পদ ৯১৫টি, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর তদবির ৪৩৬ জনের জন্য by শিশির মোড়ল

পদ ৯১৫টি। ‘শক্ত তদবির’ আছে এক হাজার ৬০০ জনের জন্য। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীই তদবির করেছেন ৪৩৬ জনের জন্য। তদবিরের চাপে প্রতিযোগিতামূলক এই পরীক্ষার ফল প্রকাশেও দেরি হচ্ছে।
কাগজপত্রে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, নওগাঁ, নড়াইল, যশোর, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও নোয়াখালী—এই নয় জেলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর ২৮ ধরনের ৯১৫টি পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় গত বছরের ২২ নভেম্বর। আবেদনপত্র জমা পড়ে এক লাখের কিছু বেশি। বাছাইয়ের পর ৭৭ হাজার প্রার্থীকে পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। গত ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় প্রায় ৬৬ হাজার প্রার্থী অংশ নেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে. স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মজিবুর রহমান ফকির একাই ৪৩৬ জনের তালিকা দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে। স্বাস্থ্য সহকারী, এমএলএসএস ও ‘বিভিন্ন’ পদের প্রার্থীর নাম, ঠিকানা, রোল নম্বর উল্লেখ করে মহাপরিচালককে তিনি লিখেছেন, ‘নিম্নে বর্ণিত প্রার্থীদেরকে নিয়োগের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশসহ প্রেরণ করা হলো।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রী, সাংসদ ও রাজনীতিবিদদের এক-দুজন প্রার্থীর জন্য সুপারিশ করা অনেক দিন থেকেই রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের নামের তালিকা একেবারে ছক করে পাঠানোতে তাঁরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। চাপও বোধ করছেন।
৪৩৬ জনের তালিকা দেওয়া প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী মজিবুর রহমান ফকির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি একজন প্রতিমন্ত্রী ও জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি। মানুষের চাকরির জন্য আমি তো সুপারিশ করতেই পারি।’ তিনি বলেন, ‘বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকার একাধিক সাংসদ আমার মাধ্যমে সুপারিশ করেছেন বলে সুপারিশের তালিকা দীর্ঘ হয়েছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মো. সিফায়েত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, একাধিক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সাংসদ ও আমলারা প্রার্থীদের জন্য সুপারিশ পাঠিয়েছেন। প্রত্যেকেই বলছেন, তাঁর প্রার্থীর যেন চাকরি হয়। এ রকম এক হাজার ৬০০ প্রার্থীর সুপারিশ জমা পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের জন্য শক্তিশালী তদবির চলছে।
এই নিয়োগ পরীক্ষার ফল বের হতে ‘প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশি সময় লাগছে’ স্বীকার করে নিয়োগ-সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যসচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. শাহনেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, একাধিক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এই কমিটির সদস্য। তাঁদের একত্র করা কিছুটা কঠিন। তবে দু-এক দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ করা হবে। তিনি দাবি করেন, বিভিন্ন জনের কাছ থেকে আসা সুপারিশ পরীক্ষার ফলাফলের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।

No comments

Powered by Blogger.