হংকং থেকে রাশিয়ায় স্নোডেন
মার্কিন
সরকারের নজরদারির কথা ফাঁস করে
বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলা এডওয়ার্ড স্নোডেন গতকাল রোববার হংকং থেকে রাশিয়া
পৌঁছেছেন। রুশ প্রচারমাধ্যমে এ কথা বলা হয়েছে। আরোহীদের মধ্যে স্নোডেন
আছেন বলে মনে করা হচ্ছিল, এমন একটি বিমান গতকাল শেরেমিতিয়েভো আন্তর্জাতিক
বিমানবন্দরে অবতরণ করে। মার্কিন সরকার তাঁর প্রত্যর্পণের আবেদন-প্রক্রিয়া
শুরু করেছে মর্মে খবর প্রচারিত হওয়ার পরদিনই এ ঘটনা ঘটল।
মস্কোর শেরেমিতিয়েভো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সমবেত সাংবাদিকেরা বলেছেন,
বিমানটি অবতরণের পর তাৎক্ষণিকভাবে তারা স্নোডেনের কোনো চিহ্ন দেখেননি। তবে
রুশ প্রচারমাধ্যমে বলা হয়েছে, তাঁকে হয়তো ঝটপট গাড়িতে করে কোনো একটি
বিদেশি দূতাবাসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর আগে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা
সংস্থা ইতার তাস একটি বিমান সংস্থার বরাত দিয়ে জানায়, ‘স্নোডেন নামের
একজন যাত্রী হংকং থেকে এসইউ২১৩ ফ্লাইটে রোববার মস্কো পৌঁছাবেন। মঙ্গলবার
এসইউ ১৫০ ফ্লাইটে তিনি কিউবার রাজধানী হাভানার উদ্দেশ্যে মস্কো ছেড়ে
যাবেন। একই দিন তাঁর হাভানা থেকে স্থানীয় ফ্লাইটে ভেনেজুয়েলার কারাকাসে
যাওয়ার কথা।’ হংকং কর্তৃপক্ষ গতকাল স্নোডেনের হংকং ত্যাগের বিষয়টি
নিশ্চিত করে বলেছিল, আইনি বাধা না থাকায় মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা
সংস্থার (সিআইএ) সাবেক কর্মী স্নোডেনকে আটকানো হয়নি। হংকং কর্তৃপক্ষ এক
বিবৃতিতে বলেছে, ওয়াশিংটন যেসব তথ্যের ভিত্তিতে স্নোডেনকে প্রত্যর্পণ বা
গ্রেপ্তারের অনুরোধ জানিয়েছে, তা পুরোপুরি আইনি-কাঠামোকে সমর্থন করে না।
তবে রাশিয়ার সরকার ওই সময় বলে, স্নোডেনের মস্কো রওনা দেওয়ার ব্যাপারে
তারা কিছু জানে না।
যুক্তরাষ্ট্র স্নোডেনকে ওয়াশিংটনের হাতে প্রত্যর্পণ করতে হংকংয়ের প্রতি
আহ্বান জানিয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিরও অনুরোধ করে
দেশটি। হংকংয়ের স্থানীয় দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এক প্রতিবেদনে
জানায়, স্নোডেন রোববার মস্কোর উদ্দেশে হংকং ছেড়েছেন। আপাতত তিনি মস্কো
যাচ্ছেন। তবে তাঁর চূড়ান্ত লক্ষ্য হতে পারে ইকুয়েডর বা আইসল্যান্ড। হংকং
বলেছে, এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র যেসব তথ্য সরবরাহ করেছে, তার ভিত্তিতে
স্নোডেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। এমনটা করার আইনি কোনো
ভিত্তি নেই। তাই স্নোডেন মস্কোর উদ্দেশে হংকং ছেড়ে গেলেও তাঁকে বাধা
দেওয়া হয়নি। একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা গত শনিবার নাম প্রকাশ না
করার শর্তে বলেন, স্নোডেনকে প্রত্যর্পণে হংকং দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে তা
ওয়াশিংটন-হংকংয়ের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে। একই সঙ্গে আইনের
শাসনের প্রতি হংকংয়ের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। মার্কিন জাতীয়
নিরাপত্তা উপদেষ্টা টম ডনিলন সিবিএস নিউজকে বলেন, ‘আশা করি, হংকং স্নোডেনকে
প্রত্যর্পণ করবে এবং ওয়াশিংটন তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করতে পারবে।’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একজন মুখপাত্র বলেন, স্নোডেন
কোথায় আছেন, তা তাঁরা জানেন না। তাঁর মস্কোর উদ্দেশে রওনা হওয়ার
ব্যাপারেও তাঁরা অবগত নন। যুক্তরাষ্ট্রই খলনায়ক: তথ্যপ্রযুক্তি খাতে
গুপ্তচরবৃত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে বড় খলনায়ক বলে মন্তব্য করেছে
চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া। সর্বশেষ হংকংয়ের স্থানীয়
পত্রিকা সানডে মর্নিং পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্নোডেন অভিযোগ করেন,
মার্কিন গোয়েন্দারা চীনের মুঠোফোন কোম্পানিগুলোর কম্পিউটার হ্যাক করে লাখ
লাখ তথ্য সংগ্রহ করেছে। তারা বেইজিংয়ে টিসিংগুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের
কম্পিউটারও হ্যাক করে, যা চীনের ছয়টি ইন্টারনেট ‘নেটওয়ার্ক মেরুদণ্ডের’
একটি। এএফপি, রয়টার্স।
No comments