নবম জাতীয় সংসদের সদস্যদের ভূমিকা পর্যালোচনা

গবেষণা সম্পর্কে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি)-এর ব্যাখ্যা নবম জাতীয় সংসদের সদস্যদের ভূমিকা সম্পর্কে একটি পর্যালোচনা রিপোর্ট টিআইবি ১৪ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ করে।


সারাদেশে মানুষের মধ্যে রিপোর্টটি যথেষ্ট সাড়া জাগায়। প্রতিবেদন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভের আগ্রহও দেখা যায়। টিআইবির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে বিস্তৃত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
নিম্নে সংক্ষেপে তা উপস্থাপন করা হলো :


সএই গবেষণার পেছনে টিআইবির উদ্দেশ্য কী? এ গবেষণার মাধ্যমে কি সংসদকে অবমাননা করা হয়েছে?
য়নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে জাতীয় সংসদ কার্যকর করার সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ছিল। তবে নবম সংসদ গঠনের পর থেকে পরবর্তী তিন বছরে সংসদ সদস্যরা তাদের দায়িত্ব প্রত্যাশিত পর্যায়ে পালন করছেন না বলে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়। এ ছাড়াও সংসদের বাইরে সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন নেতিবাচক কার্যক্রম নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের উদ্দেশ্যে টিআইবি নিয়মিতভাবে গবেষণা করেছে এবং এর ধারাবাহিকতায় এই গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হয়, যেখানে সংসদ ও সংসদের বাইরে সংসদ সদস্যদের কার্যক্রমের ওপর একটি নিরপেক্ষ পর্যালোচনা করার প্রয়াস রয়েছে। এ গবেষণায় জাতীয় সংসদ সম্পর্কে কোনো প্রকার আলোচনা বা মন্তব্য করা হয়নি, শুধু সংসদ সদস্যদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হয়েছে। সুতরাং জাতীয় সংসদ অবমাননার প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক।
সগবেষণার প্রেক্ষাপট ও পদ্ধতি কী এবং কীভাবে সংসদ সদস্যদের নির্বাচন করা হয়েছে?
য়বিভিন্ন গবেষণায় (রোজেটি ও অন্যান্য, ২০১১; জাহান, ২০১১) বর্তমান সংসদ প্রত্যাশিত পর্যায়ে কার্যকর না হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্যের সংসদে নিয়মিত অনুপস্থিতি, আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় তাদের নূ্যনতম অংশগ্রহণ এবং সরকারের জবাবদিহিতা কার্যকরভাবে নিশ্চিত করতে না পারা। এ ছাড়াও সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়ম এবং অনেক ক্ষেত্রে এসব কর্মকাণ্ডের জন্য কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। প্রকাশিত সংবাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী (জানুয়ারি ২০০৯ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১২ পর্যন্ত) নবম সংসদের ১৮১ জন সদস্যের (সংসদ সদস্যদের ৫১.৭%) বিভিন্ন নেতিবাচক কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান গবেষণাটি হাতে নেওয়া হয় এবং টিআইবি কর্তৃক মাঠ পর্যায়ে তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়, নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সংসদ সদস্যরা ইতিবাচক কর্মকাণ্ডেও জড়িত হয়েছেন। তবে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের আনুপাতিক হার পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হারের চেয়েও অধিক। সম্পূর্ণ গবেষণাটি প্রাথমিক ও পরোক্ষ তথ্যের বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত। সংসদে অংশগ্রহণ সম্পর্কিত কার্যক্রম পর্যালোচনার ক্ষেত্রে টিআইবির পার্লামেন্ট ওয়াচ প্রতিবেদন থেকে তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। সংসদের বাইরের কার্যক্রম পর্যালোচনার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে দলনিরপেক্ষ এবং সচেতন জনগোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে দলগত আলোচনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আসনের সংসদ সদস্যদের ওপর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সারাদেশের সাতটি বিভাগের ৪২টি জেলায় ৪৪টি দলগত আলোচনার আয়োজন করা হয়, যেখানে মোট ৬০০ জন আলোচক অংশগ্রহণ করেন।...
সএ গবেষণায় ব্যবহৃত তথ্যের মান কীভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে? দলগত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের কীভাবে বাছাই করা হয়েছে?
য়এ গবেষণার অধীনে স্থানীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত দলগত আলোচনায় যারা অংশগ্রহণ করেছেন তারা প্রত্যেকেই নিজ এলাকায় শিক্ষিত, দলনিরপেক্ষ এবং সচেতন নাগরিক হিসেবে শ্রদ্ধাভাজন ও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি আলোচনায় সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং দলের সবার পক্ষ থেকে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি কোনো বিষয়ে কোনো আলোচক দ্বিমত পোষণ করে থাকলে তা-ও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং বিশ্লেষণের সময় এই ভিন্নমতকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। .. নির্ভরযোগ্য নয় এমন কোনো তথ্য আমলে নেওয়া হয়নি।
সপূর্বের একটি গবেষণার পদ্ধতি নিয়ে উচ্চ আদালত এর আগে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বর্তমান গবেষণার পদ্ধতি কতটুকু সঠিক?
য়যে কোনো সামাজিক গবেষণার পদ্ধতিতেই বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকে এবং কোনো একটি সামাজিক গবেষণার পদ্ধতিই যে চূড়ান্তভাবে সঠিক তা দাবি করা যায় না। তবে গবেষকের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয় যেন তথ্যের সত্যতা, যথার্থতা, নির্ভরযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হয়। বর্তমান গবেষণার ক্ষেত্রেও গবেষণার আওতা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ের (এ ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের কার্যক্রম পর্যালোচনা) ওপর তথ্য সংগ্রহ নিয়ে বিভিন্ন দিক (তথ্যের উদ্দেশ্য ও প্রাপ্যতা, তথ্যের উৎস, তথ্যের উৎকর্ষ, গবেষণার সময়, অর্থায়ন) বিবেচনা করে বর্তমান পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।
সএ গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য কি জাতীয় সংসদের সকল সদস্যের জন্য প্রযোজ্য?
য়এ গবেষণায় দৈবচয়ন পদ্ধতি ব্যবহার করে সংসদ সদস্যদের বাছাই করা হয়নি বলে গবেষণার বিশ্লেষণকে সাধারণীকরণ (মবহবৎধষরুবফ) করা যাবে না। অর্থাৎ এটি নবম সংসদের সব সদস্যের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য নয়, শুধু যেসব সংসদ সদস্য এর অন্তর্ভুক্ত তাদের ক্ষেত্রে এই বিশ্লেষণ প্রযোজ্য।
সজাতীয় সংসদের সদস্যদের ওপর কাজ করার অধিকার টিআইবির রয়েছে কি?
য়বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ। জনগণের পক্ষ থেকে টিআইবি এ গবেষণার উদ্যোগ নিয়েছে এবং এ ধরনের উদ্যোগ অন্য যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিতে পারে।
সএ গবেষণার মাধ্যমে টিআইবি কি বিরোধী দলের পক্ষে কাজ করছে?
য়টিআইবির কোনো কার্যক্রমই কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে পরিচালিত নয়। এ গবেষণাতেও সংসদ সদস্যদের ইতিবাচক ও নেতিবাচক কর্মকাণ্ড সমান গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে কোনো একটি বিশেষ দলের সংসদ সদস্য বেশি মাত্রায় ইতিবাচক বা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িত কিনা তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
সগণমাধ্যমের নিজস্ব এজেন্ডা আছে তা জেনেও টিআইবি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের ওপর কেন নির্ভর করে?
য়বর্তমান গবেষণাটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদননির্ভর নয়। মাঠ পর্যায়ে অনুষ্ঠিত দলগত আলোচনা থেকে প্রাপ্ত তথ্যই এখানে বিশ্লেষিত হয়েছে।
সএই গবেষণা প্রতিবেদন কি রাজনীতিকদের চরিত্র হননের উদ্দেশ্যে পরিচালিত? এই গবেষণা প্রতিবেদন কি আগামী নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করার অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে?
য়নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে জাতীয় সংসদ কার্যকর করার সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ছিল। এ ছাড়াও বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী ইশতেহারে একটি সর্বসম্মত আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের কথা বলা হয় এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তনের কথাও বলা হয়। এসব বিষয়ের প্রেক্ষিতে বর্তমান সংসদের সদস্যরা প্রকৃতপক্ষে তাদের দায়িত্ব কতটুকু পালন করছেন তার একটি নিরপেক্ষ পর্যালোচনা করাই এই গবেষণার উদ্দেশ্য।
সএ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৯৭ ভাগ সংসদ সদস্য নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িত, ৫৩ ভাগ ইতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িত। এর অর্থ কি যে ৪৪ ভাগ শুধু নেতিবাচক কর্মকাণ্ডেই জড়িত? এলাকায় কোনো ইতিবাচক কর্মকাণ্ডেই তারা নেই?
য়'৪৪ ভাগ সদস্য শুধু নেতিবাচক কর্মকাণ্ডেই জড়িত' এ রকম গাণিতিক হিসাব সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে করা এ গবেষণার উদ্দেশ্য নয়। একজন সংসদ সদস্য একই সঙ্গে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারেন এবং এ কারণেই এ গবেষণায় এভাবে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। কোনো একজন ব্যক্তিকে শুধু ভালো বা শুধু খারাপ এভাবে চিহ্নিত করা টিআইবির উদ্দেশ্য নয়।
সমাননীয় স্পিকার বলেছেন, তার এলাকায় ছয়জন সংসদ সদস্য আছেন, তিনি জানেন তারা সকলেই ভালো। টিআইবির প্রতিবেদন এই তথ্যের সঙ্গে মেলে কি?
য়টিআইবির প্রতিবেদনে কে ভালো বা খারাপ তা চিহ্নিত করার উদ্দেশ্য ছিল না। সংসদ সদস্যরা ব্যক্তিগতভাবে সবাই ভালো তা টিআইবি বিশ্বাস করে। তবে গবেষণার প্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট মানদণ্ড ও নির্দেশক অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা কী ধরনের কার্যক্রমে জড়িত তা পর্যালোচনার সঙ্গে ভালো বা খারাপের সম্পর্ক নেই। কারণ ভালো বা খারাপ এগুলো ব্যক্তিগত গুণাবলির মূল্যায়ন। মাননীয় স্পিকারের সঙ্গেও দ্বিমত করার কোনো অবকাশ নেই, যেহেতু তিনি ব্যক্তিগত গুণাবলির মূল্যায়ন করে বলেছেন যে তারা ভালো।
সটিআইবির প্রতিবেদন দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তথা সংসদকে কার্যকর ও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখবে কি? নাকি এটি দেশের গণতান্ত্রিক ধারা ধ্বংস করে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্র?
য়টিআইবির কার্যক্রমের অন্যতম উদ্দেশ্য দেশের রাজনীতিকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, যার জন্য প্রয়োজন এসব প্রতিষ্ঠানকে কার্যক্রম ও শক্তিশালী করা। এ কারণে টিআইবি জাতীয় সংসদ ও অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে কীভাবে আরও কার্যক্রম করা যায় তার ওপর নিয়মিত গবেষণা করে আসছে। টিআইবি আশা করে, এসব গবেষণায় প্রস্তাবিত সুপারিশ অনুসরণ করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে আরও কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। ...
সমাত্র ৬০০ জনের মতামতের ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন প্রকাশ কি সঠিক হয়েছে?
য়প্রথমেই পরিষ্কার করা প্রয়োজন যে, এই প্রতিবেদন শুধু ৬০০ জনের মতামতের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়নি। গবেষণার পদ্ধতিগত ভাষায় এই ৬০০ জন কর্তৃক প্রদত্ত তথ্য ছিল প্রাথমিক তথ্য (চৎরসধৎু উধঃধ), যার মাধ্যমে জাতীয় দৈনিকগুলো থেকে পূর্বে সংকলিত পরোক্ষ তথ্য (ঝবপড়হফধৎু উধঃধ) এক ধরনের যাচাই (ঠধষরফধঃরড়হ) হয়েছে। পত্রিকা সূত্রে প্রাপ্ত সংবাদ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নবম জাতীয় সংসদের মোট ১৮১ জন সদস্যের (৩৫০ জনের মধ্যে ৫১.৭%) বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। এসব সদস্যের খুব কমসংখ্যক এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বা আদালত/প্রেস কাউন্সিলের শরণাপন্ন হয়েছেন। মাঠ পর্যায়ে ৪২টি জেলায় মোট ৪৪টি দলগত আলোচনার মাধ্যমে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়। প্রাথমিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পত্রিকায় প্রকাশিত হারের চেয়েও অনেক অধিক হারে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগ এসেছে (১৪৯ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ৯৭%; এদের মধ্যে পত্রিকায় অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে ৫৭.৭% সম্পর্কে)।
সকারা এই তথ্য প্রদান করেছেন?
য়সংবাদপত্রে প্রাপ্ত সংসদ সদস্যদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত তথ্য গবেষণার পদ্ধতি অনুসরণ করে যাচাই করার জন্য সারাদেশে ৪২টি জেলায় ৪৪টি দলগত আলোচনার মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে মোট ৬০০ জন ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। যাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয় তাদের নিম্নলিখিত যোগ্যতার/নির্দেশকের ভিত্তিতে বাছাই করা হয়। তাদের তথ্য প্রদান করার ক্ষমতা রয়েছে কিনা? এ ক্ষেত্রে বিবেচ্য হলো :
তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা; সমাজের বিভিন্ন স্তরে তারা মেলামেশা করে কিনা; তাদের দলনিরপেক্ষতা আছে কিনা; তারা সমাজে সচেতন বলে পরিচিত কিনা; তারা তথ্য জানেন কিনা।
উল্লেখ্য, যথাযথ তথ্য জানা নেই বলে তথ্যদাতারা তাদের এলাকার মোট ৭১টি আসনের তথ্য প্রদান করেননি। শুধু নিশ্চিত হয়ে তথ্য প্রদান করায় প্রাপ্ত আসনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৯।
সদলগত আলোচনার মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যটুকু গ্রহণযোগ্য?
য়দলগত আলোচনা সামাজিক গবেষণায় তথ্য সংগ্রহের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে সাধারণত একটি সমজাতীয় দলের (যড়সড়মবহড়ঁং মৎড়ঁঢ়) চিন্তা, মতামত, সন্তুষ্টি, তথ্য (রহভড়ৎসধঃরড়হ), মনোভাব (ধঃঃরঃঁফব), আচরণ (ঢ়ৎধপঃরপব), সংঘটিত ঘটনা (ভধপঃ) প্রভৃতি বিষয়ে তথ্য নেওয়া সম্ভব। দলগত আলোচনার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য যখন অপর কোনো পদ্ধতিতে (বর্তমান ক্ষেত্রে যেমন প্রায় তিন বছর সময়কালে জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণের মাধ্যমে) প্রাপ্ত তথ্যের দ্বারা প্রমাণসিদ্ধ হয়, তখন তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ খুব একটা থাকে না।
সপ্রাপ্ত তথ্যের সাহায্যে কি সকল সংসদ সদস্য সম্পর্কে সাধারণীকরণ করা সম্ভব?
য়টিআইবি প্রতিবেদন প্রকাশের সময়েই বলেছে, এই তথ্য দ্বারা সকল সংসদ সদস্য সম্পর্কে সাধারণীকরণ করা যাবে না। অর্থাৎ প্রাপ্ত ফলাফল শুধু ১৪৯ জন সদস্যের জন্যই প্রযোজ্য। কিন্তু গণমাধ্যমের উপস্থাপনার পদ্ধতির কারণে এমন বক্তব্য এসেছে যে, টিআইবির গবেষণা অনুযায়ী ৯৭% সংসদ সদস্য নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িত।
সসংসদ সদস্যের ৫৩% সরাসরি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত?
য়প্রথমেই বলা প্রয়োজন, এটি গণমাধ্যমে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, টিআইবির প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়নি। গবেষণাভুক্ত ১৪৯ জন সদস্যের মধ্যে তথ্যদাতাদের মতে শতকরা ৯৭ ভাগ নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছেন। এই ৯৭ ভাগের মধ্যে ৭৬.৬% অর্থাৎ ১১১ জন অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত বলে জানা গেছে। এই ১১১ জনের মধ্যে ৫৩.৫% অর্থাৎ মোট প্রায় ৫৯ জন নিজেরাই সরাসরি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। অর্থাৎ ১৪৯ জনের মধ্যে ৩৯.৬% সরাসরি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে তথ্যদাতারা জানিয়েছেন।
সএই গবেষণার ফলে সকল সদস্যকে হেয় করা হয়েছে কি? কোনো ব্যক্তি বা সংসদ সদস্য অপমানিত হওয়ার কারণ রয়েছে কি?
য়টিআইবির এই গবেষণার দ্বারা সকল সংসদ সদস্য হেয় বোধ করার কোনো কারণ প্রকৃতপক্ষে নেই। টিআইবি তার গবেষণার মাধ্যমে বর্তমান ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো তুলে ধরেছে এবং প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এই ব্যবস্থার অবকাশে কোনো কোনো সদস্য নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত আছেন বলে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সকল সদস্য সম্পর্কে অন্তত এই গবেষণা থেকে ঢালাওভাবে এ কথা বলার সুযোগ নেই।
সসংসদ সদস্যদের ৯৭% শতাংশ 'খারাপ' মানে ৩% ভাগ অর্থাৎ মাত্র ৯ জন ভালো?
য়গণমাধ্যমের ভুলভাবে উপস্থাপনার জন্য ৯৭% শতাংশ বলতে সকল সংসদ সদস্যের ৯৭% শতাংশ এ ধরনের ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে টিআইবির গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ১৪৯ জন সদস্যের মধ্যে ৯৭% নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িত। যদি সকল সদস্য সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয় তাহলে অনুরূপ ফলাফল নাও পাওয়া যেতে পারে।
সইতিবাচক কাজ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
য়সংসদ সদস্য কর্তৃক ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের তালিকায় নতুন অবকাঠামো নির্মাণ, ভূমি বরাদ্দ, অনুদান, সেতু নির্মাণ, সংস্কার প্রকল্প অনুমোদন, বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং স্থানীয় উন্নয়নমূলক কাজ অন্যতম। এছাড়া নদী ভাঙনরোধ, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবদান, পরিবেশ রক্ষা, কর্মসংস্থান এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক কার্যক্রম হিসেবে গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
সনেতিবাচক কাজ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
য়নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের দীর্ঘ তালিকা অনুযায়ী স্থানীয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার, স্থানীয় উন্নয়ন বরাদ্দ নিজ কাজে ব্যবহার, বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হওয়া উল্লেখযোগ্য।
সঅপরাধমূলক কাজ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
য়অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বলতে বোঝায় হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ, দখল (সরকারি খাস জমি, নদী, খাল, জলমহাল, পুকুর), চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, প্রতারণা ইত্যাদি।
 

No comments

Powered by Blogger.