লিমনের ওপর নির্যাতন লিমনের মামলা নিয়ে এ কেমন মধ্যস্থতা by রোজিনা ইসলাম ও আক্কাস সিকদার
র্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমন হোসেনের
পক্ষে-বিপক্ষে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহারে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন
করছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়্যারম্যান মিজানুর রহমান।
গতকাল
রোববার লিমন এবং তাঁর মা হেনোয়ারা বেগম ও বাবা তোফাজ্জেল হোসেনকে
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান তাঁর কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে এ ব্যাপারে কথা
বলেন। এ সময় তিনি র্যাবের করা মামলা প্রত্যাহারের স্বার্থে র্যাবের
বিরুদ্ধে লিমনের মায়ের করা মামলা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করেন।
অবশ্য এর ২২ দিন আগে গত ৩০ মে লিমনের বিরুদ্ধে র্যাবের করা দুটি মামলা প্রত্যাহারের জন্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্যাডে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত চিঠি দিয়েছেন মিজানুর রহমান। তাতে তিনি মন্ত্রীকে এ-ও লিখেছেন যে ‘আপনার সাথে ব্যক্তিগত আলাপের প্রেক্ষিতে আপনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ তিনি অবশ্য এ চিঠি পাঠানোর কথা লিমন বা তাঁর মা-বাবাকে গতকাল পর্যন্ত বলেননি।
জানতে চাইলে মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, লিমনের বিরুদ্ধে করা মামলা দুটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক বিধায় মানবাধিকার কমিশন প্রথম থেকেই তা প্রত্যাহারের জন্য দাবি জানিয়ে আসছে। একাধিকবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সুপারিশও করেছেন।
এ ক্ষেত্রে গুলিবর্ষণকারী র্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে লিমনের মায়ের মামলা প্রত্যাহার করতে হবে কি না—এ প্রশ্নে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিষয়টি আসলে বিনিময় নয়, তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ধরনের কথা আসতে পারে।’ মানবাধিকার কমিশন এ ক্ষেত্রে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করছে কি না, জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘মধ্যস্থতা করা মানবাধিকার কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত। এটা করতে পারলে তা অবশ্যই কমিশনের সফলতা বলে বিবেচিত হবে।’
১৩ জুন ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে লিমনের বাঁ কানে অস্ত্রোপচার হয়। এ সময় মিজানুর রহমান মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন এবং লিমন ও তাঁর মাকে দেখা করার জন্য বলেন। গতকাল দুপুর ১২টায় লিমন, তাঁর মা ও বাবা মগবাজার মানবাধিকার কমিশনে গিয়ে দেখা করেন।
লিমন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিজান স্যার প্রথমে আমাদের মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। একপর্যায় তিনি বলেন, ‘দুটি মামলায় প্রতি মাসে আদালতে হাজিরা দেওয়া অনেক ঝামেলার কাজ, তারপর অর্থও খরচ হয়। তোমরা যদি রাজি থাকো তাহলে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করতে পারি লিমনের বিরুদ্ধে র্যাবের করা দুটি মামলা প্রত্যাহার করতে। সে ক্ষেত্রে তোমাদেরও মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে র্যাবের নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করার জন্য।’
লিমনের মা হোনোয়ারা বেগম বলেন, ‘মিজান স্যার বলেছেন, উভয় পক্ষের মামলা যদি প্রত্যাহার হয়ে যায়, তাহলে লিমনের স্বাভাবিক জীবনযাপন সহজ হবে। ওর জন্য একটি সরকারি অথবা বেসরকারি চাকরির জন্য কোথাও অনুরোধ করতে পারব। এমনকি মামলা প্রত্যাহারের পর প্রধানমন্ত্রীও লিমনকে ডেকে নিয়ে কোনো সহায়তা করতে পারেন। র্যাবের সঙ্গে যুদ্ধ করে পারা যাবে না। কারণ, রাষ্ট্র তাদের পক্ষে। রাষ্ট্রের সঙ্গে লড়াই করে টেকা যায় না।’
এর আগে গত বছরের ২৪ অক্টোবর ঝালকাঠির তৎকালীন জেলা প্রশাসক অশোক কুমার বিশ্বাসও র্যাবের সঙ্গে আপস করার জন্য প্রায় একই রকম প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ কথা উল্লেখ করে হেনোয়ারা বেগম বলেন, ‘ঘটনার আড়াই বছর পর হঠাৎ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান দোষী র্যাব সদস্যদের বিচার না করে মিট-মীমাংসার কথা বলবেন, তা আমি ভাবতেও পারিনি।’
লিমনের বাবা তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘মনে করেছিলাম, লিমনের পা হারানোর বিচার হয়তো একদিন পাব। মিজানুর রহমান স্যারের প্রস্তাবের পর বোঝলাম এ দেশে গরিবের জন্য বিচার নাই। সাভারের যুবক হত্যার দায়ে যদি পুলিশের এসআই গ্রেপ্তার হতে পারে, তাহলে র্যাব অন্যায় করলে বিচার হবে না কেন?’
ছেলের ওপর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নিষ্ঠুরতার বিচার চেয়ে দরিদ্র বাবার এ আকুতি সম্পর্কে প্রথম আলো থেকে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, ‘আদালতে বিচার পেতে হলে সাক্ষী-সাবুদ দিয়ে তা প্রমাণ করতে হবে। তা খুবই কঠিন এবং সময়ের ব্যাপার। তবে লিমনকে হয়তো পায়ের বদলে পা দেওয়া যাবে না। কিন্তু তাকে ধাপে ধাপে সহযোগিতা করা যেতে পারে। কমিশন তাকে সব সময় সহায়তা করবে।’
মানবাধিকার কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ মে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়্যারম্যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে একটি অনানুষ্ঠানিক চিঠি (ডিও লেটার) লিখেন। ১৩ জুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরে এ চিঠি পৌঁছে। চিঠিটি নথিভুক্ত করার জন্য ২০ জুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। আজ মন্ত্রীর কাছে এ-সংক্রান্ত ফাইল উত্থাপনের কথা রয়েছে।
চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করে গতকাল রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানবাধিকার কমিশন চেয়্যারম্যান লিমনের মামলা প্রত্যাহারের ব্যাপারে যে চিঠি দিয়েছেন, সে বিষয়ে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। আশা করি, দ্রুত এ ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা জানান, র্যাবের বিরুদ্ধে লিমনের মায়ের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা না হলে লিমনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের ব্যাপারে কিছুটা ধীরগতি হবে। র্যাবের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের জন্য লিমনকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এ ব্যাপারে মানবাধিকার কমিশনের চেয়্যারম্যান মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছেন বলেও ওই কর্মকর্তা জানান।
মানবাধিকার কমিশনের চিঠিতে বলা হয়, লিমনের প্রতি নির্মম আচরণ ও তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে র্যাবের ভাবমূর্তি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, একইসঙ্গে রাষ্ট্রের মানবাধিকার ভূমিকা নিয়েও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। এ ছাড়া উচ্চ আদালত লিমনের চিকিৎসার বিষয়ে যে আদেশ দিয়েছেন, তার কোনো বাস্তবায়নও হয়নি।
২০১১ সালের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুর উপেজলার সাতুরিয়া গ্রামে র্যাবের গুলিতে আহত হন লিমন। এ কারণে ওই বছর তিনি আর এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি। লিমনের অভিযোগ, বাড়ির পাশের মাঠ থেকে গরু আনতে গেলে র্যাবের সদস্যরা তাঁকে ধরে পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করেন। পরে গ্রামবাসী চাঁদা তুলে তাঁর চিকিৎসার খরচ চালান। একপর্যায়ে বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে লিমনকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকেরা লিমনের জীবন বাঁচাতে তাঁর বাম পা ঊরুর নিচ থেকে কেটে ফেলেন।
এ ঘটনার পর বরিশালে র্যাব-৮-এর তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) লুৎফর রহমান বাদী হয়ে লিমনসহ আটজনের নামে রাজাপুর থানায় দুটি মামলা করেন। একটি অস্ত্র আইনে, অপরটি সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে। মামলা দুটিতে লিমনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে র্যাবের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে লিমনের মায়ের করা মামলা পুলিশ নেয়নি। পরে আদালতের নির্দেশে পুলিশ মামলাটি নেয়। কিন্তু পরে মামলাটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে শেষ করে দিয়েছে পুলিশ। এ চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করলে সেটাও খারিজ করে দেন ঝালকাঠির ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। অবশ্য ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এ আদেশের বিরুদ্ধে জজ আদালতে রিভিশন দায়ের করেছেন হেনোয়ারা বেগম, যা এখনো চলছে।
অবশ্য এর ২২ দিন আগে গত ৩০ মে লিমনের বিরুদ্ধে র্যাবের করা দুটি মামলা প্রত্যাহারের জন্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্যাডে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত চিঠি দিয়েছেন মিজানুর রহমান। তাতে তিনি মন্ত্রীকে এ-ও লিখেছেন যে ‘আপনার সাথে ব্যক্তিগত আলাপের প্রেক্ষিতে আপনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ তিনি অবশ্য এ চিঠি পাঠানোর কথা লিমন বা তাঁর মা-বাবাকে গতকাল পর্যন্ত বলেননি।
জানতে চাইলে মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, লিমনের বিরুদ্ধে করা মামলা দুটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক বিধায় মানবাধিকার কমিশন প্রথম থেকেই তা প্রত্যাহারের জন্য দাবি জানিয়ে আসছে। একাধিকবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সুপারিশও করেছেন।
এ ক্ষেত্রে গুলিবর্ষণকারী র্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে লিমনের মায়ের মামলা প্রত্যাহার করতে হবে কি না—এ প্রশ্নে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিষয়টি আসলে বিনিময় নয়, তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ধরনের কথা আসতে পারে।’ মানবাধিকার কমিশন এ ক্ষেত্রে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করছে কি না, জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘মধ্যস্থতা করা মানবাধিকার কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত। এটা করতে পারলে তা অবশ্যই কমিশনের সফলতা বলে বিবেচিত হবে।’
১৩ জুন ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে লিমনের বাঁ কানে অস্ত্রোপচার হয়। এ সময় মিজানুর রহমান মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন এবং লিমন ও তাঁর মাকে দেখা করার জন্য বলেন। গতকাল দুপুর ১২টায় লিমন, তাঁর মা ও বাবা মগবাজার মানবাধিকার কমিশনে গিয়ে দেখা করেন।
লিমন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিজান স্যার প্রথমে আমাদের মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। একপর্যায় তিনি বলেন, ‘দুটি মামলায় প্রতি মাসে আদালতে হাজিরা দেওয়া অনেক ঝামেলার কাজ, তারপর অর্থও খরচ হয়। তোমরা যদি রাজি থাকো তাহলে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করতে পারি লিমনের বিরুদ্ধে র্যাবের করা দুটি মামলা প্রত্যাহার করতে। সে ক্ষেত্রে তোমাদেরও মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে র্যাবের নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করার জন্য।’
লিমনের মা হোনোয়ারা বেগম বলেন, ‘মিজান স্যার বলেছেন, উভয় পক্ষের মামলা যদি প্রত্যাহার হয়ে যায়, তাহলে লিমনের স্বাভাবিক জীবনযাপন সহজ হবে। ওর জন্য একটি সরকারি অথবা বেসরকারি চাকরির জন্য কোথাও অনুরোধ করতে পারব। এমনকি মামলা প্রত্যাহারের পর প্রধানমন্ত্রীও লিমনকে ডেকে নিয়ে কোনো সহায়তা করতে পারেন। র্যাবের সঙ্গে যুদ্ধ করে পারা যাবে না। কারণ, রাষ্ট্র তাদের পক্ষে। রাষ্ট্রের সঙ্গে লড়াই করে টেকা যায় না।’
এর আগে গত বছরের ২৪ অক্টোবর ঝালকাঠির তৎকালীন জেলা প্রশাসক অশোক কুমার বিশ্বাসও র্যাবের সঙ্গে আপস করার জন্য প্রায় একই রকম প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ কথা উল্লেখ করে হেনোয়ারা বেগম বলেন, ‘ঘটনার আড়াই বছর পর হঠাৎ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান দোষী র্যাব সদস্যদের বিচার না করে মিট-মীমাংসার কথা বলবেন, তা আমি ভাবতেও পারিনি।’
লিমনের বাবা তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘মনে করেছিলাম, লিমনের পা হারানোর বিচার হয়তো একদিন পাব। মিজানুর রহমান স্যারের প্রস্তাবের পর বোঝলাম এ দেশে গরিবের জন্য বিচার নাই। সাভারের যুবক হত্যার দায়ে যদি পুলিশের এসআই গ্রেপ্তার হতে পারে, তাহলে র্যাব অন্যায় করলে বিচার হবে না কেন?’
ছেলের ওপর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নিষ্ঠুরতার বিচার চেয়ে দরিদ্র বাবার এ আকুতি সম্পর্কে প্রথম আলো থেকে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, ‘আদালতে বিচার পেতে হলে সাক্ষী-সাবুদ দিয়ে তা প্রমাণ করতে হবে। তা খুবই কঠিন এবং সময়ের ব্যাপার। তবে লিমনকে হয়তো পায়ের বদলে পা দেওয়া যাবে না। কিন্তু তাকে ধাপে ধাপে সহযোগিতা করা যেতে পারে। কমিশন তাকে সব সময় সহায়তা করবে।’
মানবাধিকার কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ মে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়্যারম্যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে একটি অনানুষ্ঠানিক চিঠি (ডিও লেটার) লিখেন। ১৩ জুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরে এ চিঠি পৌঁছে। চিঠিটি নথিভুক্ত করার জন্য ২০ জুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। আজ মন্ত্রীর কাছে এ-সংক্রান্ত ফাইল উত্থাপনের কথা রয়েছে।
চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করে গতকাল রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানবাধিকার কমিশন চেয়্যারম্যান লিমনের মামলা প্রত্যাহারের ব্যাপারে যে চিঠি দিয়েছেন, সে বিষয়ে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। আশা করি, দ্রুত এ ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা জানান, র্যাবের বিরুদ্ধে লিমনের মায়ের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা না হলে লিমনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের ব্যাপারে কিছুটা ধীরগতি হবে। র্যাবের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের জন্য লিমনকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এ ব্যাপারে মানবাধিকার কমিশনের চেয়্যারম্যান মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছেন বলেও ওই কর্মকর্তা জানান।
মানবাধিকার কমিশনের চিঠিতে বলা হয়, লিমনের প্রতি নির্মম আচরণ ও তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে র্যাবের ভাবমূর্তি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, একইসঙ্গে রাষ্ট্রের মানবাধিকার ভূমিকা নিয়েও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। এ ছাড়া উচ্চ আদালত লিমনের চিকিৎসার বিষয়ে যে আদেশ দিয়েছেন, তার কোনো বাস্তবায়নও হয়নি।
২০১১ সালের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুর উপেজলার সাতুরিয়া গ্রামে র্যাবের গুলিতে আহত হন লিমন। এ কারণে ওই বছর তিনি আর এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি। লিমনের অভিযোগ, বাড়ির পাশের মাঠ থেকে গরু আনতে গেলে র্যাবের সদস্যরা তাঁকে ধরে পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করেন। পরে গ্রামবাসী চাঁদা তুলে তাঁর চিকিৎসার খরচ চালান। একপর্যায়ে বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে লিমনকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকেরা লিমনের জীবন বাঁচাতে তাঁর বাম পা ঊরুর নিচ থেকে কেটে ফেলেন।
এ ঘটনার পর বরিশালে র্যাব-৮-এর তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) লুৎফর রহমান বাদী হয়ে লিমনসহ আটজনের নামে রাজাপুর থানায় দুটি মামলা করেন। একটি অস্ত্র আইনে, অপরটি সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে। মামলা দুটিতে লিমনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে র্যাবের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে লিমনের মায়ের করা মামলা পুলিশ নেয়নি। পরে আদালতের নির্দেশে পুলিশ মামলাটি নেয়। কিন্তু পরে মামলাটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে শেষ করে দিয়েছে পুলিশ। এ চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করলে সেটাও খারিজ করে দেন ঝালকাঠির ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। অবশ্য ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এ আদেশের বিরুদ্ধে জজ আদালতে রিভিশন দায়ের করেছেন হেনোয়ারা বেগম, যা এখনো চলছে।
No comments