স্বল্প সময়ের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেয় সব দুঃখকষ্ট- বাউফলের নূরজাহান গার্ডেন, অজপাড়াগাঁয়ে নিখরচায় বিনোদন by কামরুজ্জামান বাচ্চু

পটুয়াখালী জেলার বাউফলের কালাইয়া ইউনিয়নের শৌলা গ্রামে সাধারণ মানুষের বিনোদনের জন্য নূরজাহান গার্ডেন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রমত্তা তেঁতুলিয়া নদীর কূল ঘেঁষেই এই গ্রামটির অবস্থান। নদীর পারে দীর্ঘ বেড়িবাঁধ আর তার দু’পাশে সবুজ বেষ্টনী যেমনি মানুষের মনকে নাড়া দেয় তেমনি এই গার্ডেনও মানুষকে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও এক


অচেনা জগতে নিয়ে যায়। এখানে রয়েছে নানা ধরনের দেশী-বিদেশী ফলদ, বনজ ও ওষুধী গাছসহ কয়েক শ’ প্রজাতির দেশী ও বিদেশী ফুলের গাছ। গার্ডেনের মধ্যে রয়েছে ১১টি পুকুর। আর সান বাঁধানো ঘাট। এসব পুকুরে বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ করা হয়েছে। পুকুর পাড়ে রয়েছে সারি সারি গাছ। বাতাশের শোঁ শোঁ শব্দে প্রাণে দারুণ দোলা দেয়। এত রয়েছে ছনের ঘর। পুকুরের মধ্যে রয়েছে টং ঘর। সেই ঘরে যাওয়ার জন্য রয়েছে কাঠের ব্রিজ। এ গার্ডেনে শিশুদের বাড়তি আনন্দ দিতে রয়েছে দোলনা, স্লোপার ও কৃত্রিমভাবে তৈরি বিভিন্ন ধরনের পশু, পাখি ও ১২টি টিলা। বাউফল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত শৌলা গ্রামে ২০০৫ সালে ১০ একর জমির ওপর মোঃ শাহবাজ হোসেন খান মিল্টন ও তার ভাই শাহাদৎ হোসেন খান নিউটন মিলে মায়ের নামে এই গার্ডেন নির্মাণ করেন। সঙ্গে ছিলেন দুই ভাইয়ের স্ত্রী শারমিনা হক সুমা ও শ্যামলী হোসেন ইভা। পেশাগত কারণে এরা সবাই ঢাকায় থাকলেও তাদের মন হামেশা পড়ে থাকে এই গ্রামে। যখন মন চায় তখনই তারা ছুটে আসেন এখানে। এই গার্ডেনের দেখা শোনার জন্য ১০ জন লোক রাখা হয়েছে। দূর থেকে আসা দর্শনার্থীদের জন্য গার্ডেনটির মধ্যে থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। টিনের টং ঘর। সেই ঘরের জানা খুললেই দখিনা বাতাসে চোখের পাতায় ঘুম এসে যায়। এদিকে, প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে শত শত লোক আসেন এ গার্ডেনে। শহরের যান্ত্রিক আর নানা কৃত্রিমতায় তৈরি বিনোদন স্থানগুলো গ্রামের স্বল্প আয়ের মানুষ তাদের পরিবারের লোকজন নিয়ে দেখার সুযোগ না পেলেও বাড়ির কাছে নির্মিত এই নূরজাহান গার্ডেনে এসে সব দুঃখ ও কষ্ট খানিক সময়ের জন্য হলেও ভুলে যান। এই গার্ডেনে প্রবেশ করতে দর্শনার্থীদের কোন টাকা লাগে না। গার্ডেনের পুকুরের চাষ করা মাছ ও বিভিন্ন ধরনের ফল বিক্রির টাকা দিয়ে এটি রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় মেটানো হয়।
গার্ডেন নির্মাতা ও বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী শাহবাজ হোসেন খান মিল্টন বলেন, কেবল গ্রামের মানুষের বিনোদনের কথা চিন্তা করেই এই গার্ডেন নির্মাণ করা হয়েছে। আর এই গার্ডেন নির্মাণের জন্য তার স্ত্রী, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল শারমিন হক সুমা উৎসাহ যুগিয়েছেন। প্রতিবছর তার পরিবারের সদস্যরা এ গার্ডেনে এসে গ্রামের ষাটোর্ধ বয়সের কৃষকদের নিয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগ করেন। অদূর ভবিষ্যতে এই গার্ডেনের কাছাকাছি একটি বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে তার।

No comments

Powered by Blogger.