বিলম্বিত সিদ্ধান্তেই গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বিতর্ক'

সরকারের বিলম্বিত সিদ্ধান্তের কারণে নোবেলজয়ী গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক কূটনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোহাম্মদ জমির। তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে ২০ লাখ মহিলা সদস্য জড়িত।
এটাকে রাজনৈতিক রং লাগানো উচিত না। এতে প্রতিষ্ঠানটির অগ্রযাত্রা ব্যাহত হতে পারে। তাই গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে কাউকে মন্তব্য করার বিষয়ে আরো দায়িত্বশীল হওয়া দরকার। তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাত বছর গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদটি ধরে না রেখে সাবেক ডিএমপি খালেদ শামসকে এমডির দায়িত্ব দিলে এখনকার এ বিতর্ক এড়াতে পারতেন।
শনিবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের সংবাদ পর্যালোচনাভিত্তিক টক শো নিউজ অ্যান্ড ভিউজ অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। সাংবাদিক মনজুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. মনিরুজ্জামান মিঞা।
আলোচনার শুরুতে সঞ্চালক মনজুরুল ইসলাম আলোচকদের কাছে জানতে চান, নোবেলজয়ী গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে গতকাল ৫৫৭ জন শিক্ষক উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, বর্তমান সরকারের প্রক্রিয়া নয়, ড. ইউনূসের প্রক্রিয়া গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনার জন্য সঠিক ছিল, এটি কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন।
জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. মনিরুজ্জামান মিঞা বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়, আনেক দিন থেকেই এ প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে বিতর্ক শুনছি। আমার মনে হয় দুটি কারণে সরকার এ প্রতিষ্ঠানটির পেছনে লাগতে পারে। এক. গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. ইউনূস রাজনীতিতে নামছেন এমন একটি খবর; আরেকটি হলো প্রতিষ্ঠানটির নোবেল পুরস্কার। তিনি বলেন, কারণ যাই হোক সরকারের এ প্রতিষ্ঠানটি ওলটপালট করার উদ্যোগ নেওয়া ঠিক হয়নি।
আলোচনার এ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, দেশের বড় দুটি জোট অনেক দিন থেকে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করছে। দুই পক্ষই সংসদ অধিবেশনেও যাচ্ছে। কিন্তু দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার কোনো পথ দেখছি না কেন।
জবাবে ড. মনিরুজ্জামান মিঞা বলেন, পথ তো আছেই বরং একটি পক্ষ তা স্বীকার করছে না। কারণ এ পক্ষের ধারণা তত্ত্বাবধায়কের অধীন নির্বাচন হলে ফল পক্ষে নাও আসতে পারে। এ নিয়ে একটি অনিশ্চয়তা রয়েছে। যে কারণে একটি পক্ষ তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু গ্রহণ করছে না। আলোচনার এ পর্যায়ে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোহাম্মদ জমির বলেন, 'আমরা এমন একটা নির্বাচন চাই যেটা হবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। তিনি বলেন, আমি সেদিন একটি বিদেশি কূটনীতিকের বাসায় গিয়েছিলাম। কূটনীতিক বললেন, তোমাদের দেশের নিয়ম বুঝলাম না যে তোমাদের দেশের সরকার সরকার সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয় সহজভাবে মেনে নিচ্ছে। তিনি বলেন, কুমিল্লা, বরিশাল, সিলেট, রাজশাহীসহ অনেক নির্বাচনে তো সরকার সমর্থিত প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছে। হতে পারে এগুলো স্থানীয় নির্বাচন তার পরও তো এগুলোর একটি গ্রহণযোগ্যতা আছে। তিনি বলেন, সরকারি দল না চাইলেও বিরোধী দলের উচিত সংসদে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া। আর এতে বিরোধী দলই উপকৃত হবে। কারণ এতে করে মিডিয়ার মাধ্যমে দেশবাসী জানতে পারবে বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে কী প্রস্তাব দিল।'
আলোচনার এ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, বিরোধী দল সংসদে একটি মুলতবি প্রস্তাব এনেছিল। কিন্তু পরক্ষণেই তা আবার প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এতে অনেকে মনে করছেন, বিরোধী দল আসলে রাজনৈতিক ডামাডোল তৈরি করছে, তারা সমস্যার সমাধান চায় না- এটা কিভাবে দেখছেন।
জবাবে ড. মনিরুজ্জামান মিঞা বলেন, এটা ঠিক না যে বিরোধী দল সমাধান চায় না। কারণ বিরোধী দলই সর্বপ্রথম চায় একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্পন্ন হোক বরং যাঁরা ক্ষমতায় আছেন তাঁরাই চাচ্ছেন না।
আলোচনার এ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, বাজেট অধিবেশনে দুই পক্ষই সংসদে আছেন, তত্ত্বাবধায়ক সমস্যা সমাধানে কী পরামর্শ দেবেন।
জবাবে মোহাম্মদ জমির বলেন, যখন নির্বাচনে আর্মড ফোর্সেস নামানোর দাবি করা হয়, তখন আমি একটা বিষয় বুঝি না যে বিজিবি ও র‌্যাবের মধ্যে কি আর্মড ফোর্স নেই? আর্মড ফোর্স থেকেই তো বিজিবি ও র‌্যাব নিয়ন্ত্রিত হয়। তাহলে আবার নতুন করে নির্বাচনে আর্মড ফোর্সেস নামানোর প্রশ্ন কেন। তিনি বলেন, এত মিডিয়ার সামনে নির্বাচনে কারচুপি করা অনেকটা অসম্ভব। তার পরও নিরপক্ষে সরকারের বিষয়ে বিএনপির উচিত সংসদে সুস্পষ্ট প্রস্তাব দেওয়া। প্রস্তাব দিলেই একটা সমাধানের পথ বেরিয়ে আসবে।

No comments

Powered by Blogger.