শুক্রাবাদে ভবনে আগুন-বাঁচতে পারল না শিশুটি

পাঁচ বছরের শিশু আলিফ। মা-বাবার সঙ্গে থাকত রাজধানীর শুক্রাবাদে, ৯১/৫ বি ভবনের চারতলায়। পড়ত নিউ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে, শিশু শ্রেণীতে।
শনিবার শেষ হয় তার স্কুলের পরীক্ষা।
আর গতকাল রবিবার তাকে একা বাসায় রেখে বড় বোন মীমকে স্কুল থেকে আনতে যান মা সীমা আক্তার। যাওয়ার সময় বাইরের দরজায় লাগিয়ে যান তালা। আর সেই তালাই যেন কাল হলো আলিফের জন্য। দুপুরে তালাবদ্ধ ওই ফ্ল্যাটে আগুন লাগে। মুহূর্তেই সেই আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে পুরো ফ্ল্যাটে। প্রাণ বাঁচাতে শিশু আলিফ দৌড়ে ঢুকে যায় বাথরুমে। লাগিয়ে দেয় বাথরুমের দরোজা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি, আগুনের নিষ্ঠুরতার কাছে হার মানতে হলো তাকে।
স্থানীয় দোকানি বশির উদ্দিন কালের কণ্ঠকে জানান, ওই বাসা থেকে আগুনের ধোঁয়া বের হতে দেখে তাঁরা ফায়ার সার্ভিস অফিসে খবর দেন। কিন্তু বাসায় ঢোকার পথ সরু হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের পৌঁছাতে দেরি হয়। ফায়াস সার্ভিসকর্মীরা যখন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন, ততক্ষণে ওই বাসার কয়েকটি ফ্ল্যাটের জিনিসপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আর তালাবদ্ধ ওই ফ্ল্যাটের বাথরুমের ভেতর তখনো আটকা পড়ে ছিল আগুনে ঝলসে যাওয়া আলিফ।
ওই ভবনের বাসিন্দারা জানান, আগুন লাগার বেশ কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভেতরে আলিফের থাকার কথা জানান তার মা। তখন ফায়ার সার্ভিস ও আশপাশের লোকজন সব রুমে খোঁজার পর বাথরুমের দরজা ভেঙে গুরুতর আহত অবস্থায় আলিফকে উদ্ধার করেন। দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আলিফদের প্রতিবেশী আবিদা সুলতানা জানান, ওই ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ থাকায় তাৎক্ষণিক ভেতরে কেউ যেতে পারেনি। আর তালাবদ্ধ কক্ষে কেউ থাকতে পারে এমন ধারণাও ছিল না কারো।
ভবনের মালিক রুবেল জানান, জেনেটিক প্লাজায় একটি কাপড়ের দোকানে সেলসম্যানের কাজ করেন আলিফের বাবা রেজু মিয়া। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে রেজু মিয়া ও তাঁর স্ত্রী সীমা আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের অপারেটর নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, ফায়ার সার্ভিসের মোহাম্মদ ইউনিট থেকে দুটি গাড়ি গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। গ্যাসের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে তিনি জানান।

No comments

Powered by Blogger.