৯ বিদেশি পর্যটকসহ ১০ জনকে গুলি করে হত্যা

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অজ্ঞাতপরিচয় অস্ত্রধারীরা গুলি করে ৯ বিদেশি পর্বতারোহীসহ ১০ জনকে হত্যা করেছে। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন ইউক্রেনের, তিনজন চীনের এবং একজন রাশিয়ার নাগরিক। বাকিজন পাকিস্তানি গাইড।
গত শনিবার রাতে কেন্দ্রশাসিত আদিবাসী এলাকা গিলগিত-বালতিস্তানের দিয়ামের জেলার নানগা পর্বতের বেইস ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল রবিবার পাকিস্তান তেহরিক-ই-তালেবান (টিটিপি) ও পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি দল জানদাল্লাহ হামলার দায় স্বীকার করেছে। বিদেশি পর্যটকদের ওপর এ হামলা পাকিস্তানের নতুন সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে।
স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা আলী শের জানান, 'শৃঙ্গে ওঠার জন্য পর্বতারোহীরা নানগা পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত প্রথম বেইস ক্যাম্পে অপেক্ষা করছিলেন। শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে হঠাৎ একদল অস্ত্রধারী তাঁদের তাঁবুতে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। ঘটনাস্থলেই ওই ১০ জন মারা যান। তাঁদের মৃত্যু নিশ্চিত করে জঙ্গিরা তাঁবু ছাড়ে।' আলী শের বলেন, বেইস ক্যাম্প থেকে এক চীনা পর্বতারোহীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। বন্দুকধারীরা আধাসামরিক বাহিনীর পোশাক পরা ছিল। তবে অন্য একটি সূত্রের বরাত দিয়ে পাকিস্তানি পত্রিকা দ্য নিউজ জানায়, গুলিতে ১১ জন মারা গেছেন।
টিটিপির মুখপাত্র এহসানউল্লাহ এহসান বলেন, 'টিটিপির শাখা জানুদ-ই-হাফসা এ হামলা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় টিটিপির নেতা মৌলভি ওয়ালিউর রেহমান হত্যার প্রতিশোধ নিতেই এ হামলা চালানো হয়েছে। বিশ্ববাসীকে জানাতে চাই, এটা ছিল ড্রোন হামলার জবাব।' টিটিপির দায় স্বীকারের আগে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, পাকিস্তানের নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি দল জানদাল্লাহ হামলার দায় স্বীকার করেছে। গোষ্ঠীটির মুখপাত্র আহমেদ মারওয়াত বলেন, 'এসব বিদেশি আমাদের শত্রু। আমরা গর্বের সঙ্গে তাদের হত্যার কথা স্বীকার করছি। ভবিষ্যতেও এ ধরনের হামলা আরো চালাব।'
ইসলামাবাদে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ভ্লাদিমির লাকোমভ নিহত পর্যটকদের মধ্যে পাঁচজন ইউক্রেনের নাগরিক থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ইউক্রেনের পাশাপাশি চীনও এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
এ হামলার বিষয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান গতকাল পার্লামেন্টে বলেন, বিদেশি পর্যটকদের ওপর হামলার মানে পাকিস্তানের ওপরেই হামলা। গিলগিত স্কাউটের পোশাক পরা ছিল হামলাকারীরা। হামলার আগে তারা দুজন গাইডকে অপহরণ করে। তাঁদের সহায়তায় ওই ক্যাম্পে হামলা চলায়। গাইডদের মধ্যে একজনকে তারা হত্যা করেছে। আরেকজনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তবে পর্যটকদের যথাযথ নিরাপত্তা না দেওয়ায় স্থানীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফও এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
চীনা সীমান্তবর্তী এ এলাকা পর্যটকদের জন্য নিরাপদ এলাকা বলে বিবেচনা করা হয়। এই প্রথম সেখানে পর্যটকদের ওপর হামলা হলো। জঙ্গি হামলা ও সাম্প্রদায়িক সংঘাতের কারণে পাকিস্তানে পর্যটন শিল্প এমনিতেই নাজুক অবস্থায় আছে। তার ওপর এ হামলা পর্যটন শিল্পকে আরো বিপাকে ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্র : ডন, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.