পবিত্র শবেবরাত- শান্তি ও সৌভাগ্য বয়ে আনুক

সময়ের পরিক্রমায় আবার এসেছে শবেবরাত বা মহিমান্বিত রাত। হিজরি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও পালিত হবে মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে।
সুখনিদ্রা নয়, ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা পবিত্র এ রাতটি কাটিয়ে দেবেন ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে। আমরা আশা করি, মুক্তি বা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে আখ্যায়িত এই লাইলাতুল বরাতে সবার মনোবাসনা পূর্ণ হবে, আগামী দিনগুলো ভরে উঠবে সৌভাগ্যে ও সমৃদ্ধিতে। তার মধ্য দিয়ে গোটা দেশে সমৃদ্ধি ও শান্তি আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। বিশ্বাস করি, জীবনে চলার পথে জমা হওয়া জ্ঞাত-অজ্ঞাত, পাপ-তাপ ও কলুষ থেকে মুক্তির যে আকুতি ধর্মপ্রাণ মানুষ এই রাতে জানাবে, তার ইতিবাচক প্রভাব সমাজেও পড়বে। আল্লাহর দরবারে নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে মুমিনের মধ্যে স্খলন ও অপরাধ সম্পর্কে সচেতনতা জাগ্রত হয়। ভবিষ্যৎ জীবনে চলার পথে নেতিবাচক চিন্তা ও তৎপরতার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা কমে যায়। আমরা আশা করি, মুসলিমপ্রধান এই দেশে কোটি কোটি মানুষের ব্যক্তিগত পবিত্রতার আবহ সামষ্টিক সম্পর্কেও সম্প্রীতির বাতায়ন খুলে দেবে। অবশ্য এ রাতের প্রার্থনাতেও কোনো কোনো অপরাধের ক্ষমা হয় না বলে হাদিস শরিফে বলা হয়েছে। শিরক, হত্যা ও ঘৃণা ছড়ানো অপরাধ ক্ষমা পায় না। সাম্প্রতিক সময়ে যখন সমাজে ঘৃণা ও সংঘাতের সংস্কৃতি বেড়ে গেছে, তখন শবেবরাতের আগমন অনাকাঙ্ক্ষিত এসব প্রবণতা প্রশমন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা চাই ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায় এই পবিত্র রাতে ব্যক্তিগত বিশুদ্ধতা অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক সাম্য ও সামষ্টিক কল্যাণের জন্যও প্রার্থনা করবেন। প্রার্থনা করবেন একটি সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তথা শান্তিপূর্ণ বিশ্বের জন্য। পরম করুণাময়ের কাছে তারা শপথ করবেন যে, হত্যা ও ঘৃণা ছড়ানোর মতো গর্হিত অপরাধ থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রকে মুক্ত রাখতে যার যার অবস্থান থেকে যথাসম্ভব অবস্থান গ্রহণ করবেন। আমরা জানি, শবেবরাতের আরেক শিক্ষা হলো ক্ষমা। মহান আল্লাহ পাক যখন সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়ার অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করেছেন, তখন এই রজনীতে মুসলমানরাও ক্ষমা ও সৌহার্দ্যের প্রার্থী হবে। নিজস্ব সমাজ, সম্প্রদায়ের বাইরেও বিশ্বমানবতার কল্যাণ কামনা ও বাস্তবায়নে উদ্যোগী হবে। বস্তুত শুধু পালনের মধ্য দিয়ে নয়, উপলব্ধির মধ্য দিয়ে এ রাতের শিক্ষাকে অন্তরে ধারণ করা প্রয়োজন। শবেবরাতের আরেক তাৎপর্য হলো_ এ রাতকে পবিত্র রমজান মাসের প্রস্তুতির রাত বলে গণ্য করা হয়। লাইলাতুল বরাতের মাত্র ১৫ দিন পর শুরু হবে পবিত্র মাহে রমজান। মুসলিমদের জীবনে রমজানের পদধ্বনি শুরু হয় পবিত্র শবেবরাতে। পাপমুক্তি, ক্ষমা ও শুদ্ধতার আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়ে তারা পবিত্র রমজানের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। পবিত্র শবেবরাতের এই শুভক্ষণে তাই আমাদের শুভকামনা। সব মুসলিমের জীবনে তো বটেই, গোটা মানবতার জন্য শবেবরাত সৌভাগ্য ও শান্তি বয়ে আনুক।

No comments

Powered by Blogger.