমাজসেবক প্রয়াত মৈত্রেয়ী দেবী, অধ্যাপক ও সমাজসেবক বিধু ভূষণ দত্ত, ১৪ গার্ড রেজিমেন্টের শহীদ ল্যান্সনায়েক আলবার্ট এক্কা, সাংবাদিক সন্তোষ কুমার ঘোষ, শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক ড. ফুলরেণু গুহ, রাজ্যসভার সাবেক সদস্য প্রয়াত ভূপেশ গুপ্ত, গীতিকার গোবিন্দ হালদার, সমাজসেবক ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী প্রয়াত কল্পনা দত্ত যোশী, সমাজসেবক প্রয়াত মাওলানা আবদুল লতিফ, গীতিকার প্রয়াত গৌরী প্রসন্ন মজুমদার, সমাজসেবক প্রয়াত দিলীপ মুখার্জী, প্রয়াত অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার কৌলাস প্রসাদ পান্ডে, ভারতের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী প্রয়াত জগজীবন রাম, কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই) সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত চন্দ্র রাজেশ্বর রাও, ইতিহাসবিদ প্রয়াত অধ্যাপক নীহার রঞ্জন রায়, প্রয়াত ক্যাপ্টেন উইলিয়ামসন সাংমা, সাংস্কৃতিককর্মী প্রয়াত প্রণবেশ সেন, সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত ড. ত্রিগুনা সেন, চিত্রগ্রাহক প্রয়াত অমিয় তরফদার, যুক্তরাজ্যের রাজনীতিবিদ প্রয়াত ডোনাল্ড চেসওর্থ, অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসক প্রয়াত জিওফ্রে ডেভিস এবং ইতালির ধর্মযাজক ও সমাজসেবক ফাদার মারেনো রেগানের পক্ষে তাদের প্রতিনিধিরা সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে।
কাইফি আজমীর পক্ষে তাঁর মেয়ে ভারতের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও সমাজকর্মী শাবানা আজমী এবং চন্দ্র রাজেশ^র রাওয়ের পক্ষে সিপিআইয়ের নেতা অর্ধেন্দু ভূষণ বর্ধন (এবি বর্ধন) এবং জগজীবন রামের পক্ষে তাঁর নাতি আনসুল অভিজিৎ সম্মাননা স্মারক নেন। আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক অভীক সরকার এবং ওয়ার্ল্ড পিস কাউন্সিল ও রমেশ চন্দ্রের পক্ষেও তাঁদের প্রতিনিধিরা সম্মাননা নেন।
সম্মাননা প্রদানের এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ব্যাপক আয়োজন করা হয়। মূল ভবন থেকে মিলনায়তন পর্যন্ত লাল গালিচা ছিল। অতিথিরা এই লাল গালিচার ওপর দিয়ে হেঁটেই মিলনায়তনে ঢোকেন।
বিশাল মঞ্চের পেছনে বাংলাদেশের পতাকার ওপর জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়। সঙ্গে ছিল বিশাল একটি ডিজিটাল পর্দা। ওই পর্দায় পুরো অনুষ্ঠান চলাকালে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য সময়ের আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয়। মঞ্চের মাঝে ছিল রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর বসার স্থান। আর দুই পাশে বসেন সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং তাঁদের প্রতিনিধিরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রথমেই সম্মাননাপ্রাপ্ত সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করেন। এরপর বঙ্গবন্ধুর বজ্রকঠিন ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যা, ভারতের শরণার্থী শিবিরে বাংলাদেশীদের অবস্থা, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস এবং বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সব ঘটনা সংবলিত একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন এবং সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত প্রশংসাপত্র পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রীবর্গ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সেক্টর কমান্ডারবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, কূটনীতিক, বিচাপতি, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীসহ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম বিদেশী বন্ধু ও তাঁদের প্রতিনিধিদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং কুশলাদী জিজ্ঞেস করেন।
উল্লেখ্য, বিদেশী বন্ধুদের সম্মাননা জানানোর প্রথম পর্যায়ে গত বছর জুলাইয়ে ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে সর্বোচ্চ সম্মান ‘স্বাধীনতা সম্মাননা’ দেয়া হয়। ইন্দিরা গান্ধীর হয়ে তাঁর পুত্রবধূ ও ভারতের ক্ষমতাসীন জোটের চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী ওই সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন। দ্বিতীয় পর্বে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা ৮৩ জন বিদেশীকে গত মার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ দেয়া হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ মুক্তিমুদ্ধে সমর্থন ও সহায়তাদানকারী পাঁচ শতাধিক বিদেশী বন্ধুকে সম্মাননা প্রদান করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এ তালিকায় ৪০ পাকিস্তানীও রয়েছেন।
সম্মাননা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি যা বলেন
সম্মাননা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান দেশের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী বন্ধুদের অবদানকে অমূল্য, উৎসাহব্যঞ্জক ও বিশাল অভিহিত করে বলেন, ‘আজ আমি আপনাদের বিদেশী বন্ধুদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতা ভরে স্মরণ করছি। যারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সর্বান্তকরণে সাহায্য-সহযোগিতা করেছিলেন।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অসামান অবদানের জন্য বাংলাদেশ তাঁর বিদেশী বন্ধুদের প্রতি সত্যিই কৃতজ্ঞ। প্রকৃতপক্ষে আজকের এ অনুষ্ঠান সবার জন্য একটি ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় একটা ঘটনা। তিনি বলেন, আপনাদের সীমাহীন অবদানের কথা আমাদের হৃদয়ে চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে আপনারা আগামী দিনগুলোতেও বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় মূল্যবান সহায়তা ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে আরও বলেন, কালের পরিক্রমায় বাংলাদেশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহু উল্লেখযোগ্য সাফল্যে পেয়েছে। গণতন্ত্র, নারীর ক্ষমতায়ন, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন, নারী শিক্ষা বৃদ্ধি এবং শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন উল্লেখযোগ্য।
তিনি বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবকে সামনে রেখে বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে। তিনি দেশের ব্যাপক মানবসম্পদ ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যা বলেন
সম্মাননা অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব বিদেশী বন্ধুরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তাঁদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ এবং চিরঋণী। আজকের দিনটি মানবিক মূল্যবোধ ও মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার মর্মস্পর্শী আবেদনের গুরুত্ব তুলে ধরার; বন্ধুত্ব ও সৌহার্দের এবং সত্য ও ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামে অভূতপূর্ব বিজয় উদযাপনেরও দিন। দেরিতে হলেও সেই অবদানের স্বীকৃতি দিতে পেরে আজ আমরা নিজেদের ধন্য মনে করছি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া হচ্ছে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ। এর মাধ্যমে ইতিহাসের একটি অপ্রিয় অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটবে এবং জাতীয় সমঝোতার পথ উন্মুক্ত করবে, আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। জাতীয় সমঝোতার পথ উন্মুক্ত করবে।
বিদেশী যুদ্ধবন্ধু ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আজ থেকে ৪১ বছর আগে বাঙালী জাতি যখন গণহত্যার শিকার হয়েছিল, তখন আপনারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আপনাদের সেই সমর্থন প্রমাণ করেছিল যে আমাদের সংগ্রাম ছিল ন্যায্য। ন্যায়বিচার, মর্যাদা এবং সম্মান রক্ষার আর্তি আপনাদের কাছে পৌঁছেছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, গত ৪১ বছর আগে বাঙালী জাতি যখন মরণপণ মুক্তিযুদ্ধে লিপ্ত, সে সময় আপনারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, যাতে আমরা গণহত্যাকারী পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে মুখোমুখি দাঁড়ানোর শক্তি পাই। তিনি বলেন, আপনাদের সেই সমর্থন আমাদের সংগ্রামকে বহির্বিশ্বে একটি ভিন্নমাত্রার স্বীকৃতি এনে দেয়। আমাদের ন্যায্য দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আপনারা তা বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজরে এনেছিলেন। ফলে বহির্বিশ্ব আমাদের দুর্দশার কথা জানতে পারে। বুঝতে পারে আমাদের বেদনা।
বাঙালী জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া বিদেশী বন্ধুদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিদেশী মুক্তিযোদ্ধা বন্ধুরা বাংলাদেশের নিরীহ জনগণের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। আপনারা নিজ নিজ দেশের সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির ওপরও প্রভাব বিস্তার করতে সহায়তা করেন। আপনাদের নৈতিক, মানসিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, বৈষয়িক এবং সামরিক সাহায্য বাংলাদেশে আরও জীবনহানি এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অতীতের সেই নীতির প্রতি আমাদের অবিচল আস্থা পুনর্ব্যক্ত করছি। সমতা, গণতন্ত্র, সুষম উন্নয়ন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন হচ্ছে আমাদের আদর্শ এবং নীতি। তিনি বলেন, আমাদের সংবিধান প্রণয়নের সময়ও এসব আদর্শকে আমরা সমুন্নত রেখেছি। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসব আদর্শের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে তুলেছি। অতীতে অপরাধ করে শাস্তি না পাওয়ার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, আমরা তার অবসান ঘটিয়েছি। যে কোন অপকর্মের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছি।
সরকার নতুন করে সুষম উন্নয়নের জন্য আত্মনিয়োগ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সুষম উন্নয়ন সুনিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সমতা বিধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ। কিন্তু আমরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। চার দশক আগে ১৯৭১ সালে আমরা এ জন্যই মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার আগামী এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন পূরণে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
No comments