গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসবের চতুর্থ দিনে ‘রাঢ়াঙ’ মঞ্চস্থ- সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পকলা একাডেমীর এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলভর্তি দর্শক। পিনপতন নীরবতায় সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখল সাঁওতাল বিদ্রোহ নিয়ে রচিত নাটক ‘রাঢ়াঙ’। বিশেষ করে তমালিকা কর্মকারের অনবদ্য অভিনয়ে দর্শকরা চোখ ফেরাতে পারছিল না। রবিবার সন্ধ্যায় গঙ্গা যমুনা নাট্যোৎসবের চতুর্থ দিনে মঞ্চস্থ হয় নাটকটি।


আরণ্যক নাট্যদল মঞ্চস্থ করে এটি। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ।
‘রাঢ়াঙ’ একটি সাঁওতালী শব্দ যার অর্থ দূরাগত মাদলের ধ্বনিতে জেগে ওঠার আহ্বান। ভারতীয় উপমহাদেশে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যারা প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধে রুখে দাঁড়ায় তারা সাঁওতাল। ১৭৮৪ সালে হাজারীবাগ জেলার কালেক্টর ক্লিভল্যান্ডকে হত্যার মাধ্যমে এর সূত্রপাত। তারপর ১৮৫৫ সালে সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরবের নেতৃত্বে সাঁওতাল বিদ্রোহ এক ঐতিহাসিক প্রতিরোধ। যার পরবর্তী অধ্যায় সর্বভারতীয় প্রতিরোধ ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ। এ অঞ্চলের আদিবাসীদের ভূমির অধিকারের লড়াইয়ে সাঁওতালদের অবদান একটি কিংবদন্তিসম উপাখ্যান। ভারত বিভক্তির পর ইলা মিত্রের নেতৃত্বে নাচোলের কৃষক আন্দোলনে সাঁওতালদের ভূমিকা আজও সংগ্রামী কৃষক ও আদিবাসীদের অধিকার আদায়ে লড়াইয়ে একটি আলোকবর্তিকা। ২০০০ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের নওগাঁয় আলফ্রেড সরেনের নেতৃত্বে ভূমির জন্য লড়াই ও আলফ্রেড সরেনের আত্মত্যাগ, সাঁওতালদের এই দীর্ঘ সংগ্রামের বিশাল উত্তরাধিকারকে মঞ্চে তুলে ধরার প্রয়াসই রাঢ়াঙ। সাঁওতালী মেয়ে শ্যামলী টুডুর ভূমিকায় অভিনয় করেন তমালিকা কর্মকার। তাঁর সাঁওতালী বেশভূষা ও অভিনয়ে নাটকের মান আরও একধাপ এগিয়ে যায়।
এ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে আরও যাঁরা অভিনয় করেছেন তাঁরা হলেন শামীমা শওকত লাভলী, মিতালী, জয়রাজ, উর্মি হোসেন, শামীম জামান, কামরুল হাসান, আমানুল হক হেলাল, বাপ্পাদিত্য চৌধুরী, হাবিব আহমেদ সঞ্জিব, চঞ্চল চৌধুরী, পার্থ, দিলু মজুমদার, আরিফ হোসেন আপেল, দীপক সুমন, মিশু মিলন, সাইফুল ইসলাম সোহাগ ও মামুনুর রশীদ।

আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে পাট দ্রব্য প্রদর্শনী
বাংলাদেশের সোনালি আঁশ দিয়ে তৈরি নানা রকম নয়নাভিরাম দ্রব্যসামগ্রীর প্রদর্শনী চলছে ধানম-ির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে। এগুলো দেখলে সবার চোখ জুড়িয়ে যাবে। গ্যালারির চারপাশ দিয়ে সাজানো রয়েছে এই মনোমুগ্ধকর দ্রব্যসামগ্রী। এর মধ্যে রয়েছে কিছু শৌখিন পণ্য যেগুলো ঘরের শোভাবর্ধনে ভিন্নমাত্রা এনে দেবে, কিছু রয়েছে ব্যবহার্য দ্রব্যসামগ্রী, যা নিত্য ব্যবহারের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। এর মধ্যে রয়েছে পাটের তৈরি ব্যাগ, বিছানার চাঁদর, টেবিল কভার, দরজা-জানালার পর্দা, জুতো, কুশনের কভারসহ নানা ধরনের জিনিস। এখানে প্রদর্শিত হয়েছে ১৫ রকমের পণ্য।
‘ইগজোটিক জুট’ শিরোনামের এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ডালসার্নিয়া প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আফসানা আসিফ। এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরী। এ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রীর বিদেশেও প্রচুর চাহিদা রয়েছে। পাটের তৈরি এসব দ্রব্য বিদেশে রফতানি করে প্রতিষ্ঠানটি বহু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। আফসানা আসিফ জানান, সময় ও পরিবেশ উপযোগী দ্রব্য তৈরি ও এর ব্যবহার বাড়াতে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। প্রদর্শনী চলবে ২০ সেপ্টম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য খোলা থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.