প্রতিক্রিয়া- কয়েকটি চ্যানেল টাকা পেল কোথায়? by এবিএম মূসা

আমি একটুখানি আত্মপ্রসাদ লাভ করেছি। মনে মনে গর্ববোধও করছি। কারণটি হলো, ভালো হোক মন্দ হোক, দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং আমার মতো একজন সাধারণ নাগরিক সম্পর্কে কয়েকটি মন্তব্য করেছেন। শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দেওয়া মন্তব্যটি ছিল আমার একটি প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য আবেদন-


সম্পর্কীয়। বিনীতভাবে তাঁর স্মরণার্থে ও সাধারণভাবে যেসব গণমাধ্যম সেটি প্রচার করেছে, তাদের জ্ঞাতার্থে কিছু তথ্য পেশ করছি:
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেছেন, আমি একটি টেলিভিশন চ্যানেল চালু করার এত টাকা কোথায় পাব? আমি কি এ জন্য চুরি করেছি অথবা করব? আমি প্রধানমন্ত্রীকে বিনয়ের সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, তিনি জানতেন, এই চ্যানেলটির উদ্যোক্তা ল্যাবএইড মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড (ল্যাবএইড গ্রুপ)। সেখানে আমাকে মাত্র ১০ শতাংশ অংশীদারি দিয়ে চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। আমি সেই সুবাদে চ্যানেলটির জন্য আবেদন করি।
পরবর্তী সময়ে আমি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে চ্যানেলটি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করি। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী নয়, মুজিব ভাইয়ের কন্যাকে আমি কিছু ক্ষুব্ধ এবং উত্তপ্ত ভাষায় অনুযোগ জানাই। তখন তিনি আমাকে প্রশ্ন করেননি চ্যানেল করার টাকা আমি কোথায় পাব? কারণ, তিনি জানতেন ল্যাবএইড গ্রুপ এই চ্যানেলের উদ্যোক্তা এবং সম্পূর্ণ অর্থ জোগানদাতা। আমাকে উত্তেজিত দেখে হাসিমুখে তিনি তাঁর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদকে বললেন, ‘উনি খুব খেপে গেছেন। ওনাকে শার্ম আল শেখে (মিসরে ন্যাম সম্মেলনে) নিয়ে চলো। ওখানে সমুদ্রপাড়ে ওনার মাথা ঠান্ডা হবে। তারপর ফিরে এসে ওনার চ্যানেলের ব্যাপারটা দেখা যাবে।’ আমি এতে চ্যানেল পাওয়া নিয়ে কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে সফরসঙ্গী হতে রাজি হলাম। বিমানে আসা-যাওয়ার পথে আমি, দীপু মনি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একসঙ্গে বসেছি। খাওয়া-দাওয়া ও নানা বিষয়ে গল্প-গুজব করেছি। কিন্তু আমার চ্যানেল পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলিনি।
তার পরও আমার প্রার্থিত চ্যানেলটি যখন দেওয়া হলো না, তখন এক দিন আমার বন্ধু আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ঢাকায় এলে তাকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলতে অনুরোধ করলাম। পরে গাফ্ফার আমাকে জানাল, প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেছেন, ওনার পেছনে কে, অর্থাৎ পরোক্ষে কে অর্থ জোগান দিচ্ছে? তার মানে, ল্যাবএইড গ্রুপের ব্যাপারে তাঁর আপত্তি রয়েছে এমনটি মনে হলো। অতঃপর তিনি তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদকে ডেকে বললেন, আমাকে যেন অন্য কোনো চ্যানেলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়। আজাদের বাড়িতে এ নিয়ে চ্যানেল পাওয়া একজন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে একটি বৈঠকও হলো। কিন্তু আমি আমার উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বেইমানি করতে চাইনি। তাই সেই বৈঠক ব্যর্থ হলো।
আমার মনে হলো, চ্যানেলটির উদ্যোক্তা ডা. শামীমের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কিছু বিরূপ মনোভাব রয়েছে। অথচ কিছুদিন পরে ডা. শামীমের আয়োজনে একটি কার্ডিয়াক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে তাঁর পাশে বসেছিলেন (২৫ নভেম্বর ২০১১)। ব্যাপারটি আমার কাছে বিভ্রান্তিকর মনে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেছেন—আমি চ্যানেলের জন্য কি টাকা চুরি করব, না করেছি? একটি পাল্টা প্রশ্ন করার স্পর্ধা দেখাচ্ছি! প্রশ্নটি হচ্ছে, তাঁর সরকার যে কয়টি নতুন চ্যানেল প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং আমার ‘একাত্তর’ নামটিসহ একজনকে দিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা কোথায় টাকা পাবেন বা পেয়েছেন? তাঁরা কি চুরি করেছেন, না করবেন? তিনি অবশ্যই জানেন, এসব চ্যানেলে তাঁর সরকারের প্রচুর সমালোচনা করা হয়। শুধু তা-ই নয়, এগুলোর অধিকাংশই সরকারবিরোধী পক্ষের ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে।

No comments

Powered by Blogger.